আবু হুরায়রা (রা:) বর্ণনা করেন, ‘একজন ব্যক্তি তার মৃত্যুর পর আল্লাহ সুবহানাল্লাহু তা’য়ালার সাথে তার মর্যাদায় উচ্চতা অনুভব করে এবং সে তখন আল্লাহ সুবহানাহু তা’য়ালাকে জিজ্ঞাসা করে, ‘হে আমার রব এটা কি, কোথা থেকে আসছে, কেন আমি উন্নীত হচ্ছি’ এবং আল্লাহ সুবহানাহু তা’য়ালা তখন তাকে বলেন, ‘আপনার সন্তান আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছে।’ আপনি কি কল্পনা করতে পারেন সুবহানাল্লাহ! সেই সংযোগটি কত সুন্দর?
মৃত ব্যক্তির আত্মা আপনার দু’আ, আপনার প্রার্থনার কারণে আল-জান্নাতের সারিতে উন্নীত হচ্ছে এবং সে জানতে পারছে যে এটি আপনার প্রার্থনার কারণে।
এখানে আকর্ষণীয় বিষয়টি হল লোকটি কিন্তু তার মৃত বাবার জন্য মর্যাদার উচ্চতা চায়নি, সে তার পিতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছে, ইস্তিগফার করেছে। তাই আমি চাই আপনি যখন মৃতের জন্য প্রয়োজনীয় দু’আগুলি সম্পর্কে চিন্তা করবেন, তখন নিয়মমাফিক ইস্তেগফারও করবেন। ইস্তিগফার দিয়েই সবকিছু শুরু –
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ – আল্লা-হুম্মাগফির লাহু,
হে আল্লাহ! আপনি তাকে ক্ষমা করুন।
মৃত ব্যক্তির জন্য রাসুল (ﷺ) প্রায় প্রতিটি দু’আর শুরু ইস্তিগফার দিয়ে করেছেন। আমরা প্রায় মৃত ব্যক্তির সম্পর্কে বলতে শুনি, ‘ঐ ব্যক্তি তো ফেরেশতার মতো ছিল, ঐ ব্যক্তি মাশাআল্লাহ খারাপ কিছুই করেনি, সে এমন ছিল, ওমন ছিল।’ প্রথমত আপনি সেই ব্যক্তির সমস্ত ত্রুটিগুলি জানেন না। আপনার ভালো ধারণা থাকা সত্ত্বেও এবং আল্লাহর কাছ থেকে ভাল প্রত্যাশা করা সত্ত্বেও আল্লাহর কাছে তার চূড়ান্ত অবস্থান কি তা কিন্তু আপনি জানেন না।
তাহলে আমরা কিভাবে ভারসাম্য বজায় রাখব?
আল্লাহর কাছে ভালো প্রত্যাশা করব। এমনকি কিতাবুল জানাজাতে অর্থাৎ জানাজা সংক্রান্ত বইয়ে ইমাম আল বুখারী সর্বপ্রথম যে হাদীসটি উল্লেখ করেন তা হল আবু যার (রা:) থেকে বর্ণিত হাদিসটি — রাসুল (ﷺ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ আবু যার (রা:) তখন জিজ্ঞেস করেন, ‘যদিও সে ব্যভিচার করে এবং চুরি করে?’ রাসুল (ﷺ) উত্তর দেন, ‘হ্যাঁ, যদিও সে ব্যভিচার করে বা চুরি করে।’ তাই বলে তা চুরি এবং ব্যভিচারের অপরাধকে খাটো করে দেখলে চলবে না।
এটাই আল্লাহর প্রতি আমাদের ভালো প্রত্যাশা যে শেষ পর্যন্ত সেই ব্যক্তি হয়তো জান্নাতে প্রবেশ করবে। ইমাম বুখারীর এই হাদিস দিয়ে শুরু করার পেছনে এটাই প্রজ্ঞা। কিন্তু তারপরও আপনি জানেন না যে সেই ব্যক্তির আসলে কী ত্রুটি ছিল। সর্বোপরি, ইস্তেগফার অর্থাৎ ক্ষমা চাওয়া এবং একজন মৃত ব্যক্তিকে তার মর্যাদায় উন্নীত করার মধ্যে সম্পর্কটা আসলে কি?
আমাদের জ্ঞাত পাপের কারণে যে সব ইস্তেগফার তা কিন্তু নয়। নামাজ পড়ার পর আমরা প্রথমে কি করি?
আমরা বলি আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ। প্রতিটি ইসতেগফার হয় প্রায়শ্চিত্ত (কাফফারা) নয় বা মর্যাদার দিক থেকে উন্নীত হবার একটি উপায়। এটি হয় পাপ মুছে ফেলার নতুবা আপনার নেকি বৃদ্ধির একটি উপায়। কাজেই ইস্তেগফার খুব শক্তিশালী একটি ব্যাপার।
এখন আমি এমন কিছু বলতে চাই যা আমাদের জন্য সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ যখন আমরা মৃত ব্যক্তিকে দাফন করি। আমাদের নিজেদের জীবনের সবচেয়ে মরিয়া সময় যখন হল আমারা আন্তরিক ভাবে দু’য়া করি। আমি ব্যক্তিগত পর্যায়ে কথা বলছি। একবার চিন্তা করে দেখুন মৃত ব্যক্তি কতটা মরিয়া এবং কতটা দুর্বল, কারণ সে ইতিমধ্যে কবরে এবং ফেরেশতাদের আগমনের জন্য অপেক্ষা করছে যাদের দ্বারা সে জিজ্ঞাসিত হবে। এটি তাদের জন্য একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।
এর পরে যা ঘটতে যাচ্ছে তাও কিন্তু কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। মৃতরা নিজেদের জন্য দু’আ করতে পারে না, নিজেদের জন্য ক্ষমাও চাইতে পারে না। তারা তখন আপনার উপর নির্ভর করে আন্তরিকভাবে দু’য়াগুলো করার জন্য। সুবহানাল্লাহ! এক্ষেত্রে আপনার ভূমিকা এবং দায়িত্বের কথা একবার ভাবুন। কাজেই মৃতের ভাল গুণাবলীর উল্লেখ করার চেয়ে, সব ঠিক হয়ে যাবে, সবকিছু ঠিকমতো চলবে — এসব বলার চেয়েও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল মৃতের জন্য দু’আ করা, তার জন্য আন্তরিক ভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করা।
অনন্তের পথে যাত্রা
পর্ব : ৫
মূল: ড. ওমর সুলাইমান