কেন আমরা পৃথিবীতে
কেন আমরা এখানে?
রমজান মাস কুরআনের মাস হিসাবে সুপরিচিত। আগামী ৩০ দিনের জন্য আপনাদেরকে নিয়ে যাচ্ছি কুরআনের একটি সফরে ইনশাআল্লাহ। যখন আপনার মনে একটি প্রশ্নের উদয় হয়, তখন আপনি ভাবেন এর উত্তর কি কুরআনে পাওয়া যাবে? প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন, তাই না? উত্তর হল হ্যাঁ, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আপনি সব প্রশ্নের উত্তরই কুরআনে পাবেন।
আমরা আপনাদের মুখোমুখি করব সাধারণ প্রশ্নগুলোর সাথে যা মানুষ সাধারণত করে। আল্লাহ আমাদের সকলের জন্য সহজ করে দিন এবং আমাদের সকলের কাছ থেকে কবুল করুন এবং এই মাসটিকে সবার জন্য একটি বরকতময় মাস করুন।
সবচেয়ে সাধারণ প্রশ্নগুলির মধ্যে একটি যা আমরা নিজেদেরকে জিজ্ঞাসা করি, এমনকি একে অপরকেও জিজ্ঞাসা করি – কেন আল্লাহ আমাদের এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন?
কেনই বা তিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন?
অবশ্যই এর উত্তর কুরআনে আছে।
وَإِذۡ قَالَ رَبُّكَ لِلۡمَلَٰٓئِكَةِ إِنِّى جَاعِلٌ فِى ٱلۡأَرۡضِ خَلِيفَةًۖ
আর স্মরণ কর, যখন তোমার রব ফেরেশতাদেরকে বললেন, ‘নিশ্চয় আমি যমীনে একজন খলীফা সৃষ্টি করছি’।
[সূরা বাকারাহ:৩০]
তখন ফেরেশতারা বলেছিল –
قَالُوٓاْ أَتَجۡعَلُ فِيهَا مَن يُفۡسِدُ فِيهَا وَيَسۡفِكُ ٱلدِّمَآءَ وَنَحۡنُ نُسَبِّحُ بِحَمۡدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَۖ
তারা বলল, ‘আপনি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন, যে তাতে ফাসাদ করবে এবং রক্ত প্রবাহিত করবে? আর আমরা তো আপনার প্রশংসায় তাসবীহ পাঠ করছি এবং আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি।
[সূরা বাকারাহ:৩০]
আল্লাহ তখন বললেন –
قَالَ إِنِّىٓ أَعۡلَمُ مَا لَا تَعۡلَمُونَ
তিনি বললেন, নিশ্চয় আমি জানি যা তোমরা জান না।
[সূরা বাকারাহ:৩০]
কাজেই দেখতে পাচ্ছেন এখান থেকেই সবকিছু শুরু। মানব সৃষ্টির উদ্বোধনী দৃশ্য! আমরা তখনো সৃষ্টি হয়নি, কিন্তু আলোচনা চলছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আলোচনা করছেন সম্মানিত ফেরেশতাদের সাথে। আল্লাহ বলছেন , “আমি এই পৃথিবীতে খালি রাখবো না, পৃথিবীকে আমি পূর্ণ করব মানুষ দ্বারা”।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা তাঁর অসীম প্রজ্ঞায় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি মানুষকে এই পৃথিবীতে পাঠাবেন, পৃথিবীর সমস্ত বিষয় এবং মানুষের ভাগ্য তিনি পরিকল্পনা করে রেখেছেন এবং মানুষকে তিনি স্বাধীন ইচ্ছা দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। পৃথিবীর সমস্ত শক্তি, বিকাশ এবং রূপান্তর আল্লাহর দাসত্বের জন্য এবং তাঁর হুকুম পালনের জন্য। মানুষকে পৃথিবীতে পাঠানোর আসল উদ্দেশ্য এটাই- তিনি যা আমাদের কাছ থেকে চান তা পূরণ করা।
আলেমরা সবসময় এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়ান – খলিফা আসলে কি?
আপনি যদি এর সহজ অনুবাদ দেখেন তাহলে খলিফার অর্থ দাঁড়ায় উত্তরসূরী, যে কিনা আরো প্রজন্ম নিয়ে আসে। এর আরেকটি অর্থ প্রতিনিধি, আপনি এবং আমি সবাই কিন্তু আল্লাহর প্রতিনিধি। এর মানে কি?
এর মানে আল্লাহ তাঁর নাম ও সুন্দর গুণাবলীর মধ্যে যা বর্ণনা করেছেন, তিনি আমাদের মাঝে তা দেখতে চান। উদাহরণ স্বরূপ আল্লাহ আর-রাহিম– তিনি দয়ালু, তিনি আমাদের মাঝে রাহমা দেখতে চান, আল্লাহ ক্ষমাশীল, তিনি আমাদের মধ্যে ক্ষমার গুনটি দেখতে চান। অন্য আয়াতে আল্লাহ এর ব্যাখ্যা করেছেন, যদিও সেখানে খলিফা শব্দটি ব্যবহার করেননি। তিনি এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন সূরা আয-যারিয়াতে –
وَ مَا خَلَقۡتُ الۡجِنَّ وَ الۡاِنۡسَ اِلَّا لِیَعۡبُدُوۡنِ
আর জিন ও মানুষকে কেবল এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে তারা আমার ইবাদাত করবে।
[সূরা আয-যারিয়াত: ৫৬]
তাহলে কি আমরা শুধুই আল্লাহর ইবাদত করব? আর কিছুই করবো না?
সারাদিন কি শুধু আমরা নামাজ পড়বো, রোজা রাখবো, এবং কুরআন পাঠ করবো?
এমনটা ভাবলে কিন্তু আমরা ইবাদতের সংজ্ঞাকে সীমাবদ্ধ করে ফেলছি। আল্লাহ কিন্তু আমাদের কাছে কেবল এই সবই চান না, তিনি আমাদেরকে এমন একজন হিসেবে দেখতে চান যিনি খলিফা, যিনি কাজ করবেন এই পৃথিবীর জন্য, এবং যত্ন নিবেন এই পৃথিবীর।
ইমাম ইবনে তাইয়্যেমিয়া খুব সুন্দর ভাবে এর বর্ণনা দিয়েছেন –
“মানুষের প্রতিটি কাজ, বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ, যা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে তাই ইবাদত।”
এ কারণেই মানুষকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে। তাঁর আনুগত্য করুন, তাই বলুন এবং তাই করুন যা তাঁকে সন্তুষ্ট করে, এবং তিনি যা নিষেধ করেন বা পছন্দ করেন না তা থেকে দূরে থাকুন। তাহলেই হয়ে উঠবেন আপনি একজন প্রকৃত খলিফা।
সিরিজ: কুরআনে সব আছে
মূল: ড: হাইফা ইউনিস