খাদেমের জন্য আবেদন

আলী (রা:) এবং ফাতিমার (রা:) সংসারে আরো যে সমস্যাটি ছিল তা হলো দারিদ্রতা। আলী (রা:) দরিদ্র ছিলেন, তাঁর সারা জীবন কেটেছে তীব্র দারিদ্রতায়। রাসুলের (ﷺ) জীবনও কেটেছে চরম দারিদ্রতায়। এমন না যে তিনি নিজে স্বাচ্ছন্দে জীবন কাটিয়েছেন, এবং কন্যাকে দারিদ্রতায় ঠেলে দিয়েছেন। তিনি নিজে আমৃত্যু চরম দারিদ্রতায় জীবন কাটিয়েছেন। তিনি কখনো প্রাসাদে থাকেনি, দিনে এক বেলার বেশি খান নি। সামান্য খেজুর ও পানি ছিল তাঁর দৈনন্দিন খাবার।

আলী (রা:) এবং ফাতিমার (রা:) সংসারে চরম দারিদ্রতা দেখা দেয়। সংসারে অত্যধিক কাজ করার জন্য আলীর (রা:) পিঠে ব্যথা শুরু হলো, এবং ফাতিমার (রা:) হাতে ফোস্কা পড়লো। ফাতিমা (রা:) ক্লান্ত হয়ে পড়লেন। আলী (রা:) তখন ফাতিমাকে (রা:) বললেন, “কেন তুমি রাসুলকে (ﷺ) একজন খাদেমের কথা বলছো না?
একজন গৃহপরিচারিকা, যে তোমাকে বাসার কাজে সাহায্য করতে পারে?”
ফাতিমা (রা:) বললেন, তিনি রাসুলকে (ﷺ) খাদেমের কথা জিজ্ঞেস করতে লজ্জা বোধ করছেন। আলী (রা:) একবার অন্তত গিয়ে ফাতিমাকে (রা:) খোঁজ করতে বললেন, কারণ রাসুল (ﷺ) সংবেদনশীল একজন মানুষ, তিনি হয়তো তাঁর কন্যার চাহিদা বুঝতে পারবেন। হয়তো তিনি নিজ থেকেই খাদেমের ব্যবস্থা করবেন।

পরের দিন ফাতেমা (রা:) ফজরের নামাজের পরে রাসুলের (ﷺ) ঘরে গেলেন। তিনি আয়েশার (রা:) সাথে সাক্ষাৎ করলেন এবং রাসুলের (ﷺ) ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন। আয়েশা (রা:) জানালেন রাসুল (ﷺ) এখনো ঘরে ফেরেন নি। তিনি মসজিদে ফজরের নামাজ আদায় করে দু’আ জিকির করছিলেন, যেমনটা তিনি ফজর সালাতের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ধরে করে থাকেন। ফাতেমা (রা:) নিজ ঘরে ফিরে আসলেন। রাসুল (ﷺ) বাসায় ফিরলে, আয়েশা (রা:) তাঁকে জানালেন আজ ফাতেমা (রা:) তাঁর খোঁজে এসেছিলেন।

রাসুল (ﷺ) যখন ফাতেমার (রা:) ঘরে কড়া নাড়লেন, আলী (রা:) জিজ্ঞেস করলেন, “কে?”
রাসুল (ﷺ) বললেন, “আমি”। আলী (রা:) বললেন, “ইয়া রাসুলুল্লাহ! একটু অপেক্ষা করুন।” তাঁরা ঘর গুছিয়ে একটু ঠিকঠাক করতে চেয়েছিলেন। তখন ছিল রাতের বেলা, তাঁরা নিজেদের সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করতে চেয়েছিলেন যখন আল্লাহর রাসুল (ﷺ) তাঁদের বাসায় আসলেন।
রাসুল (ﷺ) বললেন, “তোমরা ব্যতিব্যস্ত হয়ো না, যেভাবে আছো ঠিক সেভাবেই থাকো।” আলী (রা:) এবং ফাতিমার (রা:) একটি খাট ছিল, যা তাঁরা আরাম কেদারা হিসেবেও ব্যবহার করতেন। সেখান থেকে আবার তাঁদের পশুদেরও খাওয়াতেন। তাঁরা খাটে বসে ছিলেন। রাসুল (ﷺ) বললেন, “তোমাদের উঠার দরকার নেই, যেখানে আছ সেখানেই থাক।” রাতটি ছিল শীতের রাত, তাঁরা নিজেদের কম্বলে জড়িয়ে রেখেছিলেন। রাসুল (ﷺ) ভিতরে আসলেন, এবং তাদের মাঝে বসলেন।

রাসুল (ﷺ) ফাতেমার (রা:) দিকে তাকিয়ে বললেন, “শোনো ফাতিমা”, ফাতেমা (রা:) বললেন, “نعم يا رسول الله – জ্বী বলুন, হে রাসূলুল্লাহ!”
তিনি বললেন, “তুমি কি আজ আমার খোঁজে এসেছিল?
” ফাতেমা (রা:) বললেন, “نعم يا ابي – হ্যাঁ, বাবা”।
রাসুল (ﷺ) বললেন, “ফাতিমা তুমি কি চাও?
কেন তুমি আমার খোঁজে এসেছিলে?” ফাতেমা (রা:) বললেন, “আমি শুনেছি আপনার কাছে খাদেম আছে, যে আমাকে গৃহস্থালির কাজে সাহায্য করতে পারে। ঘরের কাজে আমার কষ্ট হচ্ছে।” রাসুল (ﷺ) তখন বললেন, “من اخبرك – কে তোমাকে এ কথা বলেছে যে আমার কাছে খাদেম আছে যে তোমাকে সাহায্য করতে পারে?”
ফাতেমা (রা:) আলীকে (রা:) বিপদে ফেলতে চান নি। বস্তুত আলীই (রা:) তাঁকে বলেছিলেন, “হয়তো রাসুল (ﷺ) তোমাকে ঘরের কাজে সাহায্য করার জন্য কাউকে খাদেম হিসেবে দিতে পারেন।” ফাতেমা (রা:) আলীর (রা:) নাম উল্লেখ না করে বললেন, “কেউ একজন আমাকে বলেছে।”

তখন রাসুল (ﷺ) বললেন, “হে ফাতিমা, আমি কি তোমাকে এমন কিছু দেবো যা একজন খাদেমের চেয়েও বেশি উপকারী ও উত্তম?”
তাঁরা দুজনেই বললেন, “হ্যাঁ, অবশ্যই”, তাঁরা ভেবেছিলেন রাসুল (ﷺ) হয়তো তাঁদের সাহায্য করার জন্য একাধিক খাদেম এর ব্যবস্থা করে দিবেন, তিনি সত্যিই তাঁদের অবস্থার উন্নতি করবেন। কিন্তু তা না করে, বরং রাসুল (ﷺ) বলেছিলেন, “প্রতি রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে ৩৩ বার ‘সুবহানাল্লাহ’ (আল্লাহর মহিমা প্রকাশ), ৩৩ বার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ (আল্লাহর প্রশংসা করা) এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার (আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ) বলবে।” এভাবে সব মিলিয়ে ১০০ বার জিকির করতে বললেন। তাঁরা উভয়েই স্বীকৃতি জানালেন অবশ্যই তাঁরা তা করবেন। কিন্তু এর সাথে রাসুল (ﷺ) কি তাঁদের একজন খাদেমও দিবেন?

এরপর রাসুল (ﷺ) যা বললেন, তাতে তাঁর সুদৃঢ় ও নৈতিকতা এবং সততাই প্রকাশ পায়। তিনি বললেন, “আহলে সুফফা – গৃহহীন সুফফা — যারা মসজিদে ঘুমায়, এবং বদরের যুদ্ধের এতিমদের বঞ্চিত করে, আমি তোমাদের জন্য খাদেমের ব্যবস্থা করতে পারব না। কিন্তু প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে এই জিকির গুলো যদি তোমরা করো, আল্লাহ তোমাদের চাহিদার চেয়েও বেশি বারাকাহ দিবেন।”
[সহি বুখারী: ৫৩৬২, মুসলিম: ২৭২৭]
আলী (রা:) বলেন, “এরপর এমন কোন রাত অতিবাহিত হয় নি যে আমরা এই জিকির গুলো করিনি। ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ, এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার। আল্লাহর শপথ করে বলছি, এরপর আমাদের শারীরিক শক্তি ও পুষ্টি বৃদ্ধি পেয়েছিল, এবং কখনও মনে হয়নি যে আমাদের খাদেমের প্রয়োজন আছে। আল্লাহ এই পরিস্থিতিতে আমাদের সমৃদ্ধ করেছিলেন এবং শক্তি যুগিয়েছেলেন। এরপর আমাদের আর কিছুর প্রয়োজন হয়নি।”

আলী (রা:) ও ফাতিমার (রা:) সুখের সংসার

পর্ব – ০২

মূল: ড. ওমর সুলাইমান

লিখেছেন

ফাহমিনা হাসানাত

কিছুটা লেখালেখি করি, ইসলামিক লাইনে কিছুটা পড়াশোনা করি। তাজউইদ, গ্রামার এবং কুরআন মেমোরাইজেশন এর ক্লাস করছি আলহামদুলিল্লাহ।
নিজে শিখছি, অন্যকেও শিখাচ্ছি। লেখালেখিটাও ঠিক এরকম। নিজে জানার জন্য মনের আনন্দে লিখি, শেয়ার করি।

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন

কিছুটা লেখালেখি করি, ইসলামিক লাইনে কিছুটা পড়াশোনা করি। তাজউইদ, গ্রামার এবং কুরআন মেমোরাইজেশন এর ক্লাস করছি আলহামদুলিল্লাহ।
নিজে শিখছি, অন্যকেও শিখাচ্ছি। লেখালেখিটাও ঠিক এরকম। নিজে জানার জন্য মনের আনন্দে লিখি, শেয়ার করি।

Exit mobile version