‘মুসলমান’ শব্দ ব্যবহারে কোনও আপত্তি আছে কি?
‘মুসলমান’ শব্দ ব্যবহারে কোনও আপত্তি আছে কি? নাকি ‘মুসলিম’ শব্দ ব্যবহার করা জরুরি?
আমরা নিজেদের ‘মুসলিম’ বা ‘মুসলমান’ বলে থাকি। কিন্তু ‘মুসলমান’ শব্দটির ব্যাবহার কুরআন ও হাদিস কতটুকু সমর্থন করে? একজন আলিম থেকে শুনলাম যে, ‘মুসলিম’ শব্দটি ব্যবহার করতে হবে; ‘মুসলমান’ শব্দটি ব্যবহার করা যাবে না। এটি কতটুকু সঠিক?
মূলত: ‘মুসলিম’ আরবি আর ‘মুসলমান’ ফারসি শব্দ। দুটির অর্থ একই। আত্মসমর্পণ কারী বা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। ফারসি ভাষায় এভাবে শব্দের শেষে ‘আন’ (আলিফ+নূন) যুক্ত প্রচুর শব্দ রয়েছে। যেমন: মেহমান, মেজবান, মেহেরবান ইত্যাদি।
পাক-ভারত উপমহাদেশ এক সময় ফারসি ভাষী মুসলিমগণ বহু বছর শাসন করার ফলে অত্র অঞ্চলে প্রচুর ফারসি শব্দের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। একই কারণে বাংলা ভাষায় এ জাতীয় বহু আরবি, ফারসি, উর্দু ইত্যাদি শব্দের আত্তীকরণ ঘটেছে।
ইতিহাস বলে, ষোড়শ শতকের শেষদিকে সম্রাট আকবরের সময়ে বঙ্গদেশ মোগল সাম্রাজ্যভুক্ত হলে ফারসি শব্দ বাংলায় প্রবেশ করতে থাকে। বাংলা ভাষায় আরবি-ফারসি-তুর্কি শব্দের সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। যেমনটি পরবর্তীতে ইংরেজ শাসনের কারণে বহু ইংরেজি শব্দ এ সব অঞ্চলের মানুষের ভাষার মধ্যে স্থান দখল করে নিয়েছে।
এভাবে বিভিন্ন ভাষার সমন্বয়ে আমাদের নিজস্ব ভাষার শব্দ ভাণ্ডার বৃদ্ধি পেয়েছে, হয়েছে উন্নত, সমৃদ্ধ ও গতিশীল।
সুতরাং কোন বিদেশী শব্দ যখন অন্য ভাষায় একাকার হয়ে প্রাত্যহিক জীবনে সাধারণ মানুষের ভাষায় রূপান্তরিত হয় এবং অভিধান ও ভাষা সাহিত্যে তার স্থান দখল করে নেয় তখন তাকে সে দেশের ভাষার অংশ হিসেবে গণ্য করতে হয়। আলাদাভাবে ভাবার কোনও সুযোগ থাকে না বরং তা পরিবর্তন করাকেই ভাষা বিকৃতির শামিল বলে গণ্য হয়।
সুতরাং বাংলা, উর্দু, হিন্দি, ফারসি ইত্যাদি ভাষায় যখন ‘মুসলমান‘ শব্দটি আরবি ‘মুসলিম’ শব্দকেই নির্দেশ করে এবং একই অর্থ বহন করে তখন তা ব্যবহারে শরিয়তের দৃষ্টিতে কোনও আপত্তি থাকে না-যদি না তার মধ্যে শরিয়ার সাথে সাংঘষির্ক কোন কিছু থাকে। এমন অনেক ফারসি ইসলামি শব্দ আমাদের মুসলিম সমাজে প্রচলিত রয়েছে। যেমন: নামাজ, রোজা, বেহেশত, ফেরেশতা, পয়গম্বর, জায়নামায, মুর্দা, নেকি, গোনাহ, নেককার, বদকার, পরহেজগার ইত্যাদি। এগুলোর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
অনুরূপভাবে দুনিয়াবি বিভিন্ন ক্ষেত্রেও বাংলা ভাষায় অসংখ্যা ফাসরি শব্দের প্রচল আছে। যেমন:: কারখানা, চশমা, জবানবন্দি, দরবার, দস্তখত, বাদশাহ, বান্দা, আওয়াজ, আন্দাজ, পর্দা, বাগান, রাস্তা বেহায়া, বেশরম, বেহাল, বেগম ইত্যাদি।
সুতরাং “মুসলমান’ শব্দটি ব্যবহার করা যাবে না-এ বক্তব্য সঠিক নয়।