ব্রাশ ও টুথপেস্ট দ্বারা কি মেসওয়াকের সুন্নত আদায় হবে।
ইসলামের মেসওয়াকের গুরুত্ব কেমন? আধুনিক যুগের ব্রাশ ও টুথপেস্ট কি মেসওয়াকের বিকল্প হতে পারে? আর টুথপেস্ট ছাড়া শুধু ব্রাশ ব্যবহার করা দ্বারা কি সুন্নত আদায় হবে?
ইসলাম অত্যন্ত পবিত্র-পরিচ্ছন্ন জীবনাদর্শের নাম। এতে পাক-পবিত্রতা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব অপরিসীম। বরং পাক-পবিত্রতাকে ইমানের একটি অংশ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। যাহোক, একদিকে আল্লাহর ভালোবাসা ও সন্তুষ্টি অর্জন, অন্যদিকে দাঁত ও মুখের পরিচ্ছন্নতা এবং দুর্গন্ধ মুক্ত শ্বাস-প্রশ্বাসের স্বার্থে ইসলামে মেসওয়াকের অপরিসীম গুরুত্ব রয়েছে।
নিম্নে ইসলামে মেসওয়াকের গুরুত্ব এবং আধুনিক যুগের ব্রাশ ও টুথপেস্ট মেসওয়াকের বিকল্প হতে পারে কিনা এ বিষয়ে বিজ্ঞ আলেমদের ফতোয়া উল্লেখপূর্বক অতি সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:
ক. মেসওয়াক করা মুখের পরিচ্ছন্নতা অর্জনের পাশাপাশি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম:
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
السواك مطهرة للفم مرضاة للرب
“মেসওয়াক মুখের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মাধ্যম ও আল্লাহর সন্তুষ্টির উপায়।”1
খ. রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
لولا أن أشق على أمتي أو على الناس لأمرتهم بالسواك مع كل صلاة
“আমি যদি উম্মতের উপর (কষ্ট হবার) আশংকা না করতাম তাহলে প্রত্যেক সালাতের সাথেই মেসওয়াক করার আদেশ দিতাম।”2
গ. এ ছাড়াও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাহির থেকে বাড়িতে প্রবেশের পূর্বে এবং রাতে ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর সর্বপ্রথম মেসওয়াক করতেন।
এসব হাদিস এবং রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ব্যবহারিক জীবন থেকে দাঁত ও মুখের পরিচ্ছন্নতায় মেসওয়াকের অপরিসীম গুরুত্ব প্রতীয়মান হয়।
আধুনিক যুগের ব্রাশ ও টুথপেস্ট কি মেসওয়াকের বিকল্প হতে পারে বা এর দ্বারা কি সুন্নত আদায় হবে?
এ বিষয়ে আধুনিক যুগের দু জন বড় আলেমের ফতোয়া তুলে ধরা হল:
১. বর্তমান শতকের অন্যতম বড় আলেম ও বিশিষ্ট ফকিহ আল্লামা মোহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিন রাহ. কে প্রশ্ন করা হয় যে, মুখের পরিচ্ছন্নতা অর্জনের নিয়তে ব্রাশ এবং টুথপেস্ট ব্যবহার করলে কি হাদিসে বর্ণিত মেসওয়াকের সওয়াব পাওয়া যাবে?
উত্তরে তিনি বলেন,
نعم ؛ استعمال الفرشاة والمعجون يغني عن السواك ، بل وأشد منه تنظيفاً وتطهيراً ، فإذا فعله الإنسان حصلت به السنة ؛ لأنه ليس العبرة بالأداة ، العبرة بالفعل والنتيجة ، والفرشاة والمعجون يحصل بها نتيجة أكبر من السواك المجرد .
“হ্যাঁ, ব্রাশ এবং টুথপেস্ট ব্যবহার করলে মেসওয়াক ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। বরং এতে আরও ভালোভাবে মুখের পরিছন্নতা অর্জিত হয়।
সুতরাং কেউ তা ব্যবহার করলে সুন্নত আদায় হয়ে যাবে। কেননা উপকরণ নয় বরং কাজ ও ফলাফলটাই মূল ধর্তব্য বিষয়। আর (এটা স্বতঃসিদ্ধ যে), শুধু মেসওয়াকের তুলনায় টুথপেস্ট ও ব্রাশ ব্যবহারে (মুখের পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে) আরও ভালো ফলাফল অর্জিত হয়।” [নূরুন আলাদ দারব শীর্ষক ইসলামী প্রশ্ন-উত্তর বিষয়ক রেডিও প্রোগ্রাম]
২. সৌদি আরবের আরেক বড় আলেম শায়খ হাতিয়া সালেম বলেন,
إذا نظرنا إلى الغرض من استعمال السواك ، وهو كما في الحديث : ( مطهرة للفم مرضاة للرب ) فأي شيء طهَّر الفم فإنه يؤدي المهمة ، ولكن ما كان عليه السلف فهو أولى وأصح طبياً ” انتهى من ” شرح بلوغ المرام ” (13/ 5، بترقيم الشاملة آليا) .
“আমরা যদি মেসওয়াক ব্যবহারের উদ্দেশ্যের দিকে তাকাই তাহলে তা হলো, যেমনটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, “মেসওয়াকের মাধ্যমে মুখের পরিচ্ছন্নতা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হয়।” অতএব যে জিনিস দ্বারা মুখের পরিচ্ছন্নতা অর্জিত হবে সেটা দ্বারাই উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হবে। তবে আমাদের সালাফ বা পূর্বসূরিগণ যা ব্যবহার করতেন সেটা বেশি উত্তম এবং স্বাস্থ্যসম্মত।” [বুলুগুল মারাম-এর শারহ]
আমরা আরও বলতে পারি যে, মেসওয়াক সহজে বহনযোগ্য। তা যেকোনো সময় যেকোনো জায়গায় ব্যবহার করা যায়। পক্ষান্তরে ব্রাশ ও টুথপেস্ট সব জায়গায় ব্যবহার করা সম্ভব নয়। তাছাড়া ব্রাশ ও টুথপেস্ট ব্যয় সাপেক্ষ। আর ভালো মানের ব্রাশ বা টুথপেস্ট না হলে অনেক সময় দাঁত ও মুখ গহ্বরে ক্ষয়ক্ষতিরও সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু ব্রাশ ও টুথপেস্ট-এর দ্বারা যেহেতু ভালোভাবে মুখের পরিচ্ছন্নতা অর্জিত হয় সেহেতু তা মেসওয়াকের বিকল্প হিসেবে গণ্য হবে এবং এর দ্বারা মেসওয়াকের ফজিলত অর্জিত হবে ইনশাআল্লাহ। তবে মেসওয়াক ব্যবহার করা অধিক উত্তম এবং স্বাস্থ্যের জন্যও অধিক উপযোগী।
আর আপনি যেমনটি প্রশ্ন করেছেন যে, টুথপেস্ট ছাড়া শুধু ব্রাশ ব্যবহার করা করা দ্বারা সুন্নত আদায় হবে কিনা? এর এর উত্তরে আমরা বলব, টুথপেস্ট ছাড়া শুধু ব্রাশ দ্বারা মুখের পরিচ্ছন্নতার মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয় না। তাই ব্রাশ করলে টুথপেস্ট সহকারে করা উচিত। কিন্তু যদি কখনো তা না থাকে তাহলে সেটা ভিন্ন কথা। সে ক্ষেত্রে শুধু ব্রাশ ব্যবহার করলেও আল্লাহ চাহে তো উক্ত মর্যাদা পাওয়া যাবে নিয়তের কারণে। আল্লাহু আলাম-আল্লাহ সব চেয়ে ভালো জানেন।
- সুনান নাসায়ী ১/৫০, সহীহ ইবনে হিব্বান হা/১০৬৭, সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব- ১/১৩৩ ↩︎
- সহিহ বুখারি, হাদিস নাম্বার ৮৮৭, সহীহ মুসলিম, হাদিস নাম্বার ২৫২ ↩︎