Zuma's khutba

হারাম থেকে ও চোখ কানকে জেনা থেকে মুক্ত রাখে না তাদের জন্য আল্লাহ হুশিয়ারী

জুমার খুতবা-১৪
১১/০৯/২০২০
ডঃ মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন
খতিব, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

وَادْعُوْهُ خَوْفًا وَّطَمَعًا‌ ؕ اِنَّ رَحْمَتَ اللّٰهِ قَرِيْبٌ مِّنَ الْمُحْسِنِيْنَ
তাঁহাকে ভয় ও আশার সঙ্গে ডাকিবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ সৎকর্ম পরায়ণদের নিকটবর্তী।
সূরা আল-আরাফ-৫৬।

সম্মানিত হাজেরিন,

সপ্তাহ শেষে আল্লাহ তায়ালার পবিত্র ঘরের বাসিন্দা হতে পেরে শুকরিয়া আদায় করছি। আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ তায়া’লা যখনই তলব করেন অনুগত গোলাম হিসেবে ইমানের সহিত ধরনা যেন দিতে পারি আল্লাহর কাছে সেই তৌফিক প্রার্থনা করছি। আজকে আল্লাহর কাছে বিনয় প্রকাশ সম্পর্কে আলোকপাত করতে চায়। কয়েকমাস ধরে আমরা তওবা, পরিপূর্ণ প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করছি। তওবার পরিপূর্ণতায় আল্লাহর ঘরে দান ও অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এই মসজিদের বক্সে দিচ্ছেন, দিবেন এটিও তওবার একটি অংশ। শুধু মৌখিক উচ্চারণকে আমরা তওবা মনে করি। পরিপূর্ণ প্রত্যাবর্তন, আপাদমস্তক একটি সংশোধনী, বাহ্যিক আভ্যন্তরীন একটি সুন্দর পরিবর্তনের নামই তওবা।

অপরাধ স্বীকার করা, অনুতপ্ত হওয়া, প্রতিশ্রুতি দেওয়া আর সুযোগ পেলাম কবরের বাসিন্দা হওয়ার আগে বড় বিনয়ের সাথে, আর সবচেয়ে বড় করুনা আল্লাহর আমার প্রতি এই কথা ভেবে, চোখের পানি ছেড়ে দেওয়া, আল্লাহর কাছে নিজেকে পরিপূর্ণভাবে পেশ করা। দুনিয়াতে অনেক সময় অসুস্থ হলে সুস্থতার আশ্বাস, বন্দী হলে মুক্তির আশ্বাস কিন্তু জাহান্নামের বাসিন্দা হলে কিসের আশ্বাস। আল্লাহর রাসুল সঃ বলেন, সকল যন্ত্রণার শেষ, সকল অভাবের সমাপ্তি, সকল পেরেশানির শেষ আছে কিন্তু জাহান্নামের পেরেশানি, এর শাস্তি, যন্ত্রণার কি শেষ আছে।

রাসুল সঃ উপদেশ দিচ্ছেন, নাম মাত্র তওবা তওবা বললাম, মসজিদে এসে চোখের পানি ছাড়লাম, আল্লাহর রাসুল সঃ বলেন বড় আশ্চর্যের বিষয় জাহান্নাম কবর আযাব এর এক সেকেন্ড তোমরা যদি দেখতে। হে যুবক তরুনেরা শুনো, আনন্দ উল্লাস ফুর্তির নামে, যত সম্পর্ক, যত চ্যানেল, যত অনুষ্ঠান সবকিছু তছনছ করে মাটির নিচে কবর দিতে। আর গোপনে অহরহ চোখের পানি ফেলতে, মানুষকে দেখানোর জন্য নয়, আল্লাহর কাছে বলতে আমার চেয়ে অপরাধী তো কেউ নেই। গোপনে স্বীকার করতে।

যারা আল্লাহর ভয়ে চোখের পানি ছাড়ে না, হারাম থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারে না, চোখ কানকে জেনা থেকে মুক্ত রাখে না তাদের জন্য আল্লাহ হুশিয়ারী দিচ্ছেন….

فَلْيَـضْحَكُوْا قَلِيْلاً وَّلْيَبْكُوْا كَثِيْرًا‌ ۚ جَزَآءًۢ بِمَا كَانُوْا يَكْسِبُوْنَ
অতএব তাহারা কিঞ্চিৎ হাসিয়া লউক, তাহারা প্রচুর কাঁদিবে, তাহাদের কৃতকর্মের ফলস্বরূপ।
সূরা তওবা-৮২

তবে সেই চোখের পানিতে কোন কল্যাণ নাই। তাই যুবকরা বুদ্ধিমানের কাজ হবে আল্লাহর ভয় নিয়ে এই দুনিয়ায় চোখের পানি ছাড়া। আর যদি না কর, কোটি বছরের আগুনের বাসিন্দা হবে, আগুনের জামা, আগুনের বিছানা, আগুন হতে বাঁচার কি কোন উপায় আছে। শতকারা ১০ জনে চোখের পানি ফেললেই কি ৯০ জনের অপরাধ ক্ষমা হয়ে যাবে? মুসিবত কি যাবে?
রাসুল সঃ বলেন, দুই ফোটা চোখের পানি অনেক দামী। বাংলাদেশ, মহাবিশ্ব সবকিছুর চেয়ে দামী। অক্সিজেন যদি সামান্য শর্ট পরে লাখ লাখ টাকার অক্সিজেন দিতে হয়। আহ! অগণিত অক্সিজেন গ্রহন করছি বিনা হিসাবে। পেটকে নফসের গোলাম, চোখকে নফসের গোলাম করে রেখেছি এই অপরাধ কি আল্লাহর ভয়ে ছাড়তে পারবো না?
চোখের পানি ছাড়বো না আল্লাহর ভয়ে। আল্লাহর জন্য যুদ্ধের ময়দানে এক ফোটা রক্ত কোটি সম্পদের চেয়ে দামী আল্লাহর কাছে। কেমনে শান্তির ঘুমে মগ্ন থাকে এই মহামারির মধ্যেও বড় বিস্ময়কর।

আর তওবার সর্বোত্তম সময় শেষ রাতে। খুব আরাম বিছানা, এক ফুট নিচে চলে যায়, এসির বাতাস, এমন নরম বিছানা যে দুনিয়ার খবর নাই, আর কতক্ষণ, আর কতক্ষণ চলবে বিলাসিতা। আল্লাহর রাসুল সঃ বলেন, ও আমার মুসলমান নর নারীগণ, ইমানদার দাবী কর, মৃত্যু বিশ্বাস করো, কবর বিশ্বাস কর, প্রস্তুতি কি নিবে না?
চোখের পানি কি ছাড়বে না?

অনেকে বলে আমার চোখের পানি আসে না। আল্লাহর রাসুল চিকিৎসা দিচ্ছেন, শেষরাতে হাউমাউ করে কান্নার অভিনয় কর একা একা জাহান্নামের ভয়ে, কাউকে না দেখিয়ে।

আবার অনেকে বলে আমার কলবে সীল পরে গেছে, মন নরম হয় না, তাদের জন্য রাসুল সঃ বলছেন, ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলাও, মিসকীনদের খবর নাও। কিন্তু আমি এমন, বড়লোকে সালাম দিলে উত্তর দিই ড্রাইভার আর গরিব কেউ সালাম দিলে সালামের জওয়াবও দিতে চায় না। লাইন ধরে ক্যামেরায় দেখিয়ে নয়, গোপনে না খেয়ে আছে এরকম লোকদের খবর নাও। গোপনে খবর নিয়ে ঘরে খাবার পৌঁছে দাও। দানবীর, দান গ্রহন করতে গিয়ে অনেকে মারা যায়, বড়ই চাকচিক্য দানের সুনাম, শয়তান চাকচিক্যময় করে দিয়েছে।

কান্নার ভান করো, হাউমাউ করো। আগুনের সান্নিধ্যে গেলে কি চোখের পানি বন্ধ হবে। ঝটপটানি বন্ধ হবে? কেন ফজরের নামাজ কঠিন, শেষরাতে উঠা কঠিন। দেখানোর ভাব ছাড়া মনকে নরম করে যারা চোখের পানি ঝরায় তাদের কাতারে শামিল হই। যেখানে মন নরম করার কথা হয় আল্লাহর ভয়ে সেখানে একটু বসি। বড়ই সৌভাগ্যবান! আল্লাহর রহমত স্বীকার করে, এখনোও কবরের বাসিন্দা করো নি, এতকিছু দিয়েছো, এত অপরাধ করলাম, চোখের জেনা করলাম তারপরও তো করোনায় আক্রান্ত করোনি, তুমি এত বড় দয়াবান! একাকী বসে আল্লাহকে স্মরণ করে চোখের পানি ছাড়ে। আল্লাহর রসুল বলেন, যারা একাকী আল্লাহর কথা স্মরণ করে, অপরাধ স্বীকার করে চোখের পানি ছেড়ে দেয় তারা হলো আল্লাহর অলি। আরশের নীচে ছায়া পাবে।

এরা জিন্দেগীর মোর পরিবর্তন করে, নিজেকে অপরাধী মনে করে, জুলুম করেছি বলে স্বীকার করে, “ইন্নি কুন্তু মিনাজ জোয়ালিমিন”। ইউনুস আঃ পয়গম্বর সগীরা গুনাহ পর্যন্ত নেই তিনি মাছের পেটের ভিতর দীর্ঘদিন থাকার পরও বলছেন, আল্লাহর কাছে নতজানু হয়ে, আল্লাহ আমি বড় জালিম, নিজের উপর জুলুম করেছি। আমরা করেছি কখনও, এত চোখের জেনা করি, পাঁচ টাকা হারাম আমার পকেটে নিয়েছি বলেছি কি আমি জালিম?

অপরাধ স্বীকার না করে শুধু গালে গালে থাপ্পড় খেলে হবে না, চোখের পানি ফেললে হবে না। স্বীকার করতে হবে অপরাধ, আমি ডাকাত, আমি অন্যের হক খেয়েছি, সুদের কারবার করেছি, ষোল কোটি মানুষের হক পকেটে নিয়েছি। অতঃপর শপথ করবে আমি আর যাব না, আর করবো না, পরের হক আদায় করবো। এভাবে যারা এগিয়ে আসবে তাদের ক্ষমা করে আল্লাহ নিকটবর্তী করে নিবে। আল্লাহ বলছেন….

اِنَّ رَحْمَتَ اللّٰهِ قَرِيْبٌ مِّنَ الْمُحْسِنِيْنَ
নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ সৎকর্ম পরায়ণদের নিকটবর্তী।
সূরা আল-আরাফ-৫৬

আল্লাহর রাসুল সঃ বলছেন, মুসাফিরের কাপড় চোপড় টাকা পয়সা সব কিছু মরুভুমিতে হারিয়ে যাওয়ার পর নিঃস হয়ে আবার সবকিছু ফিরে পাওয়া যেরকম আনন্দের আল্লাহর কাছে বান্দার তওবা চাওয়া তার চেয়ে বেশী আনন্দের। তওবার একটা শর্ত হচ্ছে অত্যন্ত বিনয়ী হওয়া, বান্দা বিনয়ী হোক, চোখের পানি ছেড়ে দিক, অপরাধ স্বীকার করবে, আমি মালিক সে একনিষ্ট আমার গোলাম এ কথার প্রমাণ দিক। আল্লাহর কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই বিনয়ী আচরন। অপরাধ স্বীকার করা। নিজেরা হলো জাহেল, মনে করে সবকিছু জানে, মাঝে মধ্যে আমাদের শিখাতে আসে। নিজে জানে না এইটা সবচেয়ে বড় জাহিলিয়াত। যেইটা ২০ বছরে পড়ালেখা করে বুঝে না এক পৃষ্ঠা পরে যে জানে বলে দাবী করে এইটা বড় মুর্খতা নয় কি। জাহেল, বড় জাহেল। দুনিয়ায় সফল মনে করে, ধনসম্পদ নিয়ে ডুবে আছে, নিজেদের জ্ঞানী মনে করছে এই জাহান্নামবাসী, বড় বিচক্ষণ মনে করে নিজেদের আল্লাহ তুমি তাদের হেদায়েত দাও। ধোঁকা, প্রতারণা ছাড়া কিছুই নয়, কিসের বিল গেটস, ধনসম্পদ কিছুই না।

وَمَا الْحَيٰوةُ الدُّنْيَاۤ اِلَّا مَتَاعُ الْغُرُوْرِ
পার্থিব জীবন প্রতারণার সামগ্রী ব্যতীত কিছুই নয়।
সূরা হাদীদঃ ২০

আল্লাহ আমাদের সবাইকে বিনয়ী করুক, পরিপূর্ণ তওবাকারীদের মধ্যে শামিল করুক, আমীন।

বি.দ্রঃ খুতবার বাংলা বয়ান হতে সংকলিত। কেবল মাত্র খুতবার বাংলা বয়ান শুনার উপর ভিত্তি করে লিখার কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাদও পড়তে পারে, এছাড়া জ্ঞানের অভাবহেতু কুরআন হাদীসের সবগুলো দলিলও বলা হয়নি। প্রতিটা কথার দলিল রূপে পেশ করা সুললিত কন্ঠের কুরআন হাদীসের স্বাদ দিতে না পারায় ক্ষমাপ্রার্থী । আল্লাহ আমার ভুল ত্রুটি ক্ষমা করুক।

লিখেছেন

এত দুনিয়াবি কাজের ভীড়ে সামান্য প্রচেষ্টা ইসলামকে জানার আর এ সুবাদে মনের কথাকে ফুটিয়ে তুলার ক্ষুদ্র চেষ্টা শুধুমাত্র মহান রবের ক্ষমা লাভের আশায়। আহবান থাকবে…
আপনার মোনাজাতে যেন এই অদমের ক্ষমার আরজি উঠে ক্ষমাশীল রবের কাছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture