Q/AAbdullahil Hadi

কালো টুপি পরার বিধান ও টুপি পরার মূলনীতি

কালো টুপি পরার বিধান

শাইখ মুহাম্মাদ আলি ফারকুস (হাফিজাহুল্লাহ)-এর নিকট এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছেন: কালো টুপি পরার বিধান কী?

তিনি উত্তরে বলেছেন,

يلبسها من يرى اننا في دار حرب وليس في دار اسلام ، وهؤلاء اغلبهم تكفيريين و يعتقدون انه لا يصلح احد الا هم ، و يتعارفون بينهم بهذه الطاقية السوداء ، كما هو حاصل للصوفية يلبسون الطاقية الخضراء و نحن لا نقول ان كل من يلبس الطاقية السوداء تكفيري ، انما الاحسن له ان يتقي لبسها ويتجنبها و له ان يلبس الطاقية البيضاء او غيره من الالوان ، والافضل والاحسن ، الطاقية البيضاء لانه كان احب اللباس الى النبي صلى الله عليه وسلم البياض و الله الموفق

“কালো টুপি তারা পরে যারা মনে করে আমরা দারুল হারবে আছি, দারুল ইসলামে নয়। এদের অধিকাংশই তাকফিরি (অন্যদের কাফির মনে করা) মনোভাব পোষণ করে এবং বিশ্বাস করে যে, কেবল তারাই সঠিক; অন্য কেউ নয়। তারা নিজেদের মধ্যে এই কালো টুপির মাধ্যমে পরিচিত হয়, যেমন সুফিরা সবুজ টুপি পরে নিজেদের মধ্যে পরিচিত হয়।

আমরা বলছি না যে, প্রত্যেক কালো টুপি পরিধানকারী তাকফিরি। তবে উত্তম হচ্ছে— সে যেন এটি পরা থেকে বিরত থাকে এবং এড়িয়ে চলে। সে চাইলে সাদা টুপি বা অন্য রঙের টুপি পরতে পারে। তবে সাদা টুপি সর্বোত্তম ও সবচেয়ে সুন্দর। কারণ নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রিয় পোশাক ছিল সাদা।”

আল্লাহই তাওফিকদাতা।

[আলজেরিয়ার উসুলে ফিকহ বিশেষজ্ঞ শাইখ মুহাম্মাদ আলি ফারকুস (হাফিজাহুল্লাহ)-এর দরস থেকে গৃহীত। বৃহস্পতিবার, ১৬ রবিউস সানি, ১৪৩৬ হিজরি (৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫)]

টুপি পরার মূলনীতি:

শাইখকে আরও প্রশ্ন করা হয় যে, বর্তমান সময়ে কিছু দলীয় ও আন্দোলনপন্থী গোষ্ঠী যে কালো টুপি পরে এর বিধান কী? আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন।

উত্তর:

الحمدُ لله ربِّ العالمين، والصلاة والسلام على من أرسله اللهُ رحمةً للعالمين، وعلى آله وصحبه وإخوانه إلى يوم الدين، أمّا بعد:

فالطاقيةُ أو العِمامَةُ أو مُختلفُ أنواعِ القَلَنسوات إذا كانت مغايرةً لِجِنْسِ قُبَّعَات الكفَّار ولم تحمِلْ طابِعًا حِزبيًّا أو نزعةً قوميةً أو لم تكن معبِّرةً عن معنًى عَقَديٍّ؛ فيُرغَّبُ في اقتنائها لكونها شعارًا يتميَّز المسلم بها عن الكافر.

والعلمُ عند الله تعالى، وآخر دعوانا أنِ الحمد لله ربِّ العالمين، وصلى الله على نبيّنا محمّد وعلى آله وصحبه وإخوانه إلى يوم الدين، وسلّم تسليمًا

“সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। বিশ্বজগতের প্রতিপালক। সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক তাঁর প্রেরিত নবির ওপর, যিনি বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হয়ে এসেছেন এবং তাঁর পরিবারবর্গ, সাহাবি ও কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর অনুসারীদের ওপর।

অতঃপর—

সাধারণ ছোট টুপি ( طاقية ), পাগড়ি (عمامة ) বা বিভিন্ন ধরনের ঐতিহ্যবাহী একটু বড় বা লম্বা টুপি (قلنسوة )
– যদি তা কাফেরদের টুপি বা ক্যাপের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ না হয়,
– যদি তা কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের প্রতীক না হয়,
– যদি তা জাতীয়তাবাদী চিন্তা ধারণ না করে,
– এবং যদি তা বিশেষ কোনও আকিদাব-বিশ্বাসের অর্থ বহন না করে

তাহলে তা পরিধান করাকে উৎসাহিত করা হবে। কারণ এটি মুসলিমদের জন্য একটি আলাদা পরিচয়ের প্রতীক যা তাদের কাফিরদের থেকে স্বতন্ত্র রাখে।

আল্লাহই সর্বজ্ঞ। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আল্লাহর নবি মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার, সাহাবি ও অনুসারীদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক।

– নাওয়াবী তাঁর “মাজমু” (৪/৩৩৭) গ্রন্থে বলেছেন:

يجوز لبس الثوب الأبيض والأحمر والأصفر والأخضر والمخطط وغيرها من ألوان الثياب ، ولا خلاف في هذا ، ولا كراهة في شيء منه “

“সাদা, লাল, হলুদ, সবুজ, ডোরাকাটা এবং অন্যান্য রঙের পোশাক পরা জায়েজ। এ বিষয়ে কোনো মতবিরোধ নেই এবং এসব রঙের পোশাক পরায় কোনো অপছন্দনীয়তা নেই।”

– ফিকহ বিশ্বকোষে (৬/১৩২-১৩৬) বলা হয়েছে:

” اتّفق الفقهاء على استحباب لبس ما كان أبيض اللّون من الثّياب …

اتّفق الفقهاء على جواز لبس الأصفر ما لم يكن معصفراً أو مزعفراً

“ফকিহগণ সাদা রঙের পোশাক পরাকে মুস্তাহাব বলে একমত হয়েছেন। ফকিহগণ হলুদ রঙের পোশাক পরাকে জায়েজ বলে একমত হয়েছেন, যতক্ষণ না তা কিছুটা লাল মিশ্রিত গাঢ় হলুদ (معصفر) কিংবা জাফরান রঙের হয়।” সমাপ্ত।

এছাড়া মহিলারাও তাদের পছন্দমতো যে কোনো রঙের পোশাক পরতে পারেন–যতক্ষণ না তারা এতে পরপুরুষদের সামনে প্রকাশ করে। যারা معصعر তথা কিছুটি লাল মিশ্রিত গাঢ় হলুদ, জাফরান ইত্যাদি রঙের পোশাক পরা নিষিদ্ধ হওয়ার বলেছেন, তারা শুধুমাত্র পুরুষদের ক্ষেত্রে এই বিধান প্রযোজ্য করেছেন।”

ফতোয়া প্রদানের তারিখ:
২৫ জিলহজ ১৪২৭ হিজরি, ১৫ জানুয়ারি ২০০৭ ইংরেজি, আলজেরিয়া।
ফতোয়া নং: ৬০২, বিভাগ: পোশাক সংক্রান্ত ফতোয়া

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture