ইস্তিগফার মানে হলো ক্ষমা প্রার্থনা করা।
আল্লাহ হলেন
‘গাফির’ ক্ষমাকারী,
‘গফুর’ ক্ষমাশীল,
‘গফফার’ সর্বাধিক ক্ষমাকারী।
ইস্তিগফার একটি স্বতন্ত্র ইবাদত; কোনো গুনাহ বা পাপ মাফ করার জন্য এই ইবাদত করা হয় না। যেমন: নামাজ, রোজা, হজ ইত্যাদি ইবাদত দ্বারা গুনাহ মাফ হয়; কিন্তু এসব ইবাদত করার জন্য গুনাহ করা শর্ত নয়।
তওবা ও ইস্তিগফার আল্লাহ তাআলার অতি পছন্দের একটি ইবাদত। তাই প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) নিষ্পাপ হওয়া সত্ত্বেও প্রতিদিন ৭০ থেকে ১০০ বার তওবা ও ইস্তিগফার করতেন। অনুরূপ ইমানের পর নামাজ প্রধান ও সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত হওয়া সত্ত্বেও এই নামাজ আদায়ের পর তিনবার ইস্তিগফার পড়া সুন্নত। অর্থাৎ ইস্তিগফার শুধু পাপের পরে নয়, ইবাদতের পরেও করা হয়।
যেমন হজের পর ইস্তিগফার করা বিষয়ে কোরআনে উল্লেখ আছে,
‘(হজ শেষে) তারপর তোমরা বেরিয়ে পড়ো, যেভাবে মানুষ চলে যাচ্ছে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’
ثُمَّ أَفِيضُوا مِنْ حَيْثُ أَفَاضَ النَّاسُ وَاسْتَغْفِرُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ অতঃপর তওয়াফের জন্যে দ্রুতগতিতে সেখান থেকে ফিরে আস, যেখান থেকে সবাই ফিরে। আর আল্লাহর কাছেই মাগফেরাত কামনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাকারী, করুনাময়1
فَإِذَا قَضَيْتُم مَّنَاسِكَكُمْ فَاذْكُرُوا اللَّهَ كَذِكْرِكُمْ آبَاءَكُمْ أَوْ أَشَدَّ ذِكْرًا ۗ فَمِنَ النَّاسِ مَن يَقُولُ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا وَمَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ خَلَاقٍ আর অতঃপর যখন হজ্জ্বের যাবতীয় অনুষ্ঠানক্রিয়াদি সমাপ্ত করে সারবে, তখন স্মরণ করবে আল্লাহকে, যেমন করে তোমরা স্মরণ করতে নিজেদের বাপ-দাদাদেরকে; বরং তার চেয়েও বেশী স্মরণ করবে। তারপর অনেকে তো বলে যে পরওয়াদেগার! আমাদিগকে দুনিয়াতে দান কর। অথচ তার জন্যে পরকালে কোন অংশ নেই।2
ইস্তিগফার সম্বন্ধে কোরআনে আছে,
‘তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, নিশ্চয়ই তিনি মহাক্ষমাশীল।’ (সুরা-৭১ নূহ, আয়াত: ১০)
فَقُلۡتُ اسۡتَغۡفِرُوۡا رَبَّكُمۡؕ اِنَّهٗ كَانَ غَفَّارًا ۙ বলেছিঃ তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, তিনিতো মহা ক্ষমাশীল।3
‘অতঃপর তোমার রবের প্রশংসাসহ পবিত্রতা বর্ণনা করো এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো।’
(সুরা-১১০ নাসর, আয়াত: ৩)।
‘আর আল্লাহ তাআলা আজাব দেবেন না তাদের, আপনি তাদের মাঝে থাকা অবস্থায়; আর আল্লাহ তাদের আজাব দেবেন না, যখন তারা ইস্তিগফার করে।’।
وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُعَذِّبَهُمْ وَأَنتَ فِيهِمْ ۚ وَمَا كَانَ اللَّهُ مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُونَ অথচ আল্লাহ কখনই তাদের উপর আযাব নাযিল করবেন না যতক্ষণ আপনি তাদের মাঝে অবস্থান করবেন। তাছাড়া তারা যতক্ষণ ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে আল্লাহ কখনও তাদের উপর আযাব দেবেন না।4
ইস্তিগফার সম্পর্কে হাদিসে আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে যত মুমিন বান্দার জন্য ইস্তিগফার করবে, সে তাদের সবার সমপরিমাণ নেকি লাভ করবে।’ (সিয়ারে কাবির, তাবরানি)।
প্রতিদিন ৭০ বা ১০০ বার এর চেয়ে বেশি সংখ্যায় ইস্তিগফার করা কি বিদআত
আমরা জানি, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দৈনিক ৭০ থেকে ১০০ বার ইস্তিগফার পাঠ করতেন। কিন্তু কেউ যদি এর চেয়ে বেশি পড়ে, যেমনঃ ২০০, ৫০০, ১০০০,৫০০০ বার ইত্যাদি। তাহলে কি তা বিদআত হবে?
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিদিন প্রচুর পরিমান ইস্তিগফার বা আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। যেমন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-
আবু হুরাইরাহ বর্ণনা করেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি:
وَاللهِ إِنِّي لأَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ فِي الْيَوْمِ أَكْثَرَ مِنْ سَبْعِينَ مَرَّةً
“আল্লাহর কসম! আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে সত্তরবারেরও অধিক ইস্তিগফার ও তাওবাহ করে থাকি।”5
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবী আগার আল মুযানী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
“إِنِّي لأَسْتَغْفِرُ اللَّهَ فِي الْيَوْمِ مِائَةَ مَرَّةٍ
“আমি দৈনিক একশ’ বার আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকি।”6
মোটকথা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কনো দিন ১০০ বার আর কোন দিন ৭০ বার করে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। এটি তার নিয়মিত আমল ছিলো।
সুতরাং আমরা যদি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসরণের উক্ত সংখ্যার অনুসরণ করে প্রতিদিন ৭০ বা ১০০ বার ইস্তিগফার পাঠ করি তাহলে তা অধিক উত্তম। আর আসলে এ সংখ্যাটি খুব বেশিও নয়; কমও নয় বরং মধ্যম। আর ইবাদতে মধ্যমপন্থায় থাকা প্রতিদিন নিয়মিত আমল করার জন্য সহায়ক।
তবে কেউ ইচ্ছা করলে এর চেয়ে কম বা বেশি করতে পারে। এতে শরীয়তগতভাবে কোন সমস্যা নাই। তবে বিশেষ কোন সংখ্যা বা পদ্ধতি আবিষ্কার করবে না। যেমন প্রতিদিন সূর্য উঠার সময় সময় একহাজার বার, সূর্য ডুবার সময় একহাজার বার অথবা প্রতিদিন ৫০০ বার, অথবা প্রতিদিন ২০০ বার করে। এভাবে বিশেষ কোন সংখ্যা বা পদ্ধতিকে নিয়ম বানিয়ে নিলে তা বিদআত হিসেবে পরিগণিত হবে। বরং স্বাভাবিকভাবে কখনো ইচ্ছে হলে কম বা বেশি করায় কোন আপত্তি নেই ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহু আলাম।
- সুরা বাকারা:১৯৯ ↩︎
- সুরা বাকারা:২০০ ↩︎
- সুরা নূহ : ১০ ↩︎
- সূরা আল-আনফাল : ৩৩ ↩︎
- সহীহ বুখারি, হাদিস নম্বর/৬৩০৭-তাওহীদ প্রকাশনী ↩︎
- সহীহ মুসলিম, ইসলামী ফাউন্ডেশন প্রকাশনী হা/ ৬৬১২, ইসলামি সেন্টার প্রকাশনী হা/ ৬৬৬৬ অধ্যায়: বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা বা ইস্তিগফার করা মুস্তাহাব ↩︎