লাইলাতুল কদরে আমরা যেসব ফজিলতপূর্ণ সুরা ও আয়াত তিলাওয়াত করতে পারি।
Table of Contents
সুরা ইখলাস
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, (একদিন) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (উপস্থিত সাহাবিদের) বলেন, ‘‘তোমরা সমবেত হও। আমি এক্ষুণি তোমাদের সামনে কুরআনের এক-তৃতীয়াংশ পাঠ করবো।’’ তখন লোকজন একত্র হলো। তিনি তাদের কাছে আসলেন এবং ‘‘ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’’ (সুরা ইখলাস) পাঠ করলেন।…
এরপর তিনি বলেন, ‘‘আমি বলেছিলাম, তোমাদের সামনে আমি কুরআনের এক-তৃতীয়াংশ পাঠ করবো। জেনে রেখো, এটি (সুরা ইখলাস) কুরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান।’’1
সুরা ফালাক ও সুরা নাস
আয়িশা (রা.) বলেন, ‘রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রাতে ঘুমানোর সময় তাঁর দুই হাতের তালু একত্র করে তাতে ‘‘ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’’ (সুরা ইখলাস), ‘‘ক্বুল আউযু বি রব্বিল ফালাক্ব’’ (সুরা ফালাক) ও ‘‘ক্বুল আউযু বি রব্বিন নাস’’ (সুরা নাস) পাঠ করে ফুঁ দিতেন। এরপর তাঁর শরীরের যতটুকু সম্ভব মুছে দিতেন। শুরু করতেন মাথার উপরিভাগ দিয়ে; এরপর চেহারা ও দেহের সামনের অংশ। এমনটি তিনি ৩ বার করতেন।’’2
সুরা কাফিরুন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘
‘ক্বুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরুন’ কুরআনের এক-চতুর্থাংশের সমান।’’3
সুরা মুলক
আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতিদিন রাতে ‘‘তাবারাকাল্লাযি বিয়াদিহিল মুলক’’ (সুরা মুলক) তিলাওয়াত করবে, আল্লাহ তাকে এর ফলে কবরের আজাব থেকে দূরে রাখবেন। আমরা নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময়ে এই সুরার নাম দিয়েছিলাম ‘‘বাধা প্রদানকারী’’ (কবরের আজাব থেকে)।’
[ইমাম নাসায়ি, আস-সুনানুল কুবরা: ১০৫৪৭; শায়খ আলবানি, সহিহুত তারগিব: ১৫৮৯; হাদিসটি হাসান]
সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত
রাসুলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি রাতের বেলা সুরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত পাঠ করবে, সেটি তার জন্য যথেষ্ঠ হবে।” [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৫০০৯]
ইমাম নববি (রাহ.) বলেন, আলিমগণের পক্ষ থেকে এর বিভিন্ন অর্থ বলা হয়েছে। কেউ বলেছেন, কিয়ামুল লাইল বা তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য যথেষ্ট হবে। কেউ বলেছেন, শয়তানের ক্ষতি অথবা বিপদ-মুসিবত থেকে নিরাপত্তা পাওয়া যাবে। [শারহু মুসলিম: ৬/৩৪০]
আয়াতুল কুরসি
উবাই ইবনু কা‘ব (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘হে আবুল মুনযির (উবাইয়ের ডাকনাম)! তুমি কি বলতে পারো, তোমার জানামতে আল্লাহর কিতাবের কোন আয়াতটি সর্বশ্রেষ্ঠ?’’ আমি বললাম, ‘আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলই ভাল জানেন।’ (এরপর) তিনি (আবারও) বললেন, ‘‘হে আবুল মুনযির! তুমি বলতে পারো কি, তোমার জানামতে আল্লাহর কিতাবের কোন্ আয়াতটি সর্বশ্রেষ্ঠ?’’ এবার আমি বললাম, ‘আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কাইয়ুম… (আয়াতুল কুরসি—২৫৫ নং আয়াত)।’ উবাই বলেন, এরপর তিনি আমার বুকে (মৃদু) আঘাত করে বললেন, ‘‘হে আবুল মুনযির! ইলম (জ্ঞান) তোমাকে ধন্য করুক।’’4
অন্য বর্ণনায় হাদিসটির বর্ধিত অংশে আরও এসেছে, ‘‘সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! এর (আয়াতুল কুরসির) জিহ্বা হবে, ঠোঁট হবে এবং এটি আরশের পাদদেশে মালিকের পবিত্রতা বর্ণনা করবে।’’
[ইমাম আহমাদ, আল-মুসনাদ: ২১২৭৮; শায়খ আলবানি, সিলসিলা সহিহাহ: ৩৪১০; হাদিসটি সহিহ]
মুসাব্বিহাত সুরাগুলো
ইরবাদ্ব ইবনু সারিয়াহ্ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসাব্বিহাত সুরাগুলো পাঠ না করে ঘুমাতেন না।5
উল্লেখ্য, আলিমগণের মতে, মুসাব্বিহাত সূরাগুলো হলো: সুরা হাদিদ, সুরা হাশর, সুরা সফ, সুরা জুমু‘আহ ও সুরা তাগাবুন। এসব সুরার বৈশিষ্ট্য হলো, এগুলো শুরু হয়েছে আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করে।
সম্ভব হলে মুসাব্বিহাত সুরাগুলো তিলাওয়াত করা যায়। সাধারণভাবেই প্রতি হরফে দশ নেকি হয়। আর কদরের রাতে সেটি অনেক বেশি হবে, ইনশাআল্লাহ।
সুরা সাজদাহ ও সুরা যুমার
সাধ্যে কুলালে আমরা আরও পড়তে পারি সুরা যুমার ও সুরা আস সাজদাহ। এ দুটো সুরা রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমের পূর্বে পড়তেন।6
সুরা ওয়াকিয়াও পড়া যেতে পারে। রাতের বেলা এই সুরাটি পড়ার ব্যাপারে একাধিক দুর্বল হাদিস আছে। আবার এক দিন রাতে ঘুম থেকে জেগে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুরা আলে ইমরানের শেষ ১০ টি আয়াত পড়েছিলেন। সেটির উপরও আমল করা যায়।7
লাইলাতুল কদরে এসব সুরা পড়া জরুরি কিছু নয় বা লাইলাতুল কদরে এই বিশেষ সুরাগুলো গুরুত্ব দিয়ে পড়তে বলা হয়নি। সাধারণ সময়েই এগুলো অনেক বেশি ফজিলতপূর্ণ হওয়ায় এখানে তা উল্লেখ করা হলো, যেহেতু কদরের রাতে পড়া অনেক বেশি লাভজনক। যাদের ইচ্ছা হবে, কদরের রাত অন্বেষণে কুরআন থেকে যেকোনো সুরা অথবা আয়াত পাঠ করতে পারেন। যত বেশি তিলাওয়াত করা যায়, ততই কল্যাণ। আর সবচেয়ে উত্তম হলো, নামাজের মধ্যে তিলাওয়াত করা।
- ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ১৭৭৩ ↩︎
- ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৫০১৭ ↩︎
- ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ২৮৯৪; হাদিসটি সহিহ ↩︎
- ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ১৭৭০ ↩︎
- ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ৩৪০৬; হাদিসটি হাসান ↩︎
- ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ২৮৯২ ও ২৯২০; হাদিস দুটো সহিহ ↩︎
- ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ১৮৩ ↩︎