“গরমে রোজা রাখা জিহাদের সমান” এটা কি সত্য? আর কষ্ট হওয়া সত্বেও রোজা রাখলে তার সওয়াব কী? “গরমে রোজা রাখা জিহাদের সমান” এমন কোনও হাদিস আছে বলে জানা নাই। তবে এ কথা প্রত্যেক মুসলিমের জানা বিষয় যে, রমজান মাসে রোজা রাখা ফরজ, এটি ইসলামের অন্যতম একটি রোকন (খুঁটি) এবং প্রতিদানের দিক দিয়ে অনেক মর্যাদাপূর্ণ আমল। যেমন:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ صَامَ يَوْمًا فِي سَبِيلِ اللَّهِ بَاعَدَ اللَّهُ وَجْهَهُ عَنْ النَّارِ سَبْعِينَ خَرِيفًا
“যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় একদিন রোজা রাখবে আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে সত্তর বছরের দূরত্বে রাখবেন।”
[সহিহ মুসলিম]
তাছাড়া হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রোজা এমন একটি ইবাদত যার পুরষ্কার স্বয়ং আল্লাহ দান করবেন। আরও সহিহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশায় রোজা রাখার বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা বান্দার অতীত জীবনের পাপ মোচন করে দেন, রমজানে অনেক রোজাদারকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি ঘোষণা করেন, রোাজাদারদেরকে রাইয়ান নামক বিশেষ দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করান। এমন আরও অনেক ফযিলত বর্ণিত হয়েছে আল হামদুলিল্লাহ।
কেউ যদি প্রচণ্ড রোদ, গরম, পরিশ্রমের কাজ অথবা লম্বা দিন হওয়ার পরও কষ্ট করে রোজা রাখে তাহলে কষ্ট অনুযায়ী মহান আল্লাহ তাকে বেশি সওয়াব দান করবেন ইনশাআল্লাহ। কেননা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উমরা আদায়ের ক্ষেত্রে মা আয়েশা রা. কে উদ্দেশ্য করে বলেন,
إِنَّ لَكِ مِنَ الأَجْرِ عَلَى قَدْرِ نَصَبِكِ وَنَفَقَتِكِ
“তোমার কষ্ট ও খরচ অনুযায়ী তোমাকে সওয়াব প্রদান করা হবে।”
[সহিহ মুসলিম]
এ ছাড়াও বহু হাদিসে কষ্ট অনুযায়ী বেশি সওয়াবের কথা বর্ণিত হয়েছে। যেমন:
হাদিস অনুযায়ী কারও বাড়ি যদি মসজিদ থেকে দূরে হয় তারপরও কষ্ট করে পায়ে হেঁটে মসজিদে এসে জামাআতে সালাত আদায় করে তার সওয়াবের পরিমাণ বেশি।
কারও কুরআন তিলাওয়াত করা কষ্টসাধ্য হওয়ার পরও পড়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখলে তার জন্য তার দ্বিগুণ সওয়াব রয়েছে।
মক্কা বা মক্কার আশেপাশে অবস্থানকারীদের চেয়ে যারা দূর-দূরান্ত থেকে বহু পথ পাড়ি দিয়ে, বহু কষ্ট করে অনেক টাকা-পয়সা খরচ করে হজ করতে আসে তাদের সওয়াব বেশি-তাতে কোনও সন্দেহ নাই।
এ থেকে বুঝা যায়, আল্লাহর নির্দেশ পালন করতে গিয়ে যদি কারও বেশি কষ্ট, ক্লান্তি ও পরিশ্রম হওয়ার পরও ধৈর্যের সাথে সওয়াবের আশায় তা পালন করে তাহলে সাধারণ আমল কারীর চেয়ে তার সওয়াবের পরিমাণ বেশি হয়। আল হামদুলিল্লাহ।
সুতরাং কষ্টসাধ্য রোজায় সওয়াব বেশি হবে ইনশাআল্লাহ।
অতপর আখিরাতে সাফল্য প্রত্যাশী ও মুক্তিকামী ইমানদারের উপর অবশ্য কর্তব্য হল, পরিশ্রম, ডিউটি, গরম, লম্বা দিন ইত্যাদির ওজুহাতে রোজা পরিত্যাগ না করা। বরং রোজার গুরুত্ব, মর্যাদা ও বিশাল সওয়াব প্রাপ্তির আশায় ধৈর্যের সাথে রোজা পালন করা। আল্লাহ তওফিক দান করুন। আমিন।
আল্লাহু আলাম।