রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর দরুদ পাঠ করার জন্য কি ওজু থাকা জরুরি?
মুমিন ব্যক্তির সর্বদা পাক-পবিত্র অবস্থায় থাকা খুবই ভালো অর্থাৎ যতবারই ওজু নষ্ট হবে ততবার ওজু করে নেওয়া উত্তম। শাইখ আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিন রাহ. বলেন,
الفضل الذي يناله المسلم إذا استمر على الوضوء بعد كل حدث أنه يبقى طاهراً، والمحافظة على الطهر والبقاء عليه من الأعمال الصالحة، ولأنه ربما يذكر الله سبحانه وتعالى في أحواله كلها فيكون ذكره لله تعالى على طهر، ولأنه لو حصل له صلاة في مكان ليس فيه ماء يسهل الوضوء منه فيكون مستعدّاً لهذه الصلاة. المهم أن بقاء الإنسان على طهارة دائماً فيه فوائد كثيرة.
“প্রত্যেক বার ওজু ভঙ্গের পর ওজু করতে থাকলে একজন মুসলিম যে ফজিলত লাভ করে তা হল, সে সর্বদা পাক-পবিত্র অবস্থায় থাকবে। আর পবিত্রতার প্রতি যত্নশীল হওয়া এবং পাক-পবিত্র অবস্থায় থাকা নেকির কাজ সমূহের অন্তর্ভুক্ত। কারণ হয়ত সে সর্বাবস্থায় আল্লাহর জিকির করবে আর এতে তার জিকিরটা হবে পবিত্র অবস্থায়। অনুরূপভাবে যদি এমন হয় যে, এমন জায়গায় তার নামাজ পড়ার সময় হয়ে গেছে যেখানে ওজুর পানি সহজ লভ্য নয়। তাহলে এ ক্ষেত্রে সে নামাজের জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত থাকলো। মোটকথা, সদা-সর্বদা পাক-পবিত্র থাকার অনেক উপকারিতা রয়েছে।” [সূত্র: .islamway]
কিন্তু জিকির-আজকার তথা দুআ, দরুদ, তাসবিহ, ইস্তিগফার ইত্যাদি পাঠ, কুরআন তিলাওয়াত (কুরআন স্পর্শ ছাড়া), ইসলামি বই-পুস্তক পাঠ, তাফসির ও হাদিসের কিতাব পাঠ, সেহেরি ও ইফতার খাওয়া, মসজিদে প্রবেশ করা, আজান দেওয়া, সালাম-মুসাফাহা করা ইত্যাদির জন্য ওজু থাকা জরুরি নয়। সুতরাং ওজু থাকুক বা না থাকুক সর্বাবস্থায় এসব কাজ করা জায়েজ আছে। কেননা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বক্ষণ আল্লাহর জিকির করতেন। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন,
كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَذْكُرُ اللَّهَ عَلَى كُلِّ أَحْيَانِهِ
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বক্ষণ আল্লাহর জিকির করতেন।” [সহিহ বুখারি, অধ্যায়: আজান, পরিচ্ছেদ: ৪১১. মুয়াজ্জিন কি আজানের সময় ডানে বামে মুখ ফিরাবেন এবং এদিক সেদিক তাকাতে পারবেন?]
ইমাম বুখারি রাহ. এখানে আরও উল্লেখ করেছেন, ইবরাহিম (নাখয়ী রাহ.) বলেছেন যে,
لاَ بَأْسَ أَنْ يُؤَذِّنَ عَلَى غَيْرِ وُضُوءٍ
“ওজু ছাড়া আজান দিতে কোনও অসুবিধা নেই।” [প্রাগুক্ত]
অবশ্য পাক-পবিত্র অবস্থায় আল্লাহর জিকির করা উত্তম। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পবিত্রতা ব্যতিরেকে আল্লাহর জিকির করাকে অপছন্দ করেছেন। যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
إِنِّي كَرِهْتُ أَنْ أَذْكُرَ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ إِلاَّ عَلَى طُهْرٍ
“আমি পবিত্রতা অবস্থায় ছাড়া আল্লাহর জিকির করা অপছন্দ করি।” [আবু দাউদ, নাসাই, ইবনে মাজাহ-সহিহ]
মিসরের প্রখ্যাত সালাফি শাইখ মোস্তফা আদাভীকে প্রশ্ন করা হয়, বড় নাপাকি (গোসল ফরজ) অবস্থায় “সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” বলা কি আমার জন্য ঠিক হবে?
তিনি উত্তরে বলেন, “হ্যাঁ, ঠিক হবে। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বাবস্থায় আল্লাহর জিকির করতেন।” [ইউটিউব চ্যানেল: فتاوى الشيخ مصطفى العدوي]
তবে সালাত আদায়, (অধিক বিশুদ্ধ মতে) সরাসরি মুসহাফ (কুরআন) স্পর্শ করা, কাবা ঘরের তওয়াফ ইত্যাদির জন্য ওজু থাকা জরুরি।
আল্লাহু আলাম