মহিলাদের মাথার চুল কাটার বিধান

মহিলাদের মাথার চুল কাটার বিধান সম্পর্কে জানতে চাই।
আমাদের সমাজে নারীদের চুল কাটা নিয়ে বিভিন্ন ভুল ধারণার প্রচলন রয়েছে। কারো ধারণা, নারীরা একেবারেই চুল কাটতে পারবে না। কেউ মনে করে, চার আঙ্গুলের বেশি কাটা যাবে না। কেউ বলে, মাথার সামনের দিক থেকে কাটা বা ছোট করা যাবে না, খুব বেশি দরকার হলে, কেবল পেছন দিক থেকে সামান্য কাটা যাবে। আবার কেউ কেউ বিশ্বাস করে যে, বিশেষ সময় ছাড়া নারীদের জন্য চুল কাটা নিষিদ্ধ। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ইসলামি শরিয়তে এসব কথার কোনও ভিত্তি নেই।
নিম্নে হাদিস এবং আলেমদের ফতোয়ার আলোকে মহিলাদের চুল কাটার বিধান অতি সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো:
নিম্নোক্ত অবস্থায় মহিলাদের মাথার চুল কাটা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। যথা:
- যদি কাফের-ফাসেক নারীদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা উদ্দেশ্য হয়।
- যদি এমন স্টাইলে চুল কাটা হয় যা অবিকল পুরুষদের মত বুঝা যায়।
- যদি পর পুরুষের মাধ্যমে চুল কাটা হয় (যেমনটি বর্তমান যুগে কিছু কিছু সেলুনে ঘটে থাকে।)
- যদি স্বামীর অনুমতি ছাড়া হয়।
তাহলে তা হারাম। হারাম হওয়ার কারণও স্পষ্ট।
কিন্তু যদি স্বামীর সামনে নিজের চুলের সৌন্দর্য অবলম্বন করা উদ্দেশ্য হয় বা লম্বা চুলের কষ্ট লাঘবের উদ্দেশ্যে হয় বা এ জাতীয় গ্রহনযোগ্য উদ্দেশ্যে হয় তাহলে সঠিক মতানুযায়ী চুল ছোট করা জায়েয আছে। এ মর্মে হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে,
كَانَ أَزْوَاجُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْخُذْنَ مِنْ رُءُوسِهِنَّ حَتَّى تَكُونَ كَالْوَفْرَةِ ) رواه مسلم (320) .
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্ত্রীগণ এমনভাবে তাদের মাথার চুল কাটতেন যে, তা কাঁধ থেকে একটু নিচে যেত বা কান বরাবর হত।”
(সহীহ মুসলিম, হা/৩২০)
ইমাম নওবী রহ. উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন:
” فيه دليل على جواز تخفيف الشعور للنساء ” انتهى. ” شرح مسلم ” (4/5)
“এতে প্রমাণিত হয় যে, নারীদের চুল কেটে হালকা করা জায়েয।”
(শরহে মুসলিম ৫/৪)
আল্লামা উসাইমীন রাহ. বলেন:
এই মূহুর্তে আমার এমন কোন দলীল জানা নাই যা দ্বারা নারীদের চুল কাটা হারাম প্রমাণিত হয়। হারাম বলার মত দূর্বল; এর কোন যৌক্তিকতা নেই। মাকরূহ বলার মতটিও প্রশ্নবিদ্ধ। আর বৈধ হওয়ার মতটিই দলীল ও মূলনীতির কাছাকাছি। যেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ইন্তিকালের পর তার এর স্ত্রীদের চুল কাটার হাদীস সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে।
(শাইখের বক্তব্যের সার সংক্ষেপ)
সৌদি আরবের সাবেক প্রধান মুফতি আল্লামা আব্দুল আজিজ বিন বায রাহ. কে প্রশ্ন করা হয়, সামনের দিক থেকে চুল কাটা কি হারাম যদি তা শুধুমাত্র সৌন্দর্যের জন্য হয়?
তিনি উত্তরে বলেন,
لا حرج في ذلك، الحمد لله، المهم صيانة ذلك عن الأجنبي، فإذا كان عندما يظهر الزوج والنساء والمحارم، فلا حرج في ذلك
“এতে কোনও সমস্যা নেই, আলহামদুলিল্লাহ। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, পুরুষদের থেকে তা গোপন রাখা। যদি এটি কেবল স্বামী, মহিলা এবং মাহরাম পুরুষদের (যেসব পুরুষদের সামনে স্থায়ীভাবে বিবাহ হারাম, যেমন: পিতা, সন্তান, দাদা, চাচা মামা ইত্যাদি) সামনে প্রকাশিত হয় তাহলে এতে কোনও অসুবিধা নেই।”
হানাফি মাজহাবের বিখ্যাত দুটি ফতোয়ার কিতাবে বলা হয়েছে, “পুরুষদের সঙ্গে, বিধর্মী বা ফাসেকদের সঙ্গে সাদৃশ্য না হলে সৌন্দর্য বাড়াতে নারীদের জন্য তুলনামূলক চুল ছোট করা জায়েজ আছে।” [ফাতাওয়া শামি ৯/৫৮৩, ফাতাওয়া আলমগিরি, ৫/৩৫৮]
মোটকথা,
একজন নারী যদি মাথার চুল ছোট করার প্রয়োজন মনে করে তাহলে উপরোক্ত শর্তসাপেক্ষে তা কাটতে বা ছাটতে কোনও সমস্যা নেই। তবে উদ্দেশ্যে যেন হয়, কেবল সৌন্দর্য বর্ধন বা লম্বা চুলের কষ্ট লাঘব। কোনও কাফের-ফাসেক নায়িক বা তথাকথিত মডেলের সাদৃশ্য অবলম্বন করা উদ্দেশ্য নয়। আর এতটা ছোট যেন না করে যাতে পুরুষদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হয়ে যায়।
উল্লেখ্য যে, মাথার বিশেষ কোনও সমস্যায় মাথার চুল মুণ্ডন করা অপরিহার্য না হলে মহিলাদের মাথার চুল মুণ্ডন করা হারাম।
আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন।