Writing

মুনাফিক কয় প্রকার ও সম্পর্কে বিস্তারিত

মুনাফিক শব্দটি এসেছে আরবি নিফাক থেকে। নিফাক অর্থ: গোপন করা, অস্পষ্ট করা ইত্যাদি। নিফাকের কাজটিকে বলা হয় নিফাকি বা মুনাফিকি। আর যে এই কাজটা করে, তাকে বলা হয় মুনাফিক। মুনাফিককে এজন্য মুনাফিক বলা হয় যে, সে তার কুফরি বিশ্বাসকে মনের মাঝে লুকিয়ে রাখে।

মুনাফিক দুই প্রকারের হয়।

  • বিশ্বাসগত মুনাফিক (বড় মুনাফিক)
  • কর্মগত মুনাফিক (ছোট মুনাফিক)

যে মুনাফিক বাহ্যিকভাবে নিজেকে ঈমানদার দাবি করে এবং ঈমানদার হিসেবে সমাজে চলে, কিন্তু অন্তরে কুফরি বিশ্বাস লালন করে, সে হলো আকিদাগত বা বিশ্বাসগত মুনাফিক।

ইমাম ইবনু রজব (রাহ.) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর (আসমানী) গ্রন্থাবলী, তাঁর রাসুলগণ এবং পরকালের প্রতি ঈমানের কথা যে মুখে প্রকাশ (স্বীকার) করে কিন্তু এর সবগুলো কিংবা কোনোটাকে অন্তরে অবিশ্বাস করে, সে বড় মুনাফিক1

কুরআনে আল্লাহ এদের সম্পর্কে বলেন,
‘‘যখন তারা মুমিনদের সাক্ষাতে আসে, তখন বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’; আর যখন তারা নিভৃতে তাদের শয়তানদের (কাফের সর্দারদের) সাথে মিলিত হয় তখন বলে, ‘আমরা তোমাদের সাথেই আছি, আমরা শুধু তাদের (মুমিনদের) সাথে ঠাট্টা-তামাশা করি মাত্র।’’2

এ ধরনের মুনাফিকরা মূলত কাফির। এদেরকে যিনদিকও বলা হয়। এরা গাদ্দার, বিশ্বাসঘাতক। ইসলামের লেবাসে এরা বহু ক্ষতি করেছে। ইমাম ইবনুল কায়্যিম (রাহ.) বলেন, এদের ব্যাপারেই বলা হয়েছে যে, এরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে3
কুরআন মাজিদে এসেছে,

‘‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে অবস্থান করবে।’’4

নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময়ে এ ধরনের মুনাফিক অনেক ছিলো। আর এদের নেতৃস্থানীয় ছিলো আবদুল্লাহ বিন উবাই। বর্তমানে এ ধরনের মুনাফিকের সংখ্যা খুবই কম। কারণ সেই সময়ের মতো প্রয়োজন নেই, বরং এখন প্রকাশ্যেই ইসলামের বিপক্ষে দুশমনি করা যায়, ইসলামের ক্ষতি করা যায়। বাধা দেওয়ার কেউ নেই।

পক্ষান্তরে, যখন মানুষ প্রকাশ্যে নেক আমল করে কিন্তু অপ্রকাশ্যে তার উল্টো কাজ করে তখন তা কর্মগত বা ছোট মুনাফিকি বলে গণ্য হয় (ইমাম ইবনু রজব, জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম: ১/৪৩১)।

এছাড়াও নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু বৈশিষ্ট্যের কথা বলেছেন, যেগুলো কারও মাঝে থাকলে সে-ও মুনাফিক বলে গণ্য হবে। এই শ্রেণির মুনাফিকরা বিশ্বাসের দিক থেকে ঈমানদার, কিন্তু বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে মুনাফিকদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘‘চারটি স্বভাব যার মধ্যে পাওয়া যাবে, সে প্রকৃত মুনাফিক বলে গন্য হবে। যার মধ্যে এগুলোর কোনো একটি স্বভাব পাওয়া গেলো, তার মধ্যে মুনাফিকির একটি স্বভাব পাওয়া গেলো, যতক্ষণ না সে তা পরিত্যাগ করে।
(১) তার কাছে কিছু আমানত রাখা হলে, সে তা খিয়ানত করে;
(২) সে কথা বললে মিথ্যা বলে;
(৩) ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে এবং
(৪) ঝগড়া করলে গালিগালাজ করে।’’5

সহিহ মুসলিমের বর্ণনায় অতিরিক্ত এই কথাগুলোও এসেছে,
‘‘যদিও সে নামাজ পড়ে, রোজা রাখে এবং নিজেকে মুসলিম মনে করে (তবুও সে মুনাফিক)।’’6

এই যে চারটি বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হলো, এগুলো যেকোনো মুমিনের মধ্যে থাকতে পারে। এজন্য তারা বড় মুনাফিকদের মতো কাফির হয়ে যাবে না। কারণ মুনাফিকদের মধ্যে একমাত্র কাফির তারাই, যারা অন্তরে কুফরি বিশ্বাস লালন করে।

এখন কথা হলো, এ ধরনের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যকে কেন হাদিসে মুনাফিকি বলা হয়েছে?

নবিজির সময়ের বিশ্বাসগত মুনাফিকদের মাঝে কিছু কমন বৈশিষ্ট্য ছিলো। যেমন: এরা যেহেতু বাহ্যিকভাবে মুসলমান দাবি করতো এবং অন্তরে কুফরি বিশ্বাস রাখতো, তাই শুধু প্রকাশ্যেই নেক আমল করতো, কিন্তু গোপনে কাফিরদের সাথে মিলিত হতো।

ইসলামের যেসব বিধান মানা একটু কষ্টকর, সেগুলো বিভিন্ন অজুহাতে অমান্য করতো। যেমন: ফজর ও ইশার নামাজের জামায়াতে শামিল হওয়ার কাজটা কষ্টকর। এজন্য এরা এই দুটো নামাজ মসজিদে পড়তে পারতো না। হাদিসে এসেছে, ‘‘মুনাফিকদের জন্য ফজর ও ইশার নামাজের চেয়ে ভারী (কষ্টকর) আর কোনো নামাজ নেই।’’7

মূলত মুনাফিকরা বাহ্যিকভাবে ইসলাম মনে চলার চেষ্টা করতো। গোপনে যত আমল আছে, সেগুলো মোটেও করতো না। কারণ তারা তো অন্তরে ঈমানই রাখতো না। এজন্য এরা জিহাদে যেতে চাইতো না। বিভিন্ন অজুহাতে ঘরে বসে থাকতো।8

কুরআন এবং হাদিসে মুনাফিকদের ব্যাপারে খুব কঠোর কথা বলা হয়েছে। মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য যেন আমাদের মাঝে না থাকে, সেজন্য সতর্ক থাকা জরুরি। মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্যগুলো কুরআন ও হাদিসে বলা আছে। আল্লাহ আমাদেরকে এসব থেকে মুক্ত রাখুন।
আমিন।

  1. জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম: ১/৪৩১ ↩︎
  2. সুরা বাকারা, আয়াত: ১৪ ↩︎
  3. তরিকুল হিজরাতাইন, পৃষ্ঠা: ৫৯৫ ↩︎
  4. সুরা নিসা, আয়াত: ১৪৫ ↩︎
  5. ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৩১৭৮ ↩︎
  6. ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ১১৬ ↩︎
  7. ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৬৫৭ ↩︎
  8. ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৪৫৬৭ ↩︎

লিখেছেন

Picture of নুসুস টিম

নুসুস টিম

কুরআন ও হাদিসের মূল পাঠকে নুসুস (text) বলা হয়। নুসুসের উপর ভিত্তি করেই আমরা লেখালেখি করি।

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন
Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture