Writing

নীরবতার সৌন্দর্য

আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি চুপ থাকলো, সে নাজাত পেলো।’
(সুনানে তিরমিযী, ২৫০১)
যে ব্যক্তি চুপ থাকার নীতি অবলম্বন করলো, যে কথা না বলবার কৌশল শিখে নিয়েছে, সে নিঃসন্দেহে সফলকাম। আমাদের বেশিরভাগ মানুষের জন্যই কথা না বলা, কথা বলার চাইতেও বেশি কঠিন। নিজের জিহবা সংযত রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। এবং তাই নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যে চুপ থাকার মাঝে মুক্তি নিহিত।

রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল দীর্ঘসময় নীরবতার মাঝে ডুবে থাকা। তিনি অনর্গল কথা বলতে থাকতেন না।

সিমাক ইবনে হারব বলেন, আমি জাবির ইবনে সামুরা (রা.) কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি রাসূলের মজলিসে বসেছিলেন? সাহাবিদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন কি?
জাবির(রা.) উত্তরে বলেন, হ্যা আমি সাহাবিদের একজন ছিলাম এবং আমি দেখতাম যে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেকটা সময় নীরব থাকতেন এবং বেশি একটা হাসতেনও না। সাহাবীরা তাদের জাহেলী জীবনের নানা গল্প করতেন, কবিতা পাঠ করতেন, সেসব শুনে রাসূল (সা.) মুচকি হাসতেন।

আয়েশা (রা.) বলেন,
রাসূল (সা.) এতটা স্পষ্ট করে থেমে থেমে কথা বলতেন যে যদি আপনি চাইতেন, তবে শব্দসংখ্যা গণনা করা যেতো।
( সুনানে আবু দাউদ )

অর্থাৎ সংক্ষিপ্ত, ছোট ছোট শব্দে ভাব প্রকাশ করা। অনেক বেশি সময় ধরে বলে না যাওয়া। এবং এটি একজন জ্ঞানী, বিজ্ঞ ব্যক্তির জন্য অন্যতম কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্য। শুধু আমাদের ধর্মের বিশ্বাসীদের জন্য নয়, এটি একটি সার্বজনীন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে একজন জ্ঞানী ব্যক্তি শুধুমাত্র তখনই নিজের জিহবাকে সঞ্চালিত করে, যখন কথা বলা প্রয়োজন। অন্যান্য সময় চুপ থাকে।

একজন সাহাবী বলেছেন, যখন কোন ব্যক্তিকে তুমি দেখবে যে সে দুনিয়ার প্রতি নিরাসক্ত, এবং কম কথা বলে, তার সোহবত লাভে লেগে যাও। কেননা আল্লাহ তাকে জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দান করেছেন।

অর্থাৎ যখন কেউ দুনিয়াবি বিষয়াদির প্রতি অতিরিক্ত চিন্তিত থাকবে না, নিজের কথাবার্তায় লাগাম টেনে ধরার মতো সক্ষম হবে, তাহলে তাকেই বন্ধু বানিয়ে নিন। কেননা তাঁর সঙ্গ থেকে আপনি নিশ্চিতভাবেই উপকৃত হবেন।

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন,
“আমি তোমাদের অনর্গল কথা বলে যাওয়ার ব্যাপারে সাবধান করে দিচ্ছি। কেননা এটি যথেষ্ট যে তার যা বলা প্রয়োজন, সে তা বললো এবং চুপ রইলো।”

আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) বলেন,
‘যাতে কোন ফায়দা নেই, তা ছেড়ে দাও। যে ইস্যু নিয়ে কথা বলা তোমার কাজ নয়, সে বিষয়ে চুপ থাকো। এবং তোমার জিহ্বা নিয়ন্ত্রণ করো, একে এমনভাবে গুটিয়ে রাখো যেমনভাবে তুমি তোমার স্বর্ণ এবং রৌপ্য গচ্ছিত রাখো।’

এমন নির্দেশনাই আমরা পেয়ে থাকি সাহাবী এবং পূর্বসূরি সালাফগণের থেকে।
খানিকটা ভেবে দেখুন যে, কত বিপদ থেকেই না রক্ষা পাওয়া সম্ভব হবে যদি আমরা রাগান্বিত অবস্থায় নিজের জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণ করে চুপ হয়ে যেতে পারি!

আপনার একটি কথা হয়তো দীর্ঘসময়ের বন্ধুত্বের সম্পর্ক এক নিমিষে শেষ করে দিতে পারে। একটি তর্ক আপনার প্রিয়তমার সাথে আপনার সুখের সম্পর্ক নষ্ট করে দিতে পারে।

বর্তমান সময়ে নীরবতা অবলম্বন শুধুমাত্র কথা বলার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়। বরং সোশ্যাল মিডিয়া একটি অন্যতম বিশাল সেক্টর। ফেসবুক, টুইটার, ইমেইল। যখন আপনি রাগান্বিত অবস্থায় আছেন, কখনোই ফেসবুক পোস্ট লিখবেন না কিংবা টুইট করবেন না। শান্ত হোন, ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করুন যে আপনি আসলে কীরূপ শব্দাবলী ব্যবহার করতে যাচ্ছেন। তারপর লিখুন। কথিত আছে যে, নীরবতার মাধ্যমে বোকাও জ্ঞানী অনুমিত হয়। এবং বিজ্ঞজন তার অনর্গল কথার জন্য বোকা হিসেবে সাব্যস্ত হয়।

তাই, আমরা যেন আমাদের আখলাক নিয়ে সচেতন হই। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দিন।
আমীন।

মূল- ড. ইয়াসীর ক্বাদী

লিখেছেন

Picture of সাবিহা সাবা

সাবিহা সাবা

আল্লাহর কাছে জবাবদিহির ভার লঘু করতে কিছুটা লিখালিখির চেষ্টা করি। এক্ষেত্রে অনুবাদ সাহিত্য বিশেষ পছন্দ।
আকাশে পরিচিত হতে চাই💙
জমিনে না হয় অপরিচিত ই থাকলাম...

All Posts

আল্লাহর কাছে জবাবদিহির ভার লঘু করতে কিছুটা লিখালিখির চেষ্টা করি। এক্ষেত্রে অনুবাদ সাহিত্য বিশেষ পছন্দ।
আকাশে পরিচিত হতে চাই💙
জমিনে না হয় অপরিচিত ই থাকলাম…

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture