কুরবানি করার উত্তম সময় কোনটি?
ঈদের ২য় দিন কুরবানি করার থেকে ঈদের দিন কুরবানি করার সওয়াব কি বেশি?
ইসলামে যে কোন ভালো কাজ যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি সম্পন্ন করার ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَاسْتَبِقُوا الْخَيْرَاتِ
“অত:এব তোমরা ভালো কাজে প্রতিযোগিতা করো।”1
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
بادروا بالأعمال
“তোমরা আগেভাগে নেকির কাজ সম্পন্ন করো।”2
সুতরাং যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি কুরবানি করা উচিৎ। বিনা কারণে বিলম্ব করা ঠিক নয়।
কুরবানি করার সর্বমোট সময় কয় দিন এবং উত্তম সময় কোনটি?
জিলহজ মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আজহার সালাত আদায়ের পর থেকে শুরু করে ১৩ তারিখের সূর্য ডোবা পর্যন্ত মোট চার দিন (রাত-দিন) যে কোন সময় কুরবানি করা জায়েজ। তবে সর্বোত্তম সময় হল, ঈদের সালাত শেষ করার পরই কুরবানি করা। সালাতের আগে পশু জবেহ করলে কুরবানি সহিহ হবে না।
বারা রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إِنَّ أَوَّلَ مَا نَبْدَأُ بِهِ فِي يَوْمِنَا هَذَا أَنْ نُصَلِّيَ، ثُمَّ نَرْجِعَ فَنَنْحَرَ، مَنْ فَعَلَهُ فَقَدْ أَصَابَ سُنَّتَنَا، وَمَنْ ذَبَحَ قَبْلُ فَإِنَّمَا هُوَ لَحْمٌ قَدَّمَهُ لِأَهْلِهِ، لَيْسَ مِنَ النُّسُكِ فِي شَيْءٍ
“ঈদের দিন আমরা প্রথমে সালাত আদায় করব। অতঃপর ফিরে এসে কুরবানি করব। যে ব্যক্তি এভাবে আদায় করবে সে আমাদের নিয়ম মতো করল। আর যে সালাতের আগেই পশু জবাই করল সেটা তার পরিবারের জন্য গোশত হবে; এটা কুরবানি হবে না।”3
তাই সালাত শেষ করার পরপর কুরবানি করার চেষ্টা করতে হবে। (খুতবা শেষ করার পর পর কুরবানি করা আরও অধিক উত্তম)।
এতে কুরবানি দাতার জন্য আরেকটি সুন্নত পালন করা সম্ভব হয়। তা হল, ঈদের দিন কোন কিছু না খেয়ে ঈদের সালাত পড়া। তারপর ফিরে এসে সর্বপ্রথম কুরবানি গোশত খাওয়া। বেশি বিলম্ব করলে বা পরের দিন কুরবানি করলে এ সুন্নতটি আদায় করা হয়ত সম্ভব হবে না।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, বুরাইদা রা. বলেন,
ﻛَﺎﻥَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻟَﺎ ﻳَﻐْﺪُﻭ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻔِﻄْﺮِ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺄْﻛُﻞَ ﻭَﻟَﺎ ﻳَﺄْﻛُﻞُ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﺄَﺿْﺤَﻰ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺮْﺟِﻊَ ﻓَﻴَﺄْﻛُﻞَ ﻣِﻦْ ﺃُﺿْﺤِﻴَّﺘِﻪِ
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের জন্য না খেয়ে বের হতেন না। আর ঈদুল আযহায় সালাত থেকে ফিরে আসা পর্যন্ত কিছু খেতেন না। এরপর তার কুরবানি থেকে খেতেন।”4
উল্লেখ্য যে, ঈদের সালাত থেকে ফিরে এসে তিনি সর্বপ্রথম কুরবানির ‘কলিজা’ খেতেন মর্মে বর্ণিত হাদিসটি সহিহ নয়।
বিনা কারণে বিলম্ব করা এ কারণেও ঠিক নয় যে, এতে কুরবানির পশুর মৃত্যু, চুরি হওয়া, হারিয়ে যাওয়া বা অন্য কোন দুর্ঘটনা ও বিপদাপদে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তখন হয়ত কুরবানি দেয়াই সম্ভব হবে না। তাই যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি আল্লাহর হুকুম বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করতে হবে।
শাইখ বিন বায রহ. বলেন,
“কুরবানি করা অধিক উত্তম ঈদের দিন, তারপর ২য় দিন, তারপর ৩য় দিন, তারপর ৪র্থ দিন।”
[শাইখের অফিসিয়াল ওয়েব সাইট]
আল্লাহু আলম।
- সূরা বাকারা: ১৪৮ ↩︎
- সহিহ মুসলিম ↩︎
- সহিহ মুসলিম ২/১৫৪ ↩︎
- মুসনাদে আহমদ, হা/২২৯৮; সুনানে দারাকুতনী ১/৪৫, হা/১৭১৫; হাদিসটিকে শুআইব আরনাবুত হাসান বলেছেন-তাখরিজুল মুসনাদ: ২২৯৮৪। অনুরূপভাবে ইমাম নববিও হাসান বলেছেন-আল মাজমু ৫/৫ ↩︎