কাউকে ফোন দেবার সময় কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে
কোন ব্যক্তিকে কল কিংবা ফোন দেওয়ার আগে অবশ্যই আপনার কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
১. কাউকে ফোন দেবার পর যদি দেখেন সে আপনাকে চিনতে পারছে না, তাহলে আপনি আপনার পরিচয় দিন।
হতে পারে আপনার মোবাইল নাম্বারটি তার কাছে save করা নেই
হতে পারে সে মোবাইল চেঞ্জ করেছে, নাম্বারটি হারিয়ে গেছে
২. একসময় মানুষ কাউকে কল দিলে হিশেব করে কথা বলতো। ১ মিনিট কথা বললে ১ টাকা কাটবে, ২ মিনিট কথা বললে ২ টাকা। কিন্তু এখন বেশিরভাগ মানুষ কথা বলে হোয়াটসঅ্যাপে, মেসেঞ্জারে। এজন্য দ্রুত কথা শেষ করতে হবে এই তাড়া থাকে না।
আপনার কাছে হয়তো তাড়া নেই, কিন্তু যাকে কল দিয়েছেন সে হয়তো ব্যস্ত। ফোন দেবার পর জিজ্ঞেস করে নিন- “ভাই, আপনি কি ব্যস্ত? ৫/১০ মিনিট সময় হবে?”
যে কল দিবে, এটা তার দায়িত্ব। ৫ মিনিট সময় নিয়ে ১৫ মিনিট কথা বলছেন কিনা সেদিকেও নজর রাখুন।
৩. নামাজের সময় কাউকে কল দিবেন না। দুপুরে কাউকে কল দিতে হলে ১.১৫ থেকে ১.৪৫ মিনিটের মধ্যে কল না দেয়াই ভালো। এভাবে প্রতি ওয়াক্তের নামাজের সময়সূচী মাথায় রেখে কল দিন।
৪. বেশিরভাগ কাজ ম্যাসেজে, ভয়েস ম্যাসেজে হয়ে যায়। ভয়েস ম্যাসেজে বাড়তি সুবিধা আছে। 1.5x, 2x এ স্পিড বাড়িয়ে শুনা যায়। আপনি যদি মনে করেন আপনার কাজটি ম্যাসেজের মাধ্যমেই হয়ে যাবে, তাহলে অযথা কল না দিয়ে ম্যাসেজ দেয়াটাই ভালো। এতে দুই পক্ষেরই সময় কম লাগবে। বিপরীত পাশের ব্যক্তিটি তার সময়মতো ম্যাসেজ দেখতে পারে।
৫. এই যুগে সময় ভুলে যাওয়া, কল দিতে ভুলে যাওয়া, ম্যাসেজের রিপ্লাই দিতে ভুলে যাওয়াকে স্বাভাবিকভাবেই নিন। যেমন: আপনি কাউকে জরুরি ম্যাসেজ দিলেন। সে বাসের জ্যামে থাকাবস্থায় বা বাজার করতে গিয়ে ম্যাসেজটি দেখলো, কিন্তু সেই অবস্থায় রিপ্লাই দেবার মতো সুযোগ ছিলো না। পরবর্তীতে রিপ্লাই দিবে সেটা ভুলে গেছে। আপনার জরুরি হলে আবার ম্যাসেজ দিয়ে রিমাইন্ডার দিন।
অনেকেই এসব জায়গায় সিনক্রিয়েট করেন- “কী ভাই, ম্যাসেজ দিলে রিপ্লাই দেন না!”
৬. কাউকে একটানা ৪-৫ বার কল দেবার কোনো দরকার নেই। একটি কল দেবার পর রিসিভ না হলে ১০/১৫ মিনিট পর আবার কল দিন। বা ১ ঘণ্টা পর। তারপরও রিসিভ না হলে একটা ম্যাসেজ দিয়ে রাখুন।
৭. অনেকেই unknown number থেকে কল পেলে কল রিসিভ করে না। সেক্ষেত্রে বেশি জরুরি হলে ম্যাসেজ দিয়ে আপনার পরিচয় দিতে পারেন।
৮. অনুরোধ সংক্রান্ত ব্যাপারে অনেকেই ignore করে। কেউ আপনাকে ইগনোর করছে কিনা এটা বুঝতে পারা খুবই জরুরি। আপনি কাউকে অনুরোধ করেছেন একটা কাজ করে দেবার। সে হ্যাঁ/না কিছু বলছে না। তারপর আপনার ফোন, ম্যাসেজ দেখেও দেখছে না। রূঢ় সত্য হলো, এসব ব্যাপারে তার উত্তর বুঝে নিতে হবে। আপনার ফোন রিসিভ করছে না ভেবে এটা ভাবার দরকার নাই যে, তার দাম বেড়ে গেছে। বরং ধরে নিন, সে আপনাকে মুখের ওপর ‘না’ বলতে পারছে না। এটুকু ভেবে অন্তত সম্মানিতবোধ করুন।
৯. কারো ফোন নাম্বার চাইলে সে হয়তো দিতে চায় না। সে বলে, ‘ফেসবুকে নক দিও’। এক্ষেত্রে জোরাজুরি করলে তার কাছে আপনার ইমেজ ভালো থাকবে না। আপনি বললেন, “আরে ভাই, নাম্বার দিলে কী হয়?” সেই মুহূর্তে সে পাশ কেটে যেতে চাইলে সুযোগ দিন।
১০. কেউ আপনার কাছ থেকে টাকা ধার নিলে তাকে ফোন দিলে অনেকসময় পাওয়া যায় না। ফোন বন্ধ থাকে, কল দিলে রিসিভ করে না। এক্ষেত্রে আসলে যা করার দেনাদারকেই করতে হবে। ২০ তারিখ টাকা দেবার কথা। দেনাদার ১৯ তারিখ ফোন দিয়ে বলুক- “ভাই, টাকা দিতে ২ দিন দেরি হবে।” পাওনাদার আপনাকে কল দেবার আগে আপনি তাকে কল দিয়ে অসুবিধা জানান।
১১. নামাজের সময় ছাড়াও কাউকে কখন কল দিবেন সেটারও একটা সময় আছে। আপনি ফজরের নামাজ জামআতে পড়েন, নামাজ পড়ে ঘুমান না। কিন্তু, এদেশের বেশিরভাগ মানুষই ঘুমায়। আপনি ৬ টার সময় আপনার কম-পরিচিত, অপরিচিত কাউকে কল দেবার প্রয়োজন নেই। পরিচিত কাউকে যদি জানেন, যিনি নামাজের পর ঘুমান না, তাকে কল দিন। ৬ টায় অপরিচিত কাউকে কল দিয়ে ঘুম ভাঙ্গিয়ে তার বিরক্তির কারণ হওয়াকে ‘দাওয়াত’ ভাববেন না। তার সাথে সামনাসামনি দেখা হলে ফজর পর না ঘুমানোর ফযিলত শুনান।
১২. রাত বারোটায় কেউ অনলাইনে আছে মানে এই না যে তাকে কল দিবেন। যদি কল দিতেই হয়, আগে জিজ্ঞেস করে নিন।
১৩. একটা ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে। মানুষ সাধারণত কারো বাড়িতে কখন যায়? কেউ সকাল ৬ টায় কারো বাড়িতে যায় না, কেউ রাত ১২ টায়ও যায় না; একান্ত জরুরি না হলে। ফোন কলও এমন। অপ্রত্যাশিত সময়ে কল দেবার দরকার নেই।
সর্বোপরি, কাউকে ফোন কল দেবার আগে নিজেকে জিজ্ঞেস করে নিন- “আমি যা বলতে চাই, তা কি ম্যাসেজে বলা সম্ভব?” ম্যাসেজে বলা সম্ভব হলে ম্যাসেজেই বলার চেষ্টা করুন।