ইসলামের অর্থনৈতিক কিংবা ব্যবসায়িক মূলনীতিগুলো অনেক চমৎকার এবং সুস্পষ্ট। রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জীবনের পথচলা, কথা কিংবা সাহাবীদের কথা ও জীবনের মাধ্যমে ব্যবসায়িক কিংবা লেনদেন সমন্বিত বিষয়গুলোর স্পষ্টতা ফুটে উঠেছে। ইসলামের ব্যবসানীতি এতটাই স্পষ্ট যে—নিশ্চিত লোকসান কিংবা ধোঁকা নয় বরং ক্রেতা ও বিক্রেতার যে কোন একজনের লোকসান কিংবা ধোঁকার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এরকম ব্যবসায়ীক কার্যক্রমও ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম এবং তার মাধ্যমে উপার্জিত অর্থের মালিকানা কিংবা ভক্ষণও নাজায়েজ। লোকসানের প্রখর সম্ভাবনা থাকে এরকম একটি ব্যবসা প্রক্রিয়া হচ্ছে অনিশ্চিত, হস্তান্তর অযোগ্য এবং অস্তিত্বহীন পণ্যের ক্রয়-বিক্রয়।
অনিশ্চিত বা অস্থিত্বহীন কোন পণ্যকে আরবি ভাষায় ‘গারার’ বলা হয়। যে কোন একপক্ষের লোকসানে হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় এরুপ বস্তুর বিক্রয় কার্যক্রমে হাদিসে নববীতে প্রকাশ্য নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যেমন— মাছের পুকুর কিনে পরবর্তীতে সেঁচে বাজারমূল্যের সমপরিমাণ মাছ পুকুরে পাওয়া না গেলে ক্রেতা লোকসানের স্বীকার হোন। আবার বাজার মূল্যের বেশি মাছ পেলে বিক্রেতা ক্ষতিগ্রস্থ হোন৷ আরো সহজে বললে— ১০ হাজার টাকায় পুকুর ইজারা নিয়ে ২০ হাজার টাকার মাছ পেলে বিক্রেতা ক্ষতিগ্রস্ত অপরদিকে ৭ হাজার টাকার মাছ পেলে ক্রেতা ক্ষতিগ্রস্ত৷ এটাই অনিশ্চয়তা।
রাসুল (সাঃ) এর হাদিস—
❝পানির নিচের মাছ বিক্রি করোনা। কেননা, তা অনিশচিত তথা ‘গারার’❞
[সুনানে আহমদ:-২০০১]
তদ্রুপ ক্ষেতের বা বাগানের ফসল অপরিপক্ব কিংবা খাওয়ার উপযোগী না হওয়ার অবস্থায় বিক্রয় জায়েয নয়। কেননা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্যান্য কারণে ফসল নষ্ট হয়ে গেলে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে ঝগড়া বিবাদ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যেহেতু, এখানে বিক্রিত পণ্য ফল-ফসল, গাছ নয়। এই মর্মে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর হাদিস হচ্ছে—
হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত,
❝নবী করিম (সাল্ললাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফল পাকার আগে তা বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। তখন নবিজীকে প্রশ্ন করা হলো— ফল পেকেছে এটা কিভাবে বুঝবো? তিনি বললেন, যখন লাল হবে। যখন রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমার কি অভিমত! আল্লাহ যখন ফল দেবেন না তখন তোমার ভাইয়ের টাকা নেওয়া কি তোমার জন্য জায়েয হবে?❞
[সহিহ বুখারি-২১৯৮]
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত— নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফলের উপযোগিতা প্রকাশ পাওয়ার আগে তা বিক্রি করতে ক্রেতা ও বিক্রেতাকে নিষেধ করেছেন।
[সহিহ বুখারি: ২১৯৪]
ক্রেতা অথবা বিক্রেতার মধ্যকার যে কোন একজন লোকসানের সম্মুখীন হবে এরকম বিক্রয় কার্যক্রম নিষেধ মূলনীতির মাধ্যমে আমাদের সমাজে প্রচলিত আরো কয়েক ধরণের ব্যবসাও শরিয়াহ’র দৃষ্টিতে হারাম। যেমন–
- মাছের জন্য পুকুর ইজারা দেওয়া।
- লিচু, কাঠাল ইত্যাদি ফলের বাগান অগ্রিম ইজারা দেওয়া।
- আম, কাঠাল কিংবা অন্যান্য ফলের মুকুল থাকা অবস্থায় গাছ বিক্রি করা।
- উড়ন্ত পাখি বিক্রি করা। কেননা, তা গৃহে ফিরে আসতে পারে আবার নাও আসতে পারে।
পূর্বোল্লেখিত যে— নাজায়েয মাধ্যমে ব্যবসা থেকে অর্জিত টাকা, সম্পদও নাজায়েয তথা হারাম।