সময়টা ছিলো আব্বাসী খলিফা আল মামুনের শাসনকাল। উমাইয়্যা খেলাফতকালে উদ্ভূত হওয়া এক ভ্রান্ত মতবাদ আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। মু’তাজিলা নামক একটি দল, যারা আল্লাহর গুণাবলিকে অস্বীকার করে- “কুরআন সৃষ্ট” এই মতবাদে বিশ্বাসী ছিলো।
খলীফা হারুন অর রশীদের সময় মু’তাজিলারা তাদের ভ্রান্ত মতবাদের দাওয়াত দানে সক্রিয় হওয়ায় শক্তভাবে তিনি এদের দমন করেন। কিন্তু খলীফা আল মামুনের মু’তাজিলাদের প্রতি ঝোঁক ছিলো। এর পেছনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছিলেন তাঁর শিক্ষক, আবু হুদাইল আল আল্লাফ। তিনি মু’তাজিলাদের একজন নেতা ছিলেন! তাই তিনি খলীফা মামুনের মাথায় বিভ্রান্তিকর আকীদা ঢুকিয়ে দিতে পেরেছিলেন।
আল মামুন ক্ষমতায় আসবার পর মু’তাজিলাদের বিতর্কে, যুক্তিতর্কের মারপ্যাঁচ দেখে পুরোপুরি তাদের দ্বারা কনভিন্স হয়ে যান। এমনকি তাদেরকে প্রশাসনিক পদেও নিযুক্ত করেন। মু’তাজিলা অনুসারীরা এবার বুঝতে পারলো তাদের রুখতে পারবে এমন কেউ এখন নেই!
এবার তারা খলীফাকে নানা চাপ প্রয়োগ করে ২১৮ হিজরীতে মু’তাজিলা মতবাদকে রাষ্ট্রীয় মতবাদ হিসেবে ঘোষণা করিয়ে নেয়।
ফলশ্রুতিতে যেই তা অস্বীকার করতে চাইতো, তার উপর নেমে আসতো নির্যাতনের পাহাড়। প্রথমে সরকারী কর্মকর্তাদের উপর এ নিয়ম বলপূর্বক প্রয়োগ করা হলেও পরবর্তীতে জনগণের উপর এ আদেশ বলবৎ হয়।
সকল মুফতি, ফক্বীহকে ডেকে আনা হয় রাজদরবারে। প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ‘মু’তাজিলা’ মতবাদ গ্রহণ করবার কথা স্বীকার করাতে জোর করা হয়। কেবল চারজন ব্যতীত সকল আলেম চাপের মুখে তা গ্রহণ করতে বাধ্য হন।
শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ করবার জন্য টিকে রইলেন শুধু ইমাম আহমাদ! এ ছিলো এক মহান সংগ্রাম! ইসলামী আক্বীদার সংকটাপন্ন অবস্থায় তিনি নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে স্থির, অবিচল ছিলেন আহলুস সুন্নাহ’র নীতিতে। একটুও টলে যাননি; শাসকগোষ্ঠীর শত নির্যাতন সহ্য করে গিয়েছেন দৃঢ়তার সাথে।
পর পর তিনজন শাসকের পালাবদল ঘটে, যারা ছিলেন মু’তাজিলা সমর্থক। খলীফা মামুনের মৃত্যুর পর ভাই, মু’তাসিমকে নির্দেশ দিয়ে যান এ মতবাদ আঁকড়ে ধরতে। তিনি ইমাম আহমাদকে (রাহিমাহুল্লাহ) ডেকে পুনরায় হুমকি দিয়ে স্বীকার করাতে চান।
কিন্তু কোন হুমকিতে কাজ না হওয়ায়, লড়াকু মনোভাবের খলীফা মু’তাসিম তাঁকে জেলে প্রেরণ করেন এবং নির্যাতনের স্টিমরোলার চালান তাঁর উপর। জ্ঞান হারানোর পূর্ব পর্যন্ত তাঁকে প্রহার করা হতো। শারীরিকভাবে দূর্বল হয়ে যাচ্ছিলেন দিন দিন।
এভাবেই তাকে আটাশ মাস কারাগারে নির্যাতনের যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়। কিছুতেই কিছু হচ্ছে না দেখে মু’তাসিম তাঁর ব্যাপারে নিরাশ হয়ে পড়েন ও মুক্তি দিয়ে দেন। আঘাতে জর্জরিত, দিনের পর দিন অন্ধ প্রকোষ্ঠে থাকা ইমাম আহমাদ ফিরে আসেন গৃহে।
জীবনে প্রথমবারের মতো চাবুক পেটা করা হবে, জানবার পর কিছুটা অস্বস্তি বোধ, চিন্তিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। ইমাম আহমাদ ও কিছুটা চিন্তায় পড়ে গেলেন। এমন সময় কারাগারে থাকা একজন চোর, মদ্যপ ব্যক্তি তাঁকে এমন একটি কথা বললেন, যা তাঁকে ঈমানী শক্তিতে বলীয়ান করে সত্যের পথে অটল অবিচল থাকবার শক্তি বৃদ্ধি করলো। কি ছিলো সেই কথা?
লোকটি বলেছিলোঃ
“দেখুন, শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে আমি মদ খাই, চুরি করি। অথচ এতো নির্যাতন সয়ে ও এসব ছাড়িনি। আর আপনি তো আল্লাহর দ্বীনের পথে লড়াইয়ের জন্য এ শাস্তি পাচ্ছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ আপনাকে বিজয়ী করবেন।”
আল মু’তাসিমের মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) যথারীতি তাঁর পাঠদান, মসজিদে হাদীসের মজলিস পরিচালনা করছিলেন। কিন্তু আল-ওয়াসিক ক্ষমতায় আসবার পরেই নির্যাতন শুরু হলো নতুন রূপে। সকল ধরণের পাঠদানের প্রতি নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দেয়া হলো। গৃহবন্দী করা হলো ইমাম আহমাদকে(রহিমাহুল্লাহ)।
খলীফা যেই শহরে থাকবেন, সেখানে তাঁর বসবাস নিষিদ্ধ করা হলো। তবে কিছু সময় পর, তাঁর মৃত্যু ঘটে। মুসলিম উম্মাহ রক্ষা পায় মু’তাজিলা নামক ভ্রান্ত মতবাদ থেকে! ইমাম আহমাদের (রাহিমাহুল্লাহ) অবিচল মনোভাব, দৃঢ়প্রত্যয়ী অবস্থান, নির্যাতন সইবার অপরিসীম ধৈর্যের মাধ্যমে আল্লাহ মুসলিম উম্মাহকে ফিতনা থেকে পরিত্রাণ দেন।
ইমাম আশ শাফে’ঈ (রাহিমাহুল্লাহ), আহমাদকে (রাহিমাহুল্লাহ) মিশর থেকে একটি চিঠি লিখে, রাবী’আ ইবনু সুলাইমানকে দিয়ে প্রেরণ করেন। চিঠিতে তিনি লিখেনঃ
“ রাসূলুল্লাহ(সাঃ) আমার স্বপ্নে এসেছিলেন। তিনি তোমার প্রতি সালাম জানিয়েছেন এবং বললেন, আল্লাহ আহমাদকে পরীক্ষা করবেন। সে যদি আল্লাহর পথে অবিচল থাকে, বিন্দুমাত্র বিচ্যুত না হয়- আল্লাহ তাঁকে আখিরাতে মর্যাদার আসনে আসীন করবেন।”
এ চিঠি পড়ে আহমাদ কেঁদে ফেলেন এবং মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে শুরু করেন। তাঁর নিষ্কম্প, নির্ভীক মনোভাব ছিলো আল্লাহর সাহায্য। আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাকে পরীক্ষা করেন, এবং তিনি এর মাধ্যমে তাঁর সম্মান বৃদ্ধি করেন।
আলী ইবনে আল মাদানী এ ব্যাপারে উল্লেখ করেন-
“আল্লাহ দু’জন মানুষের মাধ্যমে ইসলামকে রক্ষা করেছেন। রিদ্দার সময় আবু বকরকে (রাঃ) দিয়ে, আর মেহনার সময় আহমাদ ইবনে হাম্বলকে দিয়ে।”
ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ)স্বয়ং, তাঁর মাজহাবের প্রবক্তা ছিলেন না। পরবর্তীতে তাঁর ছাত্রেরা তাঁর মতামত গুলো নথিভুক্ত করেন এবং অনুসরণ করতে শুরু করেন।
তাঁর দেয়া ফতোয়া কেউ লিখে রাখবে- তা তিনি সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করতেন। তদুপরি, ইবনে হাম্বলের (রহিমাহুল্লাহ) ফতোয়াসমূহ একত্রীভূত করা হয়েছিলো। এ মহান কাজে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন আবু বকর আল খাল্লাল(রহিমাহুল্লাহ)।
অক্লান্ত পরিশ্রম করে, আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আহমাদ ইবনে হাম্বলের পরিবার, আত্মীয় স্বজন, ছাত্রদের নিকট হতে তিনি তাঁর ফতোয়া গুলো একত্রিত করেন। এই নিরলস শ্রমলব্ধ অবদানের কারণে তাঁকে হাম্বলী মাজহাবের প্রধান সংকলক ও প্রচারকারী বলা হয়ে থাকে। তাঁর এ সংগ্রহ ২০ ভলিউমের এক বিশাল গ্রন্থের আকার ধারণ করে, যেখানে তিনি আহমাদ ইবনে হাম্বলের বিভিন্ন বিষয়ে পোষণ করা অভিমত সমন্বিত করেছিলেন।
আশ শাফে’ঈ রহিমাহুল্লাহ’র জ্ঞানের প্রতি ছিলেন পরম শ্রদ্ধাশীল। তিনি পরিবারের সদস্যদের সাথে শাফে’ঈর জ্ঞানের পরিধি নিয়ে এতো আলোচনা করতেন যে তাঁকে না দেখলেও আদ্যোপান্ত জানা ছিলো পরিবারের সকলের।
একবার ইমাম শাফে’ঈ বাগদাদে এসে আহমাদের বাড়িতে রাত কাটাতে মনস্থির করলেন। তো, ইমাম আহমাদের কন্যা ভাবলেন, আমার বাবা যে তাঁর পান্ডিত্য নিয়ে এতো প্রশংসা করেন, দেখি তো তাঁর মাঝে কী এমন বিশেষত্ব রয়েছে!
মেয়েটি ইমাম শাফে’ঈর সব কাজ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো। খাবার দেয়া হলো.. শাফে’ঈ কম খাবার সুন্নাত পালন না করে তৃপ্তি সহকারে সব খাবার খেয়ে নিলেন। ওযুর জন্য নির্ধারিত পানি ব্যবহার তো করলেনই না, রাতে তাহাজ্জুদ ও আদায় করলেন না! ফজরের সময় আযান দিলে ওযু করা ছাড়াই নামাজ পড়ে নিলেন।
মেয়েটি হতভম্ব হয়ে গেলো! ইনিই কি ইমাম শাফে’ঈ?! যার প্রশংসা তাঁর পিতা সবসময় করে থাকেন! দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে বাবাকে গিয়ে সব কথা বললো। চিন্তায় পড়ে গেলেন তিনিও। মেয়ের কৌতূহল মেটাতে ইমাম শাফে’ঈর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করেই ফেললেন যে তিনি কেনো এরূপ করেছেন!
শাফে’ঈ রহিমাহুল্লাহ বললেন,
“আসলে, আমি জানি পুরো বাগদাদে তোমার বাড়িতেই সবচেয়ে হালাল খানা পাওয়া যাবে। তাই আমি পেট ভরে খানা খেয়েছি। আর কাল রাতে একটি হাদীস থেকে উসুল বের করতে গিয়ে এত মনোযোগী হয়ে গিয়েছিলেন যে সারারাত নিদ্রা আমাকে আচ্ছন্ন করতে পারেনি। এজন্য নামাজ পড়ার সময় আমাকে ওযু করতে হয়নি।”
ইমাম বাক্বী ইবন মাখলাদ (রহিমাহুল্লাহ) স্বয়ং বর্ণনা করেছেন,
“ আমি দরজায় কড়া নাড়লাম। তিনি বাইরে এসে আমাকে দেখে পরিচয় জানতে চাইলেন। আমি তাকে বললাম:
“হে আবু আবদুল্লাহ! আমি একজন মানুষ যে নিজের বাড়ি থেকে অনেক দূরের পথ পাড়ি দিয়ে এই শহরে প্রথম এসেছে। হাদীসের শিক্ষার্থী আমি। বিশেষভাবে উপকৃত হওয়ার জন্য অনেক দূরত্ব অতিক্রম করে আপনার কাছে পৌঁছেছি।”
তিনি আমাকে বললেন: “ এমনভাবে আসুন যাতে কেউ আপনাকে না দেখে”। জিজ্ঞাসা করলেন: “আপনি কোথা থেকে এসেছেন?” আমি জবাব দিলাম: “দূর পশ্চিম থেকে”। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: “আফ্রিকা থেকে?” আমি জবাবে বললাম: “এর থেকেও বেশি। আফ্রিকা যেতে আমার সমুদ্র পার হতে হয়, আমি স্পেনের আন্দালুস থেকে এসেছি।”
তিনি বিস্মিত হয়ে বললেন: “আপনার দেশ তো অনেক দূরে। আপনার মতো ব্যক্তিকে হাদীস শিখিয়ে সহায়তা করবার চাইতে আর কিছুই আমার কাছে প্রিয় নয়। তবে আপনি নিশ্চয়ই আমার নিষেধাজ্ঞাগুলির কথা শুনেছেন।”
বললাম:“বাগদাদে এসেই আমি এ ব্যাপারে শুনেছি, কিন্তু হে আবু আবদুল্লাহ! এই প্রথম আমি এখানে এসেছি। কেউই আমাকে চেনে না তাই যদি আপনি অনুমতি দেন আমি প্রতিদিন ভিক্ষুকের পোশাক পরে আসবো এবং দরজায় হাঁক দেবো যেমন তারা সাধারণত ডাক দেয়। যদি আপনি এই প্যাসেজে এসে আমার কাছে দিনে কেবল একটি হাদীস বর্ণনা করেন তবে তা ই আমার পক্ষে যথেষ্ট হবে। ”
এই পরিকল্পনা তাঁর বেশ পছন্দ হলো। তিনি জবাব দিলেন: “আচ্ছা। তবে এই শর্তে যে আপনি আসহাবুল হাদীসের অন্য কোন সমাবেশ বা হালাকাহ (সমাবেশে) যেতে পারবেন না”। আমি বললাম: “যেমন আপনি চান”।
এরপর থেকে আমি আমার হাতে একটি লাঠি নিয়ে, মাথায় কাপড় জড়িয়ে, কাগজ এবং কালি আমার হাতাতে রেখে তার দরজার কাছে এসে ভিক্ষুকদের মতো ডাকাডাকি করতাম।
অতঃপর তিনি এসে আমার কাছে দু-তিনটি হাদীস বর্ণনা করতেন এবং মাঝে মাঝে আরও বেশি ও বর্ণনা করতেন। এই পদ্ধতিতে আমি প্রায় 300 হাদীস সংগ্রহ করেছিলাম। নিষেধাজ্ঞার শেষ অবধি এবং ইমাম আহমদ (রহিমাহুল্লাহ) জনগণের মাঝে তাঁর মর্যাদা ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত আমি এই উপায়ে হাদীস শিখেছি।
পরে যখনই আমি তাঁর সমাবেশে যোগ দিতাম, তিনি আমাকে তাঁর পাশেই রাখতেন এবং আস-হাবুল হাদীসকে বলতেন:
“এই ব্যক্তি নিঃসন্দেহে হাদীসের ছাত্র হবার উপযুক্ত”।
কেউ তাঁর প্রশংসা করবে- এ কাজ ছিলো তাঁর সবচাইতে অপছন্দনীয়। লোকেদের মাঝে খ্যাতিমান হয়ে যাবার ভয়ে তিনি চাইতেন মক্কার কোন গিরিখাতে গিয়ে বসবাস করতে, যেখানে কেউ তাকে চিনবেও না। কারো প্রশংসা তাঁকে উদ্বেলিত করতো না, বরং তিনি ভীত হতেন আল্লাহর ভয়ে। কেননা তাঁর সমস্ত প্রচেষ্টা তো আল্লাহর জন্যই।
ইমাম আহমদ (রাহিমাহুল্লাহ) ছিলেন প্রথম হাদীস অন্বেষণকারী, যিনি কুফা, সিরিয়া, বসরা, হিজায- ইসলামী বিশ্বের জ্ঞানের প্রধান খনি হিসেবে পরিচিত এই চার অঞ্চল থেকে হাদীস সংগ্রহ করেছেন।
তাঁর রচিত মুসনাদের লিপিবদ্ধকরণ কার্যক্রম তিনি গোটা জীবন জুড়েই চালিয়ে যান। আহমাদ সাধারণত লিখে রাখা পছন্দ করতেন না, কিন্তু ‘মুসনাদে আহমাদ’ রচনার কাজ তিনি শিক্ষাজীবনের শুরু থেকেই করে আসছিলেন।
ইলমের জগতে এ গ্রন্থ ছিলো এক বৃহৎ সংযোজন। হাদীসের এনসাইক্লোপিডিয়া রূপে পরিচিত হাদীস শাস্ত্রের এই গ্রন্থ জ্ঞানপিপাসুদের কাছে পরম আরাধ্য।
রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুন্নাতের প্রতি ছিলো তাঁর প্রবল ভালোবাসা। যেকোন ক্ষুদ্র কাজ ও রাসূল (সাঃ) এর সুন্নাহ অনুসরণ করে করতে পছন্দ করতেন। একবার তিনি হিজামা করে হিজামাকারীকে এক দিনার মূল্য পরিশোধ করলেন। এক দিনার দান করাটা ছিলো বেশি। তবুও তিনি তা করেছিলেন রাসূল (সাঃ) এর সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরে।
“রাসূলুল্লাহ(সাঃ) একবার আবু তায়বাকে(রাঃ) দিয়ে হিজামা করান। বিনিময়ে তাঁকে এক দিনার পরিমাণ সমপরিমাণ খেজুর দেন।”
[সহীহ বুখারীঃ ২১০২]
ইবরাহীম ইবনে ইসহাক আল হারবী (রহিমাহুল্লাহ) রাসূল (সাঃ) এর সুন্নাহ সংরক্ষণে অবদান রাখা মহান ব্যক্তিদের নামোল্লেখ করতে গিয়ে বলেনঃ “সা’আদ ইবনে মুসাইয়্যেব, সুফিয়ান আস সাওরি এবং আহমাদ ইবনে হাম্বল (প্রত্যেকে যার যার নিজস্ব সময়ে)।”
একজন মুফতি (যিনি ফতোয়া প্রদান করেন) হবার জন্য কী কী বৈশিষ্ট্যাবলী থাকা জরুরি, তা ইমাম আহমাদ বর্ণনা করে গিয়েছেন। তিনি বলেনঃ
“একজন ব্যক্তি নিজেকে ফতোয়া দেবার জন্য যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে না, যতোক্ষণ না তার মাঝে পাঁচটি গুনাবলীর সম্মিলন ঘটে। তাঁর স্পষ্ট, নেক অভিলাষ থাকতে হবে। যদি তা না হয়, সে আলোর দেখা পাবে না। তাঁকে জ্ঞান, ধৈর্য, ভাবগাম্ভীর্য, প্রশান্ত ভাবের অধিকারী হতে হবে। জ্ঞানার্জন এর পথে অটল থেকে পোক্ত রূপে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। কারো প্রতি নির্ভরশীল হওয়া চলবে না, বরং স্বাধীনচেতা মনোভাব পোষণ করতে হবে। এবং অবশ্যই তাঁকে সবার মাঝে পরিচিত হতে হবে।”
তিনি স্বয়ং উপরোল্লিখিত সব গুণাবলীর সমাবেশ প্রশংসনীয় রূপে প্রতিফলিত করেছিলেন নিজের জীবনে।
ইমাম আবু হানিফার (রহিমাহুল্লাহ) ন্যায় ইমাম আহমাদও (রহিমাহুল্লাহ) জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত খলীফার নিকট হতে কিছু গ্রহণ না করতে বদ্ধপরিকর ছিলেন।
অসীয়্যত করে যান, কাফনের কাপড় ক্রয়ে যেনো খলীফার কিঞ্চিৎ আর্থিক সহায়তায় ও না থাকে। বলে যান, সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া যেনো পারিবারিকে অর্থায়নে সম্পন্ন করা হয়।
ইলম জগতের এক উজ্জ্বল ধ্রুবতারা, ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহিমাহুল্লাহ। রাসূল(সাঃ) এর সুন্নাহ’র পাবন্দ ছিলেন আজীবন। পবিত্র জুম’আবারে, ১২ই রবিউল আউয়াল, ২৪১ হিজরীতে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নেন তিনি।
তৎকালীন সময়ের ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি লোকের অংশগ্রহণে জানাজা হয়েছিলো যুগশ্রেষ্ঠ আহ্লুস সুন্নাহ’র ইমাম, ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বলের (রহিমাহুল্লাহ)।