অনেকে ছোট বাচ্চা দুষ্টুমি করলে তাকে বলে, শয়তানি কেন করছ? আবার অনেক সময় একজন আরেকজনকে শয়তান বা ইবলিশ বলে সম্বোধন করে। ইসলামের দৃষ্টিতে এটা কি ঠিক?
শয়তানি করা মানে, দুর্বৃত্ততা, দুষ্টামি করা, ক্ষতি করা ইত্যাদি।
কোন মানুষ যখন কারো সাথে দুর্বৃত্ততাপনা করে বা দুষ্টমি করে বা করো ক্ষতি সাধন করে তখন শয়তানি করা কথাটি বলা হয়। কিংবা এর অর্থ, শয়তানের কাজ করা বা শয়তানের মত কাজ করা।
تَشَيْطَنَ الوَلَدُ : قَامَ بِعَمَلِ الشَّيْطَانِ
সুতরাং এসব ক্ষেত্রে এই শব্দটি ব্যবহার করায় কোন দোষ নেই ইনশাআল্লাহ।
কেননা এখানে কাজটিকে শয়তানের কাজ বা দুর্বৃত্তপনা বলা হচ্ছে; ব্যক্তিকে নয়।
কোন ব্যক্তিকে কি শয়তান বা ইবলিশ বলা যাবে?
শয়তান হল, কাফের, আল্লাহর দুশমন। তার প্রকৃত নাম হলো ইবলিশ।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এই বিতাড়িত ইবলিশ শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই আমরা “আউযুবিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজীম” (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি) বলার মাধ্যমে শয়তান থেকে মহান রবের কাছে আশ্রয় চাই।
সুতরাং কোন ইমানদারকে উদ্দেশ্য করে শয়তান বা ইবলিশ শব্দ ব্যবহার করা জায়েজ নাই।
তাছাড়া এটি নিকৃষ্ট গালাগালির শব্দ। আর মুসলিম কখনো নোংরা চরিত্রের গালিবাজ হতে পারে না।
– হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আনাস ইবনে মালিক রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
لَمْ يَكُنْ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَاحِشًا وَلاَ لَعَّانًا وَلاَ سَبَّابًا
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অশালীন, লানতকারী (অভিসম্পাত কারী) ও গালিবাজ ছিলেন না।”
[সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন), অধ্যায়: ৭৮/ আচার-ব্যবহার, পরিচ্ছেদ: ৭৮/৪৪. গালি ও অভিশাপ দেয়া নিষিদ্ধ]
– অন্য হাদিসে এসেছে,
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
سِبَابُ الْمُسْلِمِ فُسُوقٌ وَقِتَالُهُ كُفْرٌ
“মুসলিমকে গালি দেওয়া গুনাহের কাজ এবং তার সাথে মারামারি করা কুফুরি।”
[সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), অধ্যায়: ১। ঈমান, পরিচ্ছেদ: ২৮. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাণী: “মুসলিমদেরকে গালি-গালাজ করা গুনাহের কাজ এবং তাদের সাথে মারামারি করা কুফরি।”]
– আল্লামা শাইখ সালেহ আল ফাউযান (হাফিযাহুল্লাহ) কে প্রশ্ন করা হয় যে, কখনো কখনো কিছু মানুষ অন্যকে উদ্দেশ্য করে মজার ছলে বলে থাকে ‘অমুক শয়তান’ বা ‘অমুক ইবলিশ’। এর বিধান কী?
তিনি বলেন,
هذا ما يجوز -هذا من الشتم والسب, أن يقال: فلان شيطان, فلان إبليس, او ما أشبه ذلك كلمات قبيحة لا يجوز, لا يجوز أن يقال: فلان فاسق, يا فاسق يا عدو الله فكيف يقال: فلان شيطان, أو فلان إبليس..للأسف! والعياذ بالله
“এটা জায়েজ নয়। ‘অমুক শয়তান, অমুক ইবলিশ’ বা এই জাতীয় শব্দগুলো কুৎসিত গালাগালির অন্তর্ভুক্ত। যা জায়েজ নয়। যেখানে কাউকে উদ্দেশ্য করে, অমুক ফাসেক, বা হে ফাসেক, হে আল্লাহর দুশমন বলা জায়েজ নাই সেখানে কীভাবে “অমুক শয়তান বা অমুক ইবলিশ” বলা জায়েজ হতে পারে?
দুঃখজনক।আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি।”
[শাইখের অডিও প্রশ্নোত্তর থেকে অনূদিত]
মোটকথা, একজন আদর্শবান মুসলিম কখনোই অশ্লীল শব্দ ও কটু বাক্য মুখ দিয়ে উচ্চারণ করবে না। মজার ছলে হলেও। এটি উত্তম চরিত্রের পরিপন্থী। তাছাড়া, আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, মানুষ মুখ দিয়ে যা কিছু উচ্চারণ করুক না কেন আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত অতন্দ্র প্রহরী লেখক ফেরেশতা সাথে সাথে তা তার আমলনামায় লিখে নেন।
সুতরাং ঝগড়াঝাটি হোক কিংবা মজার ছলে হোক কোন অবস্থাতেই গালাগালি করা বা কোন মুসলিমকে উদ্দেশ্য করে ইবলিশ, শয়তান ইত্যাদি বলা জায়েজ নেই।
আল্লাহ তৌফিক দান করুন আমিন।