Writing

নবিজির ভালোবাসায় ‘‘হৃদয়ের স্পন্দন’’

নবিজি আমাদের জন্য প্রত্যেক নামাজে এমন দু‘আ করতেন, যে দু‘আটি একবার পেয়েই আয়িশা (রা.) আনন্দে আত্মহারা হয়ে যান!
আয়িশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, একদিন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মনে আনন্দ দেখে বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমার জন্য দু‘আ করুন।’ তখন তিনি বললেন—

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِعَائِشَةَ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنَبِهَا وَمَا تَأَخَّرَ مَا أَسَرَّتْ وَمَا أَعْلَنَتْ
হে আল্লাহ! আপনি আয়িশার আগের ও পরের, গোপন এবং প্রকাশ্য—সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিন।

তখন আয়িশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) হেসে দিলেন। এমনকি হাসতে হাসতে রাসুলের কোলে তাঁর মাথা পড়ে গেলো। তখন তিনি বললেন, ‘‘আমার দু‘আ কি তোমাকে আনন্দ দিয়েছে?’’
আয়িশা বলেন, ‘আপনার দু‘আ আমাকে কেন আনন্দ দেবে না?’ তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন—

وَاللَّهِ إِنَّهَا لَدُعَائِي لِأُمَّتِي فِي كل صلاة
‘‘আমার উম্মতের জন্য প্রত্যেক নামাজেই আমার এমন দু‘আ থাকে।’’1

আমাদের জন্য যাঁর এত ভালোবাসা ছিলো, তাঁর প্রতি আমাদের ভালোবাসা কতটুকু?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘‘তোমাদের কেউ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা, তার সন্তান ও সকল মানুষের চেয়ে বেশি প্রিয় হবো।’’2

নবিজি আমাদেরকে দেখতে চাইতেন। আমরা যারা তাঁর সময়ে ছিলাম না, তাদেরকে তিনি মিস করতেন! স্মরণ করতেন!
একদিন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবিদের সামনে বলেন,
‘‘আমার ভাইদের সাথে সাক্ষাৎ করতে খুব ইচ্ছা করছে!’’
সাহাবিগণ বলেন,
‘আমরা কি আপনার ভাই নই?’
তিনি বলেন, ‘‘তোমরা তো আমার সাহাবি (সাথি); আমার ভাই হলো তারা, যারা আমার ওপর ঈমান আনবে, কিন্তু আমাকে দেখবে না।’’3

(যেহেতু নবিজির সামনে বেশিরভাগ সময় পুরুষ সাহাবিগণই থাকতেন, সেহেতু তিনি অধিকাংশ সময় তাঁদেরকেই সম্বোধন করতেন, যেমন এই হাদিসে তিনি ‘ভাই’ বলে সম্বোধন করেছেন। কিন্তু নবিজির কথা তাঁর সকল উম্মতের জন্যই। হোক সে পুরুষ অথবা নারী)

নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে আমাদের মিস করতেন, আমরাও কি তাঁকে মিস করি? তাঁকে দেখার জন্য মনটা কি ছটফট করে?
উত্তর হ্যাঁ হলে নিচের হাদিসটি আমাদের হৃদয়কে প্রশান্ত করতে পারে।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন—

مِنْ أَشَدِّ أُمَّتِي لِي حُبًّا نَاسٌ يَكُونُونَ بَعْدِي يَوَدُّ أَحَدُهُمْ لَوْ رَآنِي بِأَهْلِهِ وَمَالِهِ
‘‘আমার উম্মাতের মাঝে আমাকে বেশি মহব্বতকারী হবে তারা, যারা আমার (ইন্তিকালের) পর আসবে; তারা আকাঙ্ক্ষা করবে—যদি তাদের পরিবার-পরিজন এবং ধন-সম্পদের বিনিময়েও আমাকে দেখতে পেত!’’4

নবিজির প্রতি (তাঁর আনুগত্যসহ) ভালোবাসার বিনিময়ে হয়তো আমরা তাঁর সাথেই জান্নাতে থাকতে পারবো, যদি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা চান। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন—

المَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبّ
‘‘ব্যক্তি তার সাথেই থাকবে, যাকে সে ভালোবাসে।’’5

আল্লাহ তা‘আলার পর নবিজির চেয়ে আপনজন আর কেউ নেই আমাদের জীবনে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‘‘দুনিয়া ও আখিরাতে সকল মানুষের চেয়ে আমিই ঈমানদার ব্যক্তির সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ। তোমরা ইচ্ছা করলে এই আয়াত পাঠ করতে পারো—

النَّبِيُّ أَوْلٰى بِالْمُؤْمِنِيْنَ مِنْ أَنْفُسِهِمْ
“নবি মুমিনদের নিকট তাদের নিজেদের চেয়েও অধিক ঘনিষ্ঠ6।”

সুতরাং কোনো মুমিন কোনো ধন-সম্পদ রেখে গেলে, তার নিকটআত্মীয়—সে যে-ই হোক—তার উত্তরাধিকারী হবে। আর যদি ঋণ অথবা অসহায় সন্তানাদি রেখে যায়, সে যেন আমার কাছে আসে; আমি তার অভিভাবক।’’7

অন্য হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন—

إِنّمَا أَنَا لَكُمْ مِثْلُ الْوَالِد
‘‘আমি তোমাদের জন্য পিতার সমতূল্য।’’8

নবিজি আমাদের মতো গুনাহগারদের জন্য হাশরের দিন সুপারিশ করবেন।
তিনি বলেন,
‘‘আমার উম্মতের কবিরা গুনাহগারদের জন্য আমার সুপারিশ থাকবে।’’9

আবার উম্মতের অনেককে তাঁর সুপারিশের মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে।10

আসুন, আমরা আমাদের কল্যাণকামী প্রিয় নবিজির জন্য অধিক পরিমাণে দরুদ প্রেরণ করি। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন—

مَن صَلَّى عَلَيَّ واحِدَةً صَلَّى اللَّهُ عليه بِهَا عَشْرًا
‘‘যে আমার উপর একবার দরুদ পড়বে, আল্লাহ তার উপর এর বিনিময়ে দশটি রহমত প্রেরণ করবেন।’’11

উম্মতের প্রতি নবিজির কত দরদ ছিলো, সেটি আল্লাহ তা‘আলা খুব চমৎকারভাবে জানিয়েছেন।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন—

فَلَعَلَّکَ بَاخِعٌ نَّفۡسَکَ عَلٰۤی اٰثَارِهِمۡ اِنۡ لَّمۡ یُؤۡمِنُوۡا بِهٰذَا الۡحَدِیۡثِ اَسَفًا
‘‘তারা যদি এ বাণীতে (কুরআনে) ঈমান না আনে, তাহলে সম্ভবত এই দুঃখে আপনি তাদের পেছনে ঘুরে নিজেকেই নিঃশেষ করে দেবেন!’’12

সুবহানাল্লাহ! এই উম্মত কীভাবে নবিজির অপরিসীম ঋণ শোধ করবে?
তায়েফবাসী যখন তাঁর দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে, তাঁকে মেরে রক্তাক্ত করে দেয়, তখন পাহাড়ের ফেরেশতা আল্লাহর পক্ষ থেকে পয়গাম নিয়ে এসে বলেন,
‘‘আপনি যদি আদেশ করেন, তাহলে আমি পাহাড় দুটোকে এদের উপর চাপিয়ে দেবো (পিষে ফেলবো)।’’
তখন নবিজি জবাব দিলেন—

بَلْ أَرْجُو أَنْ يُخْرِجَ اللهُ مِنْ أَصْلَابِهِمْ مَنْ يَعْبُدُ اللهَ وَحْدَهُ لَا يُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا
‘‘(আমি এটা চাই না) বরং আমি আশা রাখি, আল্লাহ তা‘আলা এদের বংশধরদের মাঝে এমন মানুষ বের করবেন, যারা এক আল্লাহর ইবাদত করবে; তাঁর সাথে কাউকে শরিক করবে না।’’13

উম্মতের প্রতি নবিজির এই ভালোবাসার স্বীকৃতি প্রদান করেছেন খোদ আল্লাহ তা‘আলা। কুরআন মাজিদে আল্লাহ বলেন

لَقَدۡ جَآءَکُمۡ رَسُوۡلٌ مِّنۡ اَنۡفُسِکُمۡ عَزِیۡزٌ عَلَیۡهِ مَا عَنِتُّمۡ حَرِیۡصٌ عَلَیۡکُمۡ بِالۡمُؤۡمِنِیۡنَ رَءُوۡفٌ رَّحِیۡمٌ
‘‘তোমাদের মধ্য থেকেই তোমাদের নিকট একজন রাসুল এসেছেন। যা কিছু তোমাদের কষ্ট দেয়, তা তার নিকট খুবই বেদনাদায়ক। তিনি তোমাদের কল্যাণকামী, মু’মিনদের প্রতি করুণাসিক্ত, অতি দয়ালু।’’14

কারণ নবিজিকে রহমত হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছিলো। আল্লাহ তা‘আলা বলেন—

وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ
‘‘(হে নবি!) আমি আপনাকে বিশ্বজগতের জন্য কেবল রহমত করেই পাঠিয়েছি।’’15

উম্মতের নিরাপত্তা ও হেফাজতের জন্য

উম্মতের নিরাপত্তা ও হেফাজতের জন্য নবিজির আন্তরিকতা ও দুশ্চিন্তা-পেরেশানি!
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময়ে একবার সূর্যগ্রহণ হয়। তখন তিনি অত্যন্ত ভীত হয়ে যান এই ভেবে যে, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো গজব কি না। তাই, দীর্ঘ সময় নিয়ে সূর্যগ্রহণের উদ্দেশ্যে দুই রাকাত নামাজ পড়তে থাকেন। সর্বশেষ সিজদার মধ্যে তিনি আবেগাক্রান্ত হয়ে বলে ওঠেন,

‘‘হে আমার রব! আপনি কি আমাকে এ প্রতিশ্রুতি দেননি যে, আমি (জীবিত) থাকা অবস্থায় আপনি তাদের (উম্মতদের) শাস্তি দেবেন না? আপনি কি আমার সাথে ওয়াদা করেননি যে, তারা ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা)’র মধ্যে থাকলেও আপনি তাদের শাস্তি দেবেন না?’’16

নবিজি মূলত কুরআনের সেই আয়াতটির দিকে লক্ষ করেই এভাবে দু‘আ করেছিলেন, যে আয়াতে আল্লাহ ওয়াদা করেছেন—

وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُعَذِّبَهُمْ وَأَنتَ فِيهِمْ ۚ وَمَا كَانَ اللَّهُ مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُونَ
‘‘আর আল্লাহ কখনই তাদের উপর আজাব দেবেন না, যতক্ষণ আপনি (নবিজি) তাদের মাঝে অবস্থান করছেন এবং তারা ইস্তিগফার করা অবস্থায়ও তাদের উপর আজাব অবতীর্ণ করবেন না।’’17

এছাড়াও নবিজির দু‘আ ছিলো, আল্লাহ যেন এই উম্মতকে অবাধ্যতার কারণে একসঙ্গে দুর্ভিক্ষে ফেলে কিংবা পানিতে ডুবিয়ে ধ্বংস করে না দেন। আল্লাহ তাঁর সেই দু‘আ কবুল করেন।18

যে নবিজি আমাদের জন্য এত দরদ আর ভালোবাসা লালন করতেন, আমরা যেন সেই নবিজিকে হৃদয় উজার করে ভালোবাসি। তাহলে আল্লাহ আমাদেরকে ঈমানের মিষ্টতা ও স্বাদ আস্বাদন করাবেন।
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‘‘যার মধ্যে তিনটি বৈশিষ্ট্য পাওয়া যাবে, সে ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করবে। (প্রথমটি হলো) যার কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সবকিছুর চেয়ে অধিক প্রিয় হবে।’’19

আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হওয়া উচিত নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মান রক্ষা করা এবং যারা তাঁর সম্মানহানি করার চেষ্টা করে, তাদেরকে ‘উপযুক্ত প্রতিদান’ দেওয়া। নবিজির বিরুদ্ধে কুৎসা রটনাকারী কা’ব বিন আশরাফকে উপযুক্ত শাস্তি দানকারী মহান সাহাবি মুহাম্মাদ বিন মাসলামা (রা.)-এর উপর আল্লাহ পরিপূর্ণ সন্তুষ্ট হোন।
আমিন।

নবিজির জন্য আমাদের হৃদয়গুলো উৎসর্গিত হোক। কতই না কেঁদেছেন তিনি আমাদের জন্য!
একদিন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈসা (আ.)-এর আবেগঘন কথাগুলো তিলাওয়াত করেন—

إِنْ تُعَذِّبْهُمْ فَإِنَّهُمْ عِبَادُكَ وَإِنْ تَغْفِرْ لَهُمْ فَإِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ‏
“আপনি যদি তাদেরকে শাস্তি দেন, তবে তারা তো আপনারই বান্দা আর যদি তাদেরকে ক্ষমা করে দেন, তবে আপনি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” [নবি ঈসা আ. তাঁর উম্মতের জন্য এই বাক্যগুলো দিয়ে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করেছিলেন। আল্লাহ তা‘আলা সেগুলো কুরআনে এনেছেন]20

এরপর নবিজি তাঁর উভয় হাত ওঠান, আল্লাহর কাছে দু‘আ করেন আর বলতে থাকেন, ‘আল্লাহুম্মা উম্মাতি উম্মাতি’ (হে আল্লাহ! আমার উম্মত! আমার উম্মত!) এই বলে তিনি কেঁদে ফেলেন। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘‘হে জিবরিল! তুমি মুহাম্মাদের কাছে যাও আর তাঁকে বলো, ‘‘নিশ্চয়ই আমি (আল্লাহ) আপনার উম্মাতের ব্যাপারে আপনাকে সন্তুষ্ট করে দেবো; আপনাকে অসন্তুষ্ট করবো না।’’21

যে নবিজি আমাদের জন্য এত চিন্তা করতেন এবং আমাদের নিরাপত্তার জন্য আল্লাহর কাছে দু‘আ করতেন, তাঁর প্রতি আমাদের ভালোবাসা ও দরদ কতটুকু আছে? আমরা কি উমর (রা.)-এর মতো নবিজিকে ভালোবাসি?

একদিন নবিজি উমর (রা.)-এর হাত ধরে ছিলেন। তখন উমর (রা.) বলে ওঠেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি আমার কাছে সবকিছু থেকে প্রিয়, কেবল আমার জীবন ব্যতীত।’
তখন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
‘‘না উমর, এতে হবে না। যে সত্তার হাতে আমার জীবন তাঁর কসম! (ততক্ষণ পর্যন্ত তোমার ঈমান পরিপূর্ণ হবে না) যতক্ষণ না আমি তোমার কাছে তোমার জীবনের চেয়েও প্রিয় না হই।’’

কিছুক্ষণ পরই উমর (রা.) বলেন, ‘জি, এখন তা হয়েছে। আল্লাহর কসম! (এখন থেকে) আপনি আমার কাছে আমার জীবনের চেয়েও অধিক প্রিয়।’ তখন নবিজি বলেন, ‘’হ্যাঁ, উমর! এখন (তোমার ঈমান পরিপূর্ণ) হয়েছে।’’22

নবিজি আমাদের জন্য উপহার হিসেবে একটি স্পেশাল দু‘আ রেখেছেন নিজের কাছে!
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘‘প্রত্যেক নবির জন্য একটি (বিশেষ) দু‘আ ছিলো, যা কবুল হবে। তাঁরা সেই দু‘আ করে ফেলেছেন। কিন্তু আমি কিয়ামতের দিন আমার উম্মতের জন্য শাফা‘আত করার উদ্দেশ্যে আমার দু‘আটি গোপন রেখে দিয়েছি।’’23

ইমাম নববি (রাহ.) বলেন,
‘এই হাদিসে উম্মতের প্রতি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পূর্ণ মায়া-মমতা ও দরদের কথা এবং তাদের কল্যাণসাধনে তাঁর প্রচেষ্টার কথা ফুটে উঠেছে। তাই তিনি এই উম্মতের জন্য তাঁর বিশেষ দু‘আ তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় সময়ের জন্য তুলে রেখেছেন।’24

নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য হাদিসে বলেন,
‘‘আমার রবের পক্ষ থেকে আগন্তুক (ফেরেশতা) এসে আমাকে দুটো বিষয়ের মধ্যে একটি বেছে নিতে বলেন। এক. আমার উম্মতের অর্ধেক মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে; দুই. শাফা‘আত (আমাকে আখিরাতে সুপারিশ করার অনুমতি দেওয়া হবে)। আমি সুপারিশ বেছে নিলাম। আর এই সুপারিশ হবে তাদের জন্য, যারা আল্লাহর সাথে শির্ক না করা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে।’’25

নবিজির শাফা‘আত লাভের অন্যতম উপায় হলো, আজানের বাক্যগুলোর সাথে সাথে জবাব দেওয়া এবং আজান শেষে বিশেষ দু‘আটি পাঠ করা।

আজানের জবাব দেওয়ার নিয়ম: মুয়াজ্জিন আজানে যা বলবেন, আপনি হুবহু তাই বলবেন। মুয়াজ্জিন যখন বলবেন, ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার’ আপনিও তার পরপরই বলবেন ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার’। এভাবে পুরো আজানের জবাব দেবেন। ব্যতিক্রম কেবল দুটো বাক্য। অর্থাৎ, মুয়াজ্জিন যখন ‘হাইয়া আলাস সলাহ’ ও ‘হাইয়া আলাল ফালাহ’ বলবেন, তখন আপনি জবাবে বলবেন, ‘লা হাউলা ওয়া লা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
‘‘যে ব্যক্তি আজান শুনে (নিচের দু‘আটি) বলবে, কিয়ামতের দিন সে আমার শাফা’আত (সুপারিশ) লাভের অধিকারী হবে।

اَللّٰهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلاَةِ الْقَائِمَةِ آتِ مُحَمَّدًا الْوَسِيْلَةَ وَالْفَضِيْلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَّحْمُودًا الَّذِي وَعَدْتَهُ
(আল্লা-হুম্মা রব্বা হা-যিহিদ দা‘ওয়াতিত তা-ম্মাহ, ওয়াস সলা-তিল ক্বা-ইমাহ, আ-তি মুহাম্মাদানিল ওয়াসি-লাতা ওয়াল ফাদ্বি-লাহ, ওয়াব‘আসহু মাক্বা-মাম মাহমুদা, আল্লাযি ওয়া‘আদতাহ)
হে আল্লাহ—এ পরিপূর্ণ আহ্বান ও প্রতিষ্ঠিত নামাজের রব! মুহাম্মাদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দান করুন ওয়াসিলাহ ও (বিশেষ) মর্যাদা। আর তাঁকে পৌঁছে দিন মাকামে মাহমুদে (প্রশংসিত স্থানে), আপনি যার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’’26

আল্লাহুম্মা সল্লি ওয়া সাল্লিম ওয়া বারিক আলা নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদ ওয়া আ-লিহি।

  1. ইমাম ইবনু হিব্বান, আস-সহিহ: ৭১১১; হাদিসটি হাসান ↩︎
  2. ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ১৫ ↩︎
  3. ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ৪৭২; ইমাম আহমাদ, আল-মুসনাদ: ১২৫৭৯ ↩︎
  4. ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ৭০৩৭ ↩︎
  5. ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৬১৬৮ ↩︎
  6. সুরা আহযাব, আয়াত: ০৬ ↩︎
  7. ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৪৭৮১ ↩︎
  8. ইমাম ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ৩১৩; হাদিসটি হাসান সহিহ ↩︎
  9. ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ২৪৩৬; হাদিসটি সহিহ ↩︎
  10. ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৬৫৬৬ ↩︎
  11. ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ৭৩৫ ↩︎
  12. সুরা কাহাফ, আয়াত: ০৬ ↩︎
  13. ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৩২৩১; ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ৪৫৪৫ ↩︎
  14. সুরা তাওবাহ, আয়াত: ১২৮ ↩︎
  15. সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ১০৭ ↩︎
  16. ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান: ১১৯৪; হাদিসটি সহিহ ↩︎
  17. সুরা আনফাল, আয়াত: ৩৩ ↩︎
  18. ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ৭১৫২ ↩︎
  19. ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ৬৯ ↩︎
  20. সুরা মায়িদাহ, আয়াত: ১১৮ ↩︎
  21. ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ৩৮৭ ↩︎
  22. ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৬৬৩২ ↩︎
  23. ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ৩৭৯ ↩︎
  24. শারহু মুসলিম: ৩/৭৫ ↩︎
  25. ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ২৪৪১; হাদিসটি সহিহ ↩︎
  26. ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৬১৪ ↩︎

লিখেছেন

Picture of নুসুস টিম

নুসুস টিম

কুরআন ও হাদিসের মূল পাঠকে নুসুস (text) বলা হয়। নুসুসের উপর ভিত্তি করেই আমরা লেখালেখি করি।

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন
Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture