বাংলাদেশের অধিকাংশ জায়গায়ই, হ্যাঁ, অধিকাংশ জায়গাতেই মেয়ের অভিভাবকদেরকে, মেয়েদেরকে মানুষই মনে করা হয় না। কী শিক্ষিত, কী মূর্খ এক কথায় সবাই। এখনো এই দেশের মধ্যে একটা মেয়ের প্রায় সবগুলো গুণাবলি থাকার পরেও তাকে তার বাবা যৌতুকের কারণে বিয়ে দিতে পারে না। কিংবা বিয়ে দিতে গেলে যৌতুকের কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা গুণতে হয়।
এতো টাকা, এতো কিছু করে বিয়ে দিয়েও কি শান্তি পাওয়া যায়?
নাহ, এরপরেও কিন্তু বিয়ে দিয়ে মুক্তি নেই। কারণ, এর পরপরই আছে গিপ্ট-দাওয়াত হাবিজাবি বহু কিছুর কথিত ভদ্রদের নীরব এবং বেহায়াদের সরব ও স্পষ্ট ডিমান্ড। আর এসবের জন্য নিয়মিত মেয়েকে কচলানো হয় লেবুর মতো। কচলাতে কচলাতে তার জান শেষ করে ফেলা হয়। এই যেমন, খাট-পালং, ফ্রিজ-ওয়ারড্রবসহ নানাবিধ ফার্নিচার। মেয়ের শশুর বাড়ির চৌদ্দ গৌষ্ঠিকে জামা-কাপড়, কাঠুন ভর্তি ফলফলাদি-সহ নানা কিছু!
কোথাও কোথাও এমনও আছে যে, শবে বরাত উপলক্ষে হালুয়া রুটি, গোশত রুটির আবদার। কুরবানির ঈদের সময় আবার গরু ছাগল। রমাদানে সেমাই-চিনিসহ যা যা আছে সব। ঈদ উপলক্ষ্যে চৌদ্দ গোষ্ঠীর জন্য জামাকাপড়সহ আরো কী কী যেনো আছে………
এরমধ্যেই কি সব শেষ?
নাহ, এবার এক সময় মেয়েটির সন্তান হয়, সেই সন্তানের জন্য সামাজিক অসংখ্য ডিমান্ড! এখানেও মনে হয় মেয়েটি মা হয়ে বড়ো ভুল করে ফেলেছে! কারণ, তার বাবা-মাকে আবারও কবুতর, আংটি, ঘড়ি জামাকাপড়ের বোঝা বইতে হয়!
এভাবে ওই মেয়ের কখনো দেবর আসে প্রবাস থেকে, ভাসুর আসে অসুস্থতা থেকে, ননদ নাকি ননাস আসে সফর থেকে এই উপলক্ষ্যে আবার সবাইকে দাওয়াত দিতেই হয়। না দিতে পারলে মেয়েটিকে মৌখিক নির্যাতন, মানসিক অত্যাচারের শিকার হতে হয়। এভাবে আছে শীতের পিঠা-গরমের পিঠাসহ হাবিজাবি নাম না জানা অসংখ্য সামাজিক রেওয়াজ!
শুধু কি এসবে সীমাবদ্ধ থাকলেও একটা কথা ছিলো। কিন্তু না, মেয়েটি যদি সন্তান জন্মেদানে অক্ষম হয়, তখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই দোষারোপের চাবুক ছুঁড়ে মারা হয় তার পিঠে। কটুকথায় জখম করা হয় তার কোমল হৃদয়টাকে।
আবার যদি সন্তান হয় কোনো প্রকার ত্রুটিযুক্ত-অসুস্থ, তখন তো কথায়-ই নেই। নির্মম নিষ্ঠুরতার নজির স্থাপন করা হয় তার ওপর। একে তো সে নিজেই দুঃখে মূহ্যমান, এরপর আছে কলিজা দীর্ণ-বিদীর্ণ করা অসহনীয় কথার কালিমা। বলা হয় তোমার সন্তানই ক্যান এমন হবে?
তুমি কুফা, অলুক্ষণে !
ছেলে/মেয়ে কি তোমার একাই হয়?
আর কারো হয় না?
এভাবে এক অবর্ণনীয় যাতনার বহ্নিশিখা জ্বালিয়ে দেয়া হয় তার বুকে। তার কলিজায়।
আর এসব করে কারা?
অধিকাংশ সময় আমাদের পুরুষতান্ত্রিকতার ভয়ে ভীত থাকা মহান নারীরা-ই তা করে। মানে শাশুড়ি, চাচি শাশুড়ি-মামি কিংবা খালা শাশুড়িসহ এ টাইপের নারীরাই। পরিস্থিতিকে এমন বিষাক্ত করে ফেলা হয় যে, ছেলেটার মন-মানসিকতাও নষ্ট করে দেয়া হয়।
এই যে কথাগুলো বললাম, এগুলো একটাও বানানো কথা না। অধিকাংশই সমাজের বাস্তব চিত্র। কিছু পুরুষ নামক পাঠাগুলোও এই যে ভীতিকর টক্সিক এনভায়রনমেন্ট এই বিষাক্ত পরিবেশ আর সময়ে নিজ স্ত্রীকে যে একটু সান্ত্বনা দেবে, তা না। বরঞ্চ সে-ও কখনো কখনো উক্ত প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে স্ত্রীর ওপর চালায় হুবহু ওই রকম কিছু নিষ্পেষণ!
এরপর পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় আশয়ে তো বউ বলে কোনো মতামতই নেয়া হয় না। কেউ যদি স্বাভাবিকভাবে এবং যৌক্তিকভাবে একটা কথা বলে, মতামত প্রদান করে, তখন সে হয়ে যায় বেয়াদব। পরিবারটায় তাকে থাকতে রোবটের মতো হয়ে….
যে কন্যা সন্তানের পিতাকে আল্লাহর রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পাশেই জান্নাতে পাশাপাশি বসবাসের নিশ্চয়তা দিয়েছেন, সে কন্যা সন্তানের বাবা-মায়ের জীবনকে এই সমাজ ছোটো খাটো একটা জাহান্নাম বানিয়ে দেয়। যে সন্তানের জন্মকে সুসংবাদ আর রহমত হিসেবে দেখা হয়েছে, সে কন্যা সন্তানের জন্মদানটাই যেনো একটা অপরাধ আর গজব হয়ে যায় আমাদের এই জাহিলিয়াতে ঘেরা সমাজে!