Writing

কি কি আমলে কারিন জ্বিন দুর্বল হয়ে পরে

একজন এসে জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা, বাম হাত দিয়ে খেলে কি গুনাহ হবে?
প্রশ্ন কর্তাকে বেশ সিরিয়াস মনে হলো, হয়ত কারো সাথে বাক বিতন্ডা হয়েছে, এখন চাচ্ছেন একটা থার্ড পার্সপেক্টিভ।
আসল উত্তরে আসার পূর্বে একটা গল্প বলি, গল্পটা অতিরণজিৎ মনে হতে পারে, তবুও বলি, হয়তো কিছু ডট কানেক্ট হবে।

১৯৮২ সালে রজার মরনীও নামের এক ওয়াল্র্ড ওয়ার ২ ভেটেরিয়ান এক বোমা ফাটানো বই পাবলিশ করেন, বইটির নাম “এ ট্রিপ ইনটু দা সুপার ন্যাচারাল”, এটা নিয়ে ইউটিউবে তার একটা ৩ ঘণ্টার ইন্টারভিউও আছে1 সেখানে তিনি জানান যে, দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ শেষে তিনি যখন বাড়ি ফিরছেন, তার এক সিনিয়র তাকে এক স্পেশাল পার্টিতে ইনভাইট করেন, বলেন যে, তুমি যদি তোমার মৃত বাবা মার সাথে দেখা করতে চাও তাহলে এই পার্টিতে এসো, প্রপোসালটা পেয়ে তিনি কিছুটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে যান, আমার মৃত বাবা মায়ের সাথে দেখা করাবে!
সেটা কিভাবে সম্ভব!

দোটানা আর কিছুটা দুশ্চিন্তা নিয়েই তিনি হাজির হলেন সেই পার্টিতে, পার্টিতে গিয়ে দেখতে পান বড় বড় ব্যবসায়ী আর বড় বড় পলিটিশিয়ানদের, সাথে ছিল বড় বড় পলিসি মেকার আর সেলিব্রেটিরাও, সেখানে দেখতে পান লম্বা আলখেল্লা পড়া এক ম্যাজিশিয়ান এক এক করে ওডিয়েন্সদের ডাকছেন, আর তাদের নানান উইশ ফুলফিল করছেন, রিকোয়েস্ট অনুপাতে কারো মৃত ভাই, কারো মৃত বন্ধু, বা কারো মৃত বাবা মাকে পর্দার আড়াল থেকে ডেকে আনছেন, এক সময়ে তার টার্ন এলো, তিনি তার বাবা মাকে দেখতে চাইলেন, অবাক করে দিয়ে পর্দার আড়াল থেকে ঠিকই তার প্রয়াত বাবা মা বের হয়ে আসলেন, তিনি তখন নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি, প্রচণ্ড আবেগ প্রবন হয়ে উঠেন, বলেন সে এক অন্যরকম এক্সপেরিয়েন্স!

ঘটনার অকোষীকতায় তিনি হতভম্ব, হতভম্ব অবস্থাতেই তিনি সেই সিক্রেট গ্রুপে জয়েন করলেন।

প্রশ্ন আসতে পারে এটা কি করে পসিবল হলো?
ব্ল্যাক ম্যাজিক? না অন্য কিছু?

একচুয়েলি এটা হলো কারিন জীনকে মেনুপুলেশনের মাধ্যমে, কিতাবে পেয়েছি যে দাজ্জাল যখন আসবে তখন সে এধরণের মিরাকেল দেখাবে, সে মানুষের মৃত আত্মীয়স্বজনকে জীবিত করে দেখাবে, এবং মানুষ তাতে বিশ্বাস আনা শুরু করবে।

উলামারা বলেন সে আসলে মৃতদের প্রেজেন্ট করবে না, করবে হচ্ছে তাদের কারিনকে, কারিন হলো আমাদের স্পিরিচুয়াল ডাবল, দেখতে হুবহু আমাদের মতোই দেখতে, ছোট বেলা থেকে আমাদের সাথেই আছে সে, সে আমাদের প্রতিটা মুভ নকল করতে পারে, আর কারিন যেহেতু প্রজাতিতে জিন, সে বাঁচেও লম্বা সময় ধরে।

যাই হোক, একটা পর্যায়ে সেই গ্রূপের সাথে উনার সক্ষতা বেড়ে উঠে, ধীরে ধীরে ভিতরে অ্যাকসেস পেতে থাকেন, একটা সময় গিয়ে জানতে পারেন যে, গ্রূপের নাম ফ্রি মেসন, আর সেই গ্রুপের আসল লিডার হলো এক সুপার ন্যাচারাল বিয়িং, যে ক্লেইম করে যে, সে সৃষ্টির শুরু থেকেই আছে, সে আদি কাল থেকে সকল যুদ্ধ দেখছে, আর আদি কাল থেকে পলিটিক্স করছে, সে রজার কে তার সাথে হাত মিলাতে আহ্বান করে, বিনিময়ে সে উনাকে অর্থ সম্পদ আর ক্ষমতার প্রতিশ্রুতিও দেয়, তবে দেয় একটা শর্ত সাপেক্ষে।

ইন রিটার্ন, রজার সাহেব কে সেই সুপার ন্যাচারাল বিয়িং কে সম্মান বা হোমেজ দিতে হবে, কিভাবে দিতে হবে?

সেটারও এক লম্বা লিস্ট ধরিয়ে দেয়।
সেই লিস্টের কিছু কর্ম কান্ড এতটাই ডার্ক আর জঘন্য যে আমি লিখতেও পারছি না, রজার ভিতর ভিতর শিওরে উঠে, শান্তির খোঁজে বাইবেল পড়া শুরু করে, বাইবেলে তিনি লুসিফার নামক একজনকে পায় যার কথা সেই লিডারের সাথে হুবুহু মিলে যায়, তো একদিন সে কিউরাসটি আটকে না রেখে জিজ্ঞেস করেই ফেলে, আচ্ছা বলতো তুমি কে?

তুমি কি সেই লুসিফার, যার কথা বাইবেলে বলা আছে?
জবাবে লুসিফার হেসে উত্তর দিয়ে জানায়,
হা আমিই সেই লুসিফার!

লুসিফার হলো ইবলিশের বিবলিকাল নাম, কেন করছো তুমি এসব? তিনি জানতে চান।
কি প্রয়োজন তোমার?
উত্তরে লুসিফার জানায়
আরে আমিই তো এই দুনিয়ার মালিক, সৃষ্টির শুরু থেকেই আমি আছি, আমি হলে তোমাদের ভালোই চাই, তুমি আমার কথা মত চলো, দেখবে তোমার সব কিছু ঠিকঠাক যাচ্ছে।

লুসিফার আরো বলে, তুমি কি জানো প্রতিটা ধর্মই আমাকে হোমেজ দেয়?
কিভাবে?

তুমি দেখবে প্রতিটা ধর্মে তাদের দেবতাদের ছবি গুলো এমন ভাবে আঁকা, যেন তাদের পিছনে দিক থেকে দিয়ে সূর্য উঠছে, তুমি কি জানো?

সূর্য প্রতি দিন আমার পিছন থেকেই বের হয়!

এভাবেই সেই পেইন্টিং গুলো ইন্ডিরেক্টলি আমাকেই হোমেজ দিয়ে যাচ্ছে!

কারণ সে গুলো আমার ইনফ্লুয়েন্সই তৈরী, কারণ আমিই তো যুগে যুগে ৭০ জন বড় বড় মনীষী ও তাদের অনুসারীদেরকে বিভ্রান্ত করে রেখেছি!

ইন্টারেস্টিংলি সহিহ বুখারীতে এমনি একটা সিমিলার হাদিস পাওয়া যায়, হাদীসটি অনেক কাল আমাকে ভাবিয়েছে, হাদিসে বলা হয়েছে
সূর্য শয়তানের দু শিং-এর মধ্যখান দিয়ে উদিত হয়2,
সেটা কিভাবে হয় মডার্ন সায়েন্স হয়তো এক্সপ্লেইন করতে পারবে না, তবে রজার মরনীওর সেই ইন্টারভিউ আমাকে কিছুটা হলেও ক্লেরিটি দিয়েছিল।

লুসিফার আরো জানায় যে, ডারউইনকে তো আমিই ইভোলিউশনের আইডিয়া দেই, কারণ মানুষ যখন স্রষ্টার কনসেপ্ট থেকে দূর সরে যাবে, আমার কাজ তোতই সহজতর হয়ে উঠবে!

পুরো ইন্টারভিউটা বেশ ডার্ক বাট ফেসিনেটিং।
আবারো বলি এটা নিয়ে এতো সিরিয়াস হওয়ার কিছু নেই, কারণ এটা আকিদা গত কোনো বিষয় না।

ফিরে আসি মূল বক্তব্যে, আমরা এখানে দুটো ক্যারেক্টার পেলাম,
এক হলো কারিন আর দ্বিতীয় হলো লুসিফার বা ইবলিশ।
লুসিফারকে তো এখন রমজানে বেঁধে রাখা হয়েছে, বাকি থাকছে কারিন, কারিনা এখনো বলবৎ, কাল বলেছিলাম কারিনের ওয়াসওয়াসা কিভাবে আইডেন্টিফাই করা যায়, আজ বলবো সেই ওয়াসওয়াসাকে কি করে দুর্বল করা যায়।

আমাদের সাথে কারিনা আছে বিষয়টা ভীতিকর না, কারণ হাদিস শরিফে এসেছে, আমাদের হেফাজতের জন্য সাথে ৪ জন ফেরেস্তাও আছে, সমস্যা হলো আমরা যখন অশ্লীলতা বা খারাপ আমলে লিপ্ত থাকি, সেই ফেরেস্তা গুলো সেখান থেকে গায়েব হয়ে যায় আর কারিনা সুযোগ পেয়ে যায়।

তাই উলামারা বলেন, আমাদের কারিন কত শক্তিশালী হবে সেটা ডিপেন্ডস করবে আমাদের আমলের উপর, আমরা যদি নেক আমল বেশি করতে থাকি তাহলে সে তত দুর্বল হতে থাকবে, আর আমরা যদি বদ আমল বেশি করতে থাকি সে ততটাই সবল হতে থাকবে।

এক খানে পেয়েছিলাম যে, হজরাত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস বা আরেকজন সাহাবী একদিন তার কারিনের দেখা পান, তখন তিনি দেখতে পান যে তার কারিন খুব রুগ্ণ আঁর জীর্ণ, তো তিনি তাকে প্রশ্ন করেন, তোমার এই হাল কেন?

উত্তরে তাঁর কারিন জানায় যে, আপনার নেক আমলগুলোর কারণে!

দেখুন, আমরা ভিসিবল ওয়ার্ল্ডে যত টুকু দেখছি তা শুধু ফ্রেকশন মাত্র, পর্দার আড়ালে আছে আরেকটা বিশাল দুনিয়া, সেই দুনিয়াকে আপনি নোটবল সায়েন্স দিয়ে এক্সপ্লেইন করতে পারবেন না।

কে জানে হয়তো রাসুলের ছোট ছোট এই আমল গুলো এমনভাবেই ডিসাইন্ড যে, এগুলো আমাদের সেই ইনবিজিবল ওয়ার্ল্ডের কারিনকে দুর্বল করে যাচ্ছে।

  • এই যেমন, সব কিছু বিসমিল্লাহ বলে স্টার্ট করা,
  • ডান হাত দিয়ে খাওয়া
  • বা পা দিয়ে বাথরুমে যাওয়া
  • কিংবা ডান পা দিয়ে মসজিদে ঢুকা
  • অথবা বসে বসে পানি খাওয়া

এই সবই হয়তো আমাদের কারিনাকে দুর্বল করে তুলছে, সব কিছু তো আর আমাদের জানা নেই, তাই সেফার অপশন হচ্ছে উনার এই মাসনুন আমল গুলো প্র্যাকটিস করে যাওয়া।

তাই বলছি, ডান হাতে খেলে সোওয়াব আর বাম হাতে খেলে গুনাহ হবে এরকম তর্কে না যাওয়াটা উত্তম।

বরং বলব, আমার রাসূল আমার রোল মডেল, এমন এক রোল মডেল, যিনি জীবনে কখনো মিথ্যা বলেন নি, এমন এক রোল মডেল, যিনি আমাদেরকে জানিয়েছেন সেই স্রষ্টার কথা, যিনি আমাদেরকে প্রচন্ড ভালোবাসেন, সেই স্রষ্টা যিনি এমন একটা কিতাব নাজিল করেছেন, যার মদ্ধে কোনো ডাউট নেই।

তাই যদি হয়ে থাকে, তাহলে সেই পারফেক্ট রোল মডেলের পারফেক্ট সুন্নাহ গুলো ফলো করতো সমস্যাটা কোথায়?

এটা একটা লজিকাল চয়েজ, এটা একটা ইন্টেলেকচুয়াল চয়েজ, মোর ইম্পোরটেন্টলি এটা আমাদের রিলিজিয়াস চয়েজ, এন্ড উই শুড বি প্রাউড অফ ইট!

  1. https://www.youtube.com/watch?v=gONKiy9yi5I ↩︎
  2. সুনান ইবনু মাজাহঃ৩/১২৫৩ ↩︎

লিখেছেন

Picture of সামিউল হক

সামিউল হক

জ্ঞানীদের বাণী হলো বিশ্বাসীদের হারানো সম্পদ, তা সে যেখানেই খুজে পাক"[তিরমিজি ২৬৮৭]
আমি খুঁজে বেড়াচ্ছি

Visit all other posts by this author
জ্ঞানীদের বাণী হলো বিশ্বাসীদের হারানো সম্পদ, তা সে যেখানেই খুজে পাক”[তিরমিজি ২৬৮৭]
আমি খুঁজে বেড়াচ্ছি
Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture