ইসলামের ইতিহাসে অন্যতম নারী উদ্যোক্তা
জুবাইদা বিনতে জাফর পঞ্চমবারের মতো হজ্বে যাচ্ছেন। তিনি লক্ষ্য করলেন যে, মানুষজন পানির সঙ্কটে ভুগছে। তিনি দেখতে পেলেন যমযম কূপের পানি মানুষজন অনেক বেশি সংগ্রহ করার ফলে পানির লেয়ার নিচে নেমে গেছে। কূপটি খনন করতে হবে।
জুবাইদা বিনতে জাফরের স্বামী ছিলেন ইসলামের ইতিহাসের বিখ্যাত খলিফা হারুন-অর-রশীদ। সেই হিশেবে জুবাইদার প্রভাব-প্রতিপত্তি ছিলো অনেক বেশি। মানুষের দুঃখ-দুর্দশা মোকাবিলায় তিনি কোনো উদ্যোগ নিলে সেটা বাস্তবায়ন করা তাঁর জন্য বেশ সহজসাধ্য।
যমযম কূপ খনন, আরাফাতে একটি কূপ খনন করতে তিনি ২ মিলিয়ন দিনার ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নেন। আরবের মানুষ পানি সঙ্কটে ভুগছে। এই সঙ্কট উত্তরণের কূপ খননই অন্যতম সমাধান। কিন্তু, ইঞ্জিনিয়াররা তাঁকে একটু সতর্ক হতে বললো। পানি সঙ্কট নিরসনে এতো টাকা ব্যয় করার কী দরকার?
তিনি ইঞ্জিনিয়ারদের পরামর্শের জবাবে বললেন,
“কোদালের একটি আঘাতের জন্য যদি ১ দিনার প্রয়োজন হয়, তবুও আমি চাই কূপ খনন করো।”
ধরে নিন ১ দিনার মানে ৪০০০ টাকা। জুবাইদা বিনতে জাফরের কূপ খনন করার ব্যাপারে এতোটাই দৃঢ় সংকল্প ছিলো যে, তিনি কূপ খনন করতে কোদালের এক আঘাতের বিনিময়ে ৪০০০ টাকা দিতে পর্যন্ত রাজী ছিলেন!
হজ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান হলো আরাফার ময়দান। জুবাইদার উদ্যোগে আরাফার ময়দানে একটি কূপ খনন করা হয় যা ‘জুবাইদার কূপ’ নামে পরিচিত।
কুফা থেকে মক্কায় হজ্ব করতে যাবার মরুভূমিতে প্রায় ৯০০ কিলোমিটারের মতো রাস্তা তাঁর উদ্যোগে নির্মিত হয়। রাস্তার আশেপাশে পানি পানের জন্য কূপ, মেহমান থাকার জন্য সরাইখানা নির্মিত হয়।
বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা জুবাইদা বিনতে জাফরের অবদান সম্পর্কে বলেন:
“মক্কা থেকে বাগদাদে যাওয়া এই রাস্তার প্রতিটি জলাশয়, পুল বা কূপ তার অবদানের কারণে হয়েছিলো। যদি এই রাস্তার জন্য তার উদ্বেগ না থাকত তবে তা হতো না!”
জুবাইদা বিনতে জাফরের নিজস্ব ব্যবসা ছিলো। ব্যবসা পরিচালনার জন্য তিনি ম্যানেজার নিয়োগ দিতেন।
তাঁর প্রসাদে ১০০ জন মেয়েকে নিয়োগ দেন সবসময় কুরআন তেলাওয়াত করার জন্য। দিনের ২৪ ঘন্টা তাঁর প্রাসাদে কুরআন তেলাওয়াত করতো সেই একশো জন কুরআনের হাফেজা। একদল যখন ঘুমাতো, আরেকদল তখন তেলাওয়াত করতো। তাঁর প্রসাদ থেকে কুরআনের সুর এমনভাবে ভেসে আসতো যে, দূর থেকে শুনলে মনে হতো মৌমাছির শব্দের মতো। যার ফলে তাঁর প্রাসাদকে অনেকেই বলতো ‘মৌচাক’; যেখান থেকে মৌমাছির মতো শব্দ শুনা যায়।