ইসলামে আত্মরক্ষা বিধান কি

আমার প্রতিবেশীর জমি বা অন্য কোন ব্যক্তির সাথে যদি আমাদের পারিবারিক কোন ঝামেলা হয়, আমার দোষ হোক বা না হোক, যদি আমার প্রতিপক্ষ আমাকে মারতে আসে আমি কি পাল্টা আঘাত করতে পারি?
নাকি পাশের বাড়ির লোকেরা মুখে মুখে কথা বলতে বলতে ঝগড়া করে এবং এক পর্যায়ে গায়ে হাত তোলে এবং মারামারি করতে চলে আসে, পালানোর উপযুক্ত উপায় না থাকলে কী করা উচিত?
অর্থাৎ আত্মরক্ষার ব্যাপারে ইসলামের নির্দেশ কী?

ইসলাম আত্মরক্ষা ফরজ করেছে। এখন কেউ যদি আপনাকে আক্রমণ করে, আপনার সামর্থ্য থাকলে আপনি তা প্রতিহত করতে পারেন।

ইসলাম ভারসাম্য ও সংযমের শিক্ষা দেয়। কারো উপর অন্যায়, অবিচার, আক্রমণ ও জুলুম করতে নিষেধ করে। একই সঙ্গে ইসলাম আত্মরক্ষার অধিকার দিয়েছে। ইসলামে নিজের শক্তি ও সামর্থ্য অনুযায়ী আত্মরক্ষা করা বৈধ বা নিজের আত্মরক্ষার অনুমতি ইসলামে রয়েছে।

আত্মরক্ষা একটি মানুষের অধিকার।

الشَّهْرُ الْحَرَامُ بِالشَّهْرِ الْحَرَامِ وَالْحُرُمَاتُ قِصَاصٌ ۚ فَمَنِ اعْتَدَىٰ عَلَيْكُمْ فَاعْتَدُوا عَلَيْهِ بِمِثْلِ مَا اعْتَدَىٰ عَلَيْكُمْ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ مَعَ الْمُتَّقِينَ
সম্মানিত মাসই সম্মানিত মাসের বদলা। আর সম্মান রক্ষা করারও বদলা রয়েছে। বস্তুতঃ যারা তোমাদের উপর জবর দস্তি করেছে, তোমরা তাদের উপর জবরদস্তি কর, যেমন জবরদস্তি তারা করেছে তোমাদের উপর। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রাখ, যারা পরহেযগার, আল্লাহ তাদের সাথে রয়েছেন।
[2:194]

আরেকটি আয়াতে ধ্বংস ও ক্ষতি হাত থেকে আত্মরক্ষার তাগিদ দিয়ে বলা হয়েছে

وَأَنفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ ۛ وَأَحْسِنُوا ۛ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ
আর ব্যয় কর আল্লাহর পথে, তবে নিজের জীবনকে ধ্বংসের সম্মুখীন করো না। আর মানুষের প্রতি অনুগ্রহ কর। আল্লাহ অনুগ্রহকারীদেরকে ভালবাসেন।
[২ঃ১৯৫]

وَلَمَنِ انتَصَرَ بَعْدَ ظُلْمِهِ فَأُولَـٰئِكَ مَا عَلَيْهِم مِّن سَبِيلٍ
নিশ্চয় যে অত্যাচারিত হওয়ার পর প্রতিশোধ গ্রহণ করে, তাদের বিরুদ্ধেও কোন অভিযোগ নেই।
[সুরা শুরা: ৪১]

আত্মরক্ষার আগে সাবধান এবং সতর্কতা

ইসলাম মানুষকে আত্মরক্ষার অধিকার দিয়েছে। আত্মরক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতেও বলেছেন। তবে তার আগে তিনি বলেন, সাবধানে এগোন। যাতে আপনাকে কোনো ধরনের বিপদে পড়তে না হয় এবং পড়ে গেলেও সহজেই সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন। ইসলামের ইতিহাসে এমন অনেক সতর্কতার উদাহরণ রয়েছে। যেমন—জোবায়ের ইবনুল আউয়াম (রা.) বলেন, ‘ওহুদ যুদ্ধের দিন রাসুলুল্লাহ (সা.) দুটি বর্ম পরিহিত ছিলেন।’
যুবাইর ইবনুল আওয়াম (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, উহুদ যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিধানে দুটি লৌহ বর্ম ছিল। তিনি তা পরিহিত অবস্থায় (আহত হওয়ার পর) একটি পাথরের উপর উঠার চেষ্টা করেন, কিন্তু উঠতে পারেননি। তিনি তালহা (রাঃ)-কে নিচে বসিয়ে তার কাঁধে চড়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাথরের উপর উঠে উপবিষ্ট হন। যুবাইর (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ তালহা (তার জন্য জান্নাত) নির্ধারিত করে নিল।

হাসান, মিশকাত (৬১১২), মুখতাসার শামাইল (৮৯), সহীহ আবূ দাউদ (২৩৩২)
আবূ ঈসা বলেন, সাফওয়ান ইবনু উমাইয়্যা ও সাইব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা এটি শুধুমাত্র মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাকের হাদীস হিসাবে জেনেছি।
(সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১৬৯২)

আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (এক রাতে) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জেগে কাটান। অতঃপর তিনি যখন মদিনা্য় এলেন এই আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করলেন যে, আমার সাহাবীদের মধ্যে কোন যোগ্য ব্যক্তি যদি রাতে আমার পাহারায় থাকত। এমন সময় আমরা অস্ত্রের শব্দ শুনতে পেলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ইনি কে? ব্যক্তিটি বলল, আমি সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস, আপনার পাহারার জন্য এসেছি। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঘুমিয়ে গেলেন।
[সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৮৮৫]

এ ছাড়া ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) নামাজরত অবস্থায় অতর্কিত আক্রমণে শহীদ হওয়ার পর উসমান (রা.) মসজিদে স্বতন্ত্র মেহরাব বানিয়ে সেখানে নামাজে দাঁড়াতেন। এমনিভাবে আলী (রা.) শহীদ হওয়ার পর মুয়াবিয়া (রা.) মসজিদে স্বতন্ত্র মেহরাবে রক্ষীর পাহারায় নামাজে দাঁড়াতেন।
(ওয়াফাউল ওয়াফা : ২/৮৮; তারিখে তাবারি : ৫/১৪৯)

জীবন, সম্পদ ও সম্মান রক্ষায় নিহত হলে শহীদ

সাঈদ ইবনু যাইদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ যে লোক নিজের ধনমাল রক্ষা করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করে সে শহীদ। যে লোক নিজের দীনকে হিফাযাত করতে গিয়ে মারা যায় সে শহীদ। যে লোক নিজের প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করে সে শহীদ। যে লোক তার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে গিয়ে মারা যায় সেও শহীদ।
[সহিহ বুখারি: ২৪৮০; সুনানে তিরমিজি: ১৪২১]

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘জনৈক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে আরজ করলেন, যদি কোনো ব্যক্তি এসে আমার সম্পদ ছিনিয়ে নিতে চায়?
রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমার সম্পদ তুমি দেবে না। লোকটি বলল, যদি সে আমাকে হত্যা করতে উদ্যত হয়?
রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তার সঙ্গে তুমি মোকাবেলা করো। লোকটি বলল, যদি সে এতে আমাকে হত্যা করে?
রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তাহলে তুমি শহীদ। লোকটি বলল, যদি আমি তাকে হত্যা করি? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তাহলে সে জাহান্নামি হবে।’
(সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২২৫)

والله اعلم بالصواب

Exit mobile version