মদীনায় ইন্তেকাল করলে রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদের জন্য শাফায়াত করবেন

উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু এক অদ্ভুত দুআ করতেন। তিনি শহীদি মৃত্যু চাইতেন এবং মদীনায় ইন্তেকাল করতে চাইতেন।
সেই সময় এটা চিন্তাই করা যেতো না।
মদীনা ছিলো খিলাফতের রাজধানী। শহীদ হতে চাইলে মদীনার বাইরে যেতে হবে, যুদ্ধে যেতে হবে। মদীনায় মৃত্যু আর শহীদি মৃত্যু দুটো একসাথে কীভাবে হবে এই নিয়ে সাহাবীরা চিন্তা করতেন।

শেষে দেখা যায় উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর দুআ কবুল হয়।
ঘাতকের আঘাতে তিনি শাহাদাতবরণ করেন এবং মদীনায় তাঁকে দাফন করা হয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পাশে।

উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি এ বলে দু‘আ করতেন :

اَللهم ارْزُقْنِيْ شَهَادَةً فِيْ سَبِيْلِكَ، وَاجْعَلْ مَوْتِيْ فِيْ بَلَدِ رَسُوْلِكَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থ : হে আল্লাহ! আমাকে তোমার রাস্তায় শাহাদাত লাভের তাওফীক দান কর এবং আমার মৃত্যু তোমার রাসূলের শহরে প্রদান কর।1

মদীনা থেকে দূরে একটি জায়গায় ইন্তেকাল করেন সাঈদ ইবনে যায়িদ এবং সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহুম। তাঁদের লাশ নিয়ে আসা হয় মদীনায়। অসিয়তমতো মদীনায় তাঁদেরকে দাফন করা হয়।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যারা পারে তারা যেন মদীনায় ইন্তেকাল করে। মদীনায় ইন্তেকাল করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের জন্য শাফায়াত করবেন (আল্লাহর কাছে সুপারিশ)।
হাদিসে মদিনায় মৃত্যুবরণকারীর মর্যাদার কথা এসেছে। ইবনু উমার (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন :

مَنِ اسْتَطَاعَ أَنْ يَمُوْتَ بِالْمَدِيْنَةِ فَلْيَمُتْ بِهَا فَإِنِّيْ أَشْفَعُ لِمَنْ يَّمُوْتُ بِهَا
‘যে ব্যক্তি মদিনায় মৃত্যুবরণ করতে সক্ষম, সে যেন তা করে। কেননা যে তথায় মৃত্যুবরণ করবে, আমি তার জন্য শাফায়াত (সুপারিশ) করব।’2

পৃথিবীর আর কোনো জায়গা নিয়ে মানুষ ডেথ উইশ করে না যতোটা মদীনা নিয়ে করে।
অনেকেই হজ্জ-উমরা করার সময় ইচ্ছে পোষণ করে মক্কা-মদীনায় ইন্তেকালের।

আবূ সাঈদ মাওলা যাহরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি আল হাররার রাতগুলোতে আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) এর নিকট এলেন এবং মদিনা থেকে (কোথাও) চলে যাওয়ার পরামর্শ করলেন। তিনি তাঁর কাছে এখানকার দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও নিজের বৃহৎ পরিবারের অভিযোগ করলেন। তিনি তাকে আরও জানালেন যে, তিনি এখানকার ক্লেশ ও রুক্ষ আবহাওয়া বরদাশত করতে পারছেন না। আবূ সাঈদ (রাঃ) তাঁকে বললেন :

لَا يَصْبِرُ أَحَدٌ عَلٰى لَأْوَائِهَا فَيَمُوْتَ إِلَّا كُنْتُ لَهُ شَفِيْعًا أَوْ شَهِيْدًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِذَا كَانَ مُسْلِمًا
তোমার জন্য দুঃখ হয়, আমি তোমাকে মদিনা ত্যাগের পরামর্শ দিতে পারি না। কারণ, আমি রাসূল (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি এখানকার কষ্টসহ্য করে মৃত্যুবরণ করবে, কিয়ামতের দিন অবশ্যই আমি তার জন্য শাফাআত করব অথবা সাক্ষী হব, যদি সে মুসলমান হয়ে থাকে।3

কেমন হতো, আপনি সেখানে ইন্তেকাল করলেন, পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ মানুষ কিয়ামতের আগ পর্যন্ত আপনার কবর জিয়ারত করবে, আপনার মাগফিরাত কামনা করবে?

আল্লাহ আমাদেরকে এমন স্বপ্ন দেখার, এমন স্বপ্নপূরণের তাওফিক দান করুন

ইবনে হিনযাবা রাহিমাহুল্লাহ

একজন আলেম বসবাস করতেন মিসরে, কিন্তু জমি কিনেন মদীনায়।
নির্দিষ্ট করে বললে, রাসূলুল্লাহ ﷺ –এর হুজরার পাশে। অনেক দাম দিয়ে জমিটি কিনেন।
তিনি মিসরের মন্ত্রী হন। অনেক ইবাদত করতেন।
একবার শুনলেন একজনের কাছে রাসূলুল্লাহ ﷺ –এর পবিত্র চুল মোবারক আছে। তিনি তার কাছ থেকে অনেক দাম দিয়ে তিনটি চুল কিনেন।

অন্যদিকে, তিনি মিসর থেকে মদীনার শাসকদের গিফট দিতেন। যেনতেন গিফট না, স্বর্ণ গিফট দিতেন। এমনকি মদীনার অধিবাসীদেরকেও দান করতেন।
মদীনার লোকজন অবাক হতো। এই লোক থাকেন মিসরে, জায়গা কিনলেন মদীনায়, আবার এতো দামি গিফট পাঠান। এগুলো কেনো করেন?

তাঁর জীবদ্দশায় উত্তর জানা যায়নি। তিনি যখন ইন্তেকাল করেন, তখন সবাই বুঝতে পারেন এসব তিনি কেনো করেন।
তাঁর স্বপ্ন ছিলো রাসূলুল্লাহ ﷺ –এর পাশে যেন তাঁর কবর হয়। ইন্তেকালের আগে অসিয়ত করে যান। এই কারণেই নবীজির হুজরার পাশে তিনি জায়গা কিনেছিলেন।

মিসর থেকে তাঁর লাশ মদীনায় নিয়ে আসা হয়। লাশ নিয়ে আজ থেকে ১০০০ বছর আগে প্রায় ১০০০ কিলোমিটার দূরত্ব পাড়ি দেয়া যেনতেন কথা না!

সেই মন্ত্রী-আলেমের ইচ্ছে পূরণের জন্য তাই করা হয়।
তাঁর লাশ নিয়ে মদীনায় প্রবেশ করা হলে সবাই অভ্যর্থনা জানায়।
শুধু নবীজির রওজার পাশে দাফন করার জন্য তিনি অসিয়ত করেননি, তিনি আরো অসিয়ত করেন- নবীজি ﷺ –এর চুল মোবারকও যেন তাঁর কাফনে করে তাঁকে দাফন করা হয়।

সেই আলেমের নাম ইবনে হিনযাবা রাহিমাহুল্লাহ4

  1. সহীহ বুখারী ১৮৯০ (শামিলা ও তা. পা), ১৭৬৬ (ই. ফা), ১৭৫৫ (আ. প্র) ↩︎
  2. মুসনাদে আহমাদ ৫৮১৮, তিরমিযী ৩৯১৭ (তাহক্বীক্বকৃত), ইবনু মাজাহ ৩১১২ ↩︎
  3. সহীহ মুসলিম ১৩৭৪ (শামিলা), ৩২০৯ (ই. ফা), ৩২৩০ (হা. এ) ↩︎
  4. শাইখ ড. মুহামাদ মূসা আশ-শরীফ, মহৎ প্রাণের সান্নিধ্যে: ৪/৩৩৬ ↩︎

লিখেছেন

আরিফুল ইসলাম (আরিফ)

পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কলম তাকে উজ্জীবিত করেছে স্বীয় বিশ্বাসের প্রাণশক্তি থেকে।
অনলাইন এক্টিভিস্ট, ভালোবাসেন সত্য উন্মোচন করতে এবং উন্মোচিত সত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে।

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন

পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কলম তাকে উজ্জীবিত করেছে স্বীয় বিশ্বাসের প্রাণশক্তি থেকে।
অনলাইন এক্টিভিস্ট, ভালোবাসেন সত্য উন্মোচন করতে এবং উন্মোচিত সত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে।

Exit mobile version