মৃত ব্যক্তির জন্য বেশ কয়েকটি দু’য়া আছে, সবচেয়ে প্রসিদ্ধ দু’য়াটি আউফ ইবনে মালিক (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূল (ﷺ) একজন সাহাবীর মৃত্যুতে এ দোয়াটি করেছিলেন,
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ، وَعَافِهِ، وَاعْفُ عَنْهُ، وَأَكْرِمْ نُزُلَهُ، وَوَسِّعْ مُدْخَلَهُ، وَاغْسِلْهُ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ، وَنَقِّهِ مِنَ الْخَطَايَا كَمَا نَقَّيْتَ الثَّوْبَ الأَبْيَضَ مِنَ الدَّنَسِ
কবরস্থানে এই দু’য়াটি আপনি সবচেয়ে বেশি শুনতে পাবেন। এটি মৃত ব্যক্তির জন্য রাসূলের (ﷺ) সবচেয়ে প্রসিদ্ধ দু’য়া। জানাজার নামাজে তৃতীয় তাকবীরে এবং কবরস্থানেও এই দোয়াটি আপনি করতে পারেন। মৃত্যুর ঠিক পরপরও এই দোয়াটি আপনি করতে পারেন।
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ
আল্লা-হুম্মাগফির লাহু, ওয়ারহামহু
আল্লাহ! আপনি তাকে ক্ষমা করুন, তাকে দয়া করুন।
وَعَافِهِ، وَاعْفُ عَنْهُ
ওয়া ‘আ-ফিহি, ওয়া‘ফু ‘আনহু,
তাকে দয়া করুন, তাকে পূর্ণ নিরাপত্তায় রাখুন।
وَأَكْرِمْ نُزُلَهُ،
ওয়া আকরিম নুযুলাহু,
তার মেহমানদারীকে মর্যাদাপূর্ণ করুন,
وَوَسِّعْ مُدْخَلَهُ،
ওয়াওয়াসসি‘ মুদখালাহু,
তার প্রবেশস্থান কবরকে প্রশস্ত করে দিন।
وَاغْسِلْهُ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ،
ওয়াগসিলহু বিলমা-য়ি ওয়াস্সালজি ওয়ালবারাদ।
আর আপনি তাকে ধৌত করুন পানি, বরফ ও শিলা দিয়ে,
وَنَقِّهِ مِنَ الْخَطَايَا كَمَا نَقَّيْتَ الثَّوْبَ الأَبْيَضَ مِنَ الدَّنَسِ
ওয়ানাক্বক্বিহি মিনাল খাতা-ইয়া কামা নাক্কাইতাস সাওবাল আবইয়াদা মিনাদদানাস।
আপনি তাকে গুনাহ থেকে এমনভাবে পরিষ্কার করুন যেমন সাদা কাপড়কে ময়লা থেকে পরিষ্কার করেছেন।
মৃতের জন্য রাসুলের (ﷺ) আরো কিছু দু’আতে আপনি লক্ষ্য করবেন নিজেদের জন্য যে দু’আগুলো আমরা করি তার কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ দু’আগুলোতে আপনি আল্লাহর রহমতের কথা উল্লেখ করেন এবং আল্লাহর রহমতের জন্য প্রার্থনা করেন। আমাদের উচিত আমাদের দু’আগুলোতে আল্লাহর গুণবাচক নামগুলোর উল্লেখ করা। খুব শক্তিশালী একটি দু’আ যা আমার খুবই প্রিয় — এবং এই দু’য়াটি রাসুল (ﷺ) তাঁর কোন এক সাহাবীর মৃত্যুতে করেছিলেন –
اللهُـمِّ عَبْـدُكَ وَابْنُ أَمَـتِك،
احْتـاجَ إِلى رَحْمَـتِك،
وَأَنْتَ غَنِـيٌّ عَنْ عَذابِـه،
إِنْ كانَ مُحْـسِناً فَزِدْ في حَسَـناتِه،
وَإِنْ كانَ مُسـيئاً فَتَـجاوَزْ عَنْـه
—–•—–
اللهُـمِّ عَبْـدُكَ وَابْنُ أَمَـتِك،
হে আল্লাহ, আপনার পুরুষ বান্দা এবং আপনার মহিলা বান্দির
احْتـاجَ إِلى رَحْمَـتِك،
আপনার রহমতের প্রয়োজন,
وَأَنْتَ غَنِـيٌّ عَنْ عَذابِـه،
এবং তার শাস্তির প্রয়োজন আপনার নেই,
সুবহানাল্লাহ, এবার দু’য়ার পরবর্তী অংশটুকু লক্ষ্য করুন –
إِنْ كانَ مُحْـسِناً فَزِدْ في حَسَـناتِه،
وَإِنْ كانَ مُسـيئاً فَتَـجاوَزْ عَنْـه
যদি সে ধার্মিক হয় তবে তার সওয়াব বাড়িয়ে দিন,
আর যদি সে সীমালঙ্ঘন করে থাকে তবে তাকে ক্ষমা করুন।
এটি একটি সুন্দর ব্যাপক ও সংক্ষিপ্ত দু’য়া।
সর্বশেষ যে বিষয়টি উল্লেখ করব তা আবু সালামার (রা:) প্রস্থান উপলক্ষে।
রাসুল (ﷺ) আবু সালামার (রা:) চোখ বন্ধ করে দিলেন এবং সবাইকে বললেন, ‘এমন কোন কিছুর জন্য দু’আ করবেন না যা উপকারী নয়, কারণ এখন আপনি যা বলবেন তার সাথে সাথে ফেরেশতারা আমিন বলবে। কাজেই এখন যা বলছেন সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।’
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لأَبِي سَلَمَةَ
হে আল্লাহ! আপনি আবু সালামাকে আমাকে ক্ষমা করে দিন।
وَارْفَعْ دَرَجَتَهُ فِي الْمَهْدِيِّينَ
তাকে হেদায়েতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করুন,
افْسَحْ لَهُ فِي قَبْرِهِ
তার কবরকে প্রশস্ত করুন
وَنَوِّرْ لَهُ فِيهِ
তার কবরকে আলো দিয়ে পরিপূর্ণ করুন।
এভাবে প্রথমে পরকালের কথা উল্লেখ করে এরপর বারযাখের কথা বলা হয়েছে। এরপর রাসুল (ﷺ) বলেন,
وَاخْلُفْهُ فِي عَقِبِهِ فِي الْغَابِرِينَ
তার শোকগ্রস্ত বংশধরদের প্রতি যত্নবান হোন।
এভাবে মৃতের বংশধরদের প্রতি যত্নবান হওয়ার জন্য প্রার্থনা করা হয়েছে যাদের ছেড়ে সে চলে গেছে। সুবহানাল্লাহ! এই হাদীসের দু’আটিকে ভেঙ্গে ভেঙ্গে বললেও দেখবেন এতে সুন্দর একটি ক্রমবিন্যাস রয়েছে। সর্বপ্রথম দু’আ করা হয়েছে তার চুড়ান্ত গন্তব্যের জন্য। মনে রাখবেন একজন ব্যক্তি বরযাখে যে অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যাবে তা চূড়ান্ত গন্তব্যের পথে একটি স্টেশন মাত্র। দু’য়ার প্রথমেই বলা হচ্ছে, وَارْفَعْ دَرَجَتَهُ فِي الْمَهْدِيِّينَ – তাকে হেদায়েতপ্রাপ্তদের মর্যাদায় উন্নীত করুন। তারপর প্রার্থনা করা হচ্ছে তার কবরকে প্রশস্ত করার জন্য এবং তা আলোকিত করার জন্য। তারপর তার রেখে যাওয়া বংশধরদের তত্ত্বাবধানের জন্য প্রার্থনা করা হচ্ছে।
সর্বশেষ যে কথাটি এখানে উল্লেখ করতে চাই তা হল যখন আপনি আপনার প্রিয়জনের জন্য প্রার্থনা করেন তখন সবসময় দলিল অনুসরণ করবেন না। অবশ্যই দু’আয় একটি ক্রম রয়েছে, কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, হামদ (আল্লাহর প্রশংসা) এবং সালাওয়াতও রয়েছে। জানাযার দু’য়াতেও এ ব্যাপার গুলো রয়েছে। আমাদের রাসুলের (ﷺ) প্রশংসা ও তাঁর জন্য দু’আও আছে। জানাজার দু’আগুলো সাধারণত ক্ষমা দিয়ে শুরু হয়। আপনার হৃদয় থেকে নিজের ভাষায় এমনভাবে দু’আ করুন যেমনভাবে আপনি নিজে মরিয়া হয়ে নিজের জন্য দু’আ করেন। কারণ মৃত্যুর ঠিক পরে সেই বিশেষ মুহূর্তে মৃত ব্যাক্তিরা আপনার দু’আর জন্য মরিয়া হয়ে থাকে।
অনন্তের পথে যাত্রা
পর্ব : ৬
মূল: ড. ওমর সুলাইমান