নাটক-সিনেমা নির্মাণকারী নায়ক-নায়িকা অভিনেতা প্রতি সতর্কবার্তা
নাটক-সিনেমা নির্মাণকারী এবং নায়ক-নায়িকা, অভিনেতা, কলা-কুশলী ইত্যাদির প্রতি সতর্কবার্তা।
হারাম নাটক-সিনেমা, মিউজিক ভিডিও ইত্যাদি তৈরিতে যেসব নায়ক-নায়িকা, অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক, কলা-কুশলী প্রমুখগণ জড়িত তারা সকলেই মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কারণ যারা সমাজে পাপ কর্মের প্রসার ঘটায় এবং মানুষকে প্রকাশ্যে পাপাচারে উদ্বুদ্ধ করে তাদের অপরাধ অত্যন্ত ভয়ানক। আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করবেন না বলে ঘোষণা করেছেন। পাশাপাশি তিনি তাদেরকে দুনিয়া এবং আখিরাত উভয় জগতে কঠিন শাস্তির হুমকি দিয়েছেন। যেমন: মহান আল্লাহ বলেন,
إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَن تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ
“যারা পছন্দ করে যে, ইমানদারদের মধ্যে অশ্লীলতা প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্যে ইহা ও পরকালে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।”
[সূরা নূর: ১৯]
অশ্লীল, হারাম কার্যক্রম ও পাপকর্ম করা আল্লাহর নিকট ঘৃণিত এবং শাস্তিযোগ্য গুনাহ হলেও আল্লাহ চাইলে এসব গুনাহগারকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। কিন্তু পাপ বিস্তারে জড়িত লোকদের কোন ক্ষমা নেই।
সুতরাং আমাদের সমাজে যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান হারাম স্টেজ শো, কনসার্ট, গান-বাজনার প্রতিযোগিতা, ছেলে-মেয়েদের মডেলিং, মিউজিক ও নাচ-গান শিক্ষা, মিউজিক ভিডিও, অশ্লীল ওয়েব সিরিজ, নোংরা রোমান্টিক ভিডিও, নাটক-সিনেমা, কাছে আসার গল্প ইত্যাদি নানা ধরনের হারাম জিনিস বিভিন্ন টিভি চ্যানেল, youtube ও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে সমাজে ছড়িয়ে দিচ্ছে তারা সবাই উক্ত আয়াতের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে। কারণ তারা সমাজে অশ্লীলতা প্রসারকারী।
কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ তাদের এই কাজের কারণে গুনাহ অর্জন করবে এর পেছনের কলাকুশলী, চ্যানেলের মালিক, নির্মাতা, ক্যামেরাম্যান, ভিডিও এডিটর, ডিরেক্টর, প্রযোজক, নায়ক-নায়িকা অভিনেতা, স্পন্সর এবং নানাভাবে সহায়তাকারী ইত্যাদি সকলের আমলনামায় তাদের সকলের সমপরিমাণ গুনাহ অবিরাম ধারায় জমা হতেই থাকবে যদি না তারা জীবদ্দশায় আল্লাহর নিকট লজ্জিত অন্তরে তওবা করে এবং তাদের হারাম কার্যক্রম গুলোকে সাধ্য অনুযায়ী মুছে ফেলার চেষ্টা করে।
পাপকর্ম প্রকাশকারীরা আল্লাহর ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে না:
মহান আল্লাহ বান্দার অনেক পাপ গোপন রাখেন এবং তিনি চান মানুষ যেন তাদের গোপন পাপাচার প্রকাশ না করে। যারা গোপন পাপ জনসম্মুখে প্রকাশ করে তাদেরকে তিনি ক্ষমা করবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
كُلُّ أُمَّتِي مُعَافىَ إِلاَّ الْمُجَاهِرِيْنَ، وَإِنّ مِنَ المُجَاهَرَةِ أنْ يَّعْمَلَ الرَّجُلُ بِاللَّيْلِ عَمَلًا ثُمَّ يُصْبِحُ وَقَدْ سَتَرَهُ اللهُ عَلَيهِ فَيقُولُ : يَا فُلَانُ عَمِلتُ الْبَارِحَةَ كَذَا وَكَذَا وَقَدْ بَاتَ يَسْتُرُهُ رَبُّهُ وَيُصبِحُ يَكْشِفُ سِتْرَ اللهِ عَنْه
“পাপকর্ম প্রকাশকারীরা ছাড়া আমার সকল উম্মত ক্ষমা প্রাপ্ত হবে।
আর পাপকর্ম প্রকাশ করার অর্থ হলো, কোন ব্যক্তি রাতে কোন পাপকাজ করে, যা আল্লাহ গোপন রাখেন। কিন্তু সকাল হলে সে বলে বেড়ায়,
’হে অমুক, আমি আজ রাতে এই এই কাজ করেছি।’ অথচ সে এমন অবস্থায় রাত অতিবাহিত করেছিল যে, আল্লাহ তার পাপ গোপন রেখেছিলেন। কিন্তু সে সকালে উঠে সে নিজেই আল্লাহ যা গোপন রেখেছিলেন তা প্রকাশ করে দেয়।”
[বুখারী, হা/ ৬০৬৯, মুসলিম, হা/৭৬৭৬]
যারা প্রকাশ্যে পাপাচার করে তারাও সমাজে পাপ ও অশ্লীলতা প্রসারকারী হিসেবে পরিগণিত হবে। কারণ তাদের দেখে অন্যান্য মানুষ আল্লাহর নাফরমানি ও পাপকর্মের পথ খুঁজে পাবে, তাদের দেখে অন্যরা অন্যায়-অপকর্মে অনুপ্রাণিত হয়, যারা সে বিষয়ে জানতো না তারা জানে এবং এর কলা-কৌশল শিখে নেয়। তাদের দেখাদেখি অন্যান্য মানুষের কাছে আল্লাহর শরিয়ত লঙ্ঘন করা সহজ হয়ে যায়।
আল্লাহ তাআলা তার ঈমানদার বান্দাদের অনেক পাপরাশি গোপন রাখেন:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
يُدْنَى الْمُؤْمِنُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ رَبِّهِ عَزَّ وَجَلَّ حَتَّى يَضَعَ عَلَيْهِ كَنَفَهُ فَيُقَرِّرُهُ بِذُنُوبِهِ فَيَقُولُ هَلْ تَعْرِفُ فَيَقُولُ أَىْ رَبِّ أَعْرِفُ . قَالَ فَإِنِّي قَدْ سَتَرْتُهَا عَلَيْكَ فِي الدُّنْيَا وَإِنِّي أَغْفِرُهَا لَكَ الْيَوْمَ . فَيُعْطَى صَحِيفَةَ حَسَنَاتِهِ وَأَمَّا الْكُفَّارُ وَالْمُنَافِقُونَ فَيُنَادَى بِهِمْ عَلَى رُءُوسِ الْخَلاَئِقِ هَؤُلاَءِ الَّذِينَ كَذَبُوا عَلَى اللَّهِ
“কিয়ামতের দিন ঈমানদার ব্যক্তিকে তাদের রবের খুব কাছে নিয়ে আসা হবে। তারপর তিনি তার উপর পর্দা ফেলে দিবেন। এবং তার গুনাহ সম্পর্কে তার থেকে স্বীকারোক্তি গ্রহণ করবেন।
তিনি জিজ্ঞাসা করবেন, তুমি (তোমার গুনাহ) স্বীকার কর কি? সে বলবে, হে রব! আমি স্বীকার করছি।
তারপর তিনি বলবেন, তোমার এ গুনাহ দুনিয়ায় আমি গোপন রেখেছিলাম। আজ তোমার এ গুনাহগুলোকে আমি ক্ষমা করে দিলাম।
তারপর তার নেকির আমলনামা তার নিকট দেওয়া হবে।
আর কাফির ও মুনাফিকদেরকে উপস্থিত সমস্ত মানুষের সামনে ডেকে ঘোষণা দেওয়া হবে, এরাই তারা যারা আল্লাহ তাআলার উপর মিথ্যারোপ করেছিল।”
[সহি বুখারী ও মুসলিম। সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫১/ তাওবা, পরিচ্ছেদ: ৮. হত্যাকারীর তাওবা আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য; যদিও সে বহু হত্যা করে থাকে]
কেউ যদি চায় যে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার গুনাহগুলো প্রকাশ না করুন তাহলে সে যেন দুনিয়াতে তার নিজের বা অন্যের গুনাহগুলো প্রকাশ না করে:
হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«لاَ يَسْتُرُ عَبْدٌ عَبْداً في الدُّنْيَا إلاَّ سَتَرَهُ اللهُ يَوْمَ القِيَامَةِ»
“যে দুনিয়াতে কোনো বান্দার দোষ গোপন রাখে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার দোষ গোপন রাখবেন।’’
[মুসলিম, হা/২৫৯০, রিয়াদুস সালেহীন, অধ্যায়: বিবিধ, পরিচ্ছেদঃ ২৮: মুসলিমদের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখা জরুরি এবং বিনা প্রয়োজনে তা প্রচার করা নিষিদ্ধ]
কেউ পাপ করলে আল্লাহ চান সে যেন তা প্রকাশ না করে:
হাদিস চেয়ে বর্ণিত হয়েছে,
إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ حَلِيمٌ حَيِيٌّ سِتِّيرٌ يُحِبُّ الْحَيَاءَ وَالسَّتْرَ
“আল্লাহ তাআলা সহনশীল, লজ্জাশীল, তিনি (মানুষের পাপ) ঢেকে রাখেন। তিনি লজ্জাশীলতাকে এবং মানুষের গুনাহগুলোকে ঢেকে রাখতে পছন্দ করেন।”
[সহীহ-আবু দাউদ ৪০১২, ইরওয়াউল গালীল ২৩৩৫, মিশকাত ৪৪৭]
– শাইখ আব্দুল হক দেহলভি বলেন, সিত্তীর নামটির অর্থ, মহান আল্লাহ তার বান্দাদেরকে অপদস্থ করেন না এবং তাদের অপকর্মগুলো ঢেকে রাখেন।” [লুময়াতুত তাহকিক ফী শারহে মিশকাতিল মাসাবিহ, ২/১৭৯]
– ইমাম বায়হাকি বলেন,
” ستير ” يعني أنه ساتر يستر على عباده كثيرا ، ولا يفضحهم في المشاهد .
كذلك يحب من عباده الستر على أنفسهم ، واجتناب ما يشينهم ، والله أعلم
“সিত্তীর অর্থ: আল্লাহ মানুষের প্রচুর পরিমাণ (দোষত্রুটি ও গুনাহ) ঢেকে রাখেন। সেগুলোকে জনসম্মুখে প্রকাশ করে দিয়ে তাদেরকে অপদস্থ করেন না। অনুরূপভাবে তিনি এটাও পছন্দ করেন যে, বান্দাগণ কোনও পাপকর্ম করে ফেললে তা যেন ঢেকে রাখে এবং নোংরা ও অশালীন কাজ থেকে দূরে থাকে। আল্লাহ সবচেয়ে বেশি জানেন।”
[আল আসমা ওয়াসিফাত, পৃষ্ঠা নাম্বার ১৪৮]
আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন।
আমিন।