একবার এক ইহু’দি নারী নবিজিকে দাওয়াত করে। সে একটি ভুনা বকরী পেশ করে, কিন্তু তাতে বিষ মিশিয়ে দেয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেটি থেকে খান এবং তাঁর সাথে থাকা কয়েকজন সাহাবিও খান। হঠাৎ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে ওঠেন,
‘‘তোমরা তোমাদের হাত গুটিয়ে নাও। কারণ আমি বুঝতে পারছি, এটিতে বিষ মেশানো আছে।’’
(বিষক্রিয়ার ফলে) বিশ্র আল-আনসারি (রা.) মারা যান। নবিজি ইহুদি নারীকে ডেকে এনে প্রশ্ন করেন,
‘‘তুমি যা করলে, তা করতে কোন্ জিনিস তোমাকে প্ররোচিত করেছে?’’
সে বললো,
‘আপনি যদি সত্য নবি হয়ে থাকেন, তাহলে আমি যা করেছি, তাতে আপনার ক্ষতি হবে না। আর যদি আপনি (সাধারণ কোনো) বাদশাহ হয়ে থাকেন, তাহলে আমি আপনার থেকে মানুষকে শান্তি দিতে চেয়েছি।’
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দেশ দিলে পরে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় (যেহেতু সে বিষযুক্ত খাবার দিয়ে একজনকে হত্যা করেছে)। নবিজি মৃত্যুর আগেও এর ব্যথায় আক্রান্ত ছিলেন। তিনি সেই সময় বলেন,
‘‘আমি সর্বদা সেই লোকমার ব্যথা অনুভব করছি, যা আমি খাইবারে (ইহুদি নারীর দাওয়াতে) খেয়েছিলাম। এই সময়টাতে তা যেন আমার প্রধান ধমনী কেটে দিচ্ছে!’’1
কিছু লোক দাবি করেন, নবিজি ইলমুল গায়েব তথা অদৃশ্যের খবর জানতেন! নাউযুবিল্লাহ! যে গুণের অধিকারী কেবল আল্লাহ, সেটিকে তারা নবিজির জন্য সাব্যস্ত করে!
উপরের হাদিসটি থেকে আমরা কী শিখলাম?
নবিজি গায়েব তথা অদৃশ্যের খবর জানতেন?
তিনি যদি অদৃশ্যের খবর জানতেনই, তবে কেন নিজে এই বিষযুক্ত খাবার খেয়ে মৃত্যু পর্যন্ত কষ্ট পেলেন আর কেন তাঁর সামনে একজন সাহাবি এই খাবার খেয়ে মারা গেলেন, তবুও তিনি কিছু বললেন না?
আচ্ছা, আরো স্পষ্ট দুটো আয়াত আমরা দেখে নিই। তাহলে আর কোনো সন্দেহের অবকাশ থাকবে না।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘‘(হে নবি) আপনি বলে দিন, আমি আমার নিজের কল্যাণ সাধনের এবং অকল্যাণ সাধনের মালিক নই, কিন্তু যা আল্লাহ চান (তা ব্যতীত)। আর আমি যদি গায়েবের কথা জেনে নিতে পারতাম, তাহলে কল্যাণের প্রাচুর্য পেয়ে যেতাম এবং কোনো অনিষ্ট আমাকে স্পর্শ করতো না।’’2
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘‘বলুন, আল্লাহ ব্যতীত আসমান ও জমিনে কেউ গায়েবের খবর জানে না এবং তারা (এটাও) জানে না যে, কখন তারা পুনরুজ্জীবিত হবে।’’3
তারা কিছু অস্পষ্ট হাদিস এনে নিজেদের পক্ষে দলিল দিতে চায়। বিশেষ করে, নবিজি কিয়ামতের বিভিন্ন আলামত বলেছেন বা ভবিষ্যতে ঘটবে, এমন কিছু কথা বলে গেছেন। তাদের আমরা বলি, মূলত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গায়েব তথা অদৃশ্যের তথ্য সেটুকুই জানতেন, যেটুকু তাঁকে জানানো হতো। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা নবিজির ব্যাপারে বলেন,
‘‘তিনি (নবিজি) নিজ ইচ্ছায় কিছু বলেন না, যতক্ষণ না তাঁর নিকট ওহি অবতীর্ণ হয়।’’4
একটি দীর্ঘ হাদিসে মা আয়িশা (রা.) বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি এরূপ বলে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম5 আল্লাহর ওহি ব্যতীত কাল কি হবে তা জানাতে পারেন, সে-ও আল্লাহর উপর ভীষণ অপবাদ দিলো। কেননা আল্লাহ বলেন,
‘বলুন, আসমান ও জমিনে আল্লাহ ছাড়া গায়েবসংক্রান্ত কোনো কিছু কেউই জানে না6।’
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আমরা আমাদের হৃদয়ের মণিকোঠায় রাখি। আমরা তাঁর সম্মানে জীবন উৎসর্গ করতেও দ্বিধা করি না। কিন্তু তাঁর শান-মর্যাদায় আমরা এমন কিছু বলি না, যা আল্লাহর কিতাবের সাথে সাংঘর্ষিক হয়। ‘নবিজি গায়েব জানেন’ এ ধরনের কুফরি আকিদা আমরা লালন করি না।
আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদ, ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ।
- ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান: ৪৫১২; হাদিসটি হাসান সহিহ ↩︎
- সুরা আল আ’রাফ, আয়াত: ১৮৮ ↩︎
- সুরা আন নামল, আয়াত: ৬৫ ↩︎
- সুরা আন-নাজম, আয়াত: ৩-৪ ↩︎
- ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ৩২৮ ↩︎
- সুরা নামল, আয়াত: ৬৫ ↩︎