নারীদের মেহেদী ব্যবহার করা মুস্তাহাব (উত্তম)। এ ব্যাপারে অবহেলা বা অলসতা না করাই ভালো। টিউব বা গোল্ড মেহেদী ব্যবহারের বিধানসহ আরও কিছু বিষয়ে আলোচনা করা হলো।
আয়িশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন এক নারী পর্দার আড়াল থেকে হাত বের করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিকে একটি চিঠি ইশারা করলেন। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের হাতটি গুটিয়ে নিয়ে বললেন, ‘‘আমি বুঝতে পারছি না, এটি কোনো পুরুষের হাত নাকি কোনো নারীর হাত?’’ তখন সেই নারী বললেন, ‘বরং, এটি একজন নারীর হাত।’ তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তুমি যদি নারী হতে, তাহলে অবশ্যই মেহেদী দ্বারা তোমার নখগুলো বদলে দিতে।’’ [ইমাম নাসায়ি, আস-সুনান: ৫০৮৯; এ বিষয়ে বেশ কিছু হাদিসকে সামনে রেখে শায়খ আলবানি এই হাদিসটিকে হাসান বলেছেন, তবে অনেক ইমাম হাদিসটিকে দুর্বল বলেছেন]
উল্লেখ্য, মেহেদী হাত ও নখের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয়। তাই, মেহেদীরাঙা হাত ও নখ গায়রে মাহরামের সামনে প্রদর্শিত হতে পারবে না। ফেমিলি মেম্বারদের সামনে হলে সমস্যা নেই। তবে, স্বামীর সামনে হলে খুবই ভালো। এমনকি, কোনো কোনো ইমাম বলেছেন, বিবাহিত নারী সবসময় মেহেদীরাঙা হয়ে থাকবে, এটি তার জন্য মুস্তাহাব তথা নেকির কাজ।
Table of Contents
গোল্ড বা টিউব মেহেদী দেওয়ার বিধান:
এদেশের নির্ভরযোগ্য শীর্ষ দ্বীনি বিদ্যাপীঠ মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়ার ম্যাগাজিন ‘‘মাসিক আলকাউসার’’-এর এপ্রিল ২০১৬ সংখ্যায় বলা হয়েছে, ‘‘গোল্ড মেহেদী বা টিউব মেহেদী ব্যবহার করা জায়েয এবং এগুলো ব্যবহার করে প্রলেপ উঠিয়ে ফেলার পর অজু-গোসল সবই সহিহ হবে। কেননা এ মেহেদী লাগানোর পর শরীরে যে রঙ অবশিষ্ট থাকে—যার কোনো কোনোটিতে পরবর্তীতে আবরণের মতো ওঠে—তা আমাদের জানামতে চামড়ায় পানি পৌঁছার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক নয়। তাই এগুলো ব্যবহার করতে সমস্যা নেই।’’1
তবে, বাজারের অনেক মেহেদীতে ক্ষতিকর কেমিক্যাল থাকে। তাই, বুঝে-শুনে সতর্কতার সাথে ব্যবহার করাই ভালো।
নবিজির মেহেদী ব্যবহার:
আবু রিমসা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এবং আমার পিতা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এমন সময় আসলাম, যখন তিনি তাঁর দাড়িতে মেহেদী মাখাচ্ছেন।2
নারীদের পায়ে মেহেদী ব্যবহারের বিধান:
অনেকে বলেন, যেহেতু নবিজি তাঁর দাড়িতে মেহেদী দিতেন, সেহেতু নারীদের জন্য পায়ে মেহেদী দেওয়া উচিত নয়। এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। নবিজি মাথায় তেল ব্যবহার করতেন (সহিহ মুসলিম: ৫৯৭৭)। অথচ আমরা অনেকে তো পায়ে তেল ব্যবহার করি! এগুলো আবেগী কথা-বার্তা। বরং, নারীরা পায়ে মেহেদী দিতে পারবে। এ ব্যাপারে আলিমগণ একমত।3
পুরুষদের মেহেদী ব্যবহার:
পুরুষের জন্য সাধারণভাবে মেহেদী ব্যবহার করা জায়েয নেই। এটিই বিশুদ্ধ অভিমত।
আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘‘পুরুষের সুগন্ধি এমন হবে, যার ঘ্রাণ প্রকাশ পায় কিন্তু রঙ গোপন থাকে আর নারীর সুগন্ধি এমন হবে, যার রঙ প্রকাশ পায় কিন্তু ঘ্রাণ গোপন থাকে।’’4
এজন্য নারীদের এমন পারফিউম বা আতর ব্যবহার করা জায়েয নেই, যেগুলোর ঘ্রাণ আশে-পাশে ছড়িয়ে পড়ে। যদি নিজেদের শরীরের ঘামের গন্ধ দূর করতে হয়, তাহলে এমন পারফিউম বা প্রসাধনী ব্যবহার করতে হবে, যেটি শরীরের দুর্গন্ধ দূর করবে, কিন্তু বাইরে ঘ্রাণ ছড়াবে না। এগুলো পাওয়া যায়। আর যদি কোনো নারী নিজ বাসায় ব্যবহার করতে চান আর সেখানে কোনো গায়রে মাহরামের উপস্থিতি না থাকে, তাহলে তিনি ঘ্রাণ-ছড়ানো পারফিউমও ব্যবহার করতে পারবেন।
চিকিৎসার প্রয়োজনে পুরুষরা মেহেদী ব্যবহার করতে পারবেন।
সালমা উম্মু রাফি’ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো আঘাত পেলে বা কাঁটা বিদ্ধ হলে, তিনি আহত স্থানে মেহেদী লাগাতেন।5
পুরুষরা মাথার চুল ও দাড়িতে মেহেদী লাগাতে পারবে।
আবু রিমসা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এবং আমার পিতা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এমন সময় আসলাম, যখন তিনি তাঁর দাড়িতে মেহেদী মাখাচ্ছেন।6
আবু যার (রা.) থেকে বর্ণিত। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা যে সকল বস্তু দ্বারা সাদা চুল পরিবর্তন করে থাক, সেগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম হলো: মেহেদী ও কাতাম।’’7
কাতাম এক ধরনের ইয়েমেনি ঘাস, যা দ্বারা কলপ দিলে লাল ও কালো রঙের মিশ্রণ হয়।
- শারহুল মুনয়া: ৪৮; রাদ্দুল মুহতার: ১/১৫৪ ↩︎
- ইমাম নাসায়ি, আস-সুনান: ৫০৮৩; হাদিসটি সহিহ ↩︎
- ইমাম ইবনু হাজার, ফাতহুল বারি: ১০/৩৬৭; আল্লামা শামি, রাদ্দুল মুহতার: ৬/৪২২ ↩︎
- ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ২৭৮৭; হাদিসটি সহিহ ↩︎
- ইমাম ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ৩৫০২; হাদিসটি হাসান ↩︎
- ইমাম নাসায়ি, আস-সুনান: ৫০৮৩; হাদিসটি সহিহ ↩︎
- ইমাম নাসায়ি, আস-সুনান: ৫০৭৭; হাদিসটি সহিহ ↩︎