Q/AAbdullahil Hadi

গ্রাফিতি (দেয়ালচিত্র) কী? তা কি ইসলাম অনুমোদিত?

গ্রাফিতি ইটালিয়ান শব্দ “Grafitiato” থেকে আসে, যার অর্থ “খচিত”। গ্রাফিতি শব্দটি শিলালিপি, চিত্র অঙ্কন এবং এই ধরণের শিল্প বুজায়।
গ্রাফিতি হলো, সাধারণ কোনো চিত্রকর্ম বা দেয়াল লিখন, যাতে শিল্পীর সূক্ষ্ম বার্তা লুকানো থাকে। দেশে দেশে সামাজিক অবিচার, সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বা যুদ্ধের বিরুদ্ধে শিল্পীরা গ্রাফিতির মাধ্যমে তাদের বার্তা সমাজে পৌঁছে দিয়ে থাকেন। শান্তির পক্ষে অবস্থান নেয়ার আহ্বান ফুটে ওঠে কোনো কোনো দেয়ালচিত্রে। ব্যঙ্গ-বিদ্রূপাত্মক চিত্রের মাধ্যমে সমাজের বাস্তবতাও শিল্পী তার তুলির আঁচড়ে নিখুঁতভাবে তুলে আনেন।” [roar.media]

গ্রাফিতি বিষয়ে বাংলা উইকিপিডিয়ায় বলা হয়েছে,

“গ্রাফিতি হল বিনা অনুমতিতে জনসাধারণের অভিমতে শিল্পীয় উপায়ে দেয়ালের উপরে লেখনী কিংবা অঙ্কনের মাধ্যমে তুলে ধরা। [American Heritage Dictionary] স্প্রে পেইন্ট বা মার্কার পেন সাধারণত গ্রাফিতি তৈরির উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
গ্রাফিতি একটি বিতর্কিত বিষয়। অধিকাংশ দেশে গ্রাফিতিকে বিকৃত ও ধ্বংসাত্মক শিল্প হিসেবে গণ্য করা হয় কারণ অনেক সময় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তাদের সক্রিয়তা গ্রাফিতির মাধ্যমে প্রচার করে।” [উন্মুক্ত বিশ্বকোষ বাংলা উইকিপিডিয়া]

প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে সারা পৃথিবীতেই গ্রাফিতি নির্যাতিত ও অধিকার বঞ্চিত মানুষের কাছে সমাদৃত হচ্ছে। তাই দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকা বড় থেকে ছোট বিভিন্ন অন্যায়ের প্রতিবাদে সুস্থ ধারার আন্দোলনের একটি স্বীকৃত পদ্ধতি হিসাবেই মনে করেন প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনার মানুষেরা। কিন্তু প্রতিক্রিয়াশীলেরা গ্রাফিতিকে ভয় পায়। গ্রাফিতিতে শিল্পবোধ থাকে। চিন্তার খোরাক থাকে।

ইসলামের দৃষ্টিতে গ্রাফিতি করা কি জায়েজ?

হ্যাঁ, কতিপয় শর্তসাপেক্ষে তা জায়েজ। যথা:

১. অন্যের বাড়ি বা কোনও প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে গ্রাফিতি করতে হলে, অবশ্যই মালিক বা কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি ছাড়া তা করার সুযোগ নেই। ইসলাম, প্রচলিত আইন এবং সামাজিক ইত্যাদি সকল দৃষ্টিকোণ থেকে তা অগ্রহণযোগ্য।
 কারো বাড়ি কিংবা প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে চিকা মারা, পোস্টার লাগানো ও হাল-জামানার নেতা বন্দনার প্যানোফ্ল্যাক্স, ফেস্টুন বসানো ইত্যাদি ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।

পাবলিক প্লেসে করতে হলেও তা অনুমোদিত স্থান হওয়া আবশ্যক।

২. গ্রাফিতি হতে হবে এমন বিষয়ে যা সর্বস্তরের মানুষের জন্য কল্যাণকর। যা অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা সৃষ্টি করে বা সামাজিক অসঙ্গতির ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

৩. গ্রাফিতিতে এমন কোনও বিষয় থাকতে পারবে না যা ইসলামে নিষিদ্ধ। যেমন: অশ্লীল বা অশালীন শব্দ কিংবা বাক্য, শরিয়ত বিরোধী ও খারাপ ইঙ্গিত বাহী কোনও চিহ্ন, মানুষ ও জীব-জন্তুর স্পষ্ট আকৃতি ইত্যাদি।

৪. এমন গ্রাফিতি অঙ্কন থেকে বিরত থাকা উচিৎ, যা দৃষ্টিকটু বা পরিবেশের স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে নষ্ট করে।
৫. গ্রাফিতি এমন বিষয়ে হওয়া যাবে না যা প্রচলিত সুস্থ, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য সামাজিক ট্যাবু, সংস্কৃতি, রীতি-নীতি ইত্যাদি ভেঙ্গে ফেলার আহ্বান জানায়।
৬. দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে বা বিশৃঙ্খলার দিকে আহ্বান জানায় এমন কোনও গ্রাফিতি করা যাবে না।
৭. এমন স্থানে কুরআনের আয়াত এবং আল্লাহ-রসুলের নামের গ্রাফিতি করা জায়েজ নয় যেখানে সেগুলোর সম্মানহানি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
নারী-পুরুষ একাকার হয়ে গ্রাফিতি অংকন করা ইসলাম সমর্থন করে না।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture