কাল্পনিক গল্প বা উপন্যাস লেখা কি জায়েজ

কাল্পনিক গল্প বা উপন্যাস লেখা কি জায়েজ বা এটা কি মিথ্যার মধ্যে গণ্য হবে?
গল্প ও উপন্যাসের বিষয়ের উপর নির্ভর করে তার ব্যাপারে হুকুম আরোপিত হবে। যদি সেগুলোতে মানুষকে ভাষাজ্ঞান, সাহিত্যচর্চা, ইসলাম পালনে উদ্বুদ্ধ করণ, দেশপ্রেম, চারিত্রিক উৎকর্ষ সাধন তথা মানুষের জন্য কল্যাণকর ও উপকারী কিছু শিখানো হয় তাহলে তা জায়েজ। এ সব গল্প তখন উদাহরণ ও উপমা হিসেবে পরিগণিত হবে।

উদাহরণ পেশ করার উদ্দেশ্যে কাল্পনিক ঘটনা পেশ করলে তা মিথ্যার অন্তর্ভুক্ত হবে না। যেমন: এভাবে উদাহরণ পেশ করা যে, এক লোক এটা করেছে বা এটা বলেছে তার পরিণতিতে এটা ঘটেছে। আল্লাহ তাআলা আল কুরআনে এমন উদাহরণ পেশ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَاضْرِبْ لَهُم مَّثَلًا رَّجُلَيْنِ جَعَلْنَا لِأَحَدِهِمَا جَنَّتَيْنِ مِنْ أَعْنَابٍ وَحَفَفْنَاهُمَا بِنَخْلٍ وَجَعَلْنَا بَيْنَهُمَا زَرْعًا
“আপনি তাদের কাছে দু ব্যক্তির উদাহরণ বর্ণনা করুন। আমি তাদের একজনকে দুটি আঙ্গুরের বাগান দিয়েছি….।”
[সূরা কাহফ: ৩২]

তিনি আরও বলেন,

ضَرَبَ اللَّـهُ مَثَلًا رَّجُلًا فِيهِ شُرَكَاءُ مُتَشَاكِسُونَ وَرَجُلًا سَلَمًا لِّرَجُلٍ هَلْ يَسْتَوِيَانِ مَثَلًا
“আল্লাহ এক দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন: একটি লোকের উপর পরস্পর বিরোধী কয়জন মালিক রয়েছে, আরেক ব্যক্তির প্রভু মাত্র একজন-তাদের উভয়ের অবস্থা কি সমান?”
(সূরা যুমার: ২৯)

আল্লাহ তাআলা উক্ত আয়াত দ্বয়ে উদাহরণ হিসেবে দু জন ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেছেন-মানুষের শিক্ষার জন্য কিন্তু সেগুলো কোন বাস্তবিক কোন ঘটনা নয়। [আল্লামা উসাইমীন রহ. এর বক্তব্য থেকে সংক্ষেপিত]

পক্ষান্তরে যদি গল্প ও উপন্যাসে অশ্লীলতা, অসচ্চরিত্র, হত্যাকাণ্ড, চুরি-ডাকাতি ও মানুষের জন্য ক্ষতিকারক কিছু থাকে তাহলে তা অবশ্যই বৈধ নয়।

আরেকটি বিষয় হল,আরবি ভাষায় রচিত মাকামাত সাহিত্যের বিভিন্ন গল্প, কালিলা ও দিমনা, কালয়ূবী ইত্যাদি গ্রন্থগুলো প্রায় সব দরসে নিজামি বা কওমি অথবা আলিয়া মাদরাসাগুলোতে নিয়মিত পাঠ্য বই। আরবি ভাষা-সাহিত্য চর্চার উদ্দেশ্যে এগুলো পড়ানো হয়। সাধারণত: আরবি ভাষা পণ্ডিত এবং আলেমরাই এগুলো পড়ান। অথচ এগুলো সবই কাল্পনিক গল্প। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনও আলেম এগুলোকে হারাম বলেছেন বলে জানা নাই।

সংস্কৃত ভাষায় রচিত ‘পঞ্চতন্ত্র’ বা পাঁচটি উপদেশ এর আরবি ভার্সন হল কালিলা ও দিমনা। এটি আরবিতে অনুবাদ করেন ইবনে মুকাফফা। এই গল্পে প্রধান চরিত্র দুটি শিয়াল। তাদের আলাপচারিতায় রাষ্ট্র ও প্রশাসন বিষয়ক নানা দিক বিবৃত হয়েছে বইটিতে। বইটির উপস্থাপন ভঙ্গি খুব রসাত্মক ও উপভোগ্য। কালিলা ও দিমনা’র সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল তা যেমন বুদ্ধিদীপ্ত, তেমনি তা অশ্লীলতা মুক্ত। এ বৈশিষ্ট্যের কারণে মুসলিম বিশ্বে তার বিশেষ মূল্যায়ন হয়।

শায়েখ আহমদ ইবনে আহমদ কালয়ূবী রচিত কালয়ূবী গ্রন্থটি আরবি সাহিত্যের অতি প্রাচীন একটি কিতাব। পশুপাখি ও বিভিন্ন কাল্পনিক বিভিন্ন শিক্ষণীয় ঘটনা নিয়ে রচিত এ কিতাবটি। এ কিতাবটি আরবি ভাষা চর্চার পাশাপাশি বিশুদ্ধ চরিত্র গঠনেও যথেষ্ট সহায়ক।

মোটকথা, কাল্পনিক গল্প-উপন্যাসের মাধ্যমে যদি জীবনের নানা অভিজ্ঞতা, শিক্ষণীয় বিষয় ও উদাহরণের মাধ্যমে মানুষকে ভালো কিছু শিক্ষা প্রদান করা হয় বা তা ভাষা-সাহিত্য চর্চায় অবদান রাখে তাহলে সেগুলো পাঠ করতে কোনও আপত্তি নাই। কিন্তু যদি তার মাধ্যমে অশ্লীলতা, অবৈধ প্রেম-পিরিতি, ক্ষতিকর ও শরিয়ত বহির্ভূত কার্যক্রম শিক্ষা দেওয়া হয় তাহলে তা রচনা, প্রকাশ, ক্রয়, বিক্রয়, পড়া ইত্যাদি সবই হারাম
আল্লাহু আলাম।

Exit mobile version