Writing

I Am In A Relationship

রিলেশনশিপের আক্ষরিক অর্থ দূষণীয় না হলেও যে অর্থে রিলেশনশিপ সস্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে সে অর্থে দূষণীয়। পর্দার ফরজ বিধানকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বেগানা নারী-পুরুষ একে অপরের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করাই হচ্ছে রিলেশনশিপ। বর্তমানে এমন রিলেশনশিপ করতে পারা যেন একটা স্মার্টনেস৷ এই স্মার্টনেসের ট্রেন্ডে গা ভাসাতে না পারলে যেন জীবনের একটি অপ্রাপ্তি থেকে যায়। অথচ এটি এমন একটি বিষয়, যে বিষয় রবের চরম অবাধ্যতায় ভরপুর। যে রবের নিয়ামতের মধ্যে প্রতিনিয়ত থাকা হচ্ছে, যে রবের হাতে আমাদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে সেই রবের অসন্তুষ্টির জন্য এমন একটি বিষয়-ই যথেষ্ট। আফসোস, রবের অসন্তুষ্টির বিষয় থোড়াই কেয়ার করা হয়।

ইংরেজিতে ‘I am in a relationship’ বলতে যতোটানা মন্দ শুনায় না সহজ বাংলায় সেটা বললে রিলেশনশিপের পক্ষের মানুষেরা হয়তো নাক সিটকিয়ে পালাতে চাইবেন। কারণ এর আসল অর্থটাই যে তাদের অনুকূলে নয়। যেহেতু ইসলামে বিবাহ বহির্ভূত বেগানা ছেলে-মেয়ের সম্পর্ক যিনার অন্তর্ভুক্ত সেহেতু এখানে ‘I am in a relationship’ এর সহজ বাংলা হচ্ছে, আমি অমুকের সাথে যিনায় লিপ্ত আছি। নাউযুবিল্লাহ! কত্তো বড়ো পাপের কথা, ভাবা যায়!

আরও আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, আমরা অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘I am in an open relationship’ স্ট্যাটাস দিয়ে ফলাও করে প্রচার করে থাকি। আর প্রকাশ্যে এরকম চরম বেহায়াপনা স্ট্যাটাস দিয়ে মূলত এটা বোঝানো হয় যে, হে লোক সকল! তোমরা সবাই জেনে রাখো, তোমরা সবাই সাক্ষী থাকো যে, আমি অমুকের সাথে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক করে ওপেনলি যিনায় লিপ্ত আছি। আফসোস, আজকাল এগুলোকে গোনাহই মনে করা হয় না। অথচ আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেন,
তোমরা যিনার ধারে কাছেও যেও না। এটা অবশ্যই অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ। [
সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত নং : ৩২]

খেয়াল করুন, এই আয়াতে আল্লাহ তা’য়ালা যিনা করো না সেটা কিন্তু বলেন নি। আল্লাহ বলেছেন তোমরা তো যিনা করবেই না বরং যা করলে যিনার সূত্রপাত হয় তা পর্যন্ত করবে না। যেমন আপনি কোনো বিপরীত লিঙ্গের নন মাহরাম কাউকে ‘সালাম’ দিয়ে মেসেজ আদান প্রদান শুরু করলেন। তারপর ‘সে কেমন আছে’, ‘কী করে’, কী খাইছে’ ইত্যাদি এসব করে করে একটা পর্যায়ে অবৈধ ভালোবাসা হয়ে একে অপরের ছবি আদান প্রদান থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত বিছানায় গিয়ে চূড়ান্ত যিনায় লিপ্ত হলেন। এক্ষেত্রে ঐ আয়াত বলছে তুমি যিনার ধারে কাছেও যেয়ো না অর্থাৎ তাকে ‘সালাম’ পর্যন্ত দিয়ো না। কারণ শুরুটা কিন্তু ঐ সালামের মাধ্যমেই হয়েছিল যা থেকে যিনার সূত্রপাত হয়েছিল। আর শেষে কোথায় নিয়ে দাঁড় করিয়েছে এবার চিন্তা করুন। আল্লাহর নির্দেশ না মানার পরিণতি কত ভয়ঙ্কর তা তো আমাদের চোখের সামনেই স্পষ্ট।

আসলে একজন মানুষ কতোটা শরম হারা হলে, নিজের গায়রত তথা আত্নমর্যাদাবোধ কতটা নিচে চলে গেলে, সর্বোপরি গোনাহের ফিলিংস থেকে সে কতোটা দূরে থাকলে তার পাপকে এতো অনায়েসে প্রকাশ্যে বলে বেড়াতে পারে, প্রকাশ্য বলে বেড়ানোতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করতে পারে, তা কি ভাবা যায়?

সোশ্যাল মিডিয়ায় এসব প্রচারের মাধ্যমে মূলত পাপকে প্রকাশ করা হয়, পাপকে সবার সামনে নরমালাইজ করা হয় যা আরেকটি ভয়ঙ্কর লেভেলের পাপ। পাপ প্রকাশ করা নিয়ে একটি হাদীস শুনলে রীতিমতো গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠার কথা। রাসূল (সাঃ) বলেছেন,
আমার সকল উম্মত মাফ পাবে তবে পাপ প্রকাশকারী ব্যতীত। আর নিশ্চয় এ বড়োই অন্যায় যে, কোনো লোক রাতের বেলা অপরাধ করলো যা আল্লাহ গোপন রাখলেন। কিন্তু সে সকাল হলে বলে বেড়াতে লাগলো, হে অমুক! আমি আজ রাতে এই এই কাজ করেছি। অথচ সে এমন অবস্থায় রাত কাটালো যে, আল্লাহ তার কর্ম লুকিয়ে রেখেছিলেন, আর সে ভোরে উঠে তার উপর আল্লাহর দেয়া আবরণ খুলে ফেললো।
[সহীহুল বুখারী, হাদীস নং : ৬০৬৯; মুসলিম, হাদীস নং : ২৯৯০]

অর্থাৎ এই হাদীস বলছে, পাপ করা সত্ত্বেও আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর ফেরেশতা পাঠিয়ে কারো সাথে আপনার পাপ শেয়ার করছেন না, আপনার পাপের আবরণ খুলে দিচ্ছেন না। এই সুযোগে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে আপনার পাপের মিটমাট করে ফেলা উচিত ছিল। অথচ আপনি কিনা তা না করে নিজের পাপ নিজেই অনায়াসে প্রকাশ করে দিলেন। আর কারো সামনে পাপিষ্ট কর্মকান্ড প্রকাশ করার মানে হচ্ছে, পাপকে পাপ মনে না করা, পাপের প্রতি অনুতপ্ত না থাকা, লজ্জিত না থাকা। আর এগুলো এক ধরনের অহংকার বটে। এই কারণে আল্লাহ তাঁর বান্দার ওপর চরম অসন্তুষ্ট হন। আপনার যেকোনো পাপ আপনি এবং আল্লাহর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত। সেটা কখনোই কারো কাছে প্রকাশ করা উচিত নয়। অন্যথায়, আল্লাহ পাপকারীকে কক্ষনোই ক্ষমা করবেন না।

হারাম রিলেশনের মতো যেকোনো পাপে লিপ্ত থেকে সেই পাপকে প্রকাশ করা মানে, পাপকে পাপ তথা হারামকে হারাম মনে না করার শামিল যা ঈমান ভঙ্গের কারণ। ফলে পাপের প্রকাশ একজন মুসলিমের আসল সম্পদ ঈমানকে চরম হুমকির মুখে ফেলছে বলাই বাহুল্য। অতএব যে ঈমানের ওপর জান্নাত জাহান্নামের ফায়সালা হবে আমরা যদি সে ঈমান হারাতে না চাই তবে যেন আমরা কোনোভাবেই এ বিষয়ে উদাসীন না থাকি।

[২]

আচ্ছা, ভাই আমার! আপনি কি চাইবেন, আপনার বোনের সাথে কোনো ছেলে বিবাহ না করে রিলেশন করে তার সাথে ঘুরাফেরা করুক, তার ইনবক্সে মেসেজ আদান প্রদান করুক, তাকে নিয়ে এটা-সেটা কল্পনা করুক?
নিশ্চয়ই তেমনটা চাইবেন না। কারণ তেমনটা চাওয়ার মতো আপনার আত্মসম্মানবোধ এতোটা সস্তা নয়। যদি তা-ই হয় তবে ভাবুন তো, আপনি যার সাথে রিলেশন করছেন সে তো কারো না কারো বোন -তাই না?
এখন আপনি আপনার নিজের বোনের বেলায় যদি অন্যের অবৈধ রিলেশনশিপ কামনা না করেন তাহলে আপনি কেন অন্যের বোনের বেলায় একই ধরনের রিলেশন করবেন?

আপনার বোনের সাথে অন্যের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের বিষয় যদি আপনার কাছে নোংরা মনে হয় তবে অন্যের বোনের সাথে আপনার একই সম্পর্ক কেন নোংরা মনে হবে না? একইভাবে, আপনার বোনের সাথে যদি অন্য কোনো ছেলে বিবাহ ব্যতীত রিলেশন করে আল্লাহর অবাধ্য আচরণ করে তাহলে আপনি নিজেই কি অন্যের বোনের সাথে রিলেশন করে আল্লাহর অবাধ্য হচ্ছেন না?
আপনার বিবেককে এইসব প্রশ্নের মুখোমুখি করে দেখুন না, আপনার সুস্থ বিবেক তখন কী বলে?

হে ভাই আমার! একটিবার ভাবুন তো, যে মেয়ে আল্লাহর নিষেধ ভঙ্গ করে আপনার সাথে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক করার মতো যিনার কাজ করতে পারে তার জন্য কি বিয়ের পর অন্য এক ছেলের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা তথা পরকীয়ায় লিপ্ত হওয়া খুব স্বাভাবিক একটি বিষয় নয়? আল্লাহর প্রতি তার এমন অবাধ্য আচরণ কি এটার ইঙ্গিত দেয় না যে, সে যেখানে অনায়েসে আল্লাহর অবাধ্য হতে পারছে সেখানে আপনার সাথেও অবাধ্য আচরণ করে, আপনার হক নষ্ট করে আপনার চক্ষুশীতলের পরিবর্তে চক্ষুশূলের কারণ হতে পারে?

সে আপনার মতো নন-মাহরাম ছেলের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে বুঝিয়ে দিলো যে, সে তার আসল সম্মান, আত্মসম্মানকে সম্মান করতে জানে না, সে তার আত্নমর্যাদাবোধকে ঝুড়ির একেবারে তলানিতে রেখেছে। যার আত্মসম্মানবোধের এত করুণ অবস্থা সে আবার আপনাকে কী সম্মান দেবে?
যদি তার আত্মসম্মানবোধ অন্তত মাঝারি লেভেলেরও হতো তবুও সে আপনার মতো পরপুরুষের সাথে বিয়ে ছাড়া সম্পর্ক স্থাপন করতে পারতো না। তার এমন বিষয় কি আপনাকে বিয়ের পূর্বের রিলেশনশিপ নিয়ে ভাবিয়ে তুলছে না?

[৩]

হে বোন আমার! যে ছেলে তার রবের অবাধ্য হয়ে আপনার সাথে রিলেশন করছে, পার্কে কিংবা যেকোনো স্থানে অবাধে আপনার হাতে হাত রেখে ঘুরে বেড়াচ্ছে সেই ছেলে আপনাকে কী বার্তা দিচ্ছে, জানেন?
সে আপনাকে নীরবে বার্তা দিচ্ছে, সে তার রব যিনি তাকে সৃষ্টি না করলে তার কোনো অস্তিত্ব-ই থাকতো না সেই রবের হক যেখানে অনায়েসে নষ্ট করতে পারছে সে একসময় আপনার সাথে বিভিন্ন ধরনের ছলনা করে, ধোঁকা দিয়ে এমনকি পরকীয়া করে আপনারও হক নষ্ট করতে পারে। কেবল সময়ের অপেক্ষা। এটা তার জন্য খুবই সিম্পল বিষয়। এই একটি বিষয় যদি আপনি বুঝতে সক্ষম হন তাহলে আপনি আল্লাহর নিষেধ লঙ্ঘন করে বিবাহ বহির্ভূত অবৈধ সম্পর্ক কন্টিনিউ করতে পারবেন না। অবশ্যই তখন আপনার বুঁক কাপবে। বিষয়টি আপনার ভাবনার জগতে নাঁড়া দিবে।

একটি বিষয় গভীরভাবে চিন্তা করুন তো, যার জন্য রবের হক নষ্ট করা অস্বাভাবিক নয় তার জন্য আপনি রবের সামান্য সৃষ্টির হক নষ্ট করা কি এক্কেবারে স্বাভাবিক একটি বিষয় নয়?
আপনার বিবেক নিশ্চয়ই এই সামান্য বিষয় বিচার করতে অক্ষম নয়। এই চিন্তাই আপনাকে যিনার মতো আসমান যমীন কাপাঁনো কবিরা গোনাহ থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য যথেষ্ট।

আচ্ছা, বোন! আপনি কল্পনা করুন তো, আপনার কোনো বোনের সাথে যদি কোনো ছেলে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক করে তার পাশে বসে আড্ডা দেয়, তার হাত ধরে প্রেমের বুলি শুনায় তখন কি আপনার সেই দৃশ্যপট দেখে যেতে ভালো লাগবে? তাদের সেই সম্পর্ককে কি আপনি মন থেকে সার্পোট দিতে পারবেন?

আমি জানি, আপনি তা সাপোর্ট করবেন না। কারণ আপনার আত্মসম্মানবোধ নিশ্চয়ই এতোটা টুনকো নয় যে, আপনার বোনের সাথে কোনো পরপুরুষের অবৈধ মেলামেশাকে আপনি মেনে নিবেন। এখন আপনার বোনের বেলায় যদি আপনার কাছে ঐ বিষয়টি জঘন্য মনে হয়, আপনার আত্নমর্যাদায় আঘাত লাগে তবে আপনি নিজের বেলায় যখন অন্য এক ছেলের সাথে রিলেশন করছেন, হাতে হাত রেখে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, অনলাইনে চ্যাটিং করছেন, দিন-রাত ফোনে কথা বলছেন তখন কি আপনার কাছে বিষয়টি জঘন্য মনে হয় না?
তখন কি আপনার আত্মসম্মানবোধে আঘাত লাগে না?

আপনি নারী, আপনাকে ইসলাম সম্ভ্রান্ত মনে করে বলেই তো পর্দার মধ্যে থাকতে বলেছে। আপনার বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ উভয় পর্দায়ই বলে দিবে আপনি কতোটা স্মার্ট, কতোটা সম্ভ্রান্ত কিংবা আপনার আত্নমর্যাদাবোধ কতোটা গভীর। সেই জায়গায় আপনি আপনার সম্মানকে বিসর্জন দিয়ে অন্যে একটা ছেলের সাথে সম্পর্ক করে যাচ্ছেন, অনলাইনে দিন-রাত চ্যাটিং করে যাচ্ছেন, ফোনে রোমান্টিক কথা বলছেন কিংবা জাস্ট ফ্রেন্ডের দোহাই দিয়ে ফ্রি মিক্সিং করছেন -ব্যাপারটি আপনার আত্মসম্মানবোধকে কতোটা জঘন্যভাবে ফুটিয়ে তুলছে তা কি আপনি উপলব্ধি করতে পারছেন, বোন আমার?

হে আমার বোন! আপনি হয়তো আপনার বয়ফ্রেন্ডের সুমিষ্ট কথায় ভাবছেন বিয়ের পর আপনি তার কাছে অনেক শান্তিতে থাকবেন। সে আপনাকে তার রাণীর আসনে বসিয়ে রাখবে। কষ্ট কী, সে আপনাকে বুঝতেই দেবে না। নাহ বোন, এরকমটা ভেবে থাকলে আপনি ধোঁকার মধ্যে আছেন, বড়ো এক ধোঁকার মধ্যে আছেন। বাস্তবতা বড়ো কঠিন। আপনার বয়ফ্রেন্ড আজ পরিবারের বিভিন্ন দায়িত্ব থেকে মুক্ত বলেই সে আপনার সাথে চটাংচটাং কথা বলতে পারছে। যখন সে পরিবারের হাল ধরবে, যখন তার কাঁধে পরিবারের মূল দায়িত্ব এসে পড়বে তখনই কেবল তার আসল চেহারা উন্মোচিত হবে, তার আগে নয়।

বিয়ের আগে রিলেশনশিপ করার মতো আল্লাহর নাফরমানীর কাজ করে আপনি মূলত আপনার বিয়ের পরের শান্তি নষ্ট করছেন। সেজন্য বোন আমার! আপনি বিয়ের পূর্বে রিলেশনশিপ করে যিনার মতো মারাত্মক কবিরা গোনাহে নিজেকে লিপ্ত রাখবেন না, যে গোনাহের শাস্তি হিসেবে হয়ত আপনার পুরো দাম্পত্য জীবন কন্ঠকময় হয়ে উঠতে পারে। আর তার চেয়ে বড়ো দুখী আর কে হতে পারে যার দাম্পত্য জীবন অশান্তিতে ভরপুর?
মনে রাখবেন, যে রব শান্তির মালিক সেই রবের নাফরমানী করে, সেই রবকে অসন্তুষ্ট রেখে কখনো শান্তির আশা করা যায় না। শান্তি পেতে হলে রবের অনুগত থাকতে হবে। রবের আনুগত্যের মধ্যেই সকল শান্তি নিহিত।

আপনার বয়ফ্রেন্ডের মিষ্টি মিষ্টি কথায় যদি আপনি এটা মনে করে থাকেন যে, তাকে বিয়ে করলে আপনি সুখী হবেন তাহলে আপনি আগে আপনার আশেপাশে থাকা সেইসব মানুষদের খোঁজ খবর নিয়ে দেখুন যারা তাদের বিয়ের পূর্বে একে অপরের সাথে রিলেশনশিপের মতো যিনার কাজে লিপ্ত ছিল।
তখন দেখতে পারবেন যে, বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া এমন মানুষদের সিংহভাগই অশান্তিতে দিন কাটাচ্ছেন। অশান্তি যেন তাদের পিছুই ছাড়ছে না। প্রতিনিয়ত পারিবারিক কলহ লেগেই আছে। তারা বিয়ের পূর্বে পরস্পরকে নিয়ে যে রঙ্গিন স্বপ্ন দেখত সেই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেছে।সে স্বপ্নের বাস্তবতার আর দেখা মিলেনি।

কাজেই বিয়ের উপযুক্ত হলে সরাসরি বিয়ে করুন। এ ব্যাপারে পরিবার অনুকূলে না থাকলে তাদেরকে যতো ভাবে বোঝানো সম্ভব বিনম্রতার সাথে বোঝাতে থাকুন। কিন্তু তবুও বিবাহ বহির্ভূত কোনো রিলেশনশিপে অর্থাৎ যিনার কাজে জড়াবেন না। নতুবা জীবনের কোনো এক সময় এর বড়ো মাশুল দিতে হতে পারে।
তখন টপটপ করে চোখের পানি ফেলা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না। তখন একদিকে যেমন বিয়ের পূর্বে আল্লাহর নাফরমানী করে অবৈধ সম্পর্ক করার অনুতাপ কাজ করবে তেমনি অন্যদিকে কঠিন বাস্তবতার অশান্তি কাজ করবে যা হৃদয়কে ক্ষত বিক্ষত করে দেবে। এ যন্ত্রণা কাউকে বলারও থাকবে না। কেবল যে রবকে বলার থাকবে সে রবের অনুগত হয়ে চলার মাধ্যমে তাঁর সাথেই ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলুন।

[৪]

মানুষ হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের জীবনে একজন পার্টনারের প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করা যায় না। আমাদের একাকীত্ব দূর করার জন্য, চরিত্র হেফাজত করার জন্য পাশে একজন সঙ্গী কামনা করা স্বাভাবিক। সেই হিসেবে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি সম্পর্ক স্থাপনের জন্য আপনার মন ছটফট করবেই। কিন্তু আপনি এমন একজনের সাথে সম্পর্ক করুন যার ভেতর আল্লাহর ভয় তথা তাকওয়া রয়েছে।
আর সে সম্পর্ক বিবাহ বহির্ভূত কোনো সম্পর্ক নয়। বিবাহ করেই হালাল সম্পর্ক করুন। তবেই আপনার ওপর আপনার রব সন্তুষ্ট হবেন। আর যার উপর তার রব সন্তুষ্ট তার আর কোনো কিছু নিয়ে চিন্তা থাকতে পারে না। কারণ রবই তার আসল সাহায্যকারী।

তাকওয়াবান কাউকে বিয়ে করলে আপনার আর চিন্তা থাকবে না। কেননা যে তার রবের অবাধ্য হয় না সে আপনারও অবাধ্য হবে না। সে তার রবের হুকুম মানতে গিয়েই আপনার সকল হক পালনে সচেষ্ট থাকবে, আপনার অসন্তুষ্টির ব্যাপার খেয়াল করে চলবে। আপনার সকল বিষয়েই তার সচেতনতা থাকবে।
সে আপনার সাথে কোনো ছলনা করবে না। কারণ সে জানে আপনার কাছে পার পেয়ে গেলেও তার রবের কাছ থেকে সে কোনোভাবেই পার পাবে না। আর রবের নিকট জবাবদিহিতার ভয়-ই তাকে সবসময় সঠিক পথে চলতে সাহায্য করবে।

পক্ষান্তরে, যে ব্যক্তি যিনা করার মতো রবের এক্সট্রিম অবাধ্য হতে পারে তার জন্য আপনার অবাধ্য হওয়া কোনো ব্যাপার-ই না। সে অনায়াসেই আপনাকে চমকে দেওয়ার মতো যখন তখন যেকোনো জঘন্য কাজ করে বসতে পারে। কারণ তার মধ্যে তার রবের কোনো ভয়ই কাজ করে না। আর রবের ভয় না থাকার বিষয়টি তাকে বেপরোয়া করে তুলবে। আর এমন সঙ্গীই আপনার সুন্দর জীবনকে তুলোধুনো করার জন্য যথেষ্ট।
সে এক অন্যরকম মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। তখন কষ্টকে নতুন রূপে চেনা হবে। তখন দুনিয়াটাই আপনার জন্য এক টুকরো জাহান্নামে পরিণত হয়ে যাবে যা কখনোই কাম্য নয়।

[৫]

যে বড়ো ভাই তাঁর ভাই-বোনের, যে মা-বাবা তাঁর সন্তানের হারাম রিলেশনশিপে বাধা দেয় না, দেখেও না দেখার ভান করে, এগুলো নাকি যমানার চল -এসব বলে মেনে নেয় এমনকি হারাম রিলেশনে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে থাকে তাদেরকে কঠিন থেকে কঠিনতর হুঁশিয়ারি দিয়ে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, তিন ধরণের ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তা’য়ালা জান্নাত হারাম করেছেন। তন্মধ্যে এক ধরণের ব্যক্তি হচ্ছে, দাইয়্যূস
[মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং : ৫৮৩৯]

যে ব্যক্তি তার স্ত্রীকে এবং পরিবারের অন্য সদস্যদেরকে অশ্লীল কাজ, বেপর্দায়ী চলার, যিনার সুযোগ করে দেয় সর্বোপরি সকল শরীয়াহ বিরোধী কাজকে মেনে নেয় তাকে দাইয়্যূস বলা হয়। এমনকি যদি এসব কার্যকলাপ সে মনে মনেও মেনে নেয় অর্থাৎ তাতে মৌন সম্মতি থাকে তবুও সে দাইয়্যূসের অন্তর্ভুক্ত হবে।

এবার একটু চিন্তা করুন তো, এত এত নেক আমল করে কী লাভ হবে যদি আপনাকে শেষ পর্যন্ত দাইয়্যূস হয়ে জাহান্নামে যেতে হয়, আল্লাহর ভয়াবহ আযাবের মুখোমুখি হতে হয়। তার চেয়ে বড়ো দূর্ভাগা ঈমানদার আর কে হতে পারে যে নিজে নেক আমল করে ঠিকই কিন্তু পরিবারের কোনো সদস্যের বেনামাজী, বেপর্দায়ী চলাফেরায় সে ঐভাবে কিছু বলে না, ফ্রি-মিক্সিং এ তার গায়রতে লাগে না, বিয়েশাদিতে গায়ে হলুদ, গান বাজনার মতো যত বেহায়াপনা কার্যকলাপ রয়েছে সেগুলোতে সে নীরব দর্শকের ভূমিকায় থাকে।

মোটকথা, সে নিজে আমলদার হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহর নাফরমানীর কাজে পরিবারের সদস্যদের জোরালো বাধা দেয় না বরং নীরবে সমর্থন দিয়ে যায়। আর এই বাধা না দেওয়াটাই তাকে দাইয়্যূসের ভূমিকায় নিয়ে জাহান্নামের উপযোগী করে তুলছে। অথচ সে কিনা বেখবর।

হে সম্মানিত অভিভাবকরা! সময় থাকতে আপনারা সচেতন হোন, প্লিজ। হারাম রিলেশনশিপের মতো আল্লাহর আরও যত অবাধ্যতার কাজ রয়েছে সেগুলোতে কোনোভাবেই কাউকে প্রশ্রয় দিবেন না। বিশেষ করে নিজের অধীনস্থদের আল্লাহর অবাধ্য হওয়ার মতো জঘন্য কাজ থেকে সবসময় ফিরিয়ে রাখুন। এসব ব্যাপারে উদাসীন থাকলে চলবে না। নতুবা কিয়ামতের কঠিন দিবসে এর অনেক বড়ো মাশুল দিতে হবে।

সেদিন যেন আপনাকে অনুতপ্ত হয়ে মাথা নিচু করে বলতে না হয় যে, হায় আফসোস! আমি যদি আগে ‘দাইয়্যূস’ এর ব্যাপার নিয়ে সচেতন থাকতাম তাহলে আমার নেক আমল থাকা সত্ত্বেও আজ আমি জান্নাত হারা হতাম না, আজ আমি হতাম না কাঙ্ক্ষিত পুরস্কার থেকে বঞ্চিত।

একইসাথে, প্রিয় ভাই ও বোন আমার, আপনারাও হারাম কাজে লিপ্ত থেকে আপনাদের প্রিয় বাবা যিঁনি নিজে খেয়ে না খেয়ে কষ্ট করে আপনাকে ছোট থেকে বড়ো করে তুলেছেন জেনেশুনে সেই তাঁকে দাইয়্যূস বানিয়ে জান্নাত হারা করবেন না,জাহান্নামের দিকে ঠেলে দিবেন না। ‘বাবা তোমাকে ভালোবাসি’ এ কথা মুখে বললেই বাবাকে ভালোবাসা হয়ে যায় না।

প্রকৃতপক্ষে, আপনার বাবাকে তখনই ভালোবাসা হবে যখন আপনি তাঁকে আপনার নাফরমানির কারণে ‘দাইয়্যূস’ হওয়া থেকে বাঁচিয়ে রাখবেন।

হে প্রিয় ভাই ও বোন আমার, যারা হারাম রিলেশনশিপে যুক্ত আছেন তারা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য, উত্তম প্রতিদান পাওয়ার আশায় আজ এখনই হিম্মত করে ফেলুন যে, আমি আর হারাম রিলেশনশিপ কন্টিনিউ করবো না, আমি আর কোনোদিন হারাম সম্পর্কে জড়াবো না। দেখবেন আল্লাহ তা’য়ালা আপনার অন্তরে তাৎক্ষণিক পুরস্কার হিসেবে শান্তি ঢেলে দিবেন। যদিও শয়তান আপনাকে বিভিন্নভাবে ফুসলাবে তবুও আপনাকে হারাম রিলেশনশিপ ছেড়ে তাকে পরাজিত করতেই হবে।
শয়তানকে আপনি কেন জিততে দিবেন?

লিখেছেন

Picture of রাকিব আলী

রাকিব আলী

পরকালীন তথা স্থায়ী জীবনের লক্ষ্যে নিজেকে প্রস্তুত করার চেষ্টা করছি। নিজে হেদায়েতের ওপর অটল থাকার পাশাপাশি অন্যেদেরকেও হেদায়েতের দিকে আহবান করা তথা পথ হারাদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনাই আমার লেখালেখির মূল উদ্দেশ্য।

All Posts

পরকালীন তথা স্থায়ী জীবনের লক্ষ্যে নিজেকে প্রস্তুত করার চেষ্টা করছি। নিজে হেদায়েতের ওপর অটল থাকার পাশাপাশি অন্যেদেরকেও হেদায়েতের দিকে আহবান করা তথা পথ হারাদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনাই আমার লেখালেখির মূল উদ্দেশ্য।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture