মাযহাব মানা কি জায়েজ?
মাজহাব মানা কি জায়েজ? যদি আমি মাযহাব না মানি তাহলে কি আমি জান্নাতে যেতে পারবো?
মাজহাব মানা জায়েজ এমনকি যারা সরাসরি কোরআন হাদিস থেকে মাসআলা বের করতে পারেনা তাদের জন্য জরুরি।
১ম প্রশ্নের জবাব
দ্বীন সম্পর্কে মানুষ দুই ধরণের হয়ে থাকে। যথা-
১-কুরআন, হাদীস, ইজমা কিয়াস, উসূলে হাদীস, হাদীসের জরাহ তাদীল, শানে নুজুল, শানে ওরূদ, আরবী নাহু সরফ, আরবী বালাগত, ফাসাহাত ইত্যাদি সম্পর্কে প্রাজ্ঞ ব্যক্তিগণ। যাদের বলা হয় মুজতাহিদ। আর মুজতাহিদগণ গবেষণা করে কুরআন, সুন্নাহ ভিত্তিক যে মাসআলা একত্র করে গেছেন, আমলীভাবে চালু হয়েছে তার নামই মাযহাব।
২-যাদের এমন জ্ঞান নেই।
এ উভয় শ্রেণীর ক্ষেত্রেই কুরআনে নির্দেশনা এসেছে।
প্রথম শ্রেণীর ক্ষেত্রে এসেছে-
فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۚ ذَٰلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا [٤:٥٩]
তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর।
{সূরা নিসা-৫৯}
অর্থাৎ মুজতাহিদগণ সরাসরি কুরআন ও হাদীস থেকে সরাসরি মাসআলা বের করতে মেহনত মুজাহাদা করবেন।
অন্য আরেক আয়াতে এসেছে-
فَاعْتَبِرُوا يَا أُولِي الْأَبْصَارِ [٥٩:٢]
হে বিদ্বান ব্যক্তিগণ, তোমরা কিয়াস কর।
{সূরা হাশর-২}
দেখুন-তাফসীরে কাবীর-২৯/২৮১, ২৮২,তাফসীরে বায়যাবী-৫/৩১৭}
এবার দেখতে হবে দ্বিতীয় প্রকারের ব্যক্তিদের অবস্থান। অর্থাৎ যারা উপরোক্ত জ্ঞানে সমৃদ্ধ নয়। তারা কী করবে?
পবিত্র কুরআনে তাদের বিষয়ে নির্দেশনা এসেছে-
فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِن كُنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ [٢١:٧
অতএব তোমরা যদি না জান তবে যারা জানে তাদেরকে জিজ্ঞেস কর।
{সূরা আম্বিয়া-৭}
এ আয়াত বুঝাচ্ছে, যাদের কুরআন ও হাদীস সম্পর্কে পূর্ণ প্রাজ্ঞতা নেই, তারা বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসা করে তাদের অনুসরণে আল্লাহর শরীয়ত অনুসরণ করবে।
এখন প্রশ্ন হল, সারা বিশ্বব্যাপীতো অসংখ্য মুজতাহিদ-বিশেষজ্ঞ থাকতে পারে। তো সাধারণ মুসলমানগণ কোন ব্যক্তির অনুসরণে আল্লাহর শরীয়ত অনুসরণ করবে? কার মতানুসারে ইসলামী শরীয়ত মানবে?
এরও জবাব আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে দিয়ে দিয়েছেন-
وَمَا كَانَ الْمُؤْمِنُونَ لِيَنفِرُوا كَافَّةً ۚ فَلَوْلَا نَفَرَ مِن كُلِّ فِرْقَةٍ مِّنْهُمْ طَائِفَةٌ لِّيَتَفَقَّهُوا فِي الدِّينِ وَلِيُنذِرُوا قَوْمَهُمْ إِذَا رَجَعُوا إِلَيْهِمْ لَعَلَّهُمْ يَحْذَرُونَ [٩:١٢٢]
আর সমস্ত মুমিনের অভিযানে বের হওয়া সঙ্গত নয়। তাই তাদের প্রত্যেক দলের একটি অংশ কেন বের হলো না,যাতে তারা দ্বীনের ক্ষেত্রে ফক্বীহ হতে পারে, এবং [ফক্বীহ হবার পর] সতর্ক করে স্বজাতিকে,যখন তারা তাদের কাছে প্রত্যাবর্তন করবে,যেন তারা বাঁচতে পারে।
{সূরা তওবা-১২২}
উক্ত আয়াতে দেখুন পরিস্কার বলা হচ্ছে ফক্বীহ হবার পর স্বজাতিকে সতর্ক করবে। আর লোকেরা তাদের স্বজাতির ফক্বীহের কথা শুনে আখেরাতের বিষয়ে সতর্ক হবে।
সেই হিসেবে আমরা বলি যে এলাকায় যে ফক্বীহের কুরআন সুন্নাহ ভিত্তিক উদ্ভাবনী মাসায়েল পৌঁছেছে, সেই এলাকায় সেই ফক্বীহের অনুসরণ করবে। অন্য এলাকায় ফক্বীহের ফাতওয়া নয়।
যেহেতু ভারতীয় উপমহাদেশে হানাফী ফক্বীহদের অনুসারীরা দ্বীন এনেছেন। তাদের মাধ্যমেই দ্বীন ছড়েছে। আর ইসলাম আসার পর থেকে এ এদেশ সমূহে এভাবেই দ্বীন পালন করা হচ্ছে। তাই এ এলাকায় কুরআন সুন্নাহ ভিত্তিক এ মাযহাবই অনুসরণ করবে। শ্রীলংকায় শাফেয়ীদের মাধ্যমে দ্বীন প্রচার হয়েছে, মক্কায় হাম্বলী ও মদীনায় মালেকী মাযহাব অনুপাতে দ্বীন পালন করা হয়, তাই সেখানে সেভাবেই দ্বীন মানবে। ভিন্ন মাযহাবের অনুসরণ করে ফিতনা করবে না।
সেই হিসেবে যে এলাকায় যে মাযহাবের মাধ্যমে দ্বীন এসেছে, যে মাযহাব অনুপাতে ইসলাম আসার পর থেকে আমল চলে আসছে। সেই মাযহাব অনুপাতেই দ্বীন পালন করবে। সূরা তওবার ১২২ নং আয়াত একথাই বর্ণিত হয়েছে।