আজকে পহেলা মে। বিশ্ব শ্রমিক দিবস। এই দিবসটি বিশ্বের ৮০-টি দেশে পালন করা হয়ে থাকে। তো এই শ্রমিক দিবস উপলক্ষ্যে আজকে বহু মানুষ বহু শ্লোগান দিচ্ছে। বহু লেখক বহুরকম লেখা লিখছে। শ্রমিকদের অধিকারের ব্যাপারে সচেতন করছে। আমি সেসব নিয়ে কিছু লেখবো না। আমি ওপরে যে ছবিটি আছে না? সে ছবিটির আলোকে নারী-পুরুষের শ্রম ও সমতা নিয়ে দুটো কথা বলতে চাই। চলুন, তাহলে শুরু করি—
এই যে এমন ধরনের পরিশ্রম, এসব পরিশ্রম কি আদৌ একজন নারীর সাথে যায়? যারা নারী পুরুষের সমতার বাণী কপচিয়ে বেড়ান, তারাও কি কখনো নিজেদের মা-বোন, স্ত্রী-কন্যাকে এসব শ্রমে জড়িত হতে দেবেন? এখানে যে পরিমাণ পুরুষ শ্রমিক আছে, সে পরিমাণ নারী শ্রমিক কি আপনি নিয়োগ করা সমর্থন করবেন?
শত শত তলা বিল্ডিং তৈরির কাজ করতে এতো ওপরে, এতো উঁচুতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে, সেগুলোকে মেরামত করতে, আকর্ষণীয় করতে, রঙ্গ করতে আপনি যতোই গরিব আর অভাবী হন, আপনি কি আপনার পরিবারের কোনো নারীকে কাজ করতে দেবেন?
এসব কি আদৌও একজন নারীর সত্ত্বার সাথে যায়? যেকোনো বিবেকবান ব্যক্তিই স্বীকৃতি দেবেন— অবশ্যই যায় না।
তার মানে নারী পুরুষের সমতার শ্লোগান হচ্ছে একটা ফালতু শ্লোগান। নারী-পুরুষ সবাই সবকিছু পারে না। সবার কাজও সব না। সবার সব দায়িত্ব না। আল্লাহ সবাইকে সব দায়িত্ব দিয়ে সৃষ্টি করেননি। কেউ কেউ খুব মধুর করে একটা শ্লোগান দেন— পুরুষ যতোটুকু আল্লাহর খলিফা, নারীও ঠিক ততোটুকুনই আল্লাহর খলিফা। এটুকু ১০০ ভাগ ঠিক আছে, কিন্তু তারা পরবর্তীতে যা করেন, তা হচ্ছে নারীকে পুরুষের প্রতিদ্বন্দ্বী ও প্রতিযোগী বানিয়ে ফেলেন। অথচ নারী-পুরুষ একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী বা প্রতিযোগী কিছুই নয়। তারা একে অন্যের সহযোগী। হ্যাঁ একটা জায়গায় প্রতিযোগী হতে পারে, সেটা হচ্ছে আমলের ক্ষেত্রে। ইবাদাতের ক্ষেত্রে। সৎ কাজের ক্ষেত্রে। কে কারচেয়ে আল্লাহর আনুগত্য বেশি করতে পারে, সেটার প্রতিযোগিতা হতে পারে, কিন্তু সার্বিকভাবে তারা একে অপরের সহযোগী; প্রতিযোগীও নয়, প্রতিদ্বন্দ্বী তো নয়ই!
সমতার শ্লোগানের পরিবর্তে “ন্যায্যতা ও ইনসাফের শ্লোগান” এবং সেটা বাস্তবায়নই হচ্ছে সবচেয়ে বেশি ফলদায়ক। কিন্তু না, একশ্রেণির সিম্প আছে, তারাও সমতার শ্লোগানই কপচান। অথচ সমতা কখনো কখনো জুলুমও হয়ে যেতে পারে। যেমন উক্ত পিকচারের পুরুষ শ্রমিকদের মতো করে যদি নারীদেরকেও শ্রমের ময়দানে নামিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে সেটা অবশ্যই জুলুম হবে।
নারী-পুরুষ সমান অধিকারই যদি আপনি চান, তাহলে এসব জায়গায়ও নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে কোটা চালু করে হলেও করতে হবে।
যারা সমান অধিকারের কথা বলেন, এক্ষেত্রে তাদের সমান-অধিকার কোথায় লুকিয়ে যায়?
শিক্ষায় সমান অধিকার, নেতৃত্বে সমান অধিকার, মর্যাদায় সমান অধিকার, চাকরিতে কোটা দিয়ে হলেও পুরুষের জায়গা দখলের অধিকার যখন আছে; তখন এসব কাজকর্মে সমান অধিকার নেই কেন?
এক্ষেত্রে ইসলামি/হিজাবী/স্কার্ফি ফেমিনিস্ট আপারা ও তাদের সিম্প ভাইয়ারা একটু বেশিই চালাকচতুর। তারা আবার এসব সিচুয়েশনে বিপদে পড়ে বলে— না না, আমরা সমান অধিকার চাই না। আমরা ইসলামি (সমান) অধিকার চাই।
ইসলামি (সমান) অধিকারেও আবার ঝুঁকিপূর্ণ এসব কাজকর্ম বাদে অন্যান্য বিষয়ে দিব্যি সমান অধিকার চলে তাদের কাছে। তারা গাছের আগার অংশও খেতে চায়, নিচের অংশও। মূলত এরা উট পাখির মতো।
শুনেছি উট পাখিকে নাকি উড়তে বললে তারা জবাব দেয়— আমরা পাখি না, উট। এরপর যখন তাদেরকে বলা হয়, তাহলে বোঝা বহন করো। সে সময় আবার তাদের জবাব হয়— না, আমরা পাখি! এই হলো তাদের অবস্থা। সত্যি বলতে কী, এদের চেয়ে পিউর ফেমিনিস্টরা অন্তত একটা দিকে সৎ, সেটা হচ্ছে তারা ইসলামকে নিজেদের স্বার্থে খুব একটা ব্যবহার করে না। অথচ এরা করে। আল্লাহ এদেরকে হেদায়েত করুক।
যাহোক, আমরা সমান অধিকারের দিকেই ফিরে আসি। ক্রিকেট খেলার দিকেই আসুন, শোয়েব আকতারের পেইস বল মোকাবিলা করতে যদি আরেকজন নারী ক্রিকেটার (যেমন ধরুন বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতিকে) নামিয়ে দেওয়া হয়, সেটা কি কখনো সঠিক হবে? সে কি আদৌও পারবে শোয়েব আকতারের বল মোকাবিলা করতে? নারী সব পারি, এরকম হলে তো এটাও পারার কথা। তাই না?
অথচ নারী-পুরুষ সমতার বুলি কপচানো কোনো ব্যক্তিই দেখবেন এগুলোর কিছুই (ওপরের পিকচারটির মতো করে নারীদেরকে শ্রমিক বানানো বা শোয়েব আকতার কিংবা লাসিত মালিঙ্গার মোকাবিলায় অন্য আরেকজন নারী ক্রিকেটার নামিয়ে দেওয়া) সমর্থন করে না এবং করবেও না। কিন্তু ঠিকই উক্ত ব্যক্তি উঁচু উঁচু দালানকোঠা বিনির্মাণের কাজে ঝুলে ঝুলে পুরুষ শ্রমিকদের কাজ করাটা বা পুরুষ শ্রমিক নিয়োগ করাটা সমর্থন করবেন। এবং শোয়েব আকতার বা লাসিথ মালিঙ্গার মোকাবিলায় তামিম ইকবাল কিংবা শচিন টেন্ডুলকারকে মাঠে নামিয়ে দেওয়াটা সমর্থন করবেন। অথচ সমতা বা নারীরাও পুরুষের মতোই শক্তিশালী— এ কথাগুলোর সত্যিকারের দাবি হচ্ছে পুরো উল্টো। তখন শোয়েব আকতারের বল অন্য একজন নারী ক্রিকেটার মোকাবিলা করতে বাধ্য। উঁচু উঁচু দালানকোঠা বিনির্মাণে পুরুষ শ্রমিকদের মতো নারীরাও ঝুলে ঝুলে তীব্র দাবদাহে কাজ করতে বাধ্য।
সুতরাং যারা নারী পুরুষ সমতার দাবি করে, কিংবা নারীরাও পুরুষের মতোই শক্তিশালী, ইত্যাদি শ্লোগান কপচান, এরা হয় বাস্তবতা বিবর্জিত, জ্ঞানপাপী ইবলিশ, নয়তোবা এরা নারী জাতির শত্রু। নারীর ফিতরাত নষ্টকারী। নারীর নারীত্বের হন্তারক!
আজকে যারা নারী-পুরুষ সমতার শ্লোগান দেন, বাক স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের বুলি আওড়ান, তারাই কিন্তু এগুলোর দুশমন। এই যে আজকে পহেলা মে, বা শ্রমিক দিবস অথবা মে দিবস, এর পেছনেও আছে এই ভদ্রবেশী জালিমদের জুলুমের ইতিহাস। মূলত ১৮৮৬ সালের ১লা মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটে ৮ ঘণ্টা শ্রমদিনের দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর পুলিশ গুলি চালিয়ে ১১ জন শ্রমিককে হত্যা করে।
আবার বিপরীতে ইসলামের দিকে নজর বুলান, ইসলামের ইতিহাসে এভাবে কখনোই শ্রমিকদেরকে হত্যা করা হয়নি। বরং ইসলামের শিক্ষাই হলো,
“ঘাম শুকানোর আগেই শ্রমিককে তার পারিশ্রমিক দিয়ে দেওয়া। তাঁর সাথে উত্তম আচরণ করা”1
যাদের হাত এভাবে শ্রমজীবী মানুষের রক্তে রঞ্জিত হয়, মানবাধিকার ভূলন্ঠিত হয়, শ্রমিকদের রক্তে যাদের হাত দগদগে ক্ষত হয়ে আছে, এরকম অসভ্যতার ধারক-বাহকরাই কিন্তু আজকে আমাদেরকে নারী পুরুষের সমতার বাণী, মানবাধিকারের বাণী শোনায়। হায়, কী বিচিত্র এই দুনিয়া!
- ইবনে মাজাহ : ২৪৪৩ ↩︎