হৃদয়ের সচ্ছলতা

কোন এক স্থানে একজন ব্যক্তি ছিল। সে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে সাগরের ধারে চলে যেতো এবং সেখানে বসে মাছ ধরতো। প্রত্যহ সে দুটো মাছ নিয়ে বাড়ি ফিরে আসতো। একটি মাছ পরিবারের জন্য রাখা হতো, অন্যটি বাজারে বিক্রি করে সেই অর্থ পরিবারের কাজে ব্যয় করার জন্য রাখা হতো।

তার একজন বন্ধু তাকে জিজ্ঞেস করলো, কেন তুমি নিজেকে এই দু’টো মাছ ধরার মাঝেই নিয়োজিত রাখছো? কেন আরও বেশি, চারটি, ছয়টি বা আটটি- এমন করে ধরছো না?

তিনি উত্তর দিলেন, তারপর কি হবে? বন্ধু এবার আগ্রহের সাথে তাকে বুঝাতে শুরু করলো। বললো, তুমি তাহলে আরো কিছুটা স্বচ্ছল হতে পারবে।
জেলে জানতে চাইলেন, এরপর? বন্ধু বললেন, হয়তো এরপর তুমি তোমার সাথে মাছ ধরার জন্য অন্য একজন জেলে নিয়োগ করতে পারবে।

আবারও তিনি প্রশ্ন করলেন, তারপর কি হবে?
বন্ধু জানালেন, তখন তুমি অর্থ জমিয়ে একটি নৌকা ক্রয় করে আগের চাইতেও অনেক বেশি মাছ ধরার জন্য ব্যবহার করতে পারবে।

তিনি বললেন, আচ্ছা! এরপর কি হবে?
বন্ধু সহাস্যে বললেন, এরপর তুমি অনেকগুলো নৌকার মালিক হবে। বুঝতে পারছো কতটা স্বচ্ছল হয়ে যাবে তুমি!

জেলের ভাবলেশহীন ভাবে বললেন, ও তাই! তা এরপর কি হবে শুনি?
বন্ধুটি বললেন, এরপর তুমি শহরে মাছ কেনাবেচার দোকান দিতে পারবে।
এবারও কোন অভিব্যক্তি না দেখিয়ে জেলে জিজ্ঞেস করলেন, তা এরপর কি হবে?
বন্ধু জবাব দিলেন- তুমি দোকান সম্প্রসারিত করবে ও বিভিন্ন শাখা খুলবে।

আবারও জেলে জিজ্ঞেস করলেন, এরপর হবে টা কি শুনি? বন্ধু বললেন, তুমি তখন মাল্টিমিলিওনিয়ার হয়ে যাবে।

জেলের এবার প্রশ্ন, তাতে কি হবে?
এবার বন্ধুটি বললেন, এর মাধ্যমে তুমি তোমার মানসিক প্রশান্তি লাভ করবে।

স্মিত হেসে জেলে বললেন, প্রিয় বন্ধু হে! ইতোমধ্যেই আমার মাঝে সে প্রশান্তি আছে।

লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ!

তোমার কেন আমাকে পুরো দুনিয়া ঘুরিয়ে এমন একটি গন্তব্যে নিয়ে যেতে হবে আমি যেখানে ইতোমধ্যে রয়েছি ই! আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছেন, তা নিয়েই আমি সন্তুষ্ট আছি। আমার তো আর প্রয়োজন নেই।

এ ঘটনার সারনির্যাস, যা এরচাইতেও চমৎকার ভাবে প্রিয় নবী মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যাখ্যা করেছেন একটি হাদীসেঃ

হযরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

لَيْسَ الْغِنَى عَنْ كَثْرَةِ الْعَرَضِ وَلَكِنَّ الْغِنَى غِنَى النَّفْسِ.
সম্পদের প্রাচুর্য সচ্ছলতা নয়, বরং সচ্ছলতা তো হল হৃদয়ের সচ্ছলতা।
-সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৪৪৬, সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০৫১

প্রিয় ভাই! জীবনের এই চলতি পথে আমরা মুসাফির ব্যতীত কিছু নই। এ দুনিয়া আমাদের জন্য বড়োই তুচ্ছ। এই ক্ষণিকের সময়টুকু কাটাবার জন্যে ঠিক কতোটা অতিরিক্ত সম্পদ আমাদের প্রয়োজন?
ভেবে দেখুন তো।

মুসাফিরের এ জীবনে এত বিশাল বোঝা যে কাঁধে চাপাচ্ছি, এর সঠিক সওয়াল জওয়াব করতে পারবো তো সেই কঠিন বিচারের আদালতে?
বোঝা যত হালকা হবে, হিসেব ততো সহজ হবে। যতো হালকা, তত দ্রুত মুক্তি!

তাই আল্লাহর কাছে চলুন দুয়া করি, হে আল্লাহ! আপনি আমার উপর সন্তুষ্ট থাকুন। আমার অন্তরকেও আপনি যা দিয়েছেন, তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকার তাওফিক দিন।

আমীন।

উস্তাদ আলী হাম্মুদা’র “Be a person of contentment” লেকচার ক্লিপ থেকে।

লিখেছেন

সাবিহা সাবা

আল্লাহর কাছে জবাবদিহির ভার লঘু করতে কিছুটা লিখালিখির চেষ্টা করি। এক্ষেত্রে অনুবাদ সাহিত্য বিশেষ পছন্দ।
আকাশে পরিচিত হতে চাই💙
জমিনে না হয় অপরিচিত ই থাকলাম...

All Posts

আল্লাহর কাছে জবাবদিহির ভার লঘু করতে কিছুটা লিখালিখির চেষ্টা করি। এক্ষেত্রে অনুবাদ সাহিত্য বিশেষ পছন্দ।
আকাশে পরিচিত হতে চাই💙
জমিনে না হয় অপরিচিত ই থাকলাম…

Exit mobile version