Writing

কিভাবে প্রমাণিত হয় যে কুরআন কোনও ব্যক্তি রচিত ধর্মগ্রন্থ নয়

আকাশে জ্বলজ্যান্ত সূর্যের দিকে তাকিয়েই যে কেউ সূর্যকে অস্বীকার করতে পারে, তেমন ব্যক্তির কাছে হাজার যুক্তি প্রমাণেও সূর্যের অস্তিত্ব প্রমাণ হয় না।
অন্যরা যারা কোন আলোচনা থেকে কিছু জানতে শিখতে চান তাদের উদ্দেশ্যে পূর্বে অন্যদের দেওয়া উত্তরের সাথে আমি আরো কিছু যুক্ত করে দিচ্ছি।

দেখুন আল কোরআন মানুষের জন্য সর্বশেষ ঐশ্বরিক গ্রন্থ (যারা বিশ্বাস করে)

ذَلِكَ الْكِتَابُ لاَ رَيْبَ فِيهِ هُدًى لِّلْمُتَّقِينَ
এ সেই কিতাব যাতে কোনই সন্দেহ নেই। পথ প্রদর্শনকারী পরহেযগারদের জন্য1

কোরআনের আগে যেসব ঐশ্বরিক গ্রন্থ পৃথিবীতে এসেছিল (ইব্রাহিমীয় ধর্মগুলো অনুযায়ী2) সেগুলো হল- তাওরাত, যাবুর এবং ইঞ্জিল/বাইবেল। কোরআন এসেছে সেইসব গ্রন্থের বিধানগুলোকে পরিপূর্ণতা দিতে।

আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।3

মুসলিম মাত্রই বিশ্বাস করে তার জীবন চলার পথে যেকোন সমস্যার সমাধান সে আল কোরআন এ খুঁজে পায়। তাহলে ব্ল্যাকহোল এর কি জীবনে চলার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ? যে মুর্খ লোক এখনো ব্ল্যাকহোল এর নামই শুনে নাই তার জীবন কি থমকে গিয়েছে? নাহ, যায়নি।

তাহলে অনেক মুসলিম যে দাবি করেন কোরআনে বিজ্ঞানের অনেক আবিষ্কারের ইশারা আছে, সেটা তারা কেন করে?
দেখুন কোরআনে এমন অনেক আয়াত/শ্লোক আছে যেখানে আল্লাহ অবিশ্বাসীদের জন্য তাঁর বিভিন্ন নিদর্শনের কথা উল্লেখ করেছেন, যাতে করে যারা চিন্তাশীল তারা চিন্তা করে আল্লাহকে খুঁজে পায়। যাতে এসব অকাট্য নিদর্শন দেখে অবিশ্বাসীদের মনে বিশ্বাস জন্মে। যারা প্রমাণ দেখেও বিশ্বাস করতে ইচ্ছাকৃত অস্বীকার করে তাদেরকে জোর করে বিশ্বাস করানোর জন্য পৃথিবীর কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।

কোরআনে মাতৃগর্ভে কিভাবে ভ্রূণ থেকে সন্তান জন্ম নেয় সেই বর্ণনা দেওয়া আছে-

وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ مِن سُلَالَةٍ مِّن طِينٍ
আমি মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি।4
ثُمَّ جَعَلْنَاهُ نُطْفَةً فِي قَرَارٍ مَّكِينٍ
অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দু রূপে এক সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি।5
ثُمَّ خَلَقْنَا النُّطْفَةَ عَلَقَةً فَخَلَقْنَا الْعَلَقَةَ مُضْغَةً فَخَلَقْنَا الْمُضْغَةَ عِظَامًا فَكَسَوْنَا الْعِظَامَ لَحْمًا ثُمَّ أَنشَأْنَاهُ خَلْقًا آخَرَ فَتَبَارَكَ اللَّهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ
এরপর আমি শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তরূপে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর জমাট রক্তকে মাংসপিন্ডে পরিণত করেছি, এরপর সেই মাংসপিন্ড থেকে অস্থি সৃষ্টি করেছি, অতঃপর অস্থিকে মাংস দ্বারা আবৃত করেছি, অবশেষে তাকে নতুন রূপে দাঁড় করিয়েছি। নিপুণতম সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ কত কল্যাণময়।6

আমরা আধুনিক বিজ্ঞানে “বিগ ব্যাং” থিওরি সম্পর্কে জানি। এক মহা বিস্ফোরণ থেকে মহাবিশ্ব ক্রমশ-ই বিস্তৃত হচ্ছে। অনেকে মনে করেন কোরআনে বিগ ব্যাং এর কথা বলা হয়েছে নিন্মোক্ত আয়াতের দ্বারা

أَوَلَمْ يَرَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنَّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ كَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنَاهُمَا وَجَعَلْنَا مِنَ الْمَاء كُلَّ شَيْءٍ حَيٍّ أَفَلَا يُؤْمِنُونَ
কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মুখ বন্ধ ছিল, অতঃপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। এরপরও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না?7

“আমি আমার ক্ষমতাবলে আকাশ নির্মাণ করেছি এবং আমিই একে সমপ্রসারিত করছি।”8

ثُمَّ اسْتَوَى إِلَى السَّمَاء وَهِيَ دُخَانٌ فَقَالَ لَهَا وَلِلْأَرْضِ اِئْتِيَا طَوْعًا أَوْ كَرْهًا قَالَتَا أَتَيْنَا طَائِعِينَ
অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দিলেন যা ছিল ধুম্রকুঞ্জ, অতঃপর তিনি তাকে ও পৃথিবীকে বললেন, তোমরা উভয়ে আস ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বলল, আমরা স্বেচ্ছায় আসলাম।9

ভৌত বিশ্বতত্ত্বে মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব মহাবিশ্বের উৎপত্তি সম্পর্কে প্রদত্ত একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব। এই তত্ত্বের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো কোন ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার পরিবর্তে একটি বিশেষ মুহূর্তে মহাবিশ্বের উদ্ভব। এই তত্ত্ব বলে আজ থেকে প্রায় ১৩.৭৫ বিলিয়ন বছর পূর্বে এই মহাবিশ্ব একটি অতি ঘন এবং উত্তপ্ত অবস্থা থেকে সৃষ্টি হয়েছিল। বিজ্ঞানী এডুইন হাবল প্রথম বলেন, দূরবর্তী ছায়াপথসমূহের বেগ সামগ্রিকভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যায় এরা পরষ্পর দূরে সরে যাচ্ছে অর্থাৎ মহাবিশ্ব ক্রমশ সম্প্রসারিত হচ্ছে। আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্বের ফ্রিদমান-ল্যমেত্র্‌-রবার্টসন-ওয়াকার মেট্রিক অনুসারে এটি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এই তত্ত্বসমূহের সাহায্যে অতীত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সমগ্র মহাবিশ্ব একটি সুপ্রাচীন বিন্দু অবস্থা থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। এই অবস্থায় সকল পদার্থ এবং শক্তি অতি উত্তপ্ত এবং ঘন অবস্থায় ছিল। কিন্তু এ অবস্থার আগে কী ছিল তা নিয়ে পদার্থবিজ্ঞানীদের মধ্যে কোন ঐকমত্য নেই। অবশ্য সাধারণ আপেক্ষিকতা এর আগের সময়ের ব্যাখ্যার জন্য মহাকর্ষীয় অদ্বৈত বিন্দু (সিংগুলারিটি) নামক একটি শব্দের প্রস্তাব করেছে।10

لَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنَاتِ وَأَنزَلْنَا مَعَهُمُ الْكِتَابَ وَالْمِيزَانَ لِيَقُومَ النَّاسُ بِالْقِسْطِ وَأَنزَلْنَا الْحَدِيدَ فِيهِ بَأْسٌ شَدِيدٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَلِيَعْلَمَ اللَّهُ مَن يَنصُرُهُ وَرُسُلَهُ بِالْغَيْبِ إِنَّ اللَّهَ قَوِيٌّ عَزِيزٌ
আমি আমার রসূলগণকে সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ প্রেরণ করেছি এবং তাঁদের সাথে অবতীর্ণ করেছি কিতাব ও ন্যায়নীতি, যাতে মানুষ ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে। আর আমি নাযিল করেছি লৌহ, যাতে আছে প্রচন্ড রণশক্তি এবং মানুষের বহুবিধ উপকার। এটা এজন্যে যে, আল্লাহ জেনে নিবেন কে না দেখে তাঁকে ও তাঁর রসূলগণকে সাহায্য করে। আল্লাহ শক্তিধর, পরাক্রমশালী।11

২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে কেলভি ইন্সটিটিউট অফ পার্টিকেল এস্ট্রোফিজিক্স অ্যান্ড কসমোলজি (কে আই পি এ সি) এবং স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অফ এনার্জির যৌথ গবেষণায় উঠে আসে কি ভাবে লোহা সৃষ্টি হয়েছিল। তাদের গবেষণা পত্রে উঠে আসে প্রায় ১০ বিলিয়ন বছর আগে ক্লাষ্টার গ্যালাক্সি গুলোর মধ্যে ভায়ানক সংঘর্ষের ফলে লোহা সব গ্যালাক্সির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।

বিজ্ঞানীরা জানান জাপান-আমেরিকার যৌথ স্যাটেলেইট “সুজাকু” তে বসানো ৮৪ সেট এক্সরে টেলিস্কোপ থেকে প্রাপ্ত ইমেজ বিশ্লেষণে এই তথ্য পান তারা। ২৫০ মিলিয়ন আলোক বর্ষ দূরে অবস্থিত গ্যালাক্সি সমূহের পর্যবেক্ষন থেকে তারা দেখতে পান কি ভাবে লোহা মহাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে। ১০-১২ বিলিয়ন বছর আগে মহাবিশ্বে বিলিয়ন বিলিয়ন নক্ষত্র সমহের ভয়বহ সংঘর্ষের ফলে হিলিয়ামের চেয়ে ভারী মৌলিক কনিকার সৃষ্টি হয়েছিল যার মধ্যে লোহার পরমানু ছিল অন্যতম। সুপারনোভা বিস্ফোরণের সময় তাপমাত্রা উঠে গিয়েছিল প্রায় ১০ মিলিয়ন ডিগ্রি যা এই সব মৌলিক কনিকা সৃষ্টির জন্য দ্বায়ী। ক্লাস্টার গ্যালাক্সি সমূহে মোট লোহার পরিমান ছিল ৫০ বিলিয়ন সুর্যের ভরের সমান , তাহলে বুঝুন কি পরিমান লোহা এই মহাবিশ্বে ছড়িয়ে আছে।12

একটাবার চিন্তা করে দেখুন মুহাম্মদ সাঃ, যার জন্ম আরবে ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে এবং মৃত্যু ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে, সে কিভাবে এত আধুনিক ও সাম্প্রতিক আবিষ্কৃত তথ্য জানতো যে সে কোরআনের মত গ্রন্থ লিখে ফেললো? যদি না কেউ তাঁকে শিখিয়ে দেয়।

وَلَوْلاَ فَضْلُ اللّهِ عَلَيْكَ وَرَحْمَتُهُ لَهَمَّت طَّآئِفَةٌ مُّنْهُمْ أَن يُضِلُّوكَ وَمَا يُضِلُّونَ إِلاُّ أَنفُسَهُمْ وَمَا يَضُرُّونَكَ مِن شَيْءٍ وَأَنزَلَ اللّهُ عَلَيْكَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُنْ تَعْلَمُ وَكَانَ فَضْلُ اللّهِ عَلَيْكَ عَظِيمًا
যদি আপনার প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও করুণা না হত, তবে তাদের একদল আপনাকে পথভ্রষ্ট করার সংকল্প করেই ফেলেছিল। তারা পথভ্রান্ত করতে পারে না কিন্তু নিজেদেরকেই এবং আপনার কোন অনিষ্ট করতে পারে না। আল্লাহ আপনার প্রতি ঐশী গ্রন্থ ও প্রজ্ঞা অবতীর্ণ করেছেন এবং আপনাকে এমন বিষয় শিক্ষা দিয়েছেন, যা আপনি জানতেন না। আপনার প্রতি আল্লাহর করুণা অসীম।13
مَا كَانَ اللَّهُ لِيَذَرَ الْمُؤْمِنِينَ عَلَى مَا أَنْتُمْ عَلَيْهِ حَتَّى يَمِيزَ الْخَبِيثَ مِنَ الطَّيِّبِ وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُطْلِعَكُمْ عَلَى الْغَيْبِ وَلَكِنَّ اللَّهَ يَجْتَبِي مِنْ رُسُلِهِ مَنْ يَشَاءُ فَآَمِنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ وَإِنْ تُؤْمِنُوا وَتَتَّقُوا فَلَكُمْ أَجْرٌ عَظِيمٌ 
"অসৎকে সৎ হতে পৃথক না করা পর্যন্ত তোমরা যে অবস্থায় আছ, আল্লাহ বিশ্বাসীদের সেই অবস্থায় ছেড়ে দিতে পারেন না। অদৃশ্য সম্পর্কে তোমাদের অবহিত করা আল্লাহ তার রাসূলগণের মধ্যে যাকে ইচ্ছা মনোনীত করেন এবং তাঁকে অদৃশ্য সম্পর্কে জানিয়ে দেন। তাই তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের ওপর ঈমান আন। যদি তোমরা ঈমানদার ও সংযমী হও, তবে তোমাদের জন্য মহাপ্রতিদান আছে।"14

অনেকে বলে থাকেন আজ পর্যন্ত কোনো কুরআন গবেষক কুরআন নিয়ে গবেষণা করে এমন কোনো তথ্য বের করে দেখাতে পারেননি যা বিজ্ঞানীরা পরবর্তীতে আবিষ্কার করেছে। এ প্রশ্নের খুব সুন্দর উত্তর দিয়েছেন গ্যারি মিলার তার বই ‘The amazing Quran” এর ১৩ নং পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেন-

“তথাপি প্রত্যেক যুগে এমন মুসলিম পাওয়া গেছে যারা কুরআনের উপদেশ অনুসরন করেছেন এবং অনেক বিস্ময়কর আবিষ্কার করেছেন।কেউ যদি অনেক শতাব্দী আগের কোন মুসলিম বিজ্ঞানীর লেখা পাঠ করেন,তবে তিনি দেখবেন যে,তা কুরআনের উদ্ধৃতিতে পরিপূর্ন। এই গ্রন্থগুলিতে উল্লেখ আছে যে তাঁরা এই সেই ক্ষেত্রে কোন কিছুর সন্ধানে গবেষনা করেছেন।আর তাঁরা দৃঢ়তার সাথে বলেন যে,এটা বা ওটার ক্ষেত্রে তাঁদের অনুসন্ধানের কারণ হল,কুরআন তাদেরকে সেই দিকটি দেখিয়ে দিয়েছে”।

গ্যারি মিলার এখানেই থেমে যাননি তিনি আরো লিখেন “টেলিভিশনের অনুষ্ঠানের জন্য একবার টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্রুনতত্বের বিষয়ের অধ্যাপক বিজ্ঞানী ড. কীথ এল মূরের সাক্ষাৎকার তিনি নেন। উক্ত সাক্ষাৎকারে মূর বলেন-
‘মানুষের বৃদ্ধি ও বিকাশ সম্পর্কে কুরআনে উল্লেখিত কিছু বিষয় ত্রিশ বছর আগেও বিজ্ঞানের অজানা ছিল। তিনি বলেন যে বিশেষ করে একটি বিষয়,মানুষের একটি পর্যায়ের কুরআনিক বর্ননা জোঁক সদৃশ রক্তপিন্ড(আলাক), তার কাছে নতুন ছিল,কিন্তু যখন তিনি এটি যাচাই করেন,তখন দেখেন যে, এটি সত্য আর তাই এটি তিনি তারঁ গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি বলেন আগে আমি এটি কখনোই ভাবিনি। তিনি প্রাণিবিদ্যা বিভাগে গিয়ে জোঁকের ছবি চান। যখন তিনি দেখেন যে,এটি ঠিক মানব ভ্রুনের মত দেখতে,তখন তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, উভয় চিত্রই তিনি তাঁর পাঠ্য বইয়ের অন্তর্ভুক্ত করবেন।15

মিসরের বিজ্ঞানী প্রফেসর ডঃ আবদুল বাসিত মুহাম্মদ সাইয়েদ কোরআনের সুরা ইউসুফের

اذْهَبُواْ بِقَمِيصِي هَـذَا فَأَلْقُوهُ عَلَى وَجْهِ أَبِي يَأْتِ بَصِيرًا وَأْتُونِي بِأَهْلِكُمْ أَجْمَعِينَ
তোমরা আমার এ জামাটি নিয়ে যাও। এটি আমার পিতার মুখমন্ডলের উপর রেখে দিও, এতে তাঁর দৃষ্টি শক্তি ফিরে আসবে। আর তোমাদের পরিবারবর্গের সবাইকে আমার কাছে নিয়ে এস।16

এই আয়াতের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে মানুষের ঘাম থেকে চোখের ছানির ড্রপ আবিষ্কার করেছেন।1718
আর বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার জনক মুসলিম বিজ্ঞানীদের আবিষ্কারের দিকে নাইবা গেলাম।

মহাবিশ্বকে বুঝার জন্য পদার্থ বিজ্ঞানের দুইটি অতি সফল তত্ত্ব হল

(i) আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব এবং (ii) কোয়ান্টাম মেকানিক্স।

আপেক্ষিক তত্ত্ব ব্যাখ্যা করে কীভাবে বৃহৎ স্কেলে মহাকর্ষ বল কাজ করে থাকে, অপরদিকে কোয়ান্টাম মেকানিক্স ব্যাখ্যা করে থাকে কীভাবে ক্ষুদ্রতম স্কেলে অপর তিনটি মৌলিক বল যথা, শক্তিশালী নিউক্লীয় বল, দুর্বল নিউক্লীয় বল ও তাড়িৎ-চুম্বকীয় বল কাজ করে থাকে।

উপরোক্ত দুইটি তত্ত্ব একই স্পেস-টাইম (spacetime)-কে দুইটি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দুইভাবে ব্যাখ্যা করে থাকে।

এই অসংগতি দূর করার জন্য এবং উপরে উল্লেখিত চারটি মৌলিক বল কীভাবে কাজ করে থাকে, তারা একটি মাত্র বলের ভিন্ন ভিন্ন বহিঃপ্রকাশ কী না, তা ব্যাখ্যা করার জন্যই স্ট্রিং থিউরির অবতারণা করা হয়েছে। স্ট্রিং থিউরি অনুযায়ী, বিশ্ব জগত সৃষ্টিকারী সমস্ত মৌলিক কণিকা অর্থাৎ কোয়ার্ক, লেপটন, গেজ বোসন ইত্যাদি মূলত স্ট্রিং ছাড়া আর কিছুই নয়।

তবে এগুলো আমাদের দেখা স্ট্রিং যেমন তার বা গুনা জাতীয় কিছু নয়।

এগুলো হল এনার্জি বা শক্তির স্ট্রিং যেগুলো বিভিন্ন কম্পাংকে কম্পিত হয়ে ভিন্ন ভিন্ন মৌলিক কণিকাসমূহ তৈরি করছে। পার্টিকেল ফিজিক্স থেকে আমরা জানি, একেবারে গভীরের জিনিসটি হল কতগুলো অবিভাজ্য কণিকা যাদের দ্বারা সমগ্র মহাবিশ্ব তৈরি।
এদেরকে বলা হয়ে থাকে “প্রাথমিক মৌলিক কণিকা”

এই মৌলিক কণিকাগুলির মধ্যে এক প্রজাতি পদার্থ গঠনে অংশগ্রহণ করে থাকে, যাদেরকে বলা হয় পদার্থ গঠনকারী কণিকা, অন্য নাম ফার্মিয়ন (উদাহরণঃ ইলেকট্রন, সমস্ত কোয়ার্ক। কোয়ার্ক বলাতে প্রোটন ও নিউট্রনকে আর আলাদাভাবে বললাম না কারণ প্রোটন, নিউট্রন মূলত কোয়ার্ক দ্বারা তৈরি। বাদ বাকি লেপটন সমূহও এই শ্রেণীর অন্তর্গত)।

দ্বিতীয় প্রজাতির কণিকাসমূহ মৌলিক বল সমূহের বাহনকারী হিসেবে কাজ করে থাকে, এদেরকে বলা হয় বল বাহনকারী কণিকা, অন্য নাম গেজ বোসন (উদাহরণঃ সাধারণ আলোক কণিকা/ফোটন, গ্লুয়োন ইত্যাদি)।

কণা বিজ্ঞানে আপাতত এগুলোকেই ধরা হয় সবচেয়ে ছোট কণিকা যাদেরকে এখনও পর্যন্ত আর ভাগ করা সম্ভব হয় নি। কিন্তু অনেক বিজ্ঞানীই ধারণা করে থাকেন যে, এতগুলি মৌলিক কণিকার পরিবর্তে হয়ত শুধু একটিমাত্র ক্ষুদ্রতম জিনিস রয়েছে যার থেকে সমস্ত কিছুর উৎপত্তি। স্ট্রিং থিউরি অনুযায়ী ক্ষুদ্রতম ঐ একটিমাত্র জিনিসই হল এনার্জি বা শক্তির স্ট্রিং যার দ্বারা এই সমগ্র মহাবিশ্ব গঠিত।

আমাদের মোটামুটি সবারই জানা আছে যে নিউট্রনের ভর প্রোটনের ভর থেকে সামান্য বেশি, প্রায় শতকরা ০.১ ভাগ বেশি।
অর্থাৎ প্রোটনের ভর যদি হয় ১০০ গ্রাম, নিউট্রনের ভর হল প্রায় ১০০.১ গ্রাম (নিউট্রনের প্রকৃত ভর হল ১.৬৭৫০×১০^-২৪ গ্রাম, অপর দিকে প্রোটনের প্রকৃত ভর হল ১.৬৭২৭×১০-২৪ গ্রাম)। নিউট্রনের ভর এই সামান্য বেশি না হলে আপনি, আমি, কেউ-ই আজ এইখানে থাকতাম না। এতটুকু ভর বেশি না হলে সৃষ্টি হত না কোন পৃথিবী, চাদ, তারা, সূর্য, অন্যান্য নক্ষত্র, গ্রহ-উপগ্রহ। প্রাণীকূলের কথা তো অনেক পরের ব্যাপার। যদি প্রোটনের ভর নিউট্রনের ভর থেকে সামান্য বেশি হত, তাহলে বিগ ব্যাং-এর (অর্থাৎ মহাবিশ্ব সৃষ্টির) কয়েক মিনিট পরে সব প্রোটন ভেংগে নিউট্রনে রূপান্তরিত হত (যেরকমটি এখন আমরা দেখতে পাই একটি ফ্রি নিউট্রন গড়ে প্রায় ১৫ মিনিট পরে ভেংগে প্রোটনে রূপান্তরিত হয়), ফলে আদি মহাবিশ্ব পরিপূর্ণ থাকত শুধুমাত্র নিউট্রনে, ফলাফলস্বরূপ কোন হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম পরমানু তৈরি হত না। হাইড্রোজেন তৈরি না হলে কোন নক্ষত্রই তৈরি হত না, তৈরি হত না পৃথিবীর মত কোন গ্রহ, চাদের মত কোন উপগ্রহ।

অর্থাৎ এই সামান্য ভর বেশি না হলে আমরা যে মহাবিশ্ব দেখছি, এই মহাবিশ্বই এরূপ সৃষ্টি হত না, একেবারে সম্পূর্ণ ভিন্ন মহাবিশ্ব তৈরি হত, সেখানে মানুষ নামক কোন প্রানীরই অস্তিত্ব থাকত না।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে একটা মহাবিশ্বে বিবর্তনের মাধ্যমে মানুষ আসতে হলে তাকে কতগুলো স্পেসিফিক সূত্রাবলির (ফিজিক্সের সূত্রাবলির) একফোটাও বাইরে যাবার কোন উপায় নেই।
অনেকেই এটাকে বলে থাকে ” ফাইন টিউনিং বা খুব সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম সমন্বয় (Fine tuning)” এবং ধারণা করে থাকে এই ক্ষেত্রে কোন অতি বুদ্ধিমান সত্তার (যেটাকে আমরা সৃষ্টিকর্তা বলে থাকি) হয়ত হাত রয়েছে।
স্রষ্টার ধারণা মূলত এখান থেকেই অনেকে অবতারণা করে থাকে।

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى
আপনি আপনার মহান পালনকর্তার নামের পবিত্রতা বর্ণনা করুন [ সুরা আ’লা ৮৭:১ ]
الَّذِي خَلَقَ فَسَوَّى
যিনি সৃষ্টি করেছেন ও সুবিন্যস্ত করেছেন। [ সুরা আ’লা ৮৭:২ ]
وَالَّذِي قَدَّرَ فَهَدَى
এবং যিনি সুপরিমিত করেছেন ও পথ প্রদর্শন করেছেন [ সুরা আ’লা ৮৭:৩ ]
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ وَالسَّمَاء وَالطَّارِقِ
শপথ আকাশের এবং রাত্রিতে আগমনকারীর। [ সুরা তারিক ৮৬:১ ]
وَمَا أَدْرَاكَ مَا الطَّارِقُ
আপনি জানেন, যে রাত্রিতে আসে সেটা কি? [ সুরা তারিক ৮৬:২ ]
النَّجْمُ الثَّاقِبُ
সেটা এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। [ সুরা তারিক ৮৬:৩ ]
إِن كُلُّ نَفْسٍ لَّمَّا عَلَيْهَا حَافِظٌ
প্রত্যেকের উপর একজন তত্ত্বাবধায়ক রয়েছে। [ সুরা তারিক ৮৬:৪ ]

স্ট্রিং থিউরি মূলত কাজ করে থাকে ১১ ডাইমেনশনাল মহাবিশ্বে, যাদের ভিতর ১০ টি হল স্পেস বা স্থান সংক্রান্ত ডাইমেনশন এবং বাকী একটি হল “সময় বা টাইম” সংক্রান্ত ডাইমেনশন।
আমাদের অতি পরিচিত প্রথম তিনটি ডাইমেনশন অর্থাৎ দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা বাদে অবশিষ্ট ৭ টি স্থান সংক্রান্ত ডাইমেনশন এতই ছোট যে (প্লাংক দৈর্ঘ্য-এর সমমানের, ১০^-৩৫ মিটার) এরা সংকুচিত হয়ে আমাদের চারপাশের স্থানের প্রতিটি বিন্দুতে অবস্থান করছে, যাদেরকে আমরা খালি চোখে দেখতে পারি না।

শুধুমাত্র সুপার স্ট্রিংগুলিই ওইসব উচ্চতর ডাইমেনশনে বিচরণের ক্ষমতা রাখে এবং সেখানে এরা বিভিন্ন ভাইব্রেশন মুডে কম্পিত হয়ে বিভিন্ন মৌলিক কণিকা এবং বলকে আমাদের সামনে উন্মুক্ত করছে।

উপরে উল্লেখিত উচ্চতর ডাইমেনশন থেকেই মূলত “মাল্টিভার্স” বা “বহু মহাবিশ্ব” ধারণার উৎপত্তি।

অর্থাৎ যদি উচ্চতর ডাইমেনশনগুলি সত্যিই বিরাজ করে থাকে (যা লার্জ হ্যাড্রন কলাইডার গবেষণাগারে পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণের জন্য চেস্টা চলছে), তাহলে এটা নিশ্চিত হওয়া যাবে যে আমাদের মহাবিশ্ব বাদেও রয়েছে অগণিত মহাবিশ্ব।

আমাদের মহাবিশ্ব হল তাদের মধ্যে একটি।

হয়ত বা ঐসব মহাবিশ্বের যে কোন দুটির সংঘর্ষই ছিল বিগব্যাং যার মাধ্যমে আমাদের মহাবিশ্ব আজ থেকে প্রায় ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে জন্মগ্রহণ করে যাত্রা শুরু করেছিল।

اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ وَمِنَ الْأَرْضِ مِثْلَهُنَّ يَتَنَزَّلُ الْأَمْرُ بَيْنَهُنَّ لِتَعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ وَأَنَّ اللَّهَ قَدْ أَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا
আল্লাহ সপ্তাকাশ সৃষ্টি করেছেন এবং পৃথিবীও সেই পরিমাণে, এসবের মধ্যে তাঁর আদেশ অবতীর্ণ হয়, যাতে তোমরা জানতে পার যে, আল্লাহ সর্বশক্তিমান এবং সবকিছু তাঁর গোচরীভূত। [ সুরা তালাক ৬৫:১২ ]

উচ্চতর ডাইমেনশনগুলির অস্তিত্ব প্রমাণিত হলে বিজ্ঞানের আরো কিছু রহস্যময় জটিল প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে।

এর মধ্যে একটি হল, পদার্থ বিজ্ঞানে রয়েছে কতগুলো মৌলিক ধ্রুবক সংখ্যা (প্রায় ২০ টি, যেমন ইলেকট্রনের ভর, মহাকর্ষীয় ধ্রুবক ইত্যাদি) যেগুলো গভীর থেকে ভূমিকা রেখে আমাদের মহাবিশ্বকে খুব সুচারুভাবে পরিচালনা করে চলেছে।
এদের একটির মানও সামান্য হেরফের হলে আমাদের মহাবিশ্ব বিরাজ করত না, জন্মও নিত না।
কিন্তু কেউই জানে না এই সংখ্যাগুলো কেন ঐ বিশেষ মানকেই বেছে নিয়েছে।

إِنَّا كُلَّ شَيْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ
আমি প্রত্যেক বস্তুকে পরিমিতরূপে সৃষ্টি করেছি। [ সুরা ক্বামার ৫৪:৪৯ ]

অনেকের মনে করেন বর্তমান যুগে ১৪ শত বছর আগের কোরআনের বিধান দিয়ে চলা সম্ভব নয়। তাদের যুক্তি সময় যেভাবে আপডেট হয়েছে, কোরআন তো সেভাবে আপডেট হয়নি। আসলে ইসলামী শরীয়ত নিয়ে ধারণা না থাকার কারণে এই চিন্তা মাথায় কাজ করে।

ইসলামী শরীয়ত হল – আল্লাহ তাআলার’র হুকুম (যা ওহী সুত্রে কুরআন আকারে নাজিল হয়েছে) এবং মুহাম্মাদ সাঃ-এর শরয়ী ব্যাখ্যা (যা তাঁর উপর সুন্নাহ বা আদর্শ হিসেবে ওহী সুত্রে নাজিল হয়েছে) -এই দুইয়ের সামষ্টিক রূপ।

وَ أَنزَلَ اللَّهُ عَلَيْكَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ
‘‘আর (হে নবী মুহাম্মাদ!) আল্লাহ তোমার কাছে নাজিল করেছেন আল-কিতাব (কুরআন) এবং হিকমাহ্ (সুন্নাহ)’। [সূরা নিসা ১১৩]
وَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَمَا أَنزَلَ عَلَيْكُم مِّنَ الْكِتَابِ وَالْحِكْمَةِ يَعِظُكُم بِهِ
‘তোমরা তোমাদের উপর আল্লাহ’র অনুগ্রহের কথা স্মরণ করো এবং (স্মরণ করো) আল-কিতাব (কুরআন) ও হিকমাহ (সুন্নাহ) হতে তোমাদের উপর যা নাজিল করেছেন, যা দিয়ে তোমাদেরকে উপদেশ দান করা হয়’। [সূরা বাকারাহ ২৩১]
هُوَ الَّذِي بَعَثَ فِي الْأُمِّيِّينَ رَسُولًا مِنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَ الْحِكْمَةَ وَإِنْ كَانُوا مِنْ قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُبِينٍ
‘‘তিনি (সেই সত্ত্বা) যিনি উম্মিদের মধ্যে তাদেরই একজনকে রাসুল হিসেবে পাঠােলেন, (যিনি) তাদের কাছে তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে শোনান, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং তাদেরকে আল-কিতাব ও আল-হিকমাহ শিক্ষা দেন (হে নবী মুহাম্মাদ!) আল্লাহ তোমার কাছে নাজিল করেছেন আল-কিতাব (কুরআন) এবং হিকমাহ্ (সুন্নাহ)’। আর ইতিপূর্বে অবশ্যই তারা ছিল পরিষ্কার পথভ্রষ্ঠয় লিপ্ত। [সূরা আল-জুমআ ২]
لَقَدْ مَنَّ اللَّهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًا مِّنْ أَنفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَ الْحِكْمَةَ وَإِن كَانُوا مِن قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ –
‘বস্তুতঃ আল্লাহ মুমিনদের উপর অনুগ্রহ করেছিলেন, যখন তিনি তাদের মাঝে তাদেরই মধ্য থেকে (একজনকে) রাসুল (হিসেবে) পাঠালেন, যিনি তাদের সামনে তাঁর আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করে শোনান ও তাদেরকে পবিত্র করেন এবং শিক্ষা দেন তাদেরকে আল-কিতাব (কুরআন) ও হিকমাহ্ (সুন্নাহ)। আর ইতিপূর্বে অবশ্যই তারা ছিল পরিষ্কার পথভ্রষ্ঠয় লিপ্ত। [সূরা আল-ইমরান ১৬৪]

উপরোক্ত আয়াতগুলোতে দু’টি শব্দ এসছে- الْكِتَابَ (আল-কিতাব) এবং الْحِكْمَةُ (আল-হিকমাহ)।

الْكِتَابَ (আল-কিতাব)– বলতে ‘আল-কুরআন’ উদ্দেশ্য -এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

الْحِكْمَةُ (আল-হিকমাহ) অর্থ- নবী মুহাম্মাদ সা.-এর সুন্নাহ (বানী ও কর্মসমষ্টি), যা আল্লাহ তাআলা হযরত জিবরীল আ.-এর মাধ্যমে মুহাম্মাদ ﷺ-এর উপর শরীয়ত হিসেবে কুরআনের পাশাপাশি অতিরক্তি নাজিল করেছেন, যার দ্বারা মুমিন ব্যাক্তি দ্বীনের সহীহ পরিচয় লাভ করে এবং কুরআন তার কাছে কি চায় কিভাবে চায় -তা উপলব্ধি করতে পারে, হক্ব ও বাতিল চিনতে পারে, হেদায়েতের উপর চলতে পারে।।
[বিস্তারিত জানতে দেখুন: তাফসীরে তাবারী, আছার ৮১৭৭ ; তাফসীরে কাবীর, ইমাম রাজি- ৭/৭৩; তাফসীরে ইবনে কাসির; আল-মাওয়াফিকাত, শাতেবী- ৪/১৪; মাজমুঊল ফাতাওয়া, ইবনে তাইমিয়্যাহ- ১৯/৪৬; তাফসিরুস সাহীহ- ১/৩৪৮; ]

এখন যেহেতু মুসলমানদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে -চাই তা ব্যাক্তি-জীবন, পারিবারিক-জীবন, সমাজ জীবন বা রাষ্ট্রীয় জীবনই হোক না কেনো – ইসলামী শরীয়ত মানা ফরয এবং ইসলামী শরীয়ত বিরোধী অন্য যে কোনো শরীয়ত বা বিধিবিধান মানা হারাম, তাই তাদেরকে এসবের যে কোনো ক্ষেত্রে-তো কুরআন ও সুন্নাহ‘য় বিদ্যমান শরয়ী বিধিবিধানগুলো মেনে চলতে হবে; তার বাইরে যাওয়ার উপায় নেই। কিন্তু যেসকল বিষয়ে কুরআন-সুন্নাহ’য় পরিষ্কার করে জবাব দেয়া নেই, অথবা জবাব বিদ্যমান রয়েছে কিন্তু তার একাধিক অর্থ ও মর্মের সম্ভাবনা রয়েছে সে সকল ক্ষেত্রে খোদ্ কুরআন ও সুন্নাহ ‘তেই আরো দুটি শরয়ী মানদন্ডের কথা বলা হয়েছে, যার একটি হল ‘কিয়াস’ এবং অপরটি হল ইজমা

তবে এই দুইটি শরয়ী মানদন্ড তখনই গ্রহনযোগ্য বলে অবিহিত করা হয়েছে, যখন তার মূল ভিত্তি হবে কুরআন ও সুন্নাহ অথবা তাতে বিদ্যমান উসূল ও ইশারা-ইংগীতের আলোকে

এই হিসেবে ইসলামী শরীয়তের মানদন্ড হল ৪টি-

(১) কুরআন
(২) সুন্নাহ (নবী মুহাম্মাদ সা.-এর বাণী ও কর্মসমষ্টি)

(৩) ইজমা (আহলে হক্ব আলেমগণের ঐকমত)- ইজমা ( إِجمَاع )ইসলামী শরীয়তের (আইনের) তৃতীয় উৎস ও মানদন্ড। إِجمَاع শব্দটি جَمع শব্দমূল থেকে উৎপন্ন, যার আভিধানিক অর্থ মিশ্রন, কিছুর মিশ্রিত বা একত্রিত বা সংগৃহিত রূপ, সমাবেশ, ঐক্যমত, দৃঢ সিদ্ধান্ত বা সংকল্প ইত্যাদি। আর ইসলামী পরিভাষায় ইজমা ( إِجمَاع ) বলা হয়- রাসুলুল্লাহ সা.-এর ইন্তেকালের পর সাহাবায়ে করোমের জামানা থেকে শুরু করে যেকোনো জামানায় কুরআন-সুন্নাহ’র ভিত্তিতে আহলে হক্ব মুস্তাহিদ আলেমগণের সকলে যে কোনো শরয়ী বিষয়ে ঐক্যমতে উপনীত হওয়াকে। কয়েকটি পয়েন্ট মাথায় রাখলে ইজমা কী -তা বোঝা অনেকটা সহজ হয়ে যাবে।

(১) অবশ্যই ইজমা’র ভিত্তি হতে হবে কুরআন ও সুন্নাহ। কুরআন ও সুন্নাহ’র সাথে সাংঘর্ষিক কোনো বিষয়ে ইজমা/ঐক্যমত বলে শরীয়তে কিছু নেই।

(২) শুধুমাত্র মুসলমি উম্মাহ’র মধ্যেই ইজমা সংঘটিত হতে হবে। কোনো অমুসলীম কাফের মুরতাদরা সকলে মিলে শরীয়তের কোনো বিষয়ে ঐক্যমতে উপনীত হলেও তার সামান্য কোনো মূল্য ইসলামী শরীয়তে নেই।

(৩) রাসুলুল্লাহ সা.-এর ইন্তেকালের পর সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে সংঘটিত ইজমা থেকেই ইজমা ধর্তব্য। খোদ্ রাসুলুল্লাহ সা.-এর জামানায় ইজমা’র প্রশ্ন এজন্য আসে না যে, আল্লাহ তাআলা তাঁর সর্বশেষ রাসুল মুহাম্মাদ সা.-এর উপর শরীয়ত (আইন) হিসেবে যা কিছু নাজিল করেছেন তা-তো কোনো প্রশ্ন ছাড়াই স্বীকার করা সকল মুমিন-মুসলমানদের উপর ফরয, যার অস্বীকার বা প্রত্যাক্ষান যে কাউকে কাফের বানিয়ে দেয়। যেখানে খোদ্ কুরআনই নাজিল হচ্ছে এবং রাসুলুল্লাহ সা. স্বশরীরে উপস্থিত থেকে কুরআন ও হিকমাহ শিক্ষা দিচ্ছেন সেখানে পৃথক ইজমার জরুরতই বাকি থাকে না। সুতরাং বোঝা গেল, ইজমা হল রাসুলুল্লাহ সা.-এর ইন্তেকালের পর সাহাবায়ে কেরামের জামানা থেকে ধর্তব্য।

(৪) কোনো বিষয়ে কুরআন-সুন্নাহ’য় পারদর্শি আহলে হক্ব মুসতাহীদ আলেমগণের শরয়ী ঐক্যমতই হল ইজমা। সুতরাং, কোনো বিষয়ে ইজমা কায়েম হওয়ার ক্ষেত্রে কুরআন ও সুন্নাহ সম্পর্কে মুর্খ-জাহেল সর্বসাধারণ মুসলমান কিংবা অপর্যাপ্ত ও অদক্ষ ইলমধারী আলেমদের মতের কোনোই মূল্য নেই, তাদের দ্বিমত পোষনে শরীয়তের কিছুই যায় আসে না। সুতরাং, কোনো বিষয়ে আহলে হক্ব মুসতাহীদ আলেমগণের ইজমাে/ঐক্যমত কায়েম হলে যদি গোটা বিশ্বের সকল মুর্খ-জাহেল মুসলমানরা কিংবা অদক্ষ ইলমধারীরাও ইজমার বিরোধীতা করে, তবুও আহলে হক্ব আলেমদের ইজমা স্বস্থানে স্বশক্তিতে দন্ডায়মান থাকবে, জাহেলদের দ্বিমত বা প্রতিবাদের তুফনে ইমজার কোনোই ক্ষতি হবে না। আহলে হক্ব মুসতাহীদ আলেমগণের শরয়ী ঐক্যমতকেই গোটা মুসলীম উম্মাহ’র ইজমা বলে ধরে নেয়া হয়।

(৪) কিয়াস (শরয়ী ইজতেহাদী অনুমান)- কিয়াস (القياس)-এর আভিধানিক অর্থ হল কোনো নমুনা সামনে রেখে অপর কোনো জিনিস ওই নমুনার সাথে সামঞ্জস্যতা রাখে কিনা তা নির্ণয় করা। আর শরীয়তের পরিভাষায় কিয়াস বলা হয় নতুন উদ্ভুত কোনো বিষয়/মাসআলাহকে ইসলামী শরীয়তের মূল ভিত্তি/উৎস কুরআন ও সুন্নাহ’য় বর্ণিত বিধানবিধিন বা উসূলের আলোকে নিরিক্ষন করে দেখা যে তা কুরআন বা সুন্নাহ’র কোনো বিধান বা উসূলের সাথে সামঞ্জস্যতা রাখে এবং সে অনুযায়ী ওই উদ্ভুত বিষয়ের শরয়ী হুকুম কী হবে তা স্থির করা।

শরয়ী কিয়াস’কে অনেকে খোদ্ ইসতিহাদ (اجتهاد) বলেও অবিহিত করে থাকেন। অবশ্য কথাটি একটি উল্লেখযোগ্য পর্যায় পর্যন্ত সম্পূর্ণ সঠিক। কারণ, ইসতিহাদ কথাটির আভিধানিক অর্থ হল: কোনো কিছু হাসিল করার উদ্দেশ্যে প্রাণান্তকর চেষ্টা চালানো। শরীয়তের পরিভাষায় ইজতিহাদ বলা হয় ইসলামী শরীয়তের মূল ভিত্তি/উৎস কুরআন ও সুন্নাহ’য় বর্ণিত বিধানবিধিন বা উসূলের আলোকে যে কোনো বিষয়ে শরীয়তের হুকুম কী – তা নির্ণয়ে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো।

বলা বাহুল্য, যে ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহ’য় সুস্পস্ট বিধান বিদ্যমান রয়েছে, সেখানে কিয়াস বা ইসতিহাদ -কোনটারই প্রয়োজন নেই; জায়েযও নেই।

তাই সময়ের সাথে সাথে যেকোন ধরনের পরিস্থিতিতে ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী জীবন যাপন করা সম্ভব। এক্ষেত্রে একমাত্র বাধা হলো সদিচ্ছার অভাব।

فَأَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّينِ حَنِيفًا فِطْرَةَ اللَّهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لَا تَبْدِيلَ لِخَلْقِ اللَّهِ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ
তুমি একনিষ্ঠ ভাবে নিজেকে ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখ। এটাই আল্লাহর প্রকৃতি, যার উপর তিনি মানব সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরল ধর্ম। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না। [ সুরা রূম:৩০ ]

সংগ্রহীত

  1.  সুরা বাকারা ২:২ ↩︎
  2. ইব্রাহিমীয় ধর্ম – উইকিপিডিয়া ↩︎
  3. সুরা মায়েদা ৫:৩ ↩︎
  4. সুরা মু’মিনুন ২৩:১২ ↩︎
  5. সুরা মু’মিনুন ২৩:১৩ ↩︎
  6. সুরা মু’মিনুন ২৩:১৪ ↩︎
  7. সুরা আম্বিয়া ২১:৩০ ↩︎
  8. সূরা আয যারিয়াত, ৫১:৪৭ ↩︎
  9. সুরা হা-মীম ৪১:১১ ↩︎
  10. মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব – উইকিপিডিয়া ↩︎
  11. সুরা হাদীদ ৫৭:২৫ ↩︎
  12. মহাবিশ্ব থেকে পৃথিবীতে লোহার আর্বিভাব! ↩︎
  13. সুরা নিসা:১১৩ ↩︎
  14. আল ইমরান ৩:১৭৯ ↩︎
  15. youtube.com ↩︎
  16. সুরা ইউসুফ ১২:৯৩ ↩︎
  17. How Quran helped Egyptian Scientist develop ↩︎
  18. Scientists Have Developed an Eye Drop ↩︎
Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture