লেখালেখির কলাকৌশল

প্রথম পর্ব

লেখালেখিকে আমরা তুলনা করতে পারি একটা বিল্ডিংয়ের সাথে, একটা ব্যবসার সাথে। বিল্ডিং বানাতে যেমন রড, সিমেন্ট, বালু লাগে, ব্যবসা করতে গেলে যেমন মূলধন লাগে, ঠিক তেমনি লেখালেখি করতে গেলেও মূলধন লাগবে। লেখালেখির মূলধন হলো পড়া-শোনা। পড়া-শোনা যতো বেশি থাকবে, লেখালেখির মধ্যে সেটা ফুটেও উঠবে।

তারমানে ভালো লেখক হতে গেলে সবার আগে ভালো পাঠক হতে হবে। হুমায়ূন আহমেদেরই উদাহরণ দেই। তিনি মেজর করেছেন ক্যামিস্ট্রি নিয়ে। কিন্তু তার লেখালেখিতে ক্যামিস্ট্রির কথা কতোটুকুই বা আসছে?
বরং তার প্রত্যেকটি উপন্যাস পড়লে কমপক্ষে চার-পাঁচটি উপন্যাস, বিশ্বসেরা বইয়ের রেফারেন্স পাবেন। একজন লেখক হতে গেলে কী পরিমাণ পড়া-শোনা করা লাগে তার একটা সহজ উদাহরণ হলো হুমায়ূন আহমেদ।

কেউ কেউ মনে করতে পারেন, কাজী নজরুল ইসলাম তো প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা বেশিদূর করেননি, কিন্তু তিনি কিভাবে এতো ভালো লিখতেন?
হ্যাঁ, কাজী নজরুল ইসলাম প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা করেননি ঠিক, কিন্তু তিনি নিজে নিজে পড়েছেন, অনেকগুলো ভাষা শিখেছেন। কুরআনের কাব্যানুবাদ করার জন্য কাজী নজরুল ইসলাম আরবি-ফার্সী ভাষা শিখেন। করাচীর এক মসজিদের ইমাম সাহেবের তত্ত্বাবধানে শিখে ফেলেন উর্দু ভাষাও। বিশ্ব সাহিত্য চষে বেড়ানোর জন্য শিখেছেন ইংরেজি ভাষা, পড়েছেন ইংরেজি সাহিত্য।

নজরুল মোটামুটি সাতটি ভাষা জানতেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইতালি থেকে ফেরার পর নজরুল নাম ধরে ধরে তাকে ইতালির ঐ সময়কার কবিদের সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। নজরুলের এমন জানাশোনা দেখে রবীন্দ্রনাথ অবাক হোন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা না করলেও ব্যক্তিগতভাবে পড়ালেখা করেছেন। গ্যাটের কবিতা পড়ার জন্য তিনি শিখেছেন জার্মান ভাষা। মজার ব্যাপার হলো, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আরবি ভাষাও শিখেছেন। তার সময়কার আরব কবিদের সাথে তার পত্র যোগাযোগ ছিলো।

লেখকদের পাঠাভ্যাস নিয়ে আর বেশি উদাহরণ টানছি না। লেখাটি অনেক বড় হয়ে যাবে। তারমানে, আমরা প্রথমেই জানলাম, লেখালেখি করতে হলে প্রচুর পড়া-শোনা করতে হবে।

দ্বিতীয় বিষয় এবং তৃতীয় বিষয় দুটোই মূলত এক। ‘আমার আগ্রহ কী নিয়ে’ এই বিষয়টা আগে ঠিক করে নিতে হবে; পড়ার জন্য এবং লেখার জন্য। টপিকের অভাব নাই। আকীদা, দর্শন, তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব, রাজনীতি, তুলনামূলক সাহিত্য, জীবনী… কতো শতো টপিক। আমাদের প্রথমেই ঠিক করে নিতে হবে, কোন টপিক নিয়ে আমার পড়তে ভালো লাগে। যেই টপিক নিয়ে পড়তে ভালো লাগবে, সেই টপিক নিয়ে লিখতেও ভালো লাগবে।

টপিক এক বা একাধিক হতে পারে। যেমন: আমার লেখালেখি জীবনের শুরুতে আমার পছন্দের টপিক ছিলো তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব, তারপর ব্যক্তিজীবনে ইসলামের প্রায়োগিক দিক, জীবনী। মূলত এই তিনটি টপিক নিয়ে আমি পড়তে পছন্দ করি, লিখতে পছন্দ করি। ফেসবুকে আমার দুশোর মতো স্ট্যাটাসকে এই তিনটি টপিকে রাখা যায়। আমার প্রকাশিতব্য তিনটি বইয়ের মধ্যে দুটোই হলো জীবনী নিয়ে। তারা ঝলমল, চার তারা।

প্রথমে আপনি যে টপিক নিয়ে আগ্রহী, সেই টপিক নিয়ে বিস্তারিত পড়লেন, ডকুমেন্টারি-লেকচার দেখলেন। এটা শেষ মানে আপনার Reading Material শেষ।

এবার আসুন, লেখালেখি শুরুর আগের স্টেপ। লেখালেখি শুরুর আগে আমাদেরকে Literature Survey করতে হবে।

Literature Survey হলো, আপনি যা লিখতে চাচ্ছেন, সেটা নিয়ে ইতোমধ্যে আর কী কী লেখা হয়েছে সেগুলো দেখা। ধরুন, আমি ‘লাইলাতুল কদর’ নিয়ে স্ট্যাটাস লিখতে চাচ্ছি। এটা সম্পর্কে আমি পড়া-শোনাও করেছি। এখন দেখবো, এটা নিয়ে ফেসবুকে আর কে কে কী লিখেছেন। যদি দেখি যে, আমি যেভাবে লিখতে চাচ্ছি, সেভাবে ইতোমধ্যে লেখা হয়ে গেছে, তাহলে আমি আর লিখে লাভ কী?

আমি চাইলে এটা করতে পারি, একই টপিককে ভিন্নভাবে সাজাতে পারি, ভিন্ন স্টাইলে লিখতে পারি। তবেই আমার লেখাটি স্বার্থকতা পাবে, পাঠক পড়ে আনন্দ পাবে।

নির্মলেন্দু গুণ বলেন,
“একটা কবিতা লিখতে লাগে পাঁচ মিনিট থেকে দশ মিনিট। কিন্তু, কবিতার প্রথম লাইনটি লিখতে লাগে ৫-১০ দিন।”

এটার মানে হলো, আপনি যা নিয়ে লিখতে চাচ্ছেন, সেটা নিয়ে আপনার পূর্ণ প্রস্তুতি আছে, লিটারেচার সার্ভেও করেছেন, কিন্তু লেখা শুরু করতে পারছেন না। কথাগুলো মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে কিন্তু কলম বা কী-বোর্ডে আসছে না।

লিখবো-লিখবো করলে হবে না। আমাদেরকে লিখতে বসতে হবে। প্রথম লাইন লিখে রাখুন, দেখবেন কেমনে-কেমনে বাকি লাইনগুলো চলে আসছে।

আবার, ফেসবুকে লেখালেখির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আমাদের প্রথম লাইন। ফেসবুকে মানুষজন পড়ার জন্য আসেনা। কিন্তু আপনি তাকে পড়াতে চান। এটা কিভাবে করবেন? পাঠক পড়বে কি পড়বে না সেটা নির্ভর করছে আপনার প্রথম লাইনটির উপর। সে নিউজফিড স্ক্রল করতে পছন্দ করে। হঠাৎ আপনার লেখার প্রথম লাইন পড়েই যদি সে আগ্রহবোধ না করে, তাহলে সে আপনার লেখাটি পড়বে না।

দুটো রেফারেন্স বইয়ের কথা। লেখালেখির কলাকৌশল নিয়ে বই দুটোর সন্ধান আমাকে দিয়েছেন মাসুদ শরীফ ভাই। আমি নিজেও বই দুটো পড়ে উপকৃত হয়েছি।

১. মার্জিনে মন্তব্য – সৈয়দ শামসুল হক।
২. On Writing: A Memoir of the Craft – Stephen King

পুরো লেখাটি এখন গুছিয়ে নিই। উপরে যা বললাম সেগুলো এখন পয়েন্ট আউট করি:

দ্বিতীয় পর্ব

বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা ডিপার্টমেন্ট হলো Marketing. সবগুলো প্রতিষ্ঠানে মার্কেটিং নিয়ে আলাদা একটা সেক্টর থাকে। তো মার্কেটিং –এর দুটো টার্ম হলো Customer Segmentation, Target Customer.

এই টার্ম দ্বারা বুঝানো হয়, একটা প্রোডাক্ট যে বিক্রি করা হবে, প্রোডাক্টের টার্গেট কাস্টমার কারা? অর্থাৎ, কাদের জন্যই মূলত প্রোডাক্টটি বানানো হয়েছে?

একটা সহজ উদাহরণ দিই। বাংলাদেশে আশিভাগের বেশি মেয়েরা মাথায় হিজাব, স্কার্ফ পরে। চুল খুলে হাঁটে এমন মেয়েদের সংখ্যা ২০ পার্সেন্টের বেশি হবে না। শ্যাম্পু বিজ্ঞাপনগুলো এতোদিন বিজ্ঞাপন দিতো- Nothing to hide. সবগুলো বিজ্ঞাপনে মেয়েদেরকে চুল খুলে হাঁটার আহ্বান করা হতো।

সানসিল্ক এই জায়গায় নতুন একটা স্লোগান নিয়ে আসলো। তাদের প্রোডাক্টটি তারা Product Differentiation করলো। তারা নিয়ে আসলো ‘হিজাব রিফ্রেশ’।

অর্থাৎ, যেসব মেয়েরা চুল খুলে হাঁটছে না, তাদেরকে বুঝালো- ‘তোমাদের জন্য তো আমরা আলাদা প্রোডাক্ট নিয়ে এসেছি।’ যারা একটু চালাক, তারা বুঝতে পারছে, শ্যাম্পু আর শ্যাম্পু সেটা আবার হিজাব রিফ্রেশ কী, আর চুল খোলা কী? একটা হলেই তো হলো।

দেখুন, সানসিল্ক পপুলার মার্কেটিং করেছে এবং এটা সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশ মুসলিমপ্রধান দেশ হওয়ায়। ইউনিলিভার কিন্তু এই আইডিয়াটা অ্যামেরিকা-ইউরোপে প্রয়োগ করবে না। সেখানে হিজাবটাই অনেক দেশে নিষিদ্ধ, ‘হিজাব রিফ্রেশ’ দিয়ে তারা খাল কেটে কুমির আনবে?

একজন লেখক যখন লেখালেখি করবেন, তাকে সবার আগে ঠিক করে নিতে হবে তার পাঠক কারা। তিনি কাদের উদ্দেশ্যে লিখছেন? নবিজীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জীবনী পড়ে দেখুন, তিনি কিন্তু একেকজন সাহাবীর সাথে আলাদা আলাদাভাবে ব্যবহার করতেন। বাচ্চাদের জন্য এক টোনে কথা বলতেন, বেদুঈনদের জন্য আরেক টোনে, আবু বকর-উমরদের (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) সাথে আরেক টোনে।

মার্কেটিং –এর ভাষায় যাকে বলে Customer Segmentation, লেখালেখির কলাকৌশলের ভাষায় তাকে বলে- Readers Segmentation. আমি যখন শিশুদের জন্য লিখবো, তখন আমি তাদের ভাষায় লিখবো, আমার ভাষায় না। আবার, আমি যখন তরুণদের জন্য লিখবো, আমি তখন তরুণদের ভাষায় লিখবো; তারা যে ভাষায় কথা বলে, যেরকম শব্দচয়ন করে সেগুলো আমি আমার লেখার মধ্যে নিয়ে আসবো।

যাদের নিয়ে লিখতে যাবো, তাদের সমস্যাগুলো আমাকে চিহ্নিত করতে হবে। যেমন ধরুন: আমি তরুণদেরকে নিয়ে লেখালেখি করতে পছন্দ করি। তো তরুণদের সমস্যা হলো প্রেম, ফ্রি-মিক্সিং, নেশা, পর্নোগ্রাফি। তাদেরকে নিয়ে লিখতে হলে এই সমস্যাগুলো এড্রেস করে আমাকে লিখতে হবে।

আবার, তরুণরা কি কলেজ-ভার্সিটি পড়ুয়া নাকি মাদ্রাসায় পড়ুয়া এটাও চিহ্নিত করতে হবে। যেমন ধরুন, যারা কলেজ-ভার্সিটিতে পড়ে, তারা কথায় কথায় ইংরেজি শব্দচয়ন করে। যারা মাদ্রাসায় পড়ে, তারা কথায় কথায় আরবি-ফারসি-উর্দু শব্দ, পরিভাষা ব্যবহার করে। তো আমি যদি লেখালেখি করি মাদ্রাসা পড়ুয়া তরুণদের জন্য, আর সেখানে যদি আমি ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করি, তারা বিরক্ত হবে। ঠিক তেমনি কলেজ-ভার্সিটি পড়ুয়া পাঠকের কাছে যদি আমি আরবি-ফার্সি শব্দ ব্যবহার করি, তারা বুঝতে পারবে না, লেখাগুলো স্কিপ করে যাবে।

এখানে প্রাসঙ্গিক আরেকটা কথা বলে নিই। বাংলাদেশের নব্বই ভাগ মানুষ আরবি বুঝতে পারে না। এজন্য আরবি লেখা দেখলে তারা সেটা পড়ে না। ফেসবুকে হলে তো একশো হাত দূরে থাকে। আপনি ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস লিখলেন, মাঝেমধ্যে আরবি কুরআন-হাদীস, সালাফদের উক্তি দিলে বেশিরভাগ পাঠক আপনার লেখা পড়বে না, তারা আরবি দেখেই ভয় পাবে।

আপনি মানুষকে আরবি শেখাতে যাওয়া একটা বিষয় আর আপনি একটা স্ট্যাটাস লিখে ইসলাম শেখাতে যাওয়া আরেকটা বিষয়। আপনার স্ট্যাটাসের উদ্দেশ্য যদি হয় মানুষকে যেমনেই হোক আরবি পড়ানো, তাহলে মানুষ উল্টো আরবি দেখেই ভয়ে স্কিপ করবে। কিন্তু আপনার উদ্দেশ্য যদি হয় ইসলামের ম্যাসেজটা দেওয়া, আপনি তো সেটা বাংলায়ও দিতে পারেন।

ধরুন আপনি চীনে গেলেন ইসলামের দাওয়াত দিতে। আপনার উদ্দেশ্য সহীহ। কিন্তু আপনি মান্দারিন ভাষা জানেননা। আপনি সেখানে গিয়ে বাংলা ভাষায় মানুষকে দাওয়াত দিলে দাওয়াতটা কি ইফেক্টিভ হবে? হবে না। কারণ, তাদের ভাষায় তাদেরকে দাওয়াত দিতে হবে। (স্ট্যাটাসে আরবি ভাষা ব্যবহার করবেন না বলায় যদি আমাকে ‘আরবি বিদ্বেষী’ ভাবেন, তাহলে আপনাকে ‘সালাম’ দেওয়া ছাড়া আমার আর কিছু বলার নাই)

এবার আসি, শেষ টপিকে। ‘পাঠকের সাইকোলজি কিভাবে ধরবেন?’ এটা খুব…খুউব কঠিন কাজ। এটার জন্য আপনাকে সাইকোলজি নিয়ে মোটামুটি পড়া-শোনা করতে হবে। সাইকোলজির কিছু বেসিক বই সংগ্রহ করতে হবে, কিছু ডকুমেন্টারি দেখতে হবে।

পাঠকের সাইকোলজি কিছুটা বুঝা যায় কমেন্টে। আপনাকে পাঠকের ফিডব্যাক এনালাইসিস করা শিখতে হবে। আপনি পাঠকের কাছে কতোটা রীচ করতে পারলেন সেটা বুঝতে হবে। ‘রীচ’ করা মানে কিন্তু আপনার পোস্টে কতো বেশি লাইক, কমেন্ট, শেয়ার হচ্ছে এটা না।

‘ভালো লিখছেন ভাই/ জাজাকাল্লাহ ভাই/ এগিয়ে যান ভাই/ আপনার লেখাগুলো নিয়মিত পড়ি/ ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করবেন ভাই’ এগুলো হলো আমাদের পোস্টের ৮০% কমেন্ট। এইসব কমেন্টগুলো আপনার লেখকসত্ত্বার জন্য কোনো কাজে আসবে না এটা মাথায় রাখতে হবে।

একটা স্ট্যাটাস লিখতে লাগে এক ঘন্টা। ফেসবুকে সেটা পড়তে লাগে পাঁচ মিনিট। কিন্তু সেই স্ট্যাটাসে Just Now তে যখন দেখবেন ২০-২৫ টা লাইক-লাভ, পাঁচ মিনিট হবার আগে যখন দেখবেন ১০০ লাইক, ১০ টা কমেন্ট, ৫ টা শেয়ার; তখন ধরে নিবেন এই লোকগুলো আপনার জন্য হুমকিস্বরূপ। এদের মধ্যে ১০% স্ট্যাটাস পড়েনি, পড়বেও না। শুধুমাত্র আপনার নাম দেখেই তারা কমেন্টে চলে আসছে। এদেরকে না পারবেন এড়িয়ে যেতে, না পারবেন কৃতজ্ঞতা জানাতে।

পাঠকের সাইকোলজি বুঝার আরেকটা উপায় হলো, পাঠকের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তাদের সাথে কথা বলা। তাদেরকে চা খাওয়াবেন, আর আপনার লেখার সমালোচনার করার জন্য ফ্লোর ওপেন করে দিবেন।

আমরা ভার্সিটিতে আব্দুল্লাহ মাহমুদ নজীব ভাই, কবি আবু সালেহ মাসুম, সাকিবুর রাহাতরা মিলে আড্ডা দেই। তো নজীব ভাই বলেন, “আমাদের লেখালেখির একদম নির্দয় সমালোচনা শুরু হোক। আরিফ ভাই, মাসুম, লেখা দেখাও। সবাই সমালোচনা করুন।”

তারমানে, পাঠকের ফিডব্যাকগুলো খুব গুরুত্বের সাথে নিতে হবে। কারা ‘পাঠক’ সেটাও কিন্তু চিহ্নিত করতে হবে। যে লিখবে ‘জাজাকাল্লাহ ভাই, সুন্দর লিখেছেন ভাই’ তাকে আপনি পাঠক বলবেন কি-না সেটা আপনার এখতিয়ার।

দ্বিতীয় পর্বে আমরা তিনটি বিষয় তুলে ধরলাম:

১. কাদের জন্য লিখবেন?
২. পাঠকের ভাষা বনাম লেখকের ভাষা।
৩. পাঠকের সাইকোলজি ধরবেন কিভাবে?

তৃতীয় পর্ব

বিখ্যাত লেখকদের ‘লেখক’ হয়ে উঠার গল্প…

১.
ক্লাসের ফাঁকে কয়েকজন তুমুল তর্ক করছে। নতুন লেখকদের লেখা নাকি সম্পাদকরা পড়েন না, এজন্য তারা ছাপেন না। প্রবোধ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় নামের এক ছেলে সেই কথা মানতে রাজী না। সে বললো, “নতুন লেখকদের লেখা ভালো না বলেই সম্পাদকরা ছাপেন না। ভালো গল্প পেলে তারা অবশ্যই ছাপবেন।”

বন্ধুরা মানতে রাজী না। তারা বললো, “তাহলে বাজি ধর আমাদের সাথে, তুই লিখে দেখা।” কলকাতার সবচেয়ে ভালো পত্রিকা ‘বিচিত্রা’। বাজি ধরা হলো প্রবোধ কুমার ‘বিচিত্রা’ পত্রিকায় একটা গল্প পাঠাবেন এবং গল্পটি ছাপা হবে।

অঙ্কের বই সরিয়ে প্রবোধ কুমার গল্প লেখা শুরু করলেন। এক রাতের মধ্যেই গল্পটি লিখে ফেললেন। নাম দিলেন ‘অতসী মামী’। পৌষ সংখ্যা বিচিত্রা (ডিসেম্বর ১৯২৮), গল্পটি ছাপা হলো। প্রবোধ কুমার বাজি জিতে গেলেন। গল্প লেখার সময় ছদ্মনাম ব্যবহার করেছিলেন – মানিক। আমরা যাকে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় নামে চিনি, তার লেখালেখির যাত্রা ছিলো এই বাজি ধরে।

২.
বাংলা ভাষার এক কবিকে একসময় ডাকা হতো ‘ বা কবাকুম কবি’ বলে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলার এম. এ. পরীক্ষায় তার রচনার অংশবিশেষ তুলে ধরে বলা হতো- “শুদ্ধ বাংলায় লিখো।” ১৯১৩ সালে সেই কবি যখন নোবেল পুরস্কার পান, তখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সেই কবিকে সমাবর্তনের বিশেষ বক্তৃতা দেবার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। তিনিই প্রথম বেসরকারি ব্যক্তি, যিনি এই সম্মান পেলেন। সমাবর্তন অনুষ্ঠানের চিরাচরিত প্রথা ভেঙ্গে তিনি বক্তৃতা শুরু করেন বাংলা ভাষায়।

যার ভাষাকে ‘সহীহ’ না বলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় একসময় ব্যঙ্গ করতো, সেই বিশ্ববিদ্যালয় শেষমেশ গুণী রবীন্দ্রনাথকে কোলে তুলে নেয়।

৩.
জীবনানন্দ দাসের ‘মহাপৃথিবী’ কাব্যগ্রন্থটি পড়ার পর মীর আব্দুস শুকুর নামে মোল্লা বাড়ির এক ছেলে ভাবলেন, “আরে, এমন কবিতা তো আমিও লিখতে পারি।” কাঁচাহাতে একটা কবিতা লিখলেন। কবিতাটি এবার কাকে পড়াবেন? চাচাতো বোন হানুকে পড়তে দিলেন।

বেচারী তরুণ কবির কবিতাটি পড়ে বললো, “এটা তো আগে কোথাও পড়েছি।” কী এক অপমান! তিনি অপমান হজম করে নিলেন। তারমান, তাঁর প্রথম কবিতা পড়েই যদি সে বলে এতা গুণী কবিদের মতো, তাহলে তো তিনি কবিতা লিখতে পারবেন। তিনি বলে বসলেন- ‘আমি একজন কবি হবো’। সেই থেকেই তাঁর কবি হবার যাত্রা শুরু। এই মীর আব্দুস শুকুরকে আমরা কী নামে চিনি জানেন? কবি আল মাহমুদ।

৪.
পাশের বাড়ির অর্পণা নামের এক মেয়েকে ভালোবাসেন সুনীল নামের এক ছেলে। একদিন খেয়াল করলেন, সেই বাড়িতে ‘দেশ’ পত্রিকা যায়। তারমানে, ঐ বাড়ির লোকেরা ‘দেশ’ পত্রিকা পড়ে। অর্পণাও নিশ্চয় পড়ে?

তিনি একটা কবিতা লিখে পাঠালেন দেশ পত্রিকায়। কবিতাটি প্রকাশ হয়েছে কি-না তিনি জানেন না। পত্রিকা কে না র মতো টাকাও তার কাছে নেই। একদিন দেখলেন, অর্পণা তার কাছে আসছে। হাতে একটা পত্রিকা। সে বললো, “এই সুনীল, আজ ‘দেশ’ পত্রিকায় তোমার নামে নাম এক নতুন কবির একটি কবিতা বের হয়েছে। কবিতার নাম ‘একটি চিঠি’। পড়ছো?”

সুনীল মনে মনে বললেন, “সেই সুনীল তো আমি। আর একটি চিঠি কবিতাটি তো তোমার জন্য।” এই হলেন সেই সুনীল, যাকে আমরা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় নামে চিনি। তার জীবনের প্রথম কবিতাটি ছিলো একট চিঠি পৌঁছানোর জন্য। এখন তিনি কতো মানুষের চিঠির ভাষা হয়ে গেছেন!

৫.
এক তরুণ কবি খুব উৎসাহ নিয়ে তার প্রথম কাব্য সংকলন বের করছেন। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হলো, তার বইটি পরিচিতরা বাদে আর কেউ কিনে নি। খুব হতাশ হয়ে পড়লেন। একসময় তার জীবনে আসলেন ফ্যানি ব্রন নামের এক প্রাণোচ্ছল সুন্দরী। তিনি ফ্যানিকে কবিতা পড়ে শুনাতেন। তার জীবনের শ্রেষ্ঠ কবিতা ফ্যানি ব্রনকে উদ্দেশ্য করে লিখা।

সেই কবিতাগুলো তাঁকে ‘কবি’ খ্যাতি এনে দেয়। তিনি পরিচিতি লাভ করেন ‘Poet of Beauty’ বা সৌন্দর্যের কবি নামে। এই কবিকে আমরা চিনি জন কিটস নামে।

৬.
গতকাল আমার প্রিয় একজন মানুষ আমার জন্য একটা দু’আ করেন। তিনি বলেন, “আপনার জীবনে এমন একজন আসুক, যে আগুন নয়, আপনার জীবনে আলো হয়ে আসে।” এই দু’আটি পড়ে মনে হলো, আচ্ছা, আমার জন্য এরচেয়ে সুন্দর দু’আ কি কেউ কখনো করেছেন?

একজন লেখকের জীবনে তার বউয়ের ভূমিকা কেমন, সেটা নিয়ে কয়েকবছর আগে একটা রিসার্চ করেছিলাম। সেই রিসার্চে দেখিয়েছিলাম, প্রত্যেক ভালো লেখকের জীবনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছেন তার স্ত্রী। স্ত্রীর প্রভাব একজন লেখকের লেখার মধ্যে ফুটে উঠে।

যেমন সক্রেটিসের ছিলো একজন বদমেজাজী স্ত্রী। তার স্ত্রীর নাম ছিলো Xanthippe. ইংরেজিতে Xanthippe মানে হলো রাগান্বিত মহিলা। সক্রেটিসের স্ত্রীর নামটাই হয়ে গেছে রাগান্বিত মহিলার প্রতীকী নাম। তিনি কতোটা বদমেজাজী ছিলেন একটা উদাহরণ দিলে বুঝতে পারবেন।

একবার সক্রেটিস ঘরে বসে পড়ালেখা করছেন। তার স্ত্রীর মেজাজ খটখট করছে। এই অকর্মা লোকটাকে তার সহ্য হয় না। Xanthippe ঝগড়া শুরু করে দিলেন। সক্রেটিস পরিস্থিতি বুঝতে পেরে ঘরের বাইরে গিয়ে পড়ালেখা করতে লাগলেন। এটা দেখে তো Xanthippe আরো রেগে গেলো। তারমানে তার কথা স্বামী কানে নিচ্ছেন না?

সে এক বালতি নোংরা পানি নিয়ে সক্রেটিসের মাথায় ঢেলে দিলো। সক্রেটিস মুখের পানি মুছতে মুছতে বললেন, ‘After a thunder, comes the rain’ অর্থাৎ, এতোক্ষণ ধরে মেঘের গর্জন হয়েছিলো, এবার বৃষ্টি পড়লো!

জন কিটসের জীবনে ফ্যানি ব্রাউনের কথা বলি, রবীন্দ্রনাথের জীবনে মৃণালিনীর কথা বলি কিংবা আইনস্টাইনের জীবনে এলসার ভূমিকা বলি, সবগুলো কিন্তু একই বৃত্তে গাঁথা। একজন লেখক হতে শুধুমাত্র জীবনসঙ্গী পেলেই হবে না, জীবনসঙ্গীকে ‘চিন্তাসঙ্গী’ হতে হয়।

জর্জ বার্নাড শ’ জীবনে অনেকগুলো নাটক, উপন্যাস লিখেছিলেন। ১৮৭৯-১৮৮৫, এই পাঁচ বছরেই লিখেন পাঁচটি উপন্যাস। কিন্তু, তার জীবনের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস, নাটক লিখেছেন বিয়ের পর। তার চিন্তাসঙ্গী ছিলেন চার্লোট পেইন টাউনসেন্ড।

বার্নাড শ’র জীবনে চার্লোটের ভূমিকা নিয়ে তিনি লিখেন, “যে গাছে ফুল ফোটে সে গৌরব গাছের। কিন্তু, যে সযত্নে গাছকে বাঁচিয়ে রাখে, তার কী প্রাপ্য? ফুলের জীবনে মালীর যে ভূমিকা, আমার জীবনে চার্লোটের সে ভূমিকা।”

লেখালেখির কৌশল পড়ে কি কেউ লেখক হতে পারে? হুমায়ূন আহমেদকে একবার একজন লেখালেখির কৌশল শেখানোর জন্য বললে তিনি বললেন, “লেখালেখির কৌশল পড়ে কেউ যদি লেখক হতে পারতো, তাহলে বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের পর শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক হতেন তার ছেলে রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর। অথচ তাকে চিনে কয়জন?”

আমি এটাকে আরেকটা উদাহরণ দিয়ে বুঝাই। ‘লেখালেখির কৌশল’ হলো কাচ্চি-বিরিয়ানীতে সালাদের মতো। কিন্তু যারা লেখালেখির কলাকৌশলকেই মনে করেন কাচ্চি-বিরিয়ানী, এগুলো পড়েই লেখক হয়ে যাবেন, তাহলে আপনার আর লেখক হওয়া হবে না।

চতুর্থ পর্ব

বৃষ্টির দিনে খিচুড়ি খেতে মন চায়। শুধু খিচুড়ি খাবো? মুরগি খিচুড়ি খাবো নাকি গরুর মাংসের খিচুড়ি খাবো?

এটা ঠিক করে একজনকে বাজারে পাঠাতে হয়। কি কি আনতে হবে তার একটা লিস্ট দিতে হয়। কে কোন কাজ করবে, বাজার আনার পর রান্না বসাবে কে, ধোয়ামোছা কে করবে সেটাও নির্দিষ্ট করে দিতে হয়। তারপর খিচুড়ি খাওয়া।

লেখালেখির সাথে রান্নার বেশ মিল আছে। আগে রসদ জুগিয়ে যেমন রান্না শুরু করতে হয়, তেমনি লেখালেখিতেও আগে রসদ জুগিয়ে লিখতে বসতে হয়। রান্নার ক্ষেত্রে প্রথম প্রশ্ন- কী রান্না করবো?
লেখালেখিতেও প্রথম প্রশ্ন- কোন টপিক নিয়ে লিখবো?

খিচুড়ি রান্না করতে গেলে বাজার লিস্ট করতে হবে একরম, বিরিয়ানী রান্না করতে গেলে বাজার লিস্ট করতে হবে অন্যরকম। লেখালেখির ক্ষেত্রেও কোন টপিক নিয়ে লিখবো তার উপর নির্ভর করছে সেটার কাঁচামাল কোথা থেকে আসবে।

একটা উদাহরণ দিলে বুঝতে সুবিধা হবে আশা করি।

কিছুদিন আগে ফররুখ আহমদকে নিয়ে আমি একটা ফিচার লিখেছিলাম। ঐ ফিচার লেখার আগে ফররুখ আহমেদকে নিয়ে যেসব বই, স্মৃতিচারণ আছে সেগুলোর সন্ধান করলাম। ৫-৬ টা বই পেলাম। সবগুলোতে একনজর চোখ বুলালাম। আমার ঐ ফিচারটি লেখার জন্য যে যে অংশ থেকে Quote করতে হবে, সেই অংশটি ল্যাপটপে নোট করলাম। নোট করা যখন পুরোপুরি শেষ হলো, তখন লিখতে বসলাম।

হ্যাঁ, লিখতে বসার ৮-১০ ঘন্টা আগে থেকে অবশ্য মাথার মধ্যে লেখাটি সাজিয়ে নিয়েছিলাম। কিভাবে লিখবো, কতোটুকু তথ্যের সাথে কতোটুকু আবেগ যোগ করবো…ইত্যাদি। যখন লিখতে বসলাম, তখন সময় লেগেছে মাত্র ৪৫ মিনিট থেকে এক ঘন্টা। কিন্তু ঐ এক ঘন্টার লেখার পেছনে ব্যয় করতে হয়েছে কয়েকদিন।

রাঁধুনি যেমন রান্না বসিয়ে রসদ খুঁজতে যান না, তেমনি লেখালেখি করতে হলে লিখতে বসে রেফারেন্স খুঁজলে হয় না। লিখতে বসার আগেই রেফারেন্স খুঁজে নিতে হবে। দাওয়াতের হিকমাহ নিয়ে সপ্তাহখানেক আগে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। ঐ লেখাতে দুই-তিনটি হাদীসের রেফারেন্স, বইয়ের রেফারেন্স দিয়েছি। এইসব রেফারেন্সগুলো কিন্তু লিখতে বসার আগে সংগ্রহ করে নিয়েছি যাতে লিখতে বসে একমনে, একটানা লিখে যেতে পারি।

বই ঘাঁটাঘাঁটি করলাম, রেফারেন্স সংগ্রহ করলাম, লেখা শেষ করলাম। সাথে সাথেই কি পোস্ট দিয়ে দেবো? না। লেখাটি পোস্ট দেবার আগে কমপক্ষে দুইবার পড়বো, বানান ঠিক করবো। তারপরও ভুল থেকে যায়। এজন্য ফেসবুকে পোস্ট করার সাথে সাথে আবার পড়ে ফেলবো। ৫-১০ মিনিটের মধ্যে দেখা যাবে আরো ২-৩টি বানান ভুল খুঁজে পাই। এই ২-৩টি বানান যতোই পাবলিশ করার আগে ভালোমতো চেক করি না কেনো, এগুলো থেকেই যায়।

ভালো লিখতে হলে সবার আগে আমি মনে করি নিজের লেখার সবচেয়ে বড়ো পাঠক নিজেকে হতে হবে। নিজের একটা লেখা কমপক্ষে ৮-১০ বার পড়তে হবে। লেখার মানের কতোটা উন্নতি হচ্ছে সেটা বুঝার জন্য ৩-৪ বছরের আগের লেখাগুলোতে একনজর চোখ বুলানো যেতে পারে। তখন মনে হয়- আরে! এই টাইপের পোস্টগুলো আমি দিয়েছিলাম?
এইটা হলো ম্যাচিউরিটি।

ইসলাম নিয়ে লিখতে গেলে দু-চারটা বই, দু-চারটা লেকচার, পাশাপাশি রেফারেন্স নিয়ে আসার পর মনের মধ্যে এক ধরনের এরোগেন্সের জন্ম হয়। ‘আরে, আমার চেয়ে বেশি কি কেউ জানে? আমি তো অনেক আলেমদের থেকেও বেশি জানি’। এই ফিলিংস আসাটা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু এমন ফিলিংসকে কখনো প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। এজন্য মাঝেমধ্যে আমার যেসব লেখা মনে হয় পাবলিক করার আগে কোনো আলেমকে দেখানো দরকার, তখন আমার পরিচিত আলেমদেরকে মেইল করি। তাঁরা যদি গ্রিন সিগন্যাল দেন, তবেই সেটা পাবলিশ করি।

অর্থাৎ, জাননেওয়ালার উপরও যে জাননেওয়ালা আছেন এটা মাথায় রেখেই লেখালেখি করতে হয়। এমনও হয়েছে, একটা পোস্টের কমেন্টে এসে অনেকেই অভিযোগ করেছেন, এই সমস্যা, ঐ সমস্যা। পোস্ট-কমেন্ট আবার পড়ে যদি সমস্যাকে আসলেই সমস্যা মনে হয়, তখন পোস্টটা হয় এডিট করেছি, পরিচিত আলেমদের সাথে কথা বলেছি, নতুবা পোস্টটা রিমুভ করেছি।

আমার একটা পোস্ট রিমুভ করতে আমার ইগো বাধা হয়ে দাঁড়ায় না, আলহামদুলিল্লাহ। ভালোর প্রচার করতে গিয়ে ভুলের প্রচারের পক্ষপাতী আমি নই। যে ইস্যুতে আমার জানাশোনা নেই, সেই ইস্যুতে আমি কী-বোর্ড চালাবো না; হোক সেটা হটটপিক।

‘করোনা থেকে আত্মরক্ষার জন্য কি কি পদক্ষেপ নিতে হবে’ এই সম্পর্কে লেখালেখি করার মতো জানাশোনা আমার নেই। ‘কওমী মাদ্রাসার অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে সমাধান কী হওয়া উচিত’ এটা সম্পর্কেও আমার ভালো জানাশোনা নেই। তো আমি যা জানি না, তা নিয়ে নাক-গলাবো কেনো?

অনেকেই ইনবক্সে, কমেন্টে বলেন- ভাই, এই টপিক নিয়ে একটা লিখুন, টপিকটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি তাদেরকে বলি- “টপিকটা আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ, আপনিই লিখুন। আমি এসাইনমেন্টের কাজ করি না।”

আমি কোন টপিক নিয়ে লিখবো, কোন টপিক সম্পর্কে আমার পড়াশোনা আছে সেটা আমি ভালো জানি। যে টপিকে আমার পড়াশোনা নাই, সেই টপিক হট কেনো, ফ্রাই হয়ে গেলেও আমি লিখবো না। কোনো Higher authority যদি আমাকে বলে- এই টপিক নিয়ে লিখো, যতোক্ষণ না টপিকটার সাথে আমি বোঝাপরা করতে না পারছি, ততোক্ষণ পর্যন্ত আমি লিখতে বসি না।

তবে হ্যাঁ, আমার শুভাকাঙ্ক্ষী কেউ যদি বলে- এই টপিকটা নিয়ে কি লেখালেখি করা যায়? তাহলে অনেকসময় আমি চিন্তা করে দেখি ঐটা নিয়ে আগে পড়া যায় কিনা। সমকালীন প্রকাশনী থেকে আমার প্রকাশিতব্য ‘ওপারেতে সর্বসুখ’ বইটির আইডিয়া পাই আমার হলের রুমমেটের কাছ থেকে।

তারমানে একটা টপিক আইডিয়ার সাথে শতভাগ একাত্মতা করার আগে আমি পড়তে বসি না, লিখতেও বসি না। লেখালেখি পুরোটাই মনের ব্যাপার। মন না মানলে লিখতে বসলে শুধু কী-বোর্ডের উপর অত্যাচার করা হয়। এমনও হয়েছে একদিনে ৫০-৬০ পৃষ্ঠা লিখেছি, মাত্র ১০-১২ দিনে একটা বইয়ের পাণ্ডুলিপি রেডি করেছি (অপ্রকাশিত), আবার এমনও হয়েছে এক সপ্তাহের মধ্যে একটা শব্দও লিখতে পারিনি।

আমি জানি, এই পোস্টগুলো এমন অনেকেই পড়ছেন, যাদের কাছ থেকে ‘লেখালেখির কলাকৌশল’ শেখার জন্য আমি মুখিয়ে থাকি, তাঁরা যদি আমাকে লেখালেখির কলাকৌশল শেখান, আমি হাঁটু গেড়ে তাঁদের কাছে বসে পড়তাম।

তারপরও সাহস করে এই সিরিজটা লিখলাম যদি কারো উপকারে আসে এই আশায়। যা কিছু ভালো, সব আল্লাহর পক্ষ থেকে। মন্দের দায়ভার আমার।

লিখেছেন

আরিফুল ইসলাম (আরিফ)

পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কলম তাকে উজ্জীবিত করেছে স্বীয় বিশ্বাসের প্রাণশক্তি থেকে।
অনলাইন এক্টিভিস্ট, ভালোবাসেন সত্য উন্মোচন করতে এবং উন্মোচিত সত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে।

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন

পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কলম তাকে উজ্জীবিত করেছে স্বীয় বিশ্বাসের প্রাণশক্তি থেকে।
অনলাইন এক্টিভিস্ট, ভালোবাসেন সত্য উন্মোচন করতে এবং উন্মোচিত সত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে।

Exit mobile version