খায়বারের ইহুদিদের সাথে নবিজির উত্তম আচরণ

খায়বারের যুদ্ধে মুসলিমদের সাথে ইহুদিদের পরাজয়ের পর যখন তারা সন্ধি মেনে নেয়, তখন তারা ছিল দুর্বল অবস্থানে আর মুসলিমরা ছিল শক্তিশালী অবস্থানে। এ পরিস্থিতিতে মুসলিমরা চাইলেই পারত তাদের ওপর কোনো বিষয় চাপিয়ে দিতে। কিন্তু নবি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ক্ষেত্রে ভিন্নপন্থা অবলম্বন করে তাদের সাথে সদাচরণ করেছেন এবং উত্তম ব্যবহারের পরিচয় দিয়েছেন।

সাহল ইবনু আবু হাসমা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন তার গোত্রের কিছু লোক খায়বারে গিয়ে বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়। তাদের একজনকে নিহত অবস্থায় পাওয়া যায়। যে অধিবাসীদের নিকটে লাশ পাওয়া যায়, তাদেরকে তারা বলল, তোমরা আমাদের সাথিকে হত্যা করেছ। তারা বলল, আমরা তাকে হত্যা করিনি, আর হত্যাকারী কে, তাও জানি না। এরপর তারা নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আমরা খায়বার গিয়েছিলাম আর আমাদের একজনকে সেখানে নিহত অবস্থায় পেয়েছি। তখন তিনি বললেন—

বড়দেরকে বলতে দাও, বড়দেরকে বলতে দাও।

তারপর তিনি তাদেরকে বললেন—

তোমাদেরকে তার হত্যাকারীর বিরুদ্ধে প্রমাণ পেশ করতে হবে। তারা বলল আমাদের কাছে কোনো প্রমাণ নেই। তিনি বললেন, তাহলে ওরা কসম করবে। তারা বলল, ইহুদিদের কসমে আমাদের বিশ্বাস নেই। এই নিহত ব্যক্তির রক্ত বৃথা হয়ে যাক, তা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পছন্দ করলেন না। তাই সাদাকার একশ উট দিয়ে তার রক্তপণ আদায় করলেন।

হত্যাকাণ্ডটি যেহেতু ইহুদিদের এলাকায় ঘটেছে, তাই হত্যাকারী তাদের মধ্য থেকেই হওয়ার সম্ভাবনা ছিল সবচেয়ে বেশি। তবুও যেহেতু এ ধারণার কোনো প্রমাণ নেই, আর স্বতঃস্বিদ্ধ নিয়ম হচ্ছে, সন্দেহ ও অনুমানের ভিত্তিতে দাবি কখনো কার্যকর হতে পারে না—এজন্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে কোনোরূপ শাস্তিও প্রদান করেননি। তিনি শুধু এতটুকু বলেছেন তাদেরকে শপথ করতে হবে এই বলে— আমরা এরূপ কাজ করিনি।

শুধু তা-ই নয়, তিনি মুসলিমদের কোষাগার থেকে নিহত ব্যক্তির রক্তপণও পরিশোধ করে দিয়েছেন—যেন আনসারদের ক্ষোভ প্রশমিত হয় এবং ইহুদিদের কোনো ক্ষতি ছাড়াই এই ফিতনা থেমে যায়।

এই ছিল মদিনার অমুসলিম সংখ্যালঘুদের প্রতি নবি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ন্যায়নিষ্ঠ ও দয়া এবং অনুগ্রহপূর্ণ আচরণ।

বইঃ নববি চরিত্রের সৌন্দর্য
লেখকঃ সাইয়িদ আবুল হাসান আলি নাদবি
ড. রাগিব সারজানি
প্রকাশনায়: দারুত তিবইয়ান

লিখেছেন

দারুত তিবইয়ান

নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন বুনন
Exit mobile version