কুফুর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ মহরানা আমার অধিকার
আমি নারী, কুফুর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ মহরানা আমার অধিকার!
আপনি স্বামী আর আমি স্ত্রী। আমাকে আমার উপযুক্ত মহরানা আদায় করা আপনার ইসলামী দায়িত্ব। এটি আপনার নৈতিক দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পরিশোধের। এটা লৌকিকতার বিষয় নয়, বরং এটা পরিশোধ্য ঋণ।
আমার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সাথে সাথেই স্বামী হিশেবে আপনার জন্য এটা প্রথম ও অত্যাবশ্যক দায়িত্ব। আপনি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লাকে মাধ্যম করে আমাকে স্ত্রীরূপে আমানত স্বরূপ গ্রহণ করছেন, অতএব আমার মহরের ব্যাপারে রাব্বকে ভয় করা উচিত; আমার পবিত্র আমানতের হক আদায় করা উচিত। আমার কুফু অনুয়ায়ী মোটা অংকের মহর নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে ইসলাম বাধা প্রদান করেনি। তাই আপনার সামর্থ্য থাকা সত্বেও আপনি আমাকে সুন্নাতের নামে কম মহরানা দিয়ে ঠকাতে পারবেন না। কারণ ইসলাম বিবাহের ক্ষেত্রে কুফুকে অনেক বেশি প্রাধান্য দিয়েছে।
আপনার সামর্থ্য আছে, বাড়ী – গাড়ী আছে, ভালো ইনকাম আছে, দশ লক্ষ টাকা কাবিন নগদ আদায় করার সামর্থ্য আছে। তবে আমায় ঠকাবেন কেন? আর আমার মহরানা যেহেতু আপনিই আদায় করবেন, এটা নির্ধারনের ক্ষেত্রে আপনার পরিবারের সদস্যদের এতো মাথা ব্যাথা কেন? তারা তো আদায় করবেনা। তাদের আদায় করার বিধান ও আমার রব্ব দেননি। আমার রব্ব আপনাকেই হুকুম করেছেন আমার মহরানা আদায়ের। দেনমোহর প্রদান প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনুল কারিমের সূরা নিসার ৪ নম্বর আয়াতে আমার রব্ব আপনাকে নির্দেশ দিয়েছেন,
“তোমরা স্ত্রীদের মহর স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে প্রদান করবে। “
আমি মহর হিসেবে প্রাপ্ত সম্পত্তির মালিক হয়েই আপনার সঙ্গে সংসারযাত্রা শুরু করবো। আপনার থেকে প্রাপ্ত এই সম্পদ একান্তভাবে আমার। এখানে অন্য কারো কোনো অধিকার নেই। কারো নাক গলানোর ও অধিকার নেই। আমি যেভাবে ইচ্ছে হালাল ভাবে মহরানাকে ব্যয় করতে পারবো। আমি ইচ্ছে করলে প্রাপ্ত মোহর থেকে আপনাকেও কিছু অংশ দিতে পারবো বা অন্য কাউকে কিছু দান করতে পারবো, এটা আমার ব্যক্তিগত অধিকার এবং স্বাধীন ইচ্ছা। স্বয়ং আমার রাব্ব আমাকে এমন স্বাধীন অধিকার দিয়েছেন। তাইতো আমি সম্মানিতা। ইসলাম আমাকে সকল দিকেই এভাবে সম্মানিতা করেছেন।
মহরানার ক্ষেত্রে আপনার ফাতিমা রাদিআল্লাহু তাআ’লা আনহার কথা মনে পড়ে। তখন বলেন ফাতিমা রাদিআল্লাহু তাআ’লা আনহার মহরানা ছিল ৪৮০ দিরহাম। মেনে নিলাম উনাদের কম মহরানা ছিলো। কিন্তু আলী রাদিআল্লাহু তাআ’লা আনহুর মতো আপনার কী আছে দেখিয়ে দিন তো। আপনি ঠিক কোন কোন দিক দিয়ে আলী রাদিআল্লাহু তাআ’লা আনহুর মতো? মহরানার ক্ষেত্রে আপনার সাহাবাদের কথা মনে পড়ে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা মনে পড়ে, আমি বলবো এটা একজন স্ত্রীর সাথে ধোঁকাবাজি ছাড়া আর কিছু না। যে নারী সুখে- দুঃখে সারা জীবন আপনাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে দিন শেষে সুন্নাহের নামে আপনি তার সাথে প্রতারনা করতে চান, তাতে ধোকা দিতে চান। বিয়ের তিনটি শর্তের মধ্যে একটি হলো মহর। আমার রব্ব কুরআনুল কারীমে বলেছেন,
” হে নাবী! আমি আপনার জন্য হালাল করেছি আপনার স্ত্রীদের যাদের আপনি মহরানা আদায় করেছেন।” [ সূরা আহযাব- ৫০]
নাবীও মহরানা আদায় করে স্ত্রীদের হালাল করেছেন। তিনি নাবী বলে মহরানা আদায় করেননি এমনটি কিন্তু নয়। এদিকে মোটা অংকের মহর যা সাথে সাথে আদায় করা হয় না, তাও অবলা নারীর সাথে ধোঁকাবাজি। আর কুফু অনুয়ায়ী সুন্নাহ মোতাবেক যদি মহরানা অল্প ধার্য্য করা হয়,আর তা যথাসময়ে পরিশোধ করা হয়,তাহলে মোটা অংকের মহর নির্ধারন যা আদায় করা হয়নি তা থেকে নিশ্চয়ই উত্তম।
অনেক পুরুষ আছেন যারা সারা রাত রব্বের দরবারে সাজদাহ দিতে দিতে কপালে দাগ করে ফেলেছেন অথচ স্ত্রীর মহরানা আদায়ের কথা তার মনেই নেই। যা তার জন্য একটি ফরজ বিধান ও স্ত্রীর হক, যা আদায় করা ছাড়া মানুষ প্রকৃত দ্বীনদার হতে পারে না। পারে না প্রকৃতি মু’মিন হতে।
এবার আসি, যেসব বোনদের মহরানা পরিশোধ হয়নি তাদের কাছে, প্রিয় বোনেরা! আমাদের সমাজে বেশ লক্ষনীয় বিষয় হলো, স্ত্রীরা স্বামীর কাছ থেকে মহর চায় না। চাইতে লজ্জা পায় বা ভয় পায়। ভাবে, মহর চাইলে না জানি তিনি কী মনে করেন! দেখুন বোন, এটা আপনার অধিকার, এটা আপনার পাওনা টাকা। শরীয়ত আপনাকে হুকুম করেছে এটা আপনিই ব্যবহার করবেন। কোন স্ত্রী যদি তার স্বামীর নিকট মহর আদায় করার নিমিত্তে তা চেয়ে নেয়, তাহলে সে যেন তার পাওনা উসূল করে নিলো।
বিদ্রঃ কলামটি আমি ও আপনি করে সম্বোধন করে লিখতে ইচ্ছে হলো, তাই এভাবেই লিখলাম। এটার সাথে আমার ব্যক্তিগত জীবনের সাথে কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।