জীবিতাবস্থায় যেই নারী শাহাদাতের সুসংবাদ লাভ করেন!
উম্মু ওয়ারাকা বিনতে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহার ইচ্ছে ছিলো বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেন,
“ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে অনুমতি দিলে আমি আপনাদের সাথে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতাম। অসুস্থদের সেবা করতাম, আহতদের চিকিৎসা করতাম। এতে আল্লাহ আমাকে শাহাদাতও দান করতে পারেন।”
তাঁর প্রচণ্ড ইচ্ছে ছিলো শহীদ হবার। ইসলামের যুদ্ধ ইতিহাস দেখলে দেখা যায় যে, নারী শহীদদের সংখ্যা অনেক কম। সাধারণত যুদ্ধে নারীরা অংশগ্রহণ করে না। অংশগ্রহণ করলেও তাদের দায়িত্ব থাকে নার্স হিশেবে সেবা করার। স্বাভাবিকভাবে নারীদের যুদ্ধে অংশগ্রহণের সুযোগ যেমন কম, তেমনি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে শাহাদাত লাভের সৌভাগ্য অর্জনের সম্ভাবনা আরও কম।
উম্মু ওয়ারাকা রাদিয়াল্লাহু আনহা অনুমতি চাইলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বলেন,
“ও উম্মু ওয়ারাকা! তুমি ঘরেই অবস্থান করো। আল্লাহ তোমাকে শাহাদাত দান করবেন।”
কথাটি তখনকার প্রেক্ষাপটে বেশ অদ্ভুত। ঘরে অবস্থান করে কীভাবে শাহাদাত লাভ করা যায়?
কিন্তু, সাহাবীরা জানতেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা সত্য প্রমাণিত হবে। উম্মু ওয়ারাকা শাহাদাত লাভ করবেন। সেই থেকে সবাই তাঁকে ডাকতো ‘শাহীদা’ নামে। জীবিতাবস্থায় তিনি এই উপাধি লাভ করেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাঝেমধ্যে তাঁর সাহাবীদেরকে বলতেন,
“আসো, আমরা শাহীদার বাড়ি থেকে আসি।”
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভবিষ্যৎবাণীর ১০ বছর হয়ে গেলো। রাসূলুল্লাহ ইন্তেকাল করেছেন, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ইন্তেকাল করেছেন। তবুও উম্মু ওয়ারাকা প্রতীক্ষার প্রহর গুনছেন। রাসূলের ভবিষ্যৎবাণী কীভাবে মিলবে সেই অপেক্ষায় আছেন।
উম্মু ওয়ারাকার একজন দাস এবং একজন দাসী ছিলো। তিনি তাদেরকে জানিয়ে দেন-
“আমি মারা গেলে তোমরা দুজন মুক্ত। বেঁচে থাকা পর্যন্ত আমার সেবাযত্ন করো।”
দাস-দাসী দেখলো বৃদ্ধার মরার লক্ষণ নেই! বৃদ্ধা মারা না গেলে তাদের মুক্তি মিলবে না। নিজেদের মুক্তি তরান্বিত করতে একদিন তারা উম্মু ওয়ারাকা রাদিয়াল্লাহু আনহার গলায় কাপড় পেঁচিয়ে তাঁকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে!
পরদিন উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু খেয়াল করেন উম্মু ওয়ারাকার ঘর থেকে কুরআন তেলাওয়াতের আওয়াজ আসছে না। তিনি লোক পাঠান। লোকজন গিয়ে দেখতে পায় ঘরের মেঝেতে উম্মু ওয়ারাকার লাশ পড়ে আছে। অনুসন্ধান করে জানা যায়, দাস-দাসী তাঁকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করেছে।
উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
“আল্লাহু আকবর! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্য বলেছেন। উম্মু ওয়ারাকা শাহাদাত লাভ করেছেন।”
খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাব চারিদিকে লোক পাঠান সেই দাস-দাসীকে খুঁজে বের করার জন্য। একপর্যায়ে তারা ধরা পড়ে। নিজেদের মুক্তি তরান্বিত করতে তারা উম্মু ওয়ারাকা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে হত্যা করেছিলো। এই অপরাধের শাস্তি হিশেবে তাদেরকে শূলীতে চড়িয়ে হত্যা করা হয়।
উম্মু ওয়ারাকার ইচ্ছে ছিলো শহীদ হবার। আল্লাহ তাঁর ইচ্ছেপূরণ করেন।
আমরা শহীদ হতে পারি বা না পারি, আমাদের উচিত শাহাদাতের আকাঙ্ক্ষা করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলো, অথচ কখনো জিহাদ করলো না বা জিহাদের কথা তার মনে কোনো দিন উদিতও হলো না, সে যেন মুনাফিকের মৃত্যুবরণ করলো।”
[সহীহ মুসলিম: ৪৮২৫]
মনের মধ্যে সবসময় এই চিন্তা থাকতে হবে, এই দু’আ করতে হবে- “আল্লাহ! আমাকে শহীদি মৃত্যু দিও।”
এই যুগে তো সুযোগ নাই, আমি কীভাবে পারবো এসব চিন্তা না করে মনেপ্রাণে আশা করা উচিত। আপনি-আমি যদি আন্তরিক হই, বাহ্যিকভাবে আমাদের সুযোগ না আসলেও আমরা শহীদ হতে পারি।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি হাদীস আমাদেরকে অনুপ্রেরণা যোগায়।
“যে ব্যক্তি আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর কাছে শাহাদাত প্রার্থনা করে আল্লাহ তাআলা তাকে শহীদের মর্যাদায় অভিষিক্ত করবেন; যদিও বা সে আপন বিছানায় মৃত্যুবরণ করে।”
[সহীহ মুসলিম: ৪৭৭৭]