Table of Contents
এক
বিয়েটা হয়েছিল পারিবারিক ভাবেই। কিন্তু পরিবারের সবাই মেয়েটার সবকিছু পছন্দ করলেও মেয়েটা কালো হওয়ায় অনেকের আপত্তি ছিল। সেদিন আমি তাদের সবাইকে বলেছিলাম —‘আমি মেয়েটার ব্যক্তিত্বের প্রেমে পরেছি, সৌন্দর্যের নয়।’
সবার প্রশ্ন ছিল — ‘কি এমন ব্যক্তিত্ব আমাকে তার প্রতি মুগ্ধ করেছিল?’ মা আর বোনকে সাথে নিয়ে মেয়েকে দেখতে গিয়েছিলাম।
মেয়ের পরিবারকে না জানিয়েই মেয়ে দেখতে গিয়েছিলাম। এই বিয়ের ঘটক ছিলেন স্বয়ং আমার মামা ‘মজিদ মিয়া।’ পেশায় তিনি একজন সরকারি কর্মজীবী হলেও শখের বসে মাঝে মাঝে ঘটকালি করেন।
দুই
শুক্রবার ফ্রি আছি, তাই সেদিনই সিদ্ধান্ত নিলাম মেয়েদের বাসায় যাব। কিন্তু তাদের না জানিয়েই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। মামার কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে মেয়ে দেখার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলাম। কেননা দুপুরের পর আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ মিটিং আছে প্রকাশনীর সাথে আপকামিং বই নিয়ে।
মামার দেয়া ঠিকানায় চলে গেলাম, কিন্তু হাউজ নাম্বার খুঁজে পেতে বেশ বেগ পেতে হলো। অলিগলির গোলকধাঁধায় হারিয়ে যেতে লাগল আমার ঠিকানা। সকাল বেলা তার উপর শুক্রবার আশেপাশ জনমানবশূন্য, কাউকে জিজ্ঞেস করার জো নেই যে এই হাউজ নাম্বারটা কোথায়?
একরকম হতাশ হয়ে যখন বসে আছি তখন দেখতে পেলাম, বোরখা আবৃত হয়ে একজন এদিকেই আসছে, ছোটবোনকে ঠিকানা দিয়ে বললাম জিজ্ঞেস করে দেখ ঠিকানাটা উনার জানা আছে কিনা?
ঠিকানাটা পেয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। মেয়েটা একটু খানি এগিয়ে যেতেই ছোট ছোট কতগুলো বাচ্চা এসে জড়িয়ে ধরিয়েছে। বাচ্চা গুলোকে দেখে মনে হচ্ছে পথশিশু, একটু পর দেখলাম কিছু বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও তাদের সাথে যোগ দিল।
তিন
কলিংবেল চাপতেই দরজা খুলে দিল এক তাগড়া জোয়ান। সালাম দিয়ে পরিচয় দিলাম, বললাম মজিদ সাহেব পাঠিয়েছে। পরিচয় পাওয়ার পরই বলল ভিতরে আসুন, আসার আগে একটু জানিয়ে আসলে ভালো হতো না? আসতে কোন ঝামেলা হয় নি তো? না, তেমন কোন ঝামেলা হয়নি। তবে ঠিকানাটা পেতে একটু বেগ পেতে হয়েছে, পরে একটা মেয়েকে ঠিকানাটা দেয়ার পর বাসাটা দেখিয়ে দেয়।
চার
— ‘মেয়ে কোথায়, উনাকে নিয়ে আসুন। আমাদের একটু ব্যস্ততা আছে ভাইজান।’
— ‘আসলে ভাইয়া আপু ত বাইরে গেল একটু আগে। আজ শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে আপু সকালবেলা পথশিশুদের আর বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের কুরআন শিখান, দ্বীনের দাওয়াত দেন।’
— ‘মাশাআল্লাহ, একটু ফোন দিয়ে আসতে বলুন ভাইজান।’
— ‘আচ্ছা ভাইয়া, ফোন করতেছি।’
পাত্রী আসার সময়টুকু বসে বসে অপেক্ষা করছি আর ভাবছি সেই মেয়েটাই কি যাকে বোন বাসার ঠিকানা জিজ্ঞেস করেছিল। মাথায় অনেককিছুই গিজগিজ করছিল, এরই মধ্যে সালাম দিয়ে পাত্রী এসে হাজির।
এই প্রথম কোন মেয়ের সামনে আমি বসে আছি। একদিকে জড়তা, অন্যদিকে লজ্জায় আমার মুখ লাল হয়ে আসছিল। কি জিজ্ঞেস করব বুঝতে পারলাম না। মা জিজ্ঞেস করলেন, নাম কি?
— ‘যায়নাব।’
— ‘অর্থ কি?’
— ‘সুগন্ধি ফুল।’
— ‘বাহ অনেক নাম। পড়াশোনা কতদূর?’
— ‘মেডিকেলে ফাইনাল ইয়ার।’
— ‘ওহ ভবিষ্যৎ ডাক্তার।’
মা মুচকি হেসে বলল আচ্ছা তোমরা দুজন কথাবার্তা বল, আমরা দূরে গিয়ে বসি। বোন জারা যখন আমার পাশ থেকে উঠে যাচ্ছে, আমার হার্টবিট আরো বেড়ে গেল।
কি জিজ্ঞেস করব বুঝতে পারছিলাম না। অপর পাশ থেকে জিজ্ঞেস করল ডাক্তাররা কি রোগী দেখলে ভয় পায়?
— ‘না, এমনিতেই।’
— ‘আপনার না ব্যস্ততা আছে, কিছু জানার থাকলে বলতে পারেন?’
— ‘জ্বি, আপনার জীবনের শেষ গন্তব্য কোথায়?’
আপনার গন্তব্য যেথায়…..