স্ত্রীর ঘরের কাজকে তুচ্ছ মনে করবেন না
আমরা ছেলেরা বাবা হবার পরও আমাদের লাইফ আগের মতোই চলতে থাকে। কিন্তু, একজন মেয়ে ‘মা‘ হবার পর?
বাচ্চার বয়স দেড়-দুই বছর। যৌথ পরিবারে থাকলে কিছু সুবিধা পাওয়া যায়। কাজের সময় বাচ্চাকে দাদী, ফুফুর কাছে দেয়া যায়।
কিন্তু, সিঙ্গেল পরিবারে?
যারা চাকরি/ব্যবসার কারণে শহরে থাকে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে, তাদের কী অবস্থা হয়?
বাবা চলে যায় অফিসে, ব্যবসায়। আর মা একা বাসায় সন্তানকে নিয়ে। রান্নার সময় সন্তানকে চোখে চোখে রাখতে হয়। খেলনা দিয়ে সামলাতে হয় বা কোলে নিয়ে রান্না।
একা ঘরে সদ্য মা হওয়া মেয়েটি ঠিকমতো ওয়াশরুমে পর্যন্ত যেতে পারে না। ২ বছরের মধ্যে হঠাৎ তার লাইফস্টাইল চেঞ্জ হয়ে গেছে।
ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করে গেলে দুশ্চিন্তা কাজ করে। সন্তান কোথায় যাবে?
ইলেক্ট্রিক জিনিসপত্রে হাত দিবে কিনা, গ্যাসের চুলায় হাত দিবে কিনা, কোথাও পড়ে যাবে কিনা?
অন্যদিকে মাকে না পেয়ে সন্তান তো কাঁদতেই থাকে।
একজন মা নামাজ পড়তে গেলেও কতো দুশ্চিন্তা। বাবুটা নামাজ পড়তে দেয় না, কাঁধে ওঠে বা কাপড় টানে। কিংবা অন্যরুমে চলে গিয়ে কী না কী করে!
ছেলে তো বাইরে চাকরি করে। কী পরিশ্রম, এটা স্বীকার করতে হবে।
একজন মেয়ে?
প্রতি মুহূর্তে সন্তানের চিন্তা। নিজের নাওয়া-খাওয়া ঠিকমতো করতে পারে না। খেতে বসে ঠিকমতো খেতে পারে না সন্তানের কান্নার জন্য।
আমরা ছেলে। আমাদের কী করার আছে?
আসুন, অফিস-ব্যবসা থেকে এসে ঘরে মেজাজ না দেখিয়ে অন্তত স্ত্রীকে ১ ঘণ্টা সময় দেই-
“তুমি একটু রেস্ট নাও, আজকের ক্বাজা নামাজ থাকলে পড়ে নাও, গোসল না করলে গোসল করে নাও।“
একজন বাবার জন্য সন্তানকে আদর করা সহজ। কিন্তু, ১/২ ঘণ্টা সামলানো বেশ টাফ। যাস্ট ইমাজিন করুন, আপনার স্ত্রী প্রতিদিন কীভাবে সামলায়?
এটা অন্তত উপলব্ধি করলে স্ত্রীর ঘরের কাজকে তুচ্ছ মনে করবেন না।
বাবা হবার পর আমার ‘লাইফস্টাইল‘ সেক্রিফাইস করতে হয়নি। আগে যেমন ছিলাম, এখনো তেমন আছি। আগে যখন ঘুমাতাম, ঘুম থেকে উঠতাম, এখনো তেমন।
আগে যেভাবে রুমে বসে বই পড়তাম, লিখতাম, বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যেতাম, বিভিন্ন জেলায় ট্যুরে যেতাম, এখনো প্রায় সবই করি। তেমন পরিবর্তন হয়নি।
কিন্তু, সেক্রিফাইস করছে কে?
আমার স্ত্রী।
সে মা হবার পর রাতে অনেকবার ঘুম থেকে উঠে, মিনহাকে খাওয়ায়, মিনহা না ঘুমালে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করি। সকালে আমি অফিসে যাবো দেখে আমাকে জাগানোর কথা ভাবে না; একান্ত ইমার্জেন্সি না হলে।
একা বাসায় খেতে বসলে মিনহা কান্না করে। খাওয়ার প্লেট থেকে উঠে কান্না সামলাতে হয়। গোসল করতে গেলে তাড়া থাকে, কখন বাবু ঘুম থেকে উঠে পড়ে। আগের মতো একটা বই পড়বে, নিজের মতো করে ঘন্টা, দুই ঘন্টা সময় কাটাবে, ঘুমাবে, সেই ‘সৌভাগ্য’ তার হচ্ছে না যবে থেকে সে ‘মা’ হয়েছে।
অথচ আমি বাবা হবার পর আমার লাইফস্টাইলে ঐরকম কোনো পরিবর্তন আসেনি, ঐরকম কোনো সেক্রিফাইস করতে হয়নি!
এসব চিন্তা করতে গেলে বারবার মনে পড়ে মায়ের কথা। আমি বড়ো ছেলে। আমার জন্মে সাথে সাথে আমার মা তার ‘মেয়ে‘ পরিচয় ফেলে ‘মহিলা‘ হলেন। পাল্টে গেলো তার জীবনযাত্রা। ‘ত্যাগ‘ শব্দের সাথে প্রতিনিয়ত পরিচিত হতে থাকলেন।
আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদা দিয়েছেন। মায়ের পায়ের নিচে বেহেশতের কথা উল্লেখ করেছেন নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
একজন ‘মা‘ কেনো এতোটা মর্যাদাবান, কেনো এতোটা স্পেশাল সেটা ফিল করি।
মা হবার মাধ্যমে তারা কতো ত্যাগ করে। তাদের লাইফস্টাইলই বদলে যায়! আমরা ছেলেরা যখন নিজেদের মা, স্ত্রী, বোনের এই ট্রান্সমিশন ফিল করবো, তখন তাদেরকে এপ্রিশিয়েট করতে পারবো। এগুলো ফিল করার ব্যাপার।