হারাম মাস কয়টি এবং কী কী?
এগুলোকে কেন হারাম মাস বলা হয়?
আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِندَ اللَّهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِي كِتَابِ اللَّهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ۚ ذَٰلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ ۚ فَلَا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنفُسَكُمْۚ
"প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা ১২টি। যা আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী সেই দিন থেকে চালু আছে যে দিন তিনি আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন। এর মধ্যে চারটি মাস মর্যাদাপূর্ণ। এটাই দ্বীন (এর) সহজ সরল (দাবী)। অত:এব তোমরা নিজেদের উপর জুলুম করো না (পাপাচার করো না)।”1
উল্লেখ্য যে, ইবনে যায়েদ রহ. বলেন, الظلم العمل بمعاصي الله، والترك لطاعته “(এই আয়াতে) জুলুম দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, পাপকর্ম এবং আল্লাহর আনুগত্য হীনতা।”2
হাদিস অনুযায়ী উল্লেখিত চারটি মাস হলো:
- জিলকদ
- জিলহজ
- মহররম
- রজব।
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
السَّنةُ اثنا عَشَرَ شَهرًا، منها أربعةٌ حُرُمٌ، ثلاثٌ متوالياتٌ: ذو القَعْدةِ، وذو الحِجَّةِ، والمحَرَّمُ، ورَجَبُ مُضَرَ الذي بين جُمادى وشَعبانَ
“বারো মাসে বছর। তার মধ্যে চারটি মাস হারাম (নিষিদ্ধ বা সম্মানিত) মাস। তিনটি ধারাবাহিক: জিলকদ, জিলহজ, মুহররম। আর চতুর্থটি হল, মুজার সম্প্রদায়ের রজব মাস, যা জুমাদাল উখরা ও শাবান মাসের মাঝখানে রয়েছে।”3
চারটি মাসকে নিষিদ্ধ মাস বলা হয় কেন?
বিশিষ্ট তাবেয়ী এবং প্রসিদ্ধ মুফাসসির কাতাদা রাহ. পূর্বোল্লিখিত সূরা তওবার ৩০ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন,
إن الظلم في الأشهر الحرم أعظم خطيئة ووزراً من الظلم في سواها، وإن كان الظلم على كل حال عظيماً، ولكن الله يعظم في أمره ما يشاء. انتهى.
“হারাম মাস সমূহে জুলুম (পাপাচারিতা) অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশি যদিও সর্বাবস্থায় তা অন্যায়। কিন্তু আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে অধিক মর্যাদাবান করে থাকেন।” [তাফসিরে ইবনে কাসির, তাফসিরে তবারি ইত্যাদি]
ইমাম ইবনে কাসির রহ. বলেন,
{ فَلَا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنفُسَكُمْ ۚ } أي في هذه الأشهر المحرمة، لأنها آكد، وأبلغ في الإثم من غيرها، كما أن المعاصي في البلد الحرام تضاعف، لقوله تعالى: { وَمَن يُرِدْ فِيهِ بِإِلْحَادٍ بِظُلْمٍ نُّذِقْهُ مِنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ
“আল্লাহর বাণী: فَلَا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنفُسَكُمْ “অত:এব তোমরা নিজেদের উপর জুলুম করো না (পাপাচার করো না)।” (অর্থাৎ এই হারাম মাস সমূহে)। কেননা তা অন্য সময়ের পাপাচারের তুলনায় এ মাসগুলোতে পাপাচার করা অধিক গুরুতর ও কঠিন। যেমন হারাম শহরে পাপাচার করার গুনাহ বেশি। وَمَن يُرِدْ فِيهِ بِإِلْحَادٍ بِظُلْمٍ نُّذِقْهُ مِنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ “যে হারামে অন্যায়ভাবে কোন ধর্মদ্রোহী কাজ করার ইচ্ছা করে, আমি তাদেরকে যন্ত্রানাদায়ক শাস্তি আস্বাদন করাব।”4
[তাফসিরে ইবনে কাসির]
তাফসিরে বিন সাদি-এর লেখক আল্লামা শাইখ আব্দুর রহমান বিন সাদি রাহ. বলেন,
وسميت حرما لزيادة حرمتها، وتحريم القتال فيه
“অধিক পবিত্রতা এবং যুদ্ধ নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে এ মাসগুলোকে হারাম নামে নামকরণ করা হয়েছে।”5
আবু বকর আল জাসসাস রহ. বলেন, এই চারটি মাসকে ‘হারাম’ বলার কারণ দুটি। যথা:
- এ মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ হারাম যা আরবের মুশরিকরাও মানত।
- অন্য মাসের তুলনায় এ মাসে গুনাহের পরিণতি বেশি ভয়াবহ এবং ইবাদতের প্রতিদান অনেক বড়।
প্রথমোক্ত বিধানটি সর্বসম্মতিক্রমে রহিত হয়ে গেছে। দ্বিতীয়টি আপন অবস্থায় বহাল আছে।6
আল-ওয়াহিদী “আল-বাসিত” [১০/৪০৯] গ্রন্থে বলেছেন,
معنى الحرم: أنه يعظم انتهاك المحارم فيها، بأشد مما يعظم في غيرها، وكانت العرب تعظمها، حتى لو لقي الرجل منهم قاتل أبيه: لم يُهِجْه
“হারাম অর্থ, এ মাসগুলোতে আল্লাহর হারামকে লঙ্ঘণ করার ভয়াবহতা বেশি অন্য মাসগুলোর তুলনায়। আরবরা এ মাসগুলোকে সম্মান করত। এমনকি কেউ তার পিতার খুনিকে সামনে পেলেও তার উপর আক্রমণ করত না।”
আমাদের কতর্ব্য হলো, সবসময় সর্বাবস্থায় বিশেষভাবে হিজরি জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব এই চারটি মাসকে সম্মান করা তথা এ মাসগুলোতে আল্লাহর নাফরমানি ও হারাম কার্যক্রম থেকে বিরত থাকা সর্বোচ্চ চেষ্টা করা। এটি অন্তরের তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতির পরিচয় বহন করে।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
ذَٰلِكَ وَمَن يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللَّهِ فَإِنَّهَا مِن تَقْوَى الْقُلُوبِ
“যে আল্লাহর নিদর্শনাবলিকে সম্মান করে এটা তার অন্তরের তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতির পরিচায়ক।”7
আল্লাহু আলাম।
- তাওবা : ৩৬ ↩︎
- তাফসিরে তাবারি ↩︎
- সহীহ বুখারী ও মুসলিম ↩︎
- সূরা হিজর: ২৫ ↩︎
- তাফসিরে বিন সাদি ↩︎
- আহকামুল কুরআন ↩︎
- সূরা হজ: ৩২ ↩︎