Q/AAbdullahil Hadi

ইসলামের দৃষ্টিতে বিপরীত লিঙ্গের সাদৃশ্য আকৃতি ও বেশভূষা অবলম্বন

ইসলামের দৃষ্টিতে বিপরীত লিঙ্গের সাদৃশ্য, আকৃতি ও বেশভূষা অবলম্বন করা হারাম ও কবিরা গুনাহ:
ইসলামের দৃষ্টিতে বিপরীত লিঙ্গের, সাদৃশ্য, আকৃতি ও বেশভূষা অবলম্বন হারাম ও কবিরা গুনাহ হওয়ার ব্যাপারে নিম্নে কয়েকটি হাদিস উপস্থাপন করা হলো:

১. ইবনে আব্বাস রা . হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,

لَعَنَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمُخَنَّثِينَ مِنْ الرِّجَالِ وَالْمُتَرَجِّلَاتِ مِنْ النِّسَاءِ وَقَالَ أَخْرِجُوهُمْ مِنْ بُيُوتِكُمْ قَالَ فَأَخْرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فُلَانًا وَأَخْرَجَ عُمَرُ فُلَانًا
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরুষ হিজড়াদের উপর এবং পুরুষের বেশধারী মহিলাদের উপর লানত (অভিসম্পাত) করেছেন। তিনি বলেছেন, “ওদেরকে ঘর থেকে বের করে দাও।” ইবনে আব্বাস রা. বলেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম অমুককে বের করেছেন এবং উমর রা. অমুককে বের করে দিয়েছেন।”
[সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৫৮৮৬]

হাদিসের ব্যাখ্যা:

এ হাদিসের ব্যাখ্যা হল, যে সকল পুরুষ কৃত্রিমভাবে নারীর বেশ-ভুষা অবলম্বন করে হিজড়া সাজে অর্থাৎ যারা পোশাক-পরিচ্ছদ, কণ্ঠস্বর, কথা বলার ধরণ, চলাফেরা, রূপসজ্জা ইত্যাদি দিক দিয়ে নারীদের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করে তাদের প্রতি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে হিজড়া হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। কিন্তু সৃষ্টিগতভাবে হিজড়াদের কোন দোষ নেই। কারণ এ ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব কোন হাত নেই। বরং মহান আল্লাহ তাদেরকে সেভাবেই সৃষ্টি করেছেন। অনুরূপভাবে যে সকল মহিলা পোশাক-পরিচ্ছদ, চাল-চলন, চুলের স্টাইল, সাজসজ্জা, কথা বলা ইত্যাদি ক্ষেত্রে কৃত্রিমভাবে পুরুষদের সাদৃশ্য ধারণ করে তাদের প্রতিও রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লানত (অভিসম্পাত) করেছেন।

২. রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন,

ثَلاَثٌ لاَ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ ، وَلاَ يَنْظُرُ اللَّهُ إِلَيْهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ : الْعَاقُّ بِوَالِدَيْهِ ، وَالْمَرْأَةُ الْمُتَرَجِّلَةُ الْمُتَشَبِّهَةُ بِالرِّجَالِ وَالدَّيُّوثُ
“তিন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের দিকে তাকাবেন না। তারা হল:
ক. পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান,
খ. পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বনকারী নারী
গ. এবং দাইয়ুস। [মুসনাদ আহমদ: ৬১৮]

৩. আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الرَّجُلَ يَلْبَسُ لِبْسَةَ الْمَرْأَةِ، وَالْمَرْأَةَ تَلْبَسُ لِبْسَةَ الرَّجُلِ»
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেসব পুরুষকে অভিসম্পাত করেছেন যারা নারীদের পোশাক পরে এবং সেসব নারীকে অভিসম্পাত করেছেন যারা পুরুষের পোশাক পরিধান করে।
[আবু দাউদ : ৪০৯৮]

৪. রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,

لَيسَ منَّا مَن تشبَّهَ بالرِّجالِ منَ النِّساءِ ولا من تَشبَّهَ بالنِّساءِ منَ الرِّجالِ
“যে নারী পরুষের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করে এবং যে সব পুরুষ নারীর সাদৃশ্য অবলম্বন করে, তারা আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।”
[আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. হতে বর্ণিত, সহীহুল জামে হা/৪৫৩৩, সহীহ]

৫. ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

لَعَنَ الْمُتَشَبِّهَاتِ مِنَ النِّسَاءِ بِالرِّجَالِ وَالْمُتَشَبِّهِينَ مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّسَاءِ
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অভিশাপ দিয়েছেন যেসব নারী পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বন করে এবং যেসব পুরুষ নারীদের সাদৃশ্য অবলম্বন করে।”
[আবু দাউদ, অধ্যায়: পোশাক-পরিচ্ছেদ,অনুচ্ছেদ: নারীদের পোশাক। সহীহ]

পোশাকের ক্ষেত্রে ইসলামের কতিপয় মূলনীতি আছে সেগুলো ঠিক রেখে একজন মুসলিম যে কোন পোশাক পরতে পারে। ইসলাম তার অনুমোদন দিয়েছে।

ইসলাম প্রদত্ত পোশাকের মূলনীতিগুলো নিম্নরূপ:

  • পুরুষদের টাখনুর নিচে পরা যাবে না।
  • বিপরীত লিঙ্গের পোশাক পরিধান করা যাবে না।
  • খুব পাতলা বা আঁটোসাঁটো হওয়া যাবে না যাতে লজ্জা স্থানগুলো ফুটে উঠে বা দেখা যায়।
  • বিধর্মীদের ধর্মীয় পোশাকের মত হবে না (যেমন: বৌদ্ধদের বিশেষ কালারের পোশাক),
  • সমাজে প্রচলিত নয় এমন অদ্ভুত ডিজাইন ও কালারে পোশাক পরিধান যাবে না যাকে হাদিসে ‘লিবাসুস শুহরাহ’ বলা হয়েছে ইত্যাদি।

আল্লাহ আমাদেরকে এসকল ভয়াবহ গুনাহ থেকে হেফাজত করুন।
আমিন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture