স্বামী বা মাহরাম পুরুষ ছাড়া মহিলাদের হজ বা উমরা আদায়
আমি উমরা ও হজ আদায় করতে চাই। আমার মনে বারবার আল্লাহর ঘর দেখার তাড়না হচ্ছে। কিন্তু আমার মাহরাম কেউ রাজি নয়। আমার বাবা, ভাই, স্বামী কেউ যেতে চান না। আমার বোনের স্বামী ও বোন যাবে। বোন জীবিত অবস্থায় কি তার স্বামী আমার মাহরাম হিসেবে গণ্য হবে?
আমার জন্য দুআ করবেন যাতে আমার স্বামী রাজি হয়ে যান।
দুআ করি, আল্লাহ তাআলা আপনার বায়তুল্লাহর জিয়ারতের স্বপ্ন পূরণ করুন। অতঃপর, ইসলামে স্বামী অথবা মাহরাম পুরুষ ব্যতিরেকে মহিলাদের জন্য দূরের সফর নিষেধ করা হয়েছে। সুতরাং স্বামী অথবা মাহরাম পুরুষ ব্যতিরেকে হজ/ওমরা সফরেও যাওয়া জায়েজ নয়।
এ মর্মে হাদিস হল:
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
– لا يَحِلُّ لاِمْرَأَةٍ تُؤْمِنُ باللَّهِ وَالْيَومِ الآخِرِ، تُسَافِرُ مَسِيرَةَ يَومٍ وَلَيْلَةٍ إلَّا مع ذِي مَحْرَمٍ عَلَيْهَا
“যে নারী আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে জেনে রাখ! তার জন্য অনুমতি নেই যে, সে আপন স্বামী অথবা মাহরাম পুরুষ ছাড়া সফর সমান দূরত্বে একাকী ভ্রমণ করবে।”
[সহীহ মুসলিম]
কোন নারী হজের উদ্দেশ্যেও মক্কাতেও একাকী যেতে পারে না:
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
لَا يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بامْرَأَةٍ إلَّا وَمعهَا ذُو مَحْرَمٍ، وَلَا تُسَافِرِ المَرْأَةُ إلَّا مع ذِي مَحْرَمٍ، فَقَامَ رَجُلٌ، فَقالَ: يا رَسولَ اللهِ، إنَّ امْرَأَتي خَرَجَتْ حَاجَّةً، وإنِّي اكْتُتِبْتُ في غَزْوَةِ كَذَا وَكَذَا، قالَ: انْطَلِقْ فَحُجَّ مع امْرَأَتِكَ
“কোন নারী নিজ মাহরাম সঙ্গী ছাড়া একাকী সফর করবে না। ”
তখন উপস্থিত এক সাহাবি আরজ করলেন, “আমি তো অমুক জিহাদে যাচ্ছি। আর এ দিকে আমার স্ত্রী হজে যেতে যাচ্ছে। (আমি কি করবো)?
জিহাদে বের হবো, নাকি স্ত্রীর সাথে হজের সফরে বের হব? কারণ আমি ছাড়া তার অন্য কোন মাহরারম সঙ্গী নেই।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তুমি জিহাদে না গিয়ে তোমার স্ত্রীর সাথে হজের সফরে যাও।”
[সহীহ বুখারী]
সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি আল্লামা আব্দুল আজিজ বিন বায রাহ. বলেন,
لا يجوز للمسلمة أن تحج بدون محرم، النبي ﷺ قال: لا تسافر امرأة إلا مع ذي محرم وقد ذهب بعض العلماء إلى جواز الحج مع ثقات النساء بدون محرم ولكنه قول مرجوح، والصواب: ما قاله النبي ﷺ: لا تسافر امرأة إلا مع ذي محرم لكن لو حجت مع النساء صح حجها، وعليها التوبة إلى الله؛ لأنها أخطأت وأثمت فعليها التوبة إلى الله والندم وأن لا تعود إلى مثل هذا وحجها صحيح إن شاء الله؛ لأنها.. أدت مناسك الحج، فصح مع الإثم في مخالفتها السنة، في حجها بدون محرم، والله ولي التوفيق، وله سبحانه وتعالى الحكمة البالغة وعليها التوبة من ذلك.
“কোনও মুসলিম নারীর জন্য মাহরাম পুরুষ (যাদের সাথে স্থায়ীভাবে বিয়ে হারাম) ছাড়া হজ করা জায়েজ নাই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
لَا تُسَافِرِ المَرْأَةُ إلَّا مع ذِي مَحْرَمٍ
“কোন মহিলা মাহরাম পুরুষ ছাড়া সফর করবে না।”
[সহিহ মুসলিম]
কতিপয় আলেম মাহরাম পুরষ ছাড়া বিশ্বস্ত মহিলাদের সাথে হজ করা বৈধ বললেও তা গ্রাধিকারযোগ্য মত নয়। বরং সঠিক কথা হল, যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “কোন মহিলা মাহরাম পুরষ ছাড়া সফর করবে না।”
তবে কেউ যদি একদল মহিলার সাথে হজ করে তাহলে তার হজ সহিহ হয়ে যাবে। কিন্তু সে ভুল কাজ করবে। এতে সে গুনাহগার হবে। তাই তার জন্য লজ্জিত অন্তরে তওবা করা আবশ্যক এবং ভবিষ্যতে আর কখনো এমনটি করবে না। কিন্তু ইনশাআল্লাহ তার হজ বিশুদ্ধ হবে। কারণ সে হজের কার্যাবলী আদায় করেছে।
সুতরাং মাহরাম পুরুষ ছাড়া হজ করার কারণে গুনাহ এবং সুন্নতের বিরুদ্ধাচরণ সহকারে তার হজ সঠিক হবে। আল্লাহ তওফিক দানকারী এবং সুনিপুণ কৌশলের অধিকারী। ওই মহিলার কর্তব্য, এ কাজের জন্য তওবা করা।” [সূত্র: binbaz. অর্গ]
বোনের স্বামী আপনার জন্য মাহরাম নয়। কেননা আপনার বোন বেঁচে থাকা অবস্থায়ও তাকে তালাক দিয়ে আপনাকে বিয়ে করা তার জন্য জায়েয রয়েছে। সুতরাং আপনার বোন বেঁচে থাকা অবস্থায়ও সে আপনার জন্য মাহরাম নয়।
অত:এব আপনার বোন ও তার স্বামীর সাথে আপনার সফর করা বৈধ হবে না। দুআ করি, আল্লাহ যেন আপনার স্বামীর অন্তরে আল্লাহর ঘর জিয়ারতের আগ্রহ সৃষ্টি করে দেন।
আমিন।