লোকমুখে বলতে শোনা যায় যে, “যারা হজ বা উমরা করতে গিয়ে মারা যায় তারা জান্নাতি।” এ কথাটা কি সঠিক?
হজ ও উমরা সফর নি:সন্দেহে বরকতপূর্ণ সফর। এ সফরে কেউ মৃত্যু বরণ করলে তার জন্য হাদিসে বিশেষ কতিপয় ফজিলত (মর্যাদা) বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু জান্নাতে প্রবেশ সংক্রান্ত হাদিসগুলো সহিহ নয়।
নিম্নে এ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা উপাস্থাপন করা হল:
১. কেউ যদি হজ বা উমরা আদায়ের জন্য দৃঢ়ভাবে নিয়ত করে বা এই নিয়তে যাত্রা করে কিন্তু সে হজ বা উমরা আদায় করার পূর্বেই মৃত্যু বরণ করে তাহলে আল্লাহ তাআলা তাকে পূর্ণ হজ ও উমরার পূর্ণ সওয়াব দান করবেন। কেননা কোন ব্যক্তি সৎ আমলের দৃঢ় নিয়ত করার পরে মারা গেলে আল্লাহ তাকে সে কাজটির পূর্ণ সওয়াব দান করেন। যেমন আল্লাহ বলেন,
وَمَن يُهَاجِرْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ يَجِدْ فِي الْأَرْضِ مُرَاغَمًا كَثِيرًا وَسَعَةً ۚ وَمَن يَخْرُجْ مِن بَيْتِهِ مُهَاجِرًا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ يُدْرِكْهُ الْمَوْتُ فَقَدْ وَقَعَ أَجْرُهُ عَلَى اللَّهِ ۗ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا
যে কেউ আল্লাহর পথে দেশত্যাগ করে, সে এর বিনিময়ে অনেক স্থান ও সচ্ছলতা প্রাপ্ত হবে। যে কেউ নিজ গৃহ থেকে বের হয় আল্লাহ ও রসূলের প্রতি হিজরত করার উদ্দেশে, অতঃপর মৃত্যুমুখে পতিত হয়, তবে তার সওয়াব আল্লাহর কাছে অবধারিত হয়ে যায়। আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়।1
“যে কেউ নিজ গৃহ থেকে বের হয় আল্লাহ ও রসুলের প্রতি হিজরত করার উদ্দেশ্যে, অতঃপর মৃত্যুমুখে পতিত হয়, তবে তার সওয়াব আল্লাহর কাছে অবধারিত হয়ে যায়।” [সূরা নিসা: ১০০] এ মর্মে একাধিক হাদিসও বিদ্যমান রয়েছে।
২. কেউ যদি হজ-উমরা করতে গিয়ে মৃত্যু বরণ করে কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা তার সওয়াব লিপিবদ্ধ করতেই থাকেন। যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আবু হুরায়রা রf. হতে বর্ণিত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
«من خرج حاجًا فمات؛ كتب الله له أجر الحاج إلى يوم القيامة، ومن خرج معتمرًا فمات، كتب الله له أجر المعتمر إلى يوم القيامة، ومن خرج غازيًا فمات، كتب الله له أجر الغازي إلى يوم القيامة» (صحيح لغيره).
“যে ব্যক্তি হজের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পর মারা যাবে সে ব্যক্তির জন্য কিয়ামত পর্যন্ত হজের সওয়াব লেখা হতে থাকবে। আবার যে ব্যক্তি ওমরার উদ্দেশ্যে বের হয়ে মারা যাবে তার জন্য কিয়ামত পর্যন্ত ওমরার সওয়াব লেখা হতে থাকবে।”2
৩. যে ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় মৃত্যু বরণ করবে কিয়ামতের দিন সে লাব্বাইক পাঠ করতে করতে উঠবে। যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত। এক ইহরাম ধারী ব্যক্তিকে তার বাহনটি ফেলে দিলে তার ঘাড় ভেঙ্গে সে মারা যায়। তখন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
اغْسِلُوهُ بِمَاءٍ وَسِدْرٍ وَكَفِّنُوهُ فِي ثَوْبَيْهِ وَلاَ تُخَمِّرُوا وَجْهَهُ وَلاَ رَأْسَهُ فَإِنَّهُ يُبْعَثُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مُلَبِّيًا
“তাকে কুলপাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল দাও, তার পরনের বস্ত্রদ্বয় দিয়ে তাকে কাফন দাও এবং তার মুখমণ্ডল ও মাথা ঢেকো না। কারণ তাকে কিয়ামতের দিন তালবিয়া (লাব্বাইক) পাঠরত অবস্থায় উঠানো হবে।”
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন,
“তাকে সুগন্ধি মাখিও না। কারণ তাকে কিয়ামতের দিন তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উঠানো হবে।”3
“হজ ও উমরা আদায় করতে এসে মৃত্যু বরণ করলে সে জান্নাতি” এ মর্মে বর্ণিত হাদিসগুলো সহিহ নয়:
হজ অবস্থায় মৃত্যু বরণ করলে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে মর্মে বর্ণিত হাদিসগুলো একটিও সহিহ নয়।
এ মর্মে বর্ণিত হয়েছে “যে ব্যক্তি হজ করতে গিয়ে মৃত্যু বরণ করবে তার হিসেব নেওয়া হবে না, এমনকি হিসেবের জন্য তাকে উপস্থাপনও করা হবে না এবং বলা হবে, জান্নাতে প্রবেশ কর।”
– এ হাদিসটিকে খতীব বাগদাদী জইফ (দূর্বল) বলেছেন।
– ইমাম শাওকানী বলেন, এর সনদে ইসহাক বিন বিশর আল কাহেলী নামক একজন বর্ণনাকারী রয়েছে। সে মিথ্যুক।
– আলবানী এটিকে ‘মুনকার’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
অন্য একটি হাদিসে বলা হয়েছে “হজ ও উমরা আদায়কারী এবং গাজি বা আল্লাহর পথে যুদ্ধকারী ব্যক্তি আল্লাহর বাহিনী। তারা সবাই আল্লাহর জিম্মায় থাকে। মারা গেলে তাদেকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে আর ফিরে আসলে ক্ষমা করা হবে।” এটিও মুহাদ্দিসগণের দৃষ্টিতে জইফ বা দুর্বল। কেননা এর সনদে একাধিক সমস্যা আছে। যেমন: এর বর্ণনা সূত্রে উসমান ইবনে আমর ইবনে সাজ নামক বর্ণনাকারীর ব্যাপারে মুহাদ্দিসগণের আপত্তি রয়েছে। আরেক বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহর পরিচয় অজ্ঞাত।
(উক্ত হাদিসদ্বয় ইমাম আল ফাকেহী তার আখবারে মক্কা গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।)
উক্ত হাদিসদ্বয়ের ব্যাপারে মুহাদ্দিসদের বক্তব্য নিম্নরূপ: (আরবি)
” الْحَاجُّ وَالْمُعْتَمِرُ وَالْغَازِي وَفْدُ اللهِ، ضَمَانُهُمْ عَلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ حَتَّى يُدْخِلَهُمُ الْجَنَّةَ إِنْ تَوَفَّاهُمْ، أَوْ يُرْجِعَهُمْ وَقَدْ غُفِرَ لَهُمْ “
قل : هذا إسناد ضعيف ، عثمان هو ابن عمرو بن ساج قال أبو حاتم : ( يكتب حديثه ولا يحتج به ) .
ومحمد بن عبد الله هذا لم أعرفه ، لم أجد في ترجمة عثمان بن ساج أنه روى عن أحد اسمه محمد بن عبد الله ؛ أخشى أن يكون تحرف من محمد بن السائب الكلبي ، فإنه كثير الرواية عنه . والله أعلم .
مَن مات في هذا الوجهِ من حاجٍّ أو مُعْتَمِرٍ ، لم يُعْرَضْ ولم يُحَاسَبْ ، وقيل له : ادْخُلِ الجنةَ
الراوي:عائشة أم المؤمنين المحدث:الألباني المصدر:السلسلة الضعيفة الجزء أو الصفحة:2187 حكم المحدث:منكر