মা বাবার কথা শুনব নাকি অন্য কাজ করব
একদিকে মুয়াজ্জিন আযান দিচ্ছেন, অন্যদিকে আপনার বাবা আপনাকে ডাকছেন। মুয়াজ্জিনের আযান শুনে আগে মসজিদে যাবেন নাকি বাবা কী জন্য ডাকছেন শুনে আসবেন?
বিখ্যাত তাবেয়ী মুজাহিদ রাহিমাহুল্লাহকে এই প্রশ্নটি জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জবাব দেন-
“আগে বাবার ডাকে সাড়া দিবে।”
মুহাম্মাদ ইবনে মুনকাদির রাহিমাহুল্লাহ বলেন:
“আপনি নামাজ (নফল) পড়াবস্থায় যদি আপনার বাবা ডাক দেন, তাহলে নামাজ ভেঙ্গে তার ডাকে সাড়া দিবেন।”
ইয়াকুব আল-আজলী বিখ্যাত তাবেয়ী আতা ইবনে আবি রাবাহ রাহিমাহুল্লাহকে জিজ্ঞেস করেন, বৃষ্টির দিনে আমার মা আমাকে মসজিদে জামআতে নামাজ পড়তে নিষেধ করেন। তিনি আমাকে বাড়িতে নামাজ পড়তে বলেন। এখন আমি কার কথা শুনবো?
ফরজ নামাজ পড়ার জন্য আমি কি মসজিদে যাবো, নাকি মায়ের কথামতো বাসায় নামাজ পড়বো?
আতা ইবনে আবি রাবাহ জবাব দেন-
“তুমি তোমার মায়ের কথামতো বৃষ্টির দিন বাসায় নামাজ পড়ো।”
একজন মা তার সন্তানকে ওয়াদা করান- সে শুধুমাত্র ফরজ-ওয়াজিব নামাজ পড়বে আর রমাদ্বান মাসের রোজা রাখবে। এছাড়া কোনো নামাজ পড়বে না, কোনো রোজা রাখবে না। এমন অবস্থায় কি সে তার মায়ের ওয়াদা পালন করবে? নাকি ওয়াদা ভঙ্গ করবে?
আতা ইবনে আবি রাবাহকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন-
“সে তার মায়ের ওয়াদা পালন করবে।”
রাতের খাবারের টেবিলে রেডি করে মা-বাবা আমাদেরকে ডাকতে থাকেন, আর আমরা বলি একটু পর আসছি। তখন আমরা কী করি?
আমরা তখন মোবাইল টিপি বা পড়ালেখা করি।
হিশাম ইবনে হাসান রাহিমাহুল্লাহ আল-হাসান ইবনে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞেস করেন, তিনি যখন রাতে কুরআন তেলাওয়াত করেন, তার মা তখন খাবার রেডি করে তাঁকে ডাকতে থাকেন। এমন অবস্থায় তিনি বিড়ম্বনায় পড়ে যান। মন চায় কুরআন তেলাওয়াত করতে, ঐদিকে তাঁর মা তাঁকে ডাকছেন। তিনি কী করবেন?
আল-হাসান রাদিয়াল্লাহু আনহু পরামর্শ দেন-
“তুমি তোমার মায়ের ডাকে খেতে বসবে। মাকে সন্তুষ্ট করা আমার কাছে নফল হজ্জের চেয়েও প্রিয়।”
এক সাহাবী নিজের মা-বাবাকে কাঁদিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে হিজরত করে তাঁর বাইয়াত গ্রহণ করতে চাইলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন শুনলেন, লোকটি তাঁর মা-বাবাকে কান্নারত অবস্থায় ফেলে রেখে এসেছেন, তখন বললেন,
“তুমি তাদের কাছে ফিরে যাও। তাদেরকে যেভাবে কাঁদিয়েছো, সেভাবে গিয়ে হাসাও।”
[সুনানে আবু দাউদ: ২৫২৮]
আল্লাম ইবনুল জাওযী রাহিমাহুল্লাহর ‘আল-বিররুল ওয়ালিদাইন’ বই থেকে অনূদিত।