কোনো অপরাধী বা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গণপিটুনি দেওয়ার ইসলামিক বিধান কি

কোনো অপরাধী বা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গণপিটুনি দেওয়া এবং ইসলাম বিদ্বেষী, ধর্মদ্রোহী বা নাস্তিকদেরকে গোপনে হত্যা করার বিধান।
ইসলামী হুদুদ তথা দণ্ড প্রয়োগের একমাত্র দায়িত্বশীল হল রাষ্ট্র, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও আদালত। এ বিষয়ে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তি, কমিটি, জামাত বা সংগঠন এই ক্ষমতা রাখে না। কেননা এতে ‘হদ’ কায়েমের নামে ব্যক্তিগত রেষারেষি, পারিবারিক কলহ, জায়গাজমি নিয়ে ধন্ধ, রাজনৈতিক ও দলীয় প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ ইত্যাদি ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া দলিল-প্রমাণ সহকারে যথাযথ তদন্ত ছাড়াই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করার সম্ভাবনা আছে।

তাই আইন হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার ইসলাম কাউকে দেয়নি। এতে সমাজে বিবাদ, বিশৃঙ্খলা ও রক্তপাত আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।

ইবনে রুশদ কুরতুবি বলেন,

وأما من يقيم هذا الحد – أي : جلد شارب الخمر – فاتفقوا على أن الإمام يقيمه وكذلك الأمر في سائر الحدود . ” بداية المجتهد ” ( 2 / 233 )
“আলেমগণ এ ব্যাপারে একমত যে, এই হদ (তথা মদ পানকারীর উপর চাবুক লাগানোর বিধান) বাস্তবায়ন করবে ইমাম (রাষ্ট্রপ্রধান)। সকল হুদুদ (দণ্ড প্রয়োগ) এর ক্ষেত্রেই এ কথা প্রযোজ্য।” (বিদায়াতুল মুজতাহিদ ২/২৩৩)

শাওকানী বলন: মদিনা মদিনা বাসী ফকিহগণ বলতেন:

لا ينبغي لأحد يقيم شيئاً من الحدود دون السلطان إلا أن للرجل أن يقيم حد الزنا على عبده وأمَته
“একমাত্র সুলতান ছাড়া কারো জন্য কোন হদ (দণ্ড) বাস্তবায়ন করা উচিত নয়। তবে কেউ তার দাস-দাসীর ওপর জিনার হদ (দণ্ড) কায়েম করতে পারে।” (নাইলুল আওতার ৭/২৯৫ ও ২৯৬)

সুতরাং সর্বসাধারণের দায়িত্ব, মানুষকে হেকমত ও সদুপদেশ দ্বারা ইসলামের দিকে আহ্বান করা, তাকে বুঝানো ও গোপনে সংশোধন করা, দ্বীনের শিক্ষা ও পরামর্শ দেওয়া ইত্যাদি। তাদের জন্য কারো উপর শরীয়ত নির্ধারিত দণ্ডবিধি প্রয়োগ করা বৈধ নয়।

তাই কোন নাস্তিক, ধর্মদ্রোহী ব্যক্তি বা জিনা কারী, মদপান কারী, হত্যাকারী, চোর, ডাকাত ইত্যাদি অপরাধী ব্যক্তিকে গোপনে হত্যা করা বা গণপিটুনি দেয়া বা এলাকার মোড়ল, মাতাব্বর, ইমাম বা পঞ্চায়েত কমিটি ইত্যাদি কর্তৃক হদ, কিসাস, চাবুক মারা ইত্যাদি বিধান বাস্তবায়ন করা বৈধ নয়।

এক্ষেত্রে রাষ্ট্র বা আদালত যদি তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন না করে তাহলে ক্ষমতার মসনদে আরোহী ব্যক্তি ও আদালতের বিচারকগণ মহান আল্লাহর কাঠগড়ায় অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হবে।

এ ক্ষেত্রে সাধারণ জনগণের কর্তব্য হল, ধৈর্য ধারণ করা এবং সম্ভব হলে সরকারের কাছে যথানিয়মে স্মারকলিপি ও দাবি পেশ করা। কিন্তু কোনভাবেই আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার সুযোগ নেই।

আল্লাহু আলাম


Exit mobile version