মৃতকে গোসল ও কাফন দেয়ার পদ্ধতি

মৃতকে গোসল দেয়ার পদ্ধতি:
১. মৃতের গোসল, কাফন, জানাযার ছালাত এবং দাফন করা ফরযে কেফায়া।
২. গোসল দেয়ার ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম সেই ব্যক্তি হকদার, যার ব্যাপারে মৃত ব্যক্তি ওছিয়ত করে গিয়েছে। তারপর তার পিতা। তারপর অপরাপর নিকটাত্মীয়। আর মহিলার গোসলে প্রথম হকদার হল তার ওছিয়তকৃত মহিলা। তারপর তার মা। তারপর তার মেয়ে। তারপর অন্যান্য নিকটাত্মীয় মহিলাগণ।

৩. স্বামী-স্ত্রী পরষ্পরকে গোসল দিতে পারবে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আয়েশা (রা:)কে বলেন: “তোমার কোন অসুবিধা নেই, তুমি যদি আমার আগে মৃত্যু বরণ কর, তবে আমি তোমার গোসল দিব।” (আহমাদ হাদীছ ছহীহ্) আর আবু বকর (রা:) ওছিয়ত করেছিলেন যে, তার স্ত্রী যেন তাঁকে গোসল দেয়। (মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক- হা/৬১৬৭)

৪. মৃত ব্যক্তি নারী হোক বা পুরুষ তার বয়স যদি সাত বছরের কম হয়, তবে যে কোন পুরুষ বা মহিলা তার গোসল দিতে পারবে।
৫. গোসলের জন্য পুরুষের ক্ষেত্রে পুরুষ আর নারীর ক্ষেত্রে নারী যদি না পাওয়া যায় তবে তার গোসল দিবে না। বরং তাকে তায়াম্মুম করিয়ে দিবে। এর পদ্ধতি হল, উপস্থিত লোকদের মধ্যে একজন তার হাত দুটি পাক মাটিতে মারবে। তারপর তা দ্বারা মৃতের মুখমন্ডল ও উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত মাসেহ করে দিবে।

৬. কোন কাফেরকে গোসল দেয়া এবং দাফন করা মুসলমানের উপর হারাম। আল্লাহ তাআলা বলেন:

ولاَ تُصَلِّ عَلىَ أحَدٍ مِنْهُمْ ماَتَ أبَداً
“আপনি তাদের (কাফের ও মুনাফেকদের) কখনই জানাযা ছালাত আদায় করবেন না।”1

৮. গোসল দেয়ার সুন্নাত হল, প্রথমে তার লজ্জাস্থান ঢেঁকে দেবে, তারপর তার সমস্ত কাপড় খুলে নিবে।
অত:পর তার মাথাটা বসার মত করে উপরের দিকে উঠাবে এবং আস্তে করে পেটে চাপ দিবে, যাতে করে পেটের ময়লা বেরিয়ে যায়।

এরপর বেশী করে পানি ঢেলে তা পরিস্কার করে নিবে। তারপর হাতে কাপড় জড়িয়ে বা হাত মুজা পরে তা দিয়ে উভয় লজ্জা স্থানকে (নজর না দিয়ে) ধৌত করবে।
তারপর ‘বিসমিল্লাহ্’ বলবে এবং ছালাতের ন্যায় ওযু করাবে। তবে মুখে ও নাকে পানি প্রবেশ করাবে না। বরং ভিজা কাপড় আঙ্গুলে জড়িয়ে তা দিয়ে তার উভয় ঠোঁটের ভিতর অংশ ও দাঁত পরিস্কার করবে। একইভাবে নাকের ভিতরও পরিস্কার করবে।

৯. পানিতে কুল/বরই পাতা মিশিয়ে তা ফুটিয়ে গোসল দেয়া মুস্তাহাব।
বরই পাতা দিয়ে ফোটানো পানি দ্বারা মৃতের মাথা ও দাঁড়ি ধৌত করতে হবে।
প্রথমে শরীরের ডান পাশের সামনের দিক ধৌত করবে।
তারপর পিছন দিক তারপর বাম দিক ধৌত করবে।
এভাবে তিনবার গোসল দিবে। প্রতিবার হালকা ভাবে পেটে হাত বুলাবে এবং ময়লা কিছু বের হলে পরিস্কার করে নিবে।

১০. গোসলের সময় সাবান ব্যবহার করতে পারে এবং প্রয়োজন মোতাবেক তিনবারের বেশী সাত বা ততোধিক গোসল দিতে পারে। শেষবার কর্পুর মিশ্রিত করে গোসল দেয়া সুন্নাত। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর কন্যা যায়নাবের (রা:) শেষ গোসলে কর্পুর মিশ্রিত করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। (বুখারী ও মুসলিম)

১১. মৃতের মোচ বা নখ যদি বেশী বড় থাকে তবে তা কেটে দেয়া মুস্তাহাব। তবে বগল বা নাভীর নীচের চুল কাটা যাবে না।

১২. সাত বার গোসল দেয়ার পরও যদি পেট থেকে ময়লা (পেশাব বা পায়খানা) বের হতেই থাকে তবে উক্ত স্থান ধুয়ে সেখানে তুলা বা কাপড় জড়িয়ে দিবে। তারপর তাকে ওযু করাবে।

১৩. কাফন পরানোর পরও যদি ময়লা বের হয়, তবে আর গোসল না দিয়ে সেভাবেই রেখে দিবে। কেননা তা অসুবিধার ব্যাপার।

১৪. মৃতের চুল আঁচড়ানোর দরকার নেই। তবে নারীর ক্ষেত্রে তার চুলগুলোতে তিনটি বেণী বেঁধে তা পিছনে ছড়িয়ে দিবে।

১৫. হজ্জ বা ওমরায় গিয়ে ইহরাম অবস্থায় যদি কেউ মারা যায়, তবে তাকে কুল পাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল দিবে। কিন্তু কোন সুগন্ধি ব্যবহার করবে না এবং পুরুষ হলে কাফনের সময় তার মাথা ঢাঁকবে না। বিদায় হজ্জে জনৈক ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় মৃত্যু বরণ করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“তাকে কোন সুগন্ধি লাগাবে না, এবং তার মাথা ঢাঁকবে না। কেননা সে ক্বিয়ামত দিবসে তালবিয়া পাঠ করতে করতে উত্থিত হবে।” (বুখারী ও মুসলিম)

১৬. শহাদাত বরণকারী ব্যক্তিকে গোসল দিবে না বরং তাকে তার সাথে সংশ্লিষ্ট কাপড়েই দাফন করবে। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম “ওহুদের শহীদদের ব্যাপারে আদেশ দিয়েছিলেন যে, তাদেরকে গোসল ছাড়া তাদের পরিহিত কাপড়ে দাফন করা হবে।” (বুখারী) “এমনিভাবে তাদের ছালাতে জানাযাও পড়েন নি।” (বুখারী ও মুসলিম)

১৭. গর্ভস্থ সন্তান যদি চার মাস অতিক্রম হওয়ার পর পড়ে যায়, তবে তার গোসল ও জানাযার ছালাত আদায় করবে। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “মাতৃগর্ভে সন্তানের বয়স যখন চার মাস অতিক্রম করে তখন সেখানে একজন ফেরেস্তা প্রেরণ করা হয়। সে তাতে রূহ ফুঁকে দেয়।” (মুসলিম) আর তার বয়স যদি চার মাসের কম হয়, তবে তাতে প্রাণ না থাকার কারণে সাধারণ একটি মাংশের টুকরা গণ্য হবে। যা কোন গোসল বা জানাযা ছাড়াই যে কোন স্থানে মাটিতে গেড়ে দেয়া হবে।

১৮. মৃত ব্যক্তি আগুনে পুড়ে যাওয়ার কারণে, তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ খণ্ড-বিখণ্ড হওয়ার কারণে বা পানি না পাওয়ার কারণে যদি তাকে গোসল দেয়া সম্ভব না হয়, তবে পূর্ব নিয়মে তাকে তায়াম্মুম করিয়ে দিবে।

কাফন দেয়ার পদ্ধতি:

১. মৃত ব্যক্তিকে কাফন পরানো ওয়াজিব। আর তা হবে তার পরিত্যাক্ত সম্পত্তি থেকে। যাবতীয় ঋণ, ওছিয়ত এবং মীরাছ বন্টনের আগে কাফনের খরচ তার সম্পত্তি থেকে গ্রহণ করতে হবে।

২. মৃতের সম্পত্তি থেকে যদি কাফনের খরচ না হয় তবে তার পিতা বা ছেলে বা দাদার উপর দায়িত্ব বর্তাবে। যদি এমন কাউকে না পাওয়া যায় তবে বায়তুল মাল থেকে প্রদান করবে। তাও যদি না পাওয়া যায় তবে যে কোন মুসলমান প্রদান করতে পারে।

৩. পুরুষকে তিনটি লেফাফা বা কাপড়ে কাফন পরানো মুস্তাহাব। কেননা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সুতী সাদা তিনটি কাপড়েই কাফন দেয়া হয়েছিল। (বুখারী ও মুসলিম) কাফনের কাপড়ে সুগন্ধি মিশ্রিত করা মুস্তাহাব। প্রথমে সাতটি ফিতা বিছিয়ে দিবে। তারপর (ফিতাগুলোর উপর) কাপড় তিনটি একটির উপর অন্যটি বিছাবে।
অত:পর মাইয়্যেতকে চিৎ করে শুইয়ে দিবে। এসময় তার লজ্জাস্থানের উপর একটি অতিরিক্ত কাপড় রেখে দিবে।
তার নাক, কান, লজ্জাস্থান প্রভৃতি জায়গায় সুগন্ধি যুক্ত তুলা লাগিয়ে দেয়া মুস্তাহাব। সম্ভব হলে সমস্ত শরীরে সুগন্ধি লাগাবে। তারপর প্রথম কাপড়টির ডান দিক আগে উঠাবে, এরপর বাম দিকের কাপড়। এভাবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় কাপড়ে করবে।
তারপর অতিরিক্ত কাপড়টি টেনে নিবে এবং ফিতাগুলো দিয়ে গিরা দিবে। আর তা কবরে রাখার পর খুলে দিবে। ফিতার সংখ্যা সাতের কম হলেও অসুবিধা নেই।
এভাবে মৃত ব্যক্তিকে ৭টি বাঁধন দিবে

৪. মহিলাকে পাঁচটি কাপড়ে কাফন দিবে। লুংগি যা নীচের দিকে থাকবে, খেমার বা ওড়না যা দিয়ে মাথা ঢাঁকবে, কামীছ (জামা) এবং দুটি বড় লেফাফা বা কাপড়। (অবশ্য তিন কাপড়েও তাকে কাফন দেয়া জায়েয)।

  1. তওবাহ: ৪৮ ↩︎
Exit mobile version