লাল দাগ

প্রায় বছর দেড়েক পর ঢাবি সেন্ট্রাল মসজিদসালাত আদায় করলাম। বাইরের সোরগোল, টিএসসির অবাধ ফ্রি মিক্সিং, অহেতুক অনর্থক কথা ও আচরণ থেকে বের হয়ে আসা বলেই হয়তো একটা আত্মিক প্রশান্তি অনুভব করা যায় এখানে। বিদ্যুৎ নেই তারপরও নিশ্চিন্তে বসে থাকা যায় মসজিদের আঙিনায়।

সবকিছু এভাবেই সরল স্বাভাবিক আপন ধারায় চলছে আশেপাশে, শুধু ক্যাম্পাস না পুরো পৃথিবীতেই। কিন্তু কিছু দাগ এই গতিশীলতার ভীড়ে এখনো রয়ে গেছে। এরকম কিছু দাগ মসজিদ প্রাঙ্গন জুড়ে আছে এখনো। এই সেই লাল দাগগুলো যা জামাতের সময় “গায়ে গা লাগিয়ে দাঁড়ান” এর পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। লাল দাগগুলো সেই সময়কে মনে করিয়ে দেয় যখন মসজিদগুলো সালাতের জন্য নির্দিষ্ট হয়ে গিয়েছিলো, এমনকি সেই রামাদানের কথা মনে করিয়ে দেয় যখন সাধারণ সময়ে পুরো ভরে যাওয়া মসজিদে মাত্র দশজন মুসল্লি নিয়ে জামাত হতো। লাল দাগগুলোর লাল রঙে চোখে ভাসে মানুষের সেই মরণ ভীতি, যার ভয়ে মৃত বাবাকে সন্তান ছুঁয়ে দেখেনি, অসুস্থ ভাইকে হাসপাতালে দেখতে যায়নি।

দেখতে দেখতে অল্প কয়েক দিনের মধ্যে আমরা সেই মহামারী পরবর্তী চতুর্থ রমাদানে পা দিতে চলেছি ইনশাআল্লাহ। বিশ সালের রামাদানে আমরা তো পাগলপ্রায় হ‌য়েছিলাম মসজিদে সালাত আদায়ের জন্য। সেই বছর ঈদের সালাত আর আলিঙ্গনের জন্য আমরা উদগ্রীব ছিলাম। সেসময় অসহায় মৃত্যু আমাদের সতর্ক করেছিলো, আমরা রবের সাহায্য লাভের জন্য চেষ্টার ত্রুটি রাখিনি। ঐসময়ের জীবিত মৃত কেউ হয়তো ভাবেনি আবার সবকিছু এতোটা স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

কতোটা স্বাভাবিক হলো?
এতোটাই স্বাভাবিক হলো যে পুনরায় ফ্রি মিক্সিং এ সবাই মেতে উঠলো,শরীফ থেকে শরীফা হ‌ওয়ার ট্রেন্ড শুরু হলো, চাঁদাবাজি তার পুরনো রুপে মহাসড়ক কাঁপাচ্ছে আর সুদখোর ও ঘুষখোর গোঁফে তেল দিচ্ছে। যেখানে খাদ্যাভাবে মানুষ মরছিলো এখন খেয়ে অসুস্থ হ‌ওয়ার প্রতিযোগিতা চলছে ফুড ব্লগার থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যে। এমনকি এতো নামকে মুসলিমের ভীড়ে কেউ যদি সত্যিই ন‌ও মুসলিম হয়ে বাঁচতে চাচ্ছে তবে তাকে সহযোগিতা করার মতো সাহসী মুসলমান ও নেই!

আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা বলেন,

"মানুষকে যখন দুঃখ-দৈন্য স্পর্শ করে, তখন সে শুয়ে-বসে-দাঁড়িয়ে আমাকে (আল্লাহকে) ডাকতে থাকে। তারপর আমি যখন তার দুঃখ-দৈন্য দূর করে দিই, তখন মানুষ এমন ভাব করে যেন সে আপতিত দুঃখ-কষ্টের জন্য কখনোই আমাকে ডাকেনি।"
[সুরা ইউনুস, আয়াত ১২]

আমাদের অবস্থা যেন এরকমই। মসজিদে এখনো মহামারীর ঘ্রাণ রয়ে গেছে, মেঝেতে তার চিহ্ন আজো সূর্যের আলোতে চোখ রাঙানি দেয় কিন্তু আমরা উদাসীন!

আল্লাহ বনী ইসরাইলকে বারবার বিপদ দিয়েছেন। তারা ওয়াদা করেছে আল্লাহ তাদের সাহায্য করেছেন। এবং আবার তারা অকৃতজ্ঞ হয়েছে এবং আল্লাহ পুনরায় শাস্তি দিয়েছেন। তাদের সবচেয়ে বড় শাস্তি যে-আজকেও তারা পথভ্রষ্ট এবং কিয়ামতের পূর্বে পাথর পর্যন্ত মুসলিমের হয়ে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে। সেখানে আল্লাহ বারবার সতর্ক করার পরও কেন গাফেলদের দলে হারিয়ে নিজেকে খুঁজে বেড়াচ্ছি আমরা!
আমরা মুসলিম আর এটাই তো আমাদের প্রথম পরিচয়।

লিখেছেন

John Doe

জেনারেল লাইনে পড়াশোনার ব্যস্ততায় দ্বীনি জ্ঞানার্জনের সুযোগ খুবই কম পেয়েছি তারপরও অনলাইন ভিত্তিক দাওয়াহ এবং ইসলামী ব‌ইয়ের সুবাদে ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের সুযোগ হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।
সেই জ্ঞানকে ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ইসলামের সৌন্দর্যকে উম্মাহর সামনে ফুটিয়ে তোলার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই আমার এই টুকটাক লেখালেখি।

All Posts

জেনারেল লাইনে পড়াশোনার ব্যস্ততায় দ্বীনি জ্ঞানার্জনের সুযোগ খুবই কম পেয়েছি তারপরও অনলাইন ভিত্তিক দাওয়াহ এবং ইসলামী ব‌ইয়ের সুবাদে ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের সুযোগ হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।
সেই জ্ঞানকে ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ইসলামের সৌন্দর্যকে উম্মাহর সামনে ফুটিয়ে তোলার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই আমার এই টুকটাক লেখালেখি।

Exit mobile version